somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সিস্টেমান্তর

১১ ই অক্টোবর, ২০০৬ দুপুর ১২:৫৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

এলাকা জুড়ে ডাইনোসরদের মধ্যে মড়ক দেখা দিলো । অল্প বয়সেই সবাই বুড়ো হয়ে যেতে লাগলো । আর বুড়ো হতে না হতেই সমস্ত দাঁত পড়ে যেত । তখন তারা খাবার খেতে পারতো না- বলা ভালো- খাদ্য সংস্থান করতে পারতো না । ডাইনোসরেরা মহাসাগরের পার থেকে ঝিনুক কুড়িয়ে সেটার খোলটা প্রথমে দাঁত দিয়ে কড়মড় করে ভাঙতো তারপর ভেতরে যে ইয়া বড় বড় মুক্তো থাকতো সেগুলো সারাদিন ধরে চুষে চুষে খেত । ফলে দাঁত পড়ে যাওয়ায় ঝিনুক ভেঙে মুক্তো খাওয়া বন্ধ হয়ে গেল


ডাইনোসরেরা দৌড়ালো ডেন্টিষ্টের কাছে । ডেন্টিষ্ট ডাইনোদের শরীরের সঙ্গে মানানসই ইয়া লম্বা লম্বা দাঁত ফিট করতে গেল । কিন্তু বিপদ এল যখন ডাইনোসরেরা বেঁকে বসল । বললো, আমাদের ছোট্ট ছোট্ট দাঁত দাও । বড় দাঁত আমাদের একঘেয়ে হয়ে গেছে । পেছন থেকে অন্য ডাইনোসরেরা চীত্কার করে উঠলো , উল্টে দাও, পাল্টে দাও । ডাক্তার বললো, তোমরা ছোট্ট ছোট্ট দাঁত নিয়ে কি করবে ? ঝিনুক তো ভাঙতে পারবে না । তখন ডাইনোসরেরা বললো, তাহলে মানুষের মত দাঁত দাও । ডাক্তার ভাবলো, মানুষ বুদ্ধিমান প্রাণী: ওদের দাঁত দিয়ে দিলে ডাইনোদের দাঁতের বুদ্ধি খুলে যাবে । ফলে ঝিনুক ছেড়ে কোপ্তা কোর্মা খাবে । তখন স্বাভাবিক খাদ্য শৃঙ্খলে টান পড়বে । মুখে বললো, মানুষের দাঁত ? ঐ দাঁত পড়লে কিন্তু সারাদিন মানুষের মত বকবক করবে । ডাইনোসরেরা সমস্বরে বললো না না ঐ দাঁত চাই না । আমাদের নিজেদের দাঁত ফিরিয়ে দাও । ডাক্তার পড়লো বিপদে । তার কাছে ডাইনোসরের দাঁত ছিলো না । সে বললো, দাঁত একবার গেলে আর ফিরে পাওয়া যায় না । দাঁত থাকতে দাঁতের মর্ম বুঝতে হয় ।


এদিকে বুড়ো ডাইনোসরদের সংখ্যা ক্রমশ বাড়তে লাগলো । সরকার ভয় পেয়ে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রনে দশ দফা কর্মসূচী নিয়ে এলো । কেন না , সরকার সেই বছরই ওল্ড সিটিজেনদের সুবিধা দানের জন্যে বিশ দফা কর্মসূচীর প্রস্তাব করেছিল । সরকার এখন দেখল বয়স্ক নাগরিকদের সুবিধাদানের কর্মসূচী বাস্তবায়িত করা অসম্ভব । ট্যাকশাল এমনিতেই শূণ্য । ফলে দপ্তরে দপ্তরে সার্কুলার পাঠালো, জনসংখ্যা বাড়াও । ছোটদের যোগান বাড়লে তবেই বুড়োদের চাহিদা প্রশমিত হবে । নির্দেশ জারী হল । আওয়াজ উঠলো- প্রতি ঘরে দশটি শিশু । কেউ রবীন্দ্রনাথ কেউ যীশু ।। ঘোষণা করা হল, প্রতি পাঁচ বছরে সর্বাধিক উত্পাদনকারী দম্পতি কে ধৃতরাষ্ট্র পুরস্কার দেওয়া হবে । দশের বেশি সন্তান থাকলে মা-বাবাকে কেবিসি তে সরাসরি প্রতিদ্বন্দিতা করার সুযোগ দেওয়া হবে ।

ছোট ডাইনোসরদের মধ্যে হইচই পড়ে গেল । তাদেরকে সর্বত্র গুরুত্ব দেওয়া শুরু হল । সরকার থেকে ভোটাধিকারের বয়স কমিয়ে দেওয়া হল । ষ্টার টিভি জুনিয়ার কেবিসি চালু করে দিল । বুড়োদের পরিবর্তে ছোটদের মীমাংসার রায়ই অঞ্চলের সবাই মেনে নিতে লাগলো । ছোট ডাইনোসরেরা ঝিনুক ভেঙে দিত অর বুড়োরা মুক্তো চুষে চুষে খেত । ফলে বুড়োরা ক্রমশ অলস ও অকর্মণ্য হয়ে পড়তে লাগলো । তারা শুধু বসে বসে ছোটদের সমালোচনা করত । ছোটরা রোজ নিন্দে শুনতে শুনতে একদিন বলে উঠল, ধ্যাত্তেরিকা । তারা লাগাতার ধর্মঘটের ডাক দিল । তাদের অন্য একটা ইস্যু ও ছিল । তাদের মধ্যে শিশু শ্রমিকের সংখ্যা বিপদজনকভাবে বেড়ে যাচ্ছিল । মানবাধিকার কমিশন থেকে সরকারকে নোটিশ পাঠানো হল ।



বুড়ো ডাইনোসররা পড়ল বিপদে, তারাও সরকারের কাছে দরবার শুরু করলো । খাদ্য দপ্তরে গিয়ে বললো, রেশনে মুক্তো দেওয়া যেতেই পারে শুধু একটু অসুবিধা আছে । পাইল করার জন্য নির্দিষ্ট পরিমাণ ঝুটা মুক্তো যতদিন না আমরা তৈরী করতে পারছি ততদিন আপনাদের না খেয়ে থাকতে হবে । ডাইনোসরেরা বললো, তা কি করে সম্ভব ! খাদ্য মন্ত্রক বললো, আমাদের কিছু করার নেই । রেশন ব্যবস্থার আওতায় আনতে গেলে আগমার্ক থাকতেই হবে । ভেজাল না থাকলে আগছাপ পড়বে না । ডাইনোসরেরা বললো, তা বলে না খেয়ে থাকতে পারবো না । আপনারা ভেজাল মেশান । খাদ্যদপ্তর খুশিই হল, আপনারা এক্ষুনি তথ্য প্রযুক্তি দপ্তরে খোঁজ নিন ভেজাল মুক্তো কোথায় তৈরী হচ্ছে ।



ডাইনোসরেরা গেল তথ্য ও প্রযুক্তির দপ্তরে । তথ্য প্রযুক্তি দপ্তর ইন্টারনেটে অনেক ঘেঁটে ঘুটে বলল, আমেরিকার গান্ধী মেমোরিয়াল ল্যাবে নকল মুক্তো তৈরী হচ্ছে বটে কিন্তু খাদ্য দপ্তরের যে পরিমাণে দরকার তাতে ঐ ল্যাবের দশ বছর লেগে যাবে । এই রকম দশ খানা ল্যাবে যদি বানানো যায় তবে এক বছর লাগবে । একশো খানা ল্যাবে বানাতে পারলে মাস খানেক আপনাদের না খেয়ে থাকলেই চলবে। তবে বিশ্বায়ন ছাড়া বিদেশী প্রযুক্তি ব্যবহার করে মুক্তো বানানো অসম্ভব । আপনারা শিল্পদপ্তরে চাপ দিন ।
ডাইনোসরেরা সকলে মিলে শিল্পদপ্তরে গেল । তারা শুনে চমকে উঠলো, খাদ্য দপ্তরের রাস্তায় পা দেবেন না । সাগর থেকে মাগনা পাওয়া মুক্তো কিনে খেতে খেতে একদিন দেউলিয়া হয়ে যাবেন । তার থেকে কিছু ভালো মাল্টি ন্যাশনাল কোম্পানীকে ডেকে আনি । তারা তাদের নব প্রযুক্তির নতুন মেশিন-পত্তর দিয়ে ঝিনুক গুড়িয়ে মুক্তো সাপ্লাই দেবে । ফ্রেশ আর ভেজাল-টেজাল থাকবে না । আর দশটা কোম্পানী এলে কম্পিটিশনে দামও কম থাকবে । আপনারা বিদেশ মন্ত্রকে খোঁজ নিন । কোন বিদেশী কোম্পানী বিনিয়োগ করতেচায় কিনা



বিদেশী কোম্পানীগুলো সমুদ্র পারে তাদের অফিস খোলার জন্যে মুখিয়ে ছিল । কাগজে টিভিতে বিজ্ঞাপন দিতে লাগলো কী ভাবে তাদের প্রযুক্তি দিয়ে গুঁড়িয়ে দেবে ঝিনুক ! সরকার ঠিক করলো এবার বিশ্বায়ন করবে । ডাইনোসরেদের কানে গেল সেই কথা । তারা নিজেদের মধ্যে আলোচনা করতে লাগলো । বিদেশী কোম্পানী প্রথমে দাঁড়াবে, তারপর বসবে তারপর শুতে চাইবে । আস্তে আস্তে নিজস্ব শিল্প সংস্থা সব লোব পাবে । তখন মুক্তোর বদলে ম্যাকডোনাল্ড চুসতে হবে । সে আরেক বিপদ । তারা সরকারকে লিখিত ভাবে জানালো, বিশ্বায়ন করে সমস্যার নিরসন চাই না । অন্য ভাবে খাদ্য সমস্যা মেটান । সরকার বললো, তাহলে হরলিক্স বা কমপ্ল্যান খান ।



হরলিক্স, কমপ্ল্যানের বিক্রি খুব বেড়ে গেল । কিন্তু বুড়োরা কিছুদিনের মধ্যেই বিপদ টের পেতে লাগলো । তাদের ছিল খুব সন্দেহ বাতিক । তারা সব কিছুর মধ্যেই বিপদ টের পেত । বুড়োরা কেউ চোঁ চোঁ করে লম্বা হতে লাগলো, কারও স্মৃতিশক্তি খুব বেড়ে যেতে লাগলো । স্বাস্থ্য দপ্তর থেকে জানানো হলো, তোমরা যখন বিশ্বায়ন করতে দিলে না তখন এরকম ছোট-খাট সমস্যা দেখা দেবেই । ডাইনোসরেরা বললো, এই ভাবে চললে আমাদের গায়েও ডারউইনবাদের হাওয়া লেগে যাবে । আমরা পাল্টে যেতে চাই না । এ রকম চললে ক্রমে ক্রমে আমরা অন্য স্পিসিস হয়ে যাবো । স্বাস্থ্য দপ্তর বললো, হু । তাহলে কোক কোক খাও । পেপসি খাও ।




অবশেষে বিশ্বায়ন হল । একে একে বিদেশী কোম্পানী আসতে শুরু করলো । ডাইনোসরেরা ক্রমশ পাল্টে যেতে লাগলো । এখন তারা সব কিছু মেনে নিতে শিখেছে । ম্যাকডোনাল্ড, ডগ-বিস্কুট পেপসি খায় । এখন প্রায় মানুষের মতই বুদ্ধিমান হয়ে উঠেছে । দাঁত পড়লে ডেনটিষ্টের কাছে যায় বটে তবে এখন আর সমস্যা হয় না - মজার ব্যাপার মানুষের দাঁত তাদের দিব্যি ফিট করে যায় । সব চেয়ে বড় কথা তাদের বুড়ো হওয়ার বয়স এখন অনেক বেড়ে গেছে, আসলে সিস্টেমটাই বদলে গেছে কিনা !



প্রথম প্রকাশ : অক্ষর, শারদীয়া সংখ্যা, ১৪০৮




সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে ডিসেম্বর, ১৯৬৯ সন্ধ্যা ৭:০০
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

প্রকৌশলী এবং অসততা

লিখেছেন ফাহমিদা বারী, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:৫৭


যখন নব্বইয়ের দশকে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার সিদ্ধান্ত নিলাম এবং পছন্দ করলাম পুরকৌশল, তখন পরিচিত অপরিচিত অনেকেই অনেকরকম জ্ঞান দিলেন। জানেন তো, বাঙালির ইঞ্জিনিয়ারিং এবং ডাক্তারিতে পিএইচডি করা আছে। জেনারেল পিএইচডি। সবাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইউনুসের উচিৎ ভারতকে আক্রমন করা , বিডিআর হত্যাকান্ডের জন্য

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৩৭


ইউনুসের উচিৎ ভারতকে আক্রমন করা , বিডিআর হত্যাকান্ডের জন্য

পহেল গাঁয়ে পাকিস্থানি মদদে হত্যাকান্ডের জন্য ভারত পাকিস্থানে আক্রমন করে গুড়িয়ে দেয় , আফগানিস্থান তেহেরিক তালেবানদের মদদ দেওয়ার জন্য, পাকিস্থান... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি ভারতকে যাহা দিয়াছি, ভারত উহা সারা জীবন মনে রাখিবে… :) =p~

লিখেছেন নতুন নকিব, ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১:১৫

আমি ভারতকে যাহা দিয়াছি, ভারত উহা সারা জীবন মনে রাখিবে… :) =p~

ছবি, এআই জেনারেটেড।

ইহা আর মানিয়া নেওয়া যাইতেছে না। একের পর এক মামলায় তাহাকে সাজা দেওয়া... ...বাকিটুকু পড়ুন

এমন রাজনীতি কে কবে দেখেছে?

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:২০


জেনজিরা আওয়ামী লীগের ১৬ বছরের শাসনামল দেখেছে। মোটামুটি বীতশ্রদ্ধ তারা। হওয়াটাও স্বাভাবিক। এক দল আর কত? টানা ১৬ বছর এক জিনিস দেখতে কার ভালো লাগে? ভালো জিনিসও একসময় বিরক্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযুদ্ধের কবিতাঃ আমি বীরাঙ্গনা বলছি

লিখেছেন ইসিয়াক, ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:১৫


এখনো রক্তের দাগ লেগে আছে আমার অত্যাচারিত সারা শরীরে।
এখনো চামড়া পোড়া কটু গন্ধের ক্ষতে মাছিরা বসে মাঝে মাঝে।

এখনো চামড়ার বেল্টের বিভৎস কারুকাজ খচিত দাগ
আমার তীব্র কষ্টের দিনগুলোর কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×