somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

যে ছিল হৃদয়ের কাছাকাছি

১৮ ই নভেম্বর, ২০২০ রাত ১২:৩১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


ছবিঃ অন্তর্জাল

সময় বয়ে চলে নিজস্ব গতিতে, জীবন ও বয়ে যায় আপন গতিতে, কোথাও কিছু থেমে থাকে না। শুধু কোথাও না কোথাও থেকে যায় কিছু অনুভুতি। চলার পথে হঠাৎ থমকে দাঁড়াতে হয়। দেখতে দেখতে মার্চ এসে গেছে। রোজকার মত আমি কাজ শেষে কিছুক্ষণ ফুড কার্ট এর সামনে বসি। যদি একবার ওর দেখা পাই এই আশায়। চারদিকে কত মানুষ অথচ কোথাও নিহান নেই। আজও কফি হাতে বসে আছি, এই কফিটা বিবিএ'র ক্যাফেটেরিয়ার কফির মত বিচ্ছিরি, মনে হচ্ছে গরম পানি খাচ্ছি। কফিটা মুমিনুল এর সামনেই ফেলে দিই, ও কিছু বলেনা, আমিও না। ভীড় না থাকলে মুমিনুল আমার সাথে অনেক কথা বলে, আমি মনোযোগী ছাত্রের মত চুপচাপ শুনে যাই। বেশীরভাগ জুড়েই তার মঞ্চ নাটকের গল্প। মাঝে মাঝে আসলে আমি কিছুই শুনি না, নিয়ন বাতির আলোয় পার্পল কালারের শার্ট পরা সেই ছেলেটাকে খুঁজি, যার জন্য আমার বুকের ভেতর অজানা ব্যাথার ঢেঊ বয়ে যায়।

বেইলী রোডের এই পথ হাঁটতে এখন আর আমার ভালো লাগে না। রুমে এসেই বইগুলো নাড়াচাড়া করে ফেলে রাখি, পড়া আর হয় না। ঘড়ির কাটায় ১২:৩০। আমি চুপচাপ হাটুতে মাথা গুঁজে বসে থাকি। আমার এতটা একা লাগে, আমার চিৎকার করে বলতে ইচ্ছে করে, নিহান, তোমার জন্য আমার অনেক কষ্ট হচ্ছে।

অন্ধকার ভেদ করে হিয়ার কান্নার শব্দ ভেসে আসে। আমি চুপচাপ তাকিয়ে থাকি। কি বলবো এই মেয়েটাকে আমি? বাথরুমে কল ছেড়ে আমি কি কম কেঁদেছি? পরিবার পরিজন ছেড়ে এই শহরে এসে কি যন্ত্রণায় না কেটেছে একেকটা দিন। কতদিন তীব্র খিদে নিয়ে ঘুমিয়ে পড়েছি, কতরাত জানালার গ্রিল ধরে বোবা কান্না কেঁদেছি। আমি আলো জ্বেলে হিয়ার পাশে গিয়ে বসি। বোকা মেয়ে এভাবে কেউ কাঁদে!
হিয়া ভেজা চোখে আমার দিকে তাকিয়ে থাকে। যে জীবন তুমি ফেলে এসেছ, সে জীবন আর কখনোই তোমার হবে না, ভালোবাসতে শিখো, দেখবা সব বদলে গেছে। আমি অনেকটা সময় হিয়ার পাশে বসে থাকি, মেয়েটা ঘুমিয়ে পড়ে, সদ্য কলেজে পড়া মেয়েটার জন্য আমার মায়া হয়।

আমার পরীক্ষার ফি জমানো হয়ে গিয়েছে, আর মাত্র কয়টা দিন, তারপর চলে যাবো। আমার জায়গায় অন্য মেয়ে কাজ করবে। সন্ধ্যায় ফুড কার্টে গিয়ে বসি। মুমিনুলকে বললাম, আমি চলে যাচ্ছি। ও মুখ ভার করে বললো, সবাই চলে যায় কেউ থাকে না। তবে কি জানেন, তুলি আপা, আমার আপনাকে মনে পড়বে। আপনি যে প্রতিদিন ব্যাগের মধ্যে একটা করে টিপ আটকে রাখেন এটা কেন করেন বলেন তো? আমি ম্লান হেসে বললাম, এমনি ভালো লাগে।
আচ্ছা তুমি আমার একটা কাজ করে দিবা?
জ্বী, বলেন। কি করতে হবে?
তুমি এই চিঠিটা যদি কখনো নিহানকে দেখো তাকে দিবা। মুমিনুল আমার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকে।
আমি ধরা গলায় আবারো বললাম, মুমিনুল দিবে তো?
জ্বী আপা। যদি আমি ভাইকে দেখি অবশ্যই দিব।
আমি চোখ মুছতে মুছতে এগিয়ে যায়। এ রাত, এ শহর, পিচঢালা পথ সবকিছু বিভ্রম মনে হয়। রুমে এসেই চিৎ হয়ে শুয়ে থাকি। কাপড় চেঞ্জ করতেও আলসেমি লাগে। হিয়া রুমে নেই। আমি চুপচাপ অন্ধকারে শুয়ে থাকি।

আমি ক্যাম্পাসে ফিরে যাচ্ছি। রাতের তূর্ণানিশিথা, আর বেশীক্ষণ নেই। আমি একা প্ল্যাটফর্মে বসে আছি। ভাবছি, শ্যাওলার মত শুধুই ভেসে যাওয়া। এই জীবনের কি মানে? হঠাৎ সামনে তাকিয়ে দেখি, কেউ একজন দৌড়ে আসছে। আমি দূরে ঝাপসা দেখি। তাও তাকিয়ে থাকি।
এক তাড়া বেলুন নিয়ে আমার সামনে দাঁড়িয়ে আছে নিহান। খানিকটা শুকিয়ে যাওয়া, রোদে পোড়া নিহানের দিকে তাকিয়ে থাকি।
তুলি এগুলা তোমার জন্য, কি হলো কথা বলবে না আমার সাথে??
আমি হাত বাড়িয়ে বেলুন নিতে নিতে বললাম, এগুলো এখন আমি কিভাবে নিবো?
তুলি.... নিহান আমার হাত ধরে দাঁড়িয়ে আছে, কখন আসবা??
তিন মাস পর। নিহান তোমার জব চলে গেছে তাই না?
নিহান অন্য দিকে তাকিয়ে শুধু মাথা নাড়ে। তুলি তুমি আবার আসবে তো?
আমার দু চোখ বেয়ে টপটপ করে পানি পরে। হ্যা আসবো। হাত বাড়িয়ে দিয়ে বললাম, নিহান আমাকে টিপ পরায় দিবা না?
নিহান টিপটা লাগিয়ে দিয়ে আবারো জিজ্ঞেস করলো, তুলি শিউর আসবে তো? ও সবার সামনে আমাকে জড়িয়ে ধরে। আমার মনে হচ্ছিল এ মুহুর্ত কখনোই শেষ না হোক। আমি কত কতদিন অপেক্ষায় ছিলাম এ মুহুর্তের, সেই পারফিউম এর স্মেল। আমার চোখের পানি নাকের পানি দিয়ে ওর শার্ট ভিজে যায়। ট্রেনের হুইসেল এর শব্দে আমি ট্রলিটা নিয়ে পা বাড়ায়। নিহান আমার হাত ধরে বললো, তুলি আমার জীবনের ক্যানভাসটা তুমি এঁকে দিবা? আমি কান্নার জন্য কথা বলতে পারছিলাম না। আমি ওর চুল গুলো হাত দিয়ে এলোমেলো করে বললাম, আমার জীবনে পেইন্টার হওয়ার স্বপ্ন পূরণ হয়নি, সে অপরচুনিটি আমি কোনদিন পাইনি। আমি তোমার জীবনের ক্যানভাসটা রঙ্গীন করে দিব। ট্রেন প্ল্যাটফর্ম ছেড়ে যাচ্ছে, নিহান যতদূর পারা যায় দৌড়ে আসছিল, আমি ওর হাত ধরে বললাম, নিহান আমি তোমার জীবন এর শুধু একটা গল্প না পুরো জীবন হতে চাই। ট্রেন প্ল্যাটফর্ম ফেলে আসছে, নিহানের চোখ থেকে পানি পরছিল। আমি ঝাপ্সা চোখে তাকিয়ে থাকি। আমার মনে হয়, আমি আমাকেই ফেলে যাচ্ছি এই শহরে। বেলুনগুলো জানালা দিয়ে উড়িয়ে দিলাম।
নিহান আমার সবটুকু ভালোবাসা গ্যাস বেলুনে উড়িয়ে দিলাম শুধু তোমার জন্য,
এ রাতের নিস্তব্ধতা, তোমার সবটুকু হাহাকার আমি চেয়ে নিলাম।

নিহান প্লিজ ভালো থেকো.......


সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে অক্টোবর, ২০২৩ রাত ১২:২১
৬টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কষ্ট থেকে আত্মরক্ষা করতে চাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৯



দেহটা মনের সাথে দৌড়ে পারে না
মন উড়ে চলে যায় বহু দূর স্থানে
ক্লান্ত দেহ পড়ে থাকে বিশ্রামে
একরাশ হতাশায় মন দেহে ফিরে।

সময়ের চাকা ঘুরতে থাকে অবিরত
কি অর্জন হলো হিসাব... ...বাকিটুকু পড়ুন

রম্য : মদ্যপান !

লিখেছেন গেছো দাদা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৩

প্রখ্যাত শায়র মীর্জা গালিব একদিন তাঁর বোতল নিয়ে মসজিদে বসে মদ্যপান করছিলেন। বেশ মৌতাতে রয়েছেন তিনি। এদিকে মুসল্লিদের নজরে পড়েছে এই ঘটনা। তখন মুসল্লীরা রে রে করে এসে তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মেঘ ভাসে - বৃষ্টি নামে

লিখেছেন লাইলী আরজুমান খানম লায়লা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩১

সেই ছোট বেলার কথা। চৈত্রের দাবানলে আমাদের বিরাট পুকুর প্রায় শুকিয়ে যায় যায় অবস্থা। আশেপাশের জমিজমা শুকিয়ে ফেটে চৌচির। গরমে আমাদের শীতল কুয়া হঠাৎই অশীতল হয়ে উঠলো। আম, জাম, কাঁঠাল,... ...বাকিটুকু পড়ুন

= নিরস জীবনের প্রতিচ্ছবি=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৪১



এখন সময় নেই আর ভালোবাসার
ব্যস্ততার ঘাড়ে পা ঝুলিয়ে নিথর বসেছি,
চাইলেও ফেরত আসা যাবে না এখানে
সময় অল্প, গুছাতে হবে জমে যাওয়া কাজ।

বাতাসে সময় কুঁড়িয়েছি মুঠো ভরে
অবসরের বুকে শুয়ে বসে... ...বাকিটুকু পড়ুন

Instrumentation & Control (INC) সাবজেক্ট বাংলাদেশে নেই

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৫




শিক্ষা ব্যবস্থার মান যে বাংলাদেশে এক্কেবারেই খারাপ তা বলার কোনো সুযোগ নেই। সারাদিন শিক্ষার মান নিয়ে চেঁচামেচি করলেও বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরাই বিশ্বের অনেক উন্নত দেশে সার্ভিস দিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×