somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সমুদ্র নিরাপত্তায় বিশেষ ৩৪টি জাহাজ দিবে যুক্তরাষ্ট্র !

০১ লা অক্টোবর, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:৩১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বাংলাদেশের সমুদ্র খাতের নিরাপত্তাকে বিশেষভাবে গুরুত্ব দেয় যুক্তরাষ্ট্র। এই খাতের নিরাপত্তায় অন্যান্য সহযোগিতার পাশাপাশি ২০১৬ সালে বাংলাদেশকে প্রয়োজনীয় সরঞ্জামসহ ৩৪টি ছোট দ্রুতগতিসম্পন্ন বিশেষ জাহাজ (Defender class patrol and ambulance boats) দিবে যুক্তরাষ্ট্র। পশ্চিমের এই দেশটি বাংলাদেশের জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিতে সহায়তার অংশ হিসেবে এই জাহাজগুলো দিবে।

নিরাপত্তা সংক্রান্ত বাংলাদেশ-মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র চতুর্থ যৌথ সংলাপ গত ১১ সেপ্টেম্বর ওয়াশিংটনে অনুষ্ঠিত হয়। ওই সংলাপে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। দুই দেশের মধ্যে অনুষ্ঠিত নিরাপত্তা সংলাপে আঞ্চলিক সহযোগিতা, নিরাপত্তাসহ সন্ত্রাসবাদ-বিরোধিতা, সামরিক সহযোগিতা ও জাতিসংঘে শান্তিরক্ষা কার্যক্রমসহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হয়।

যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক-সামরিক সংক্রান্ত ব্যুরোর কর্মকর্তা ডেভিড আই মেকবি (David I. McKeeby) এক বার্তায় গত ১৯ সেপ্টেম্বর দ্য রিপোর্টকে এই তথ্য জানান।

শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতের উন্নয়নে খাদ্য নিরাপত্তা শক্তিশালী করতে, গণতন্ত্র ও সুশাসন, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ, টেকসই উন্নয়ন ও জলবায়ুজনিত ক্ষতি মোকাবিলা, এই খাতগুলোতে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে শক্তিশালী দ্বি-পাক্ষিক সম্পর্ক বিরাজ করছে। যা ভবিষ্যতে আরও শক্তিশালী হবে। অন্যদিকে, নিরাপত্তা সংক্রান্ত সম্পর্ক দুই দেশের মধ্যে বিরাজমান দ্বি-পাক্ষিক সম্পর্কের অন্যতম বিষয়। বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তা সম্পর্ক নিয়ে বলতে গিয়ে এই তথ্যগুলো উল্লেখ করে ডেভিড আই মেকবি দ্য রিপোর্টকে বলেন, ‘নিরাপত্তা খাত সংক্রান্ত দ্বি-পাক্ষিক সম্পর্কে বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র মূলত ৩টি বিষয়ে প্রাধান্য দিয়ে থাকে। এই ৩টি খাত হচ্ছে— সমুদ্র নিরাপত্তা (maritime security), শান্তিরক্ষা কার্যক্রম ও মানবতামূলক (humanitarian response) ও দুর্যোগ প্রস্তুতি (disaster preparedness)।

সমুদ্র নিরাপত্তা খাত সম্পর্কে যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক-সামরিক সংক্রান্ত ব্যুরোর কর্মকর্তা ডেভিড আই মেকবি বলেন, ‘সমুদ্র নিরাপত্তা হচ্ছে নিরাপত্তা খাত সংক্রান্ত বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কের মূল স্তম্ভ (core pillar)।’

২০০৫ সাল থেকে যুক্তরাষ্ট্র সমুদ্র নিরাপত্তা খাতে বাংলাদেশকে সহায়তা করে আসছে। ওই সময়ে একটি প্রকল্পের মাধ্যমে বাংলাদেশ কোস্ট গার্ডের জন্য একটি পেট্রোলবোট বহর নির্মাণে সহায়তা করা হয়। যার মাধ্যমে সমুদ্র নিরাপত্তা, দুর্যোগের সময় ত্রাণ কর্মসূচি সচল রাখতে ও বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের নিরাপত্তা শক্তিশালী করা হয়।’

তিনি আরও বলেন, ‘আশা করছি বাংলাদেশের সমুদ্র নিরাপত্তায় ২০১৬ সালের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে প্রয়োজনীয় সরঞ্জামসহ ৩৪টি ছোট দ্রুতগতিসম্পন্ন বিশেষ জাহাজ (Defender class patrol and ambulance boats) দিবে। যা সমুদ্র ও বন্দর অঞ্চল নিরাপত্তার পাশাপাশি জরুরি অনুসন্ধান ও উদ্ধার, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিয়মিত টহলসহ নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করা যাবে।’

যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তার কারণে চট্টগ্রাম বন্দরের ৭০ শতাংশ চুরির ঘটনা কমেছে উল্লেখ করে ডেভিড আই মেকবি বলেন, ‘শুধু বিশেষ এই জাহাজই নয়, যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বিভাগ বাংলাদেশকে এই বিষয়ে প্রয়োজনীয় হাতে-কলমে প্রশিক্ষণও দিবে। যাতে বাংলাদেশ নেভীর সদস্যের দক্ষতা বাড়ে ও বাস্তবভিত্তিক জ্ঞান আহরণ হয়। উপকূলীয় অঞ্চলের নিরাপত্তা নিশ্চিতে বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড এরই মধ্যে নাটকীয় ও কার্যকর উন্নয়ন ঘটাতে সক্ষম হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বিভাগের (Foreign Military Financing program) আর্থিক অনুদানে পরিচালিত বিভিন্ন প্রকল্প বাংলাদেশে বাস্তবায়নের ফলে চট্টগ্রাম বন্দরের ৭০ শতাংশ চুরির ঘটনা কমতে সহায়তা করেছে।’

ডেভিড আই মেকবি আরও বলেন, ‘এর আগে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে একটি ‘কাটার জার্ভিস’ নামক জাহাজ উপহার দিয়েছে। যা এখন ‘সমুদ জয়’ নামে ব্যবহৃত হচ্ছে। এ ছাড়া চলতি বছর ‘রাস’ নামক আরও একটি জাহাজ বাংলাদেশকে দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এই অঞ্চলের আঞ্চলিক নিরাপত্তা নিশ্চিতের স্বার্থে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের সমুদ্র নিরাপত্তা নিশ্চিতে সহায়তা করছে।’

শান্তিরক্ষা কার্যক্রম নিয়ে ডেভিড আই মেকবি বলেন, ‘জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে বাংলাদেশের নেতৃত্বকে গুরুত্ব দেয় যুক্তরাষ্ট্র। এই কার্যক্রমে বাংলাদেশ যাতে আরও শক্তিশালী ভূমিকা রাখতে পারে, সে জন্য যুক্তরাষ্ট্র এই খাতেও বাংলাদেশকে সহায়তা করছে। বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ব শান্তি কার্যক্রম উদ্যোগেরও (U.S. Global Peace Operations Initiative-GPOI) সদস্য। জিপিওআই’র মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র ২০০৫ সাল থেকে এখন পর্যন্ত ১৪ মিলিয়ন মার্কিন মুদ্রার সমপরিমাণ প্রশিক্ষণ, প্রশিক্ষণ সরঞ্জাম এবং বাংলাদেশ শান্তি কার্যক্রম পরিচালনা ও প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের (Bangladesh Institute for Peace Support Operations Training- BIPSOT) সংস্কারে সহায়তা দিয়েছে। এই প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে শুধু বাংলাদেশের সেনাই নয়, এই অঞ্চলের শরিকরাও প্রশিক্ষণের জন্য ব্যবহার করে।’

তিনি আরও বরেন, ‘বাংলাদেশকে নিরাপত্তা খাতে যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তার তৃতীয় বিষয়টি হচ্ছে মানবতামূলক ও দুর্যোগ প্রস্তুতি মোকাবিলা। এই খাতে যুক্তরাষ্ট্র বিভিন্ন সময়ে সিডরের মতো ঘূণিঝড়, প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় বাংলাদেশকে শক্তিশালী করতে সহায়তা দিচ্ছে। যার আওতায় এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলে ৪০টি বহুমুখী আশ্রয় কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করেছে যুক্তরাষ্ট্র। এই আশ্রয় কেন্দ্রগুলো প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় মানুষকে নিরাপত্তা দিয়ে সহায়তা করে। অন্য সময়ে এই আশ্রয় কেন্দ্রগুলো সংশ্লিষ্ট অঞ্চলের শিক্ষাদান কার্যক্রমে ব্যবহৃত হয়। যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তায় বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলে এ রকম আরও ১৫০টি আশ্রয় কেন্দ্র নির্মাণের কাজ চলছে।’

ডেভিড আই মেকবি বলেন, ‘বাংলাদেশকে দুর্যোগ মোকাবিলায় শক্তিশালী করতে যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তায় আরও ৩০টি উপকূলীয় সংকট ব্যবস্থাপনা কেন্দ্র (Coastal Crisis Management Centers-CCMCs) নির্মাণের কাজ চলছে। ওই কেন্দ্রগুলো ব্যবহারের মাধ্যমে বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড প্রত্যন্ত অঞ্চলের নিরাপত্তা নিশ্চিতে শক্তিশালী ভূমিকা রাখতে পারবে। এ ছাড়া উপকূলীয় এবং সমুদ্র এলাকার বিশাল প্রত্যন্ত অঞ্চল নিশ্চিদ্র নিরাপত্তার আওতায় আসবে। কেন্দ্রগুলো থেকে পরিচালিত কার্যক্রম সংশ্লিষ্ট অঞ্চলের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ঠিক রাখতে, চোরাচালান ঠেকাতে, মানবপাচার রোধ করতে এবং মৎস্য খাতের নিরাপত্তায় সহায়তা করবে।’
সংগ্রহ- দ্যরিপোর্ট২৪ থেকে।
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা অক্টোবর, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:৩৩
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মসজিদ না কী মার্কেট!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৯

চলুন প্রথমেই মেশকাত শরীফের একটা হাদীস শুনি৷

আবু উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইহুদীদের একজন বুদ্ধিজীবী রাসুল দ. -কে জিজ্ঞেস করলেন, কোন জায়গা সবচেয়ে উত্তম? রাসুল দ. নীরব রইলেন। বললেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

সচিব, পিএইচডি, ইন্জিনিয়ার, ডাক্তারদের মুখ থেকে আপনি হাদিস শুনতে চান?

লিখেছেন সোনাগাজী, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:৪৫


,
আপনি যদি সচিব, পিএইচডি, ইন্জিনিয়ার, ডাক্তারদের মুখ থেকে হাদিস শুনতে চান, ভালো; শুনতে থাকুন। আমি এসব প্রফেশানেলদের মুখ থেকে দেশের অর্থনীতি, রাজনীতি, সমাজনীতি, বাজেট,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আকুতি

লিখেছেন অধীতি, ১৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০

দেবোলীনা!
হাত রাখো হাতে।
আঙ্গুলে আঙ্গুল ছুঁয়ে বিষাদ নেমে আসুক।
ঝড়াপাতার গন্ধে বসন্ত পাখি ডেকে উঠুক।
বিকেলের কমলা রঙের রোদ তুলে নাও আঁচল জুড়ে।
সন্ধেবেলা শুকতারার সাথে কথা বলো,
অকৃত্রিম আলোয় মেশাও দেহ,
উষ্ণতা ছড়াও কোমল শরীরে,
বহুদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ক- এর নুডুলস

লিখেছেন করুণাধারা, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫২



অনেকেই জানেন, তবু ক এর গল্পটা দিয়ে শুরু করলাম, কারণ আমার আজকের পোস্ট পুরোটাই ক বিষয়ক।


একজন পরীক্ষক এসএসসি পরীক্ষার অংক খাতা দেখতে গিয়ে একটা মোটাসোটা খাতা পেলেন । খুলে দেখলেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

×