কাঠবিড়ালীকে বিয়ে করবো বলে কত অভিমান, কত অন্যায় করেছি বাবার সাথে। তারপরও পারিনি বাবাকে বোঝাতে। পারিনি নিজের স্বপ্নকে বাস্তবে রূপদান করতে। পারিনি কাঠবিড়ালীকে বউ করে ঘরে আনতে। কোথাথেকে কি যে হয়ে গেলো কিচ্ছু বুঝতে পারলাম না।
মা মারা যাবার পর হতেই দেখে আসছি, বাবা যেন তার সন্তানদের আরো বেশী যত্ন নেওয়া শুরু করেছে। আরো বেশী বেশী আদর ভালোবাসার বন্ধনে সন্তানদের ধরে রেখেছে। বাবার নিজেস্ব কোন চাওয়া-পাওয়া ছিল না। সব চিন্তা-চেতনাই ছিল তার সন্তানদের নিয়ে। কি করে তার সন্তানরা আরো ভালো থাকবে, কি করে তাদের চলার পথ আরো মসৃণ হবে এটাই যেন তার নিত্য চিন্তা। বাবাকে বহুভাবে বুঝিয়েও যখন কাঠবিড়ালীর কথা রাজী করাতে পারলাম না, তখন বাবার সাথে কত অভিমানই না করেছি। দিনের পর দিন, রাতের পর রাত না খেয়ে বাবাকে আমার অনুভুতি বুঝানোর চেষ্টা করেছি। নিজের সাথে নিজে বহুবার লড়াই করেছি- কোন দিকে যাবো? বাবা না কাঠবিড়ালী? বহুজনের কাছে সমাধান খুজেছি। কেউ সমাধান দিতে পারেনি। নিজের সাথে নিজের বহু লড়াই শেষে বাবাকে যখন বললাম- "বাবা আমি তোমার ইচ্ছাতেই বিয়ে করবো, আমার পছন্দটা বাদ।" মনে পড়ে তখন বাবার দু'চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পরতে থাকে আর বাবা সাথে সাথে দু'হাত উপরে তুলে বলেছিল- বাবা তুই অনেক বড় হবি, আমি তোকে দোয়া করি বাবা, আমি তোকে অনেক দোয়া করবো।
তারপর দেখতে দেখতে পার হয় আরো ১টি বছর। বাবা খুজতে থাকে ছেলের বউ। আমি তখনও মাঝে মাঝে কাঠবিড়ালীর কথা বাবাকে বলি। কিন্তু বাবা কেনজানি এই একটা বিষয়ে একেবারে অনড়। কোনভাবে তাকে রাজি করাতে পারলাম না।
আরো ৬ মাস পার হবার পরে বাবা আমার জন্য মেয়ে খুজে পায়। বিয়ে হয়ে যায় আজ-কাল এমন অবস্থা। আমি একটু বেকে বসি। আমাদের পরিবারে কেমন মেয়ে দরকার এসব বিষয়ে বাবাকে বার বার বুঝানোর চেষ্টা করি। কিন্তু বাবার কেনজানি এই মেয়েটিকে ভালো লেগে যায়। চেষ্টা করেও বাবার মতকে ঘুরাতে পারিনি। শেষে বাবার মতেই রাজী হলাম। করে ফেললাম বিয়ে।
তারপর দেখতে দেখতে পার হলো আরো ৬টি মাস। বাবা-আমি আর আমার বউ। ভালই তো যাচ্ছিল জীবন। বিয়ের আগে ঘুমাতাম বাবার সাথে, বিয়ে হবার পর বাবার সাথে ঘুমানো ছাড়া বাকী সবকিছুই ছিল অপরিবর্তীত। ছেলে সারাদিন বাসায় থাকে না বলে বাবা সকালে বাজার করলেও ভালো কিছু রান্না করতে দিতেন না। বউকে বলতো "তুমি রাতে রান্না করো, তবে সবাই তাজা তাজা খেতে পারবো।"
কিন্তু আফসুস সেই বাবা আজ আর নেই আমার সাথে। অকস্মাৎ, গত ৬ জুন ২০১০ চলে গেল চীরতরে। স্মৃতিগুলো আজ কান্না হয়ে ঝড়ে। বাবা আমায় ক্ষমা করো। ক্ষমা করো বাবা।
বাবা যেদিন মারা যায় সেদিন রাতেও বাবার সাথে ঘুমিয়েছি। খুব ভোরে বাবা তুলে দেয় নামাজ পড়ার জন্য। বউ শশুরবাড়ী থাকায়, শেষ আমার হাতে রান্না করা খাবার খেয়ে বাবা বিদায় নেয়।
মা-ও যেদিন মারা যায় সেদিন খুব ভোরে মাকে নিয়ে হেটেছিলাম। পরে ঘরে ফিরে মার পাশে শুয়েছিলাম অনেকক্ষন। দুপুরে শেষ খাবারটাও দিয়েছিলাম নিজের হাতে।
আমার বাবা-মা'র জন্য সবাই একটু দোয়া করবেন।
ধন্যবাদ।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




