নিজেকে আধুনিক জীবনযাত্রার স্রোতে সমর্পণ করতে চাইলে প্রযুক্তিগত সুবিধার প্রথম অনুষঙ্গ হিসেবে মোবাইল ফোনকেই এখন বেছে নিতে হয়। কিন্তু পরিতাপের বিষয়, সংশ্লিষ্ট কোমপানিগুলোর স্বেচ্ছাচারী বিপণন কৌশলের যাঁতাকলে মোবাইল গ্রাহকদের যেন ত্রাহি অবস্থা। বিভিন্ন সময়ে আকর্ষণীয় প্যাকেজ, বিশেষ পদ্ধতির কলরেট সুবিধা, অভিনব অফার ইত্যাদির মাধ্যমে গ্রাহক সৃষ্টির কৌশলগত তৎপরতায় এরা সিদ্ধহস্ত। কোমপানিগুলোর মধ্যে প্রতিযোগিতা সত্ত্বেও কলরেট কমানোর দিকে সবারই অনাগ্রহের কারণে গ্রাহক সাধারণ অর্থনৈতিক নিগ্রহ দ্বারা একটি বিশেষ মহলের পকেট ভারী করতে বাধ্য হচ্ছে। যেমন বর্তমানে দেশের মোবাইল অপারেটরদের প্রতি মিনিটের জন্য পরিচালনা খরচ গড়ে 30 থেকে 40 পয়সার বেশি নয়। কাজেই কতর্ৃপক্ষ যদি মিনিটপ্রতি 1 টাকাও কলচার্জ ধার্য করে, তাহলে কোমপানিগুলোর প্রচুর মুনাফা অর্জন সম্ভব। জানা গেছে, তারা যদি প্রয়োজনীয় অপারেটিং খরচের সঙ্গে শতকরা 25 ভাগ মুনাফা যুক্ত করে কলচার্জ ধার্য করেন, তাহলে মিনিটপ্রতি কলচার্জ 50 পয়সার ওপরে ওঠে না। পৃথিবীর অনেক দেশেই মুনাফার সর্বোচ্চ সীমা বেঁধে দেয়া হয়েছে। কিন্তু আমাদের দেশে এ ধরনের কোনো ব্যবস্থা এখনো চালু করা হয়নি। এ কারণে এ দেশে মোবাইল ফোনের লোভনীয় ব্যবসা বোধকরি অন্যান্য দেশের কাছে ঈর্ষণীয় হয়েছে নিঃসন্দেহে। স্বয়ং অর্থমন্ত্রী সমপ্রতি এক বৈঠকে স্বীকার করেছেন, লাইসেন্স ফি প্রদান ছাড়াই মোবাইল কোমপানিগুলো এখানে ব্যবসা করছ্লে যা পৃথিবীর অন্য কোনো দেশে সম্ভব হতো না। অতিরিক্ত কলচার্জের ফলে গ্রাহকরা যেমন অনিবার্য ব্যয় বাড়ানোর সমমুখীন হচ্ছেন, তেমনি সরকারও কোমপানিগুলো থেকে উপযুক্ত রাজস্ব আদায় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। পক্ষান্তরে নতুন নতুন গ্রাহক সৃষ্টির জন্য গণমাধ্যমগুলোতে প্রতি মাসে লাখ লাখ টাকা বিজ্ঞাপন বাবদ অকাতরে প্রদান করা হচ্ছে।
মোবাইল ফোনের ব্যাপক প্রসারের পরিপ্রেক্ষিতে সরকার, কোমপানি ও গ্রাহকদের নিজ নিজ স্বার্থ রক্ষায় একটি যৌক্তিক নীতিমালা প্রণয়নের প্রশ্নে অন্তত যে বিষয়ের প্রতি অবশ্যই দৃষ্টি দেয়া উচিত বলে আমরা মনে করি, তা হলো্ল 1. কোমপানিগুলোকে স্থানীয় শেয়ারবাজারে সমপৃক্ত করা যাতে দেশের মানুষ পরোক্ষভাবে উপকৃত হতে পারে। 2. পাশর্্ববর্তী দেশগুলোর সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে পরিচালন ব্যয়ের সঙ্গে সর্বোচ্চ 30 ভাগ মুনাফাযুক্ত করে কলচার্জ নির্ধারণ করা। 3. কোমপানির প্রান্ত থেকে সরকারি ভ্যাট আদায় করা। 4. সব সময় নেটওয়ার্ক ত্রুটিমুক্ত রাখার ব্যাপারে কতর্ৃপক্ষের আন্তরিক হওয়া। 5. সব মূল্যমানের প্রি-পেইড কার্ড বাজারে পর্যাপ্ত সরবরাহ নিশ্চিত করা যাতে গ্রাহকরা সমমূল্যেই ওই কার্ড সংগ্রহ করতে পারেন। 6. মোবাইল ফোনের ব্যবসা সমপ্রসারণের লক্ষ্যে নতুন নতুন আগ্রহী কোমপানির জন্য অনুমোদনের শর্ত সহজ করে বাজারে প্রতিযোগিতা সৃষ্টি করা ও 7. সামান্য বিনিয়োগের দ্বারা অধিক হারে মুনাফা অর্জনের সম্ভাব্যতা থাকায় মোবাইল কোমপানিগুলো থেকে রাজস্ব আদায়ের পরিমাণ বাড়ানো। এ ছাড়া বাস্তব অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে প্রয়োজনীয় যাচাই-বাছাই করে আরো তীক্ষ্ন পদক্ষেপ গ্রহণপূর্বক সংশ্লিষ্ট ব্যবসা পরিচালনা প্রসঙ্গে একটি সার্থক নীতিমালা প্রয়োজন। যেখানে সরকারি কোষাগারে ভ্যাট-ট্যাক্সের সঠিক অঙ্কের টাকাই জমা হবে। পাশাপাশি মোবাইল কোমপানিগুলোর বেপরোয়া ব্যবসা বনধ করা যাবে। এ ব্যাপারে টেলিযোগাযোগ রেগুলেটরি কমিশনের কার্যকর পদক্ষেপ ছাড়াও সংশ্লিষ্ট কতর্ৃপক্ষ যথাযথ ভূমিকা রাখবে বলে আমরা আশা করি।
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে ডিসেম্বর, ১৯৬৯ সন্ধ্যা ৭:০০

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




