জানালার কাঁচে একফোঁটা, দু'ফোটা করে শিশির জমছে। ঝাপসা দেখাচ্ছে চারপাশ। আকাশ কি বিষণ্ণ, ক্লান্ত মেঘে ঢাকা? বুঝা যাচ্ছে না। উত্তরের হাওয়া একটু পর পর দরজায় কড়া নাড়ছে। এসব রাত এত দীর্ঘ আর ক্লান্তিকর মনে হয়। আগে শীত মানে ছিল অদ্ভুত এক ভালোলাগা। চারদিকে উৎসব উৎসব ভাব। আর এখন সবই যান্ত্রিক।
কলেজে থাকতে রংপুর এর এক আপু ছিলেন, আপু বলতেন "এখনই এত বই পড়ো না, বাস্তবের সাথে মিলাতে পারবে না। কষ্ট পাবে। " এখন মনে হয় কথা একেবারে ও মিথ্যে বলেনি। বই আর চারপাশ যোজন যোজন ফারাক। যখন সুস্থ থাকি, ঘড়ির কাটার সাথে পাল্লা দিয়ে পড়াশোনা, আর সব ভুলে যাই। কিন্তু অসুস্থ হলেই সব চোখের সামনে চলে আসে, সময় যেন থমকে দাঁড়ায়। কত কি যে করার ছিল। কিছুই হল না। যে পথে কোনোদিন না হেঁটে ও মনে হয় চিরচেনা। নিজের শহর থেকেও পরিচিত মনে হয়। অনিমেষের সেই জলপাইগুড়ি, কলকাতার ট্রাম, শিলিগুড়ির আঁকাবাঁকা পথ, আর স্বপ্নের দার্জিলিং। দার্জিলিং মানেই ভালবাসা কিংবা দীর্ঘশ্বাস। দার্জিলিং এর অপার্থিব সৌন্দর্যে একটা সূর্যোদয় আমার হোক। কুয়াশাচ্ছন্ন, শুভ্রতায় ঢাকা পাহাড়ের চূড়ায় একটা সকাল একেবারে ভিন্নরুপে এসে ধরা দিক।
অদ্ভুত বিষণ্ণতা ছেপে ধরে। কিসের পিছনে ছুটছি, আর কেনইবা ছুটছি! সব মিথ্যে মনে হয়। জীবন মানেই মৃত্যুর জন্য অপেক্ষা। এর চেয়ে বড় সত্য আর নেই। কুয়াশায় ঢাকা নিঃসীম চরাচরের মত ঝাপসা হয়ে যায় কতশত স্বপ্ন। সেই সাথে দূরে সরে যায় হাইডেলবার্গ এর স্বপ্ন। তারপর দূরবর্তী ট্রেনের হুইশেলের মত কিছু একটার অপেক্ষায় থাকি। যে শব্দ নিয়ে যেতে পারে অনেকটা পথ, দিতে পারে বিশুদ্ধ, নির্মল কোন আনন্দ। অথবা আবারো ভুল কোনো স্টেশনে।
সুচিত্রা ভট্টাচার্য'র কোনো এক বইয়ে পড়েছিলাম, অসুস্থ দাদা হুইলচেয়ার সমেত তীব্র অভিমানে হারিয়ে গিয়েছিলেন,আর কখনো ফিরেননি। আমারো মাঝে মাঝে এমনি করে হারিয়ে যেতে ইচ্ছে করে বহুদূর। রোজকার এই টিপিক্যাল চিন্তাভাবনা থেকে বেরিয়ে অনেকদূর হারিয়ে যেতে ইচ্ছে করে। ঝাপসা কাঁচে দেখা যায় কোনো বারান্দায় দাঁড়ানো কোন প্রেয়সীর একান্তই অশ্রু নির্গমন কিংবা তুমুল ভালবাসায় হারিয়ে যাওয়া। অতকিছু দেখতে নেই, মানুষের সম্পর্কে যত কম জানা যায় ততই ভালো। (অসমাপ্ত)
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে অক্টোবর, ২০২৩ রাত ১২:২৫

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




