somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মার্চ ১৯৭১ (কিশোরবেলার স্মৃতি)

২৭ শে মার্চ, ২০১২ বিকাল ৫:০৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

(২)
কার্ফিউ শিতিল হলো:
মেরাথন কার্ফিউ এর কারণে মানুষ ঘরের ভেতর বন্দী হয়ে রইলো। দেখামাত্র গুলির নির্দ্দেশ। বাজার-হাট বন্ধ। প্রায় প্রতিটি ঘরে খাবারে টান পড়লো। ফ্রিজের প্রচলন তেমন নেই। সারা শহরে হয়তো দুই একটা ঘরে আছে। তিনদিন বাদে কার্ফিউ কিছু সময়ের জন্য শীতিল হলো। ঘরের বার হওয়ার একটা সুযোগ হলো। রাস্তায় এখন আর ব্যারিকেড নাই। বাঙালি পুলিশ আর ইপিআর সদস্যদের ধরে এনে তাদেরকে দিয়ে ব্যরিকেড অপসারণ করা হয়েছে। পুরো দেশটি এখন কারাগারে রূপান্তরিত হয়েছে । কয়েদির মতো নিয়ন্ত্রিত মানুষের চলাফেরা। কিছু কিছু দোকানপাট খুলেছে। কিন্তু বেচা-বিক্রির দিকে দোকানিদের খেয়াল নেই। চাল ডাল নুন প্রভৃতি নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য টেনে টেনে নিজ বাড়িতে নিয়ে যেতে ব্যাস্ত হলো তারা। প্রথম প্রথম মিলিটারীরা গলিপথ দিয়ে তেমন ঢুকতো না। কার্ফিউ এর মধ্যে দ্রুত পায়ে এ-বাসা থেকে ও-বাসা যাওয়া যেতো। কিন্তু ঝুকিঁ ছিলো। একদিন গলি দিয়ে এসে বাসায় পা রেখেছি মাত্র। এসময় বিপরিত দিক থেকে প্রচুর ধূলো উড়িয়ে একটি মিলিটারী জীপ অতিক্রম করে গেলো। আমাদের বাসার সামনে একটি মেস ছিলো। মেসের কেউ একজন দরজা খুলে উকিঁ দিয়েছিলো। সাথে সাথে একটি বুলেট এস দরজায় বিধলো। কারফিউ এ ঘন্টা দুই-এক সময়ের বিরতিতে আমাকে চলে যেতে হলো গ্রামের বাড়িতে। সুরমা নদীর অপর পাড়ে কদমতলী বাস ষ্ট্যান্ড। সেখান থেকে মুড়িরটিন মার্কা বাসে যেতে হয়। চালকের পেছনে আড়াআড়ি দুই সারি লম্বা বেঞ্চ। নারিকেলের ছোবড়া দিয়ে তৈরি হালকা কুশন। এটি ‘আপার ক্লাস’। পেছনে লম্বালম্বী তিন সারি কাঠের বেঞ্চ। এটি ‘লোয়ার ক্লাস’। সৌভাগ্যক্রমে একটি বাস পেয়ে গেলাম। এই একটিমাত্র বাসই ছাড়ছে আজ। বাসে উঠে বসলাম। ষোল মাইলের মাথায় আমাদের বাড়ি। এইটুকু পথ যেতে অনেক সময় লাগতো। বারো মাইলের মতো হবে গোলাপগঞ্জ বাজার। সেখানে একটা বিরতি হতো। বাস ছাড়ার পরপরই থামতে হলো। তল্লাশি হবে। আমরা বাস থেকে নামলাম। দুই জন মিলিটারী সিপাহি। যুদ্ধ সাজে। ভয় জাগানো চেহারা। একজন নিরস্ত্র বাঙালি পুলিশ অফিসার। দুই তিনজন নিরস্ত্র বাঙাললি পুলিশ সদস্য। মিলিটারী সিপাহিরা বীরদর্পে দাড়িয়েঁ রইলো। কেন জানি ঐ বয়স্ক পুলিশ অফিসারের চেহারাটি মনের মধ্যে গেঁথে রইলো। এখনও মনে আছে। কপালজুড়ে বিন্দু বিন্দু ঘাম। পরনের খাকিঁ সার্টটি ঘামে ভিজে শরীরের সাথে লেপ্টে আছে। বিমর্ষ চেহারায় বাঙালি পুলিশ সদস্যরা তল্লাশী করলেন। তাদেঁর মধ্যে একটা রবোটিক আচরণ লক্ষ্য করলাম। মূল্যবান যাকিছু পাওয়া গেলো রেখে দেওয়া হলো। বাস চলতে শুরু করলো। ‘ভইটিকর’ নামক স্থানে এসে আবার থামতে হলো। তল্লাশী হবে। এখানে মুক্তিবাহিনী। চৌকষ স্মার্ট কয়েকজন বেঙল রেজিম্যান্টের সৈনিক। তাদের দেখে বুকটা ভরে উঠলো। তল্লাশী শেষে গাড়ি আবার চলতে শুরু করলো। অর্থাত এখন আমরা মুক্তাঞ্চলের ভেতর দিয়ে চলছি। অবশেষে বাড়িতে পৌঁছে গেলাম। বাড়ি পৌছেঁ দেখলাম, আমাদের চাচা শিকার করা যার শখ। মানুষ যাকেঁ শিকারী বলে ডাকে। তিনি পুকুর পাড়ে গ্রামের মানুষকে ট্রেনিং দিচ্ছেন। অস্ত্র বলতে দুইটি দু-নলা বন্ধুক, একটি টুটু বোর আর একটি এয়ার গান। বাকি সব বাশেঁর লাঠি। পাখি শিকারের বন্ধুক আর সাপ পেটানোর লাঠি। এগুলো যুদ্ধের জন্য কতটা উপযোগী। পাকিস্তান আর্মীর সাবেক সদস্য আমাদের শিকারী চাচার জানা না থাকার কথা নয়। কিন্তু সময় তখন অন্যরকম। মুক্তির নেশায় মেতেছে মানুষ।
...চলবে।।
৫টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

তাঁর বোতলে আটকে আছে বিরোধী দল

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:০৭



সেই ২০০৯ সালে তিনি যে ক্ষমতার মসনদে বসলেন তারপর থেকে কেউ তাঁকে মসনদ থেকে ঠেলে ফেলতে পারেনি। যারা তাঁকে ঠেলে ফেলবে তাদের বড়টাকে তিনি বোতল বন্দ্বি করেছেন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

নতুন গঙ্গা পানি চুক্তি- কখন হবে, গ্যারান্টি ক্লজহীন চুক্তি নবায়ন হবে কিংবা তিস্তার মোট ঝুলে যাবে?

লিখেছেন এক নিরুদ্দেশ পথিক, ১৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:২৬


১৬ মে ঐতিহাসিক ফারাক্কা দিবস। ফারাক্কা বাঁধ শুষ্ক মৌসুমে বাংলাদেশে খরা ও মরুকরণ তীব্র করে, বর্ষায় হঠাৎ বন্যা তৈরি করে কৃষক ও পরিবেশের মরণফাঁদ হয়ে উঠেছে। পানি বঞ্চনা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

কেউ কি আমার বন্ধু শাহেদের ঠিকানা জানেন?

লিখেছেন জিএম হারুন -অর -রশিদ, ১৬ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:৩৪



কেউ কি আমার বন্ধু শাহেদের ঠিকানা জানেন?
আমার খুবই জরুরি তার ঠিকানাটা জানা,
আমি অনেক চেষ্টা করেও ওর ঠিকানা জোগাড় করতে পারছিনা।

আমি অনেক দিন যাবত ওকে খুঁজে বেড়াচ্ছি,
এই ধরুণ, বিশ-একুশ বছর।
আশ্চর্য্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

আজকের ব্লগার ভাবনা:কথায় কথায় বয়কট এর ডাক দেয়া পিনাকীদের আইডি/পেইজ/চ্যানেল বাংলাদেশে হাইড করা উচিত কি? ব্লগাররা কি ভাবছেন?

লিখেছেন লেখার খাতা, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১২:১৩



অপূর্ব একজন চমৎকার অভিনেতা। ছোট পর্দার এই জনপ্রিয় মুখকে চেনেনা এমন কেউ নেই। সাধারণত অভিনেতা অভিনেত্রীদের রুজিরোজগার এর একটি মাধ্যম হইল বিজ্ঞাপনে মডেল হওয়া। বাংলাদেশের কোন তারকা যদি বিদেশী... ...বাকিটুকু পড়ুন

মৃত্যু ডেকে নিয়ে যায়; অদৃষ্টের ইশারায়

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৭ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৩৯

১৯৩৩ সালে প্রখ্যাত সাহিত্যিক উইলিয়াম সমারসেট মম বাগদাদের একটা গল্প লিখেছিলেন৷ গল্পের নাম দ্য অ্যাপয়েন্টমেন্ট ইন সামারা বা সামারায় সাক্ষাৎ৷

চলুন গল্পটা শুনে আসি৷

বাগদাদে এক ব্যবসায়ী ছিলেন৷ তিনি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×