মুসৌরী থেকে ফিরছি। সারা পথ, চায়ের গ্লাস সব ঘন কুয়াশায় মোড়া। মুখ দিয়ে কু-ঝিকঝিক রেলগাড়ির মত কুয়াশা বেরিয়ে যায়। গোপাল ভাঁড়ের গল্পের সাথে এই বুঝি দেখা হল আবার। মোবাইল অবধি ঝাপসা। দেরিতে সকাল হলে রঙবাহারে ফুটে ওঠে মুজ:ফরনগর । রঙ-বেরঙে খুশির সাজে সেজে উঠেছে এ গলি ও গলি। ঈদ। বাচ্চা ছেলে-মেয়ের দল পিটপিটে হাত দিয়ে এট্টু হাত টিপে দেয় আর খুশির বকশিস নিয়ে দৌড় লাগায়। ফলে গলিরা আরো রঙিন হয়ে ওঠে।
অন্য সময় স্লিপার পায়ে ও স্লিপার ক্লাসে ভ্রমণ করা চলে। এই শীতে এসি কামরা ছাড়া রেলভ্রমণটি করার যো নেই। লাল কম্বলটি না থাকলেও কম্বল তো বটে। যেন কাল পিচের রাস্তা বরাবর শুকোতে দেওয়া হয়েছে সোনালী ধান, এমন শয্যা তোমার জন্যে বিছানো। পরিপাটি। আহা।
কুয়াশা ভেঙে এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে রোদ। থিওডোরাস অ্যালোপোলোস নামত দ্রষ্টা ছড়িয়ে দিচ্ছে হাতের রঙিন তাস, টেক্কা সাহেব গোলাম। এ তো গেল তোমার হিসেব নিকেশের কথা। কিন্তু উল্টোপিঠ? সেখানে পিকচার পোষ্টকার্ড, তাসের দেশ। ঘনঘন পিওন আসছে গ্রীটিংস কার্ড নিয়ে। সাজিয়ে রাখছ তুমি কাঁচের আলমারী ভরে। কোন ছাষনী বা ব্যাবহার করে বসল ঐ শব্দটি, একটু বেয়াড়াভাবে। থরে থরে সাজানো পিকচার পোষ্টকার্ড, সব যদি তোমার পাশাপাশি চলে, রেলের কামরাভর্তি যেন অগুনতি জানালা। সব আছে ঘিরে, চিরতরে। উঁহু। অ্যালোপোলোস বলবেন, প্রজেক্টারে সরে সরে যায় ফ্রেম, ফ্রেমগুলি। দু হাতে ভিজে যাচ্ছে পাউরুটি ফুলে, পাড়িয়ে পাড়িয়ে যাচ্ছি কল্কেফুলগুলি। দু/চারটে সবুজ মসৃন কল্কে ফল ফেটেফুটে ঘন দুধ বেরিয়ে আসছে, এইভাবে সব বিষ ঝরে গেলে খটখটে ডমরুর মত বেজে উঠবে...
এব ংমাঠের ঘাসগুলি ষনক্ষ্মমশ হলুদ হয়ে আসবে। লম্বা টানা ছোট বড় তাবু ঢেকে দেবে তাদের মাসখানেকের জন্য। রাষিনবেলা সার্চলাইটের আলো নেচে বেড়াবে মফস্বলের কিশোরী শরীরে। লাইটহাউসের মত গেড়ে বসে থাকি সমুদ্রের কাছে। সারসার টিনের বেড়া দেওয়া, মাঝে মাঝে দু/একটা ফোকরে রাখা চোখ। জানিনা শিল্পান্তর আজো ঘটে কিনা। বাঘের উগ্র গন্ধে জ্বলে উঠবে সারা শহরের চোখ। এক একটা কলাবাগান ট্রাকে করে টেনে এনে প্রাত:রাশ সারবে হস্তিশাবকেরা। এইসব গালে ও গল্পে আমরা নেচে উঠব স্কুলের ফিরতি পথে। এব ংসার্কাস পরীরা ঝুকঝুক করে নেমে আসবে স্বপ্নে। আমি রিংমাষ্টার সেজে...
পিকনিক।
ছড়িয়ে পড়ল জলরঙ । আসলে জানুয়ারী জুড়ে হরেক ছুটির মেলা। ক্লাবঘর,পড়ে পাওয়া ঠাকুরদালান, বিছিয়ে দেওয়া ষিনপলে ইঁদুরের কুটিকুটি সার। আমরা এলোমেলো বসে। বসে আঁকো, বসে বসে আঁকো। ভারিক্কি গলার সুমন ধাক্কা মারবে এই মাঝবয়েসে এসে, কে জানতো? যদি তারে নাই চিনব, এঁকে ফেলি যেমন তেমন সেই মেয়েটির মুখ,একঘেয়ে আটপৌরে গাছপালা মেঘ আকাশ ও পাহাড়ে মুখ লুকানো সুর্য। কখনো দোল কখনো চিড়িয়াখানা, বসে আঁকো।
মায়েরা গুটিগুটি সাজিয়ে এনেছেন ফুলমালি, বাসনওয়ালী, ডাকহরকরা। মাইকে ঘনঘন ঘোষণা, পড়ায় মন বসেনা। বাইনারি অপজিট স্কুলটির স্পোর্টস চলছে সেখানে। যে বোকা হাঁদা গঙ্গারাম স্কুলে বসে থাকে চুপটি করে তার দাগটানা খাতাটি নিয়ে, প্রতিটা লাইনের ফাঁকে দৌড়ে যায় স্কার্ট পরা মেয়েগুলির পা। দৌড়, দৌড়, দৌড়। লম্বা দৌড়ের পর পরে থাকবে শুধু হাঁফানি। রাশভারি দিদ্মণি ছুটতে ছুটতে এসে অ্যালুমিনিয়ামের টোপর টোপর বালতি থেকে প্রত্যেকের হাতে তুলে দেবে একটি করে কমলালেবু ... বোকা ছেলেটা ফি বছর কি গল্পই শুনে যাবে? একটা গল্পও কি লিখে উঠতে পারবেনা আজীবন? বড় হয়েছে, ক্লাসের নিরিখে বেশ উঁচুতে সে এখন, লম্বাও হয়েছে বেশ অনেকটা, ভিড় উদঁচিয়ে দেখতে এখন আর কোন বাঁধা নেই। স্কুলফিরতি পথে সে এক গুল্লি ঘুরে যেতেই পারে। সিঁদুরের মত ঘসে ঘসে গেছে, পায়ে পায়ে, চুন ছড়ানো লাইনগুলি, চোখ কি ঝাপসা তবে? দু/চারটে বুড়ো খেকুরে লোক তুলে নিচ্ছে চেয়ারগুলি ভাঁজ-টাজ করে। মাইক চোঙগুলি ঠোঁট কামড়ে ঘাসে মুখ বুজে, তার খোলা, এলোমেলো। আর সারা মাঠ জুড়ে পড়ে আছে কমলালেবুর খোসা,ইত:স্তত।
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে ডিসেম্বর, ১৯৬৯ সন্ধ্যা ৭:০০

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



