somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আসুন, "আজ আমরা উপরওয়ালার নিকট দেশের এমন সকল অসুস্থ সাংবাদিকদের মানসিক সুস্থতা কামনা করি"।

১০ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ রাত ৯:১০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



(ঘটনাঃ ১)
মনে পড়ে, খুব ছোটবেলায় পাশের বাড়ির একজন প্রতিবন্ধীকে কটাক্ষ করায় আম্মার হাতে বেদম মার খেয়েছিলাম সেদিন। মার দিয়ে আম্মা আমাকে বলেছিল,
"বাবা, আজকে তুই সুস্থ আছিস বিধায় বুঝতেছিস না, সুস্থতা যে আল্লাহ্‌র কতো বড় নেয়ামত!! তোকে আমাকে সবাইকেই তো একই আল্লাহ সৃষ্টি করছে। তোর আমার মতো এইসব প্রতিবন্দিরাও তো সেই এক আল্লাহ্‌রই বান্দা। তুই সুস্থ স্বাভাবিক, এই অহংকার থেকে যদি আজকে সেই আল্লাহ্‌র সৃষ্টি আরেক বান্দাকে কটাক্ষ করিস, সেটা শুনতে পেয়ে যদি সেই বান্দা খুব কষ্ট পায়, নিশ্চিত তার কষ্টে আল্লাহও কষ্ট পাবেন। কারন, তাকে তো এমন বানিয়েছেন আল্লাহই। আর সেই কষ্ট থেকে রাগান্বিত হয়ে তিনি যদি হুট করে তোকেও সেই প্রতিবন্ধির মতো করে দেন, তুই কি কিছু করতে পারবি??"

ভীষণ মার খেলেও, আম্মার সেদিনের কথাগুলো দাগ কেটে গিয়েছিলো আমার মনে। এরপর থেকে যখনি কোনও প্রতিবন্ধীকে দেখি, মনে মনে প্রার্থনা করি "আল্লাহ তুমি এদের ভালো করে দাও, এবং আর কাউকে এমন প্রতিবন্ধী করো না!!" আর কটাক্ষ করার কথা তো মাথাতেই আসে না...!!

***

(ঘটনাঃ ২)
ছবির ছেলেটি, দেহন গ্রামের বিজিবি সদস্য শমসের আলীর ছেলে আমির হামজা। ছেলেটি সদর উপজেলার দেহন রওশনপুর দাখিল মাদ্রাসার মেধাবী ছাত্র। ছেলেটি এতোটাই মেধাবী যে, কোনো বিষয়ে একবার ধারণা নিলে তা পরে হুবহু তুলে ধরতে পারে। সবাই বলে, এটা তার বিশেষ গুণ।

আমিরের সম্বন্ধে তার এলাকাবাসীরা জানায়, আমির ছোট থেকেই খুব মেধাবী। তবে তার চেহারা কিছুটা এলিয়েনের মতো বিধায় তার সঙ্গে এলাকার ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা খেলাধুলা করতে ভয় পেত। এ কারণে আমির সব সময় বাড়িতেই থাকত।
তবে আমিরের মা তার ছেলে সম্বন্ধে বলেন, "আমির আমাদের পরিবারের লক্ষ্মী। আমরা পরিবারের কোনো সিদ্ধান্ত নিতে আমিরের সঙ্গে কথা বলি আগে। কারণ আমির সব সময় সঠিক সিদ্ধান্ত দেয়।"

উপরের ছবিটি দেখে এতক্ষণে সবাই নিশ্চয়ই বুঝে ফেলছেন, আমিরকে নিয়ে আমার এতগুলো কথা বলার কারনটি!!
হ্যা, সেই আমির এবার এসএসসি পরীক্ষা দিচ্ছে অন্য দশজন পরীক্ষার্থীর মতো। সে খবর পেয়ে "দৈনিক কালেরকন্ঠ" পত্রিকার রিপোর্টাররা ছুটে যান তাকে নিয়ে রিপোর্ট করার জন্য। করলেন রিপোর্টও। কিন্তু সেই রিপোর্টে তারা আমিরকে দেশের একটি মূল্যবান সম্পদ হিসেবে পরিচয় না করে দিয়ে পরিচয় করিয়ে দিতে চাইলেন এভাবেই,উপরের ছবির মতো একজন "এলিয়েন" হিসেবে।
যার একমাত্র কারন হল, "এলিয়েন পরীক্ষা দিচ্ছে এমন হেডিং দেখা মাত্রই পাঠকরা আকৃষ্ট হবে বেশী, এবং নিউজটিও পড়া হবে বেশী, আবার পত্রিকাটিও তুলনামূলক ভাবে বিক্রিও হবে বেশী।"

একটু ভাবুন তো, "এলিয়েন বলে ডাকতো দেখে যে প্রতিবন্ধী ছেলেটি এলাকার লোকদের থেকে নিজেকে আড়াল করে ঘরের কোনে পড়ে থাকতো, সেই ছেলেটি যখন আগামীকাল ঘুম থেকে উঠে দেখবে পত্রিকার মাধ্যমে সারা বাংলাদেশ বাসী তাকে এলিয়েন হিসেবে চিনছে, তখন ছেলেটির মানসিক অবস্থাটা কেমন হবে...??" জানি, আপনি আমি কেউই এর জবাব খুঁজে পাবো না।

মাঝে মাঝে খুবই অবাক হয়ে যাই কিছু সাংবাদিকদের এমন কর্মকাণ্ডে, "দু'টাঁকা বেশী পাওয়ার লোভে, বসের নিকট একটু ভালো হওয়ার লোভে তারা কতোটা স্বাভাবিক ভাবে একজন মানুষের জীবনকে নিয়ে এভাবে নিষ্ঠুরভাবে খেলতে পারে...!!"

একটা সময় জ্ঞানী গুনি, মুরুব্বীরা, শিক্ষকরা বলতো, "ছোট থাকতেই বাচ্চাদেরকে পত্রিকা পড়ানোর অভ্যাস করাও, এতে তারা অনেক কিছু সিখতে পারবে, এতে খুব দ্রুত তাদের মানসিকতার বিকাশ ঘটবে।"
কিন্তু বর্তমানে দিনের পর দিন যেভাবে আমাদের দেশের সাংবাদিকদের মানসিক অবস্থার অবনতি হচ্ছে, তাতে করে সেই পত্রিকা পড়ে আমাদের পরবর্তী পজন্মের মানসিকতার কেমন বিকাশ ঘটবে, বলতে পারেন??

তাই আসুন, "আজ আমরা উপরওয়ালার নিকট দেশের এমন সকল অসুস্থ সাংবাদিকদের মানসিক সুস্থতা কামনা করি"।

(বিঃদ্রঃ পরিশেষে কালের কন্ঠ পত্রিকাকে ধন্যবাদ জানাই এ কারনে যে, নিউজটি তাদের অনলাইন পেজে প্রকাশিত হওয়ার প্রায় ৪০ মিনিট পড়ে সচেতন পাঠকদের তীব্র সমালোচনা মুখে পড়ে তাদের ভুল বুঝতে পারেন এবং শিরোনামটি পরিবর্তন করতে বাধ্য হন!!)
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ রাত ৯:১৫
৪টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

একাত্তরের এই দিনে

লিখেছেন প্রামানিক, ০১ লা মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৬


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

আজ মে মাসের এক তারিখ অর্থাৎ মে দিবস। ১৯৭১ সালের মে মাসের এই দিনটির কথা মনে পড়লে এখনো গা শিউরে উঠে। এই দিনে আমার গ্রামের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হুজুররা প্রেমিক হলে বাংলাদেশ বদলে যাবে

লিখেছেন মিশু মিলন, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ৯:২০



তখন প্রথম বর্ষের ছাত্র। আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে আমাদের আরেক বন্ধুর জন্মদিনের উপহার কিনতে গেছি মৌচাক মার্কেটের পিছনে, আনারকলি মার্কেটের সামনের ক্রাফটের দোকানগুলোতে। একটা নারীর ভাস্কর্য দেখে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইসলামের বিধান হতে হলে কোন কথা হাদিসে থাকতেই হবে এটা জরুরী না

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ১০:৫৫



সূরাঃ ৫ মায়িদাহ, ৩ নং আয়াতের অনুবাদ-
৩। তোমাদের জন্য হারাম করা হয়েছে মৃত, রক্ত, শূকরমাংস, আল্লাহ ব্যতীত অপরের নামে যবেহকৃত পশু, আর শ্বাসরোধে মৃত জন্তু, প্রহারে মৃত... ...বাকিটুকু পড়ুন

লবণ্যময়ী হাসি দিয়ে ভাইরাল হওয়া পিয়া জান্নাতুল কে নিয়ে কিছু কথা

লিখেছেন সম্রাট সাদ্দাম, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১:৫৪

ব্যারিস্টার সুমনের পেছনে দাঁড়িয়ে কয়েকদিন আগে মুচকি হাসি দিয়ে রাতারাতি ভাইরাল হয়েছিল শোবিজ অঙ্গনে আলোচিত মুখ পিয়া জান্নাতুল। যিনি একাধারে একজন আইনজীবি, অভিনেত্রী, মডেল ও একজন মা।



মুচকি হাসি ভাইরাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবন চলবেই ... কারো জন্য থেমে থাকবে না

লিখেছেন অপু তানভীর, ০২ রা মে, ২০২৪ সকাল ১০:০৪



নাইমদের বাসার ঠিক সামনেই ছিল দোকানটা । দোকানের মাথার উপরে একটা সাইনবোর্ডে লেখা থাকতও ওয়ান টু নাইন্টি নাইন সপ ! তবে মূলত সেটা ছিল একটা ডিপার্টমেন্টাল স্টোর। প্রায়ই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×