somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পৃথিবীর সব গান নিভে গেলে তবু কিছু আলো গান হয়ে ওঠে

২৩ শে জুন, ২০১২ সকাল ১১:২৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

তুমি মৃত্যুকে প্রশ্ন কর। হাতি প্রশ্ন করে, আলপিনও। একগাদা কেবল প্রশ্ন পড়ে থাকে, পাহাড়ের মত, আমুন্ডসেন সেখানে ফ্ল্যাগ ওড়ান। চাঁদ নিয়ে প্রশ্ন জাগে। মাটির জল নিয়েও। প্রশ্নের মুন্ড-মাথা হাত পা গজায় এই ভাবে, সেও ঘুরে বেড়ায় রাজপথে। মানুষের মত। সেও অস্থির। আজ লোকাল ট্রেনে, তো কাল লক-আপে। সে দিন ও রাতের ভেতর, ট্রামের তারবাজির ভেতর মেজরাপের মত অস্থির। কলাপাতার উপর ধুলো আঠালো হয়ে বসে, শার্টের কলারে বিষাদের দাগ, উল্টাতে না পারা আরশোলার মত, এই থেঁতলে দিলে তুমি- প্রশ্নদের। বাস্তব। বা আকাশে উড়িছে বকপাখি- রবিঠাকুর এখন সাদা ধোঁয়ার মত এক গান- অবয়বহীন- ইস্কুলবালিকা বৃষ্টির ভেতর দিয়ে গেলে তিনি ঘুরেও তাকাতেন না। এখন তোমার নখের ভেতর মৃত্যু। নীল আঙ্গুলে কাঁচ মুচ্ছ ট্যাক্সির জানালার। বট পাতা ভেঙ্গে তার সাদা আঠা বেয়ে উঠছে তোমার আঙ্গুলে, সেই হয়ে উঠেছে তোমার আই-লাইনার, তুমি সেজে উঠছ আলতায়, কেমন যেন তোমার জ্বীভে নীল দোয়াতের কালি- ছেলেবালার পায়েসের স্বাদ। দ্যেলুজের প্রথম খন্ডের মত একটা মেঘ সাদা হয়ে আছে মেঘলা জানালায়, চোখ মেঘের মত বড় হচ্ছে বা হ্রদের মত, রেটিনা ক্রমশ ফুলতে ফুলতে উৎলে পড়ল দুধের মত। কালিদাস আওড়াচ্ছেন রঘুবংশম- খুব স্লো। কোন খোলা চুল ওইশ্বর্য রাই, ইষৎ ফ্যাট সমেত, তরুনী ইঞ্জিনিয়ার সীতার ব্যস্ততায় নেমে যাচ্ছে পাতালে, সম্প্রসারিত হচ্ছে মেট্রো- আর সেটা জ্যাকসেওনের মস্কোর মত স্লো। তুমি মৃত্যুকে প্রশ্ন কর, থেমে থেমে- লিটার, মিটার, ফুট। সব বাড়তি, পাতা উড়ছে, হাওয়া বাড়তি, কাজেই সব প্রবল লাগছে এখন তোমার, ছাপাখানার শব্দে অসম্ভব গতি। মেগাস্থেনিসের বাড়তি যে সব নোট একদিন ইন্ডিকা হয়ে গেল- ঘাড় নাড়ছেন রোমিলা থাপার, আরকিমিডিস প্লবতা দেখাতে চৌবাচ্চায় ছুঁড়ে ফেলছেন চন্দ্রগুপ্তের মুকুট। বৌদ্ধ শ্রমণ যে পথে যান, সেই পথে ফেরেন না, ঘুরপথে এই নাকতলা, ওই কানপুর- কথাও মিনিবাস-গুগুল ম্যাপ-ক্লাস ফাইভের ভুগোল ক্লাসে ম্যাপ পয়েন্টিং, আমাদের পেকে যাওয়া চুলগুলি লুপ্তপ্রায় যৌবনের আশেপাশে কে যেন বসিয়ে দিচ্ছে জোর করে, সম্ভবত ইনিই ক্লদ মানে। হে উৎকীর্ণ শিলালিপি, হে ভালবাসার শহীদ কতিপয় স্তম্ভ, আমাদের প্রেমের গোরস্থানে ক্রমাগত উপগত পাতারা, হে পাথরের জন্ম-মৃত্যু লেখা রঙচটা এলিজি, শোনো হে স্বর্ণসীতা, আদিবাসী কিশোরী পদাঘাত না করলে অশোক গাছে ফুল ফোটে না, তিষ্ঠ ক্ষণকাল, এমনটাই লোকশ্রুতি।

একদিন এক ট্রেন মৃত্যুকে প্রশ্ন করল। একদিন দক্ষিণের হাওয়া। একদিন এক দোয়াত কালি। একদিন উপলক্ষ্য। আলো এলো অদল-বদলের খেলা নিয়ে। জীবনানন্দ শুয়ে রইলেন ঘাপটি মেরে - দ্যাকাই যাউক শিশিরবিন্দুকে কতখানি বড় মনে হয় সূর্যের চেয়ে। সমস্ত বিষাদ কচুকাটা করে দেশে ফিরে গেলেন লর্ড ক্লাইভ- তোরা বিষাদঘোটক আর তোরা সিন্ধুঘোটক। বেহালাটা মাটিতে নামিয়ে নিজের শার্ট রিফু করতে করতে উকিল মুন্সি একদিন বললেন, তুমি এইখানে এসে বসো, জলে হিজিবিজি দেখ, অনেক উত্তর আছে, মজা ব্রহ্মপুত্রে তখনও কয়েকটি এলোমেলো নৌকা। তাকালে ঝিম ধরে আসে। নৌকা প্রশ্ন করতে লাগল। বেহালাও বেজে ঊঠল অনেক প্রশ্ন নিয়ে। সূঁচ-সুতা সবাই চিৎকার করতে লাগল খালাসিটোলায়, নিউদিল্লী স্টেশনের শব্দ, আনাতোলিয়ার আদালতে- উঠোন জুড়ে কেটে ফেলা চুল, উড়ো চিঠি, চায়ের ভাঁড় সবাই প্রশ্ন করতে লাগল। আমি ঘুমিয়ে পড়লাম।
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে জুন, ২০১২ সকাল ১১:৫১
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

মেহেদী নামের এই ছেলেটিকে কি আমরা সহযোগীতা করতে পারি?

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১০:০৪


আজ সন্ধ্যায় ইফতার শেষ করে অফিসের কাজ নিয়ে বসেছি। হঠাৎ করেই গিন্নি আমার রুমে এসে একটি ভিডিও দেখালো। খুলনার একটি পরিবার, ভ্যান চালক বাবা তার সন্তানের চিকিৎসা করাতে গিয়ে হিমশিম... ...বাকিটুকু পড়ুন

দ্য অরিজিনস অফ পলিটিক্যাল জোকস

লিখেছেন শেরজা তপন, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১১:১৯


রাজনৈতিক আলোচনা - এমন কিছু যা অনেকেই আন্তরিকভাবে ঘৃণা করেন বা এবং কিছু মানুষ এই ব্যাপারে একেবারেই উদাসীন। ধর্ম, যৌন, পড়াশুনা, যুদ্ধ, রোগ বালাই, বাজার দর থেকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভালোবাসা নয় খাবার চাই ------

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৯ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:০৬


ভালোবাসা নয় স্নেহ নয় আদর নয় একটু খাবার চাই । এত ক্ষুধা পেটে যে কাঁদতেও কষ্ট হচ্ছে , ইফতারিতে যে খাবার ফেলে দেবে তাই ই দাও , ওতেই হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জাতীয় ইউনিভার্সিটি শেষ করার পর, ৮০ ভাগই চাকুরী পায় না।

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৯ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৭



জাতীয় ইউনিভার্সিটি থেকে পড়ালেখা শেষ করে, ২/৩ বছর গড়াগড়ি দিয়ে শতকরা ২০/৩০ ভাগ চাকুরী পেয়ে থাকেন; এরা পরিচিত লোকদের মাধ্যমে কিংবা ঘুষ দিয়ে চাকুরী পেয়ে থাকেন। এই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×