
ইশতেহার। হ্যা, নির্বাচনী ইশতেহার বলে কথা! জাতীয় সংসদ নির্বাচন আসলে দেশের বড় বড় রাজনৈতিক দলগুলো ইশতেহারের বহু পদের নির্বাচনী ইফতারি সাজিয়ে হাজির হয়। দেশের নামকরা বুদ্ধিজীবীদের দিয়ে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো নিয়ে ইলেকশনের আগে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে মিডিয়া ডেকে তা প্রকাশ করে। এটা অনেকটা প্রেমপত্রের মত! প্রেমিকার মন পাওয়ার জন্য পাগল প্রেমিক যেভাবে তিলকে তাল বানিয়ে, কাককে ময়ূর বানিয়ে, ফুলিয়ে ফাপিয়ে মনের সবটুকু আবেগ ঢেলে প্রেয়সীর মন পেতে চায়; ঠিক সেভাবেই রাজনৈতিক দলগুলো ভোটারদের সামনে ইশতেহারের ঝকঝকে সাদা বিরাট আকৃতির মুলা ঝুলিয়ে রাখে। এসব ইশতেহার রাজনৈতিক দলগুলো পূরণ করতে চায় কিনা, সম্পাদন করার যোগ্যতা রাখে কিনা তা নিয়ে দেশের সচেতন নাগরিক সমাজে যথেষ্ট সন্দেহ আছে। এসব ইশতেহার বিশ্বাস করে এমন ভোটারের সংখ্যা নিতান্তই অল্প।
আমি বাংলাদেশের রাজনীতিতে খুব অনভিজ্ঞ একজন মানুষ। কোন রাজনৈতিক দল কিংবা জোটের বিষয়ে আমার কোন আগ্রহ নেই। অন্যভাবে বললে, তাদের নীতি ও আদর্শের ব্যাপারে আস্থা কিংবা বিশ্বাসের যথেষ্ঠ ঘাটতি আছে আমার। তবে আমি মনে করি, আমাদের মত উন্নয়নশীল দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর নির্বাচনী ইশতেহার খুব গুরুত্বপূর্ণ। আমি দেশের খেটে খাওয়া সাধারন একজন নাগরিক হিসাবে ২০১৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ইশতেহার ঘোষণা করছি।
(১) মানুষের মৌলিক চাহিদাগুলো পূরণে সবচেয়ে গুরুত্ব দেওয়া হবে। দেশের শতভাগ মানুষের দুইবেলা অন্তত ডাল ভাতের ব্যবস্থা করা হবে। দেশের অতি দরিদ্র নাগরিক, যাদের বাড়ি-ঘর নেই তাদের জন্য সরকারি খরছে বাড়ি-ঘর নির্মাণের পদক্ষেপ নেওয়া এবং কর্মসংস্থানের একটি ব্যবস্থা করা হবে। তাদের সন্তানদের উপযুক্ত শিক্ষায় শিক্ষিত করে তুলতে আর্থিক সহযোগিতা করা হবে। বাসা বাড়িতে ১৬ বছরের কম বয়সী কোন ছেলেমেয়েকে গৃহকর্মী হিসেবে নিয়োগ করা যাবে না। কেউ তা অমান্য করলে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। অন্য কোন চাকরির বেলায়ও একই নিয়ম প্রযোজ্য হবে।
(২) শিক্ষা ক্ষেত্রে ব্যাপক সংস্কার করা হবে। শিশুদের জন্য সম্পূর্ণ অবৈতনিক উপায়ে সরকারি খরছে একমুখী শিক্ষা ব্যবস্থা চালু করা হবে। সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে শিশুদের শিক্ষার অধিকার নিশ্চিত করা হবে। শিশুদের জন্য ফ্রি দুপুরের খাবারের নিয়ম করা হবে। প্রাইভেট কিন্ডার গার্ডেন/ ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলগুলো বন্ধ/সীমিত করে দেওয়া হবে। ছাত্রদের রেজাল্ট নির্ভর মানসিকতা পরিবর্তনের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে। স্কুল-কলেজের সিলেবাসকে ছোট করা হবে যাতে ছাত্ররা সিলেবাসের বাইরের বইগুলো পড়তে উৎসাহ পায়; প্রকৃত শিক্ষা অর্জন করতে মনযোগী হয়। শিক্ষকদের পাঠদান শ্রেণীকক্ষে শেষ করতে হবে; কোচিং ও গাইড বই বন্ধ করা হবে। প্রচলিত নিয়মে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা বাতিল করে বিশ্বের নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর আদলে ভর্তি প্রক্রিয়া সম্পাদন করা হবে। উচ্চ শিক্ষাকে আরো কার্যকর করতে ইউনিভার্সিটির সংখ্যা কমিয়ে আনা হবে হবে। শুধুমাত্র প্রকৃত মেধাবীদের একটি বিশেষ উপায়ে বাছাই করে উচ্চ শিক্ষার সুযোগ করে দেওয়া হবে। উচ্চশিক্ষায় গবেষণাকে প্রাধান্য দেওয়া হবে। এজন্য সর্বাধুনিক লাইব্রেরি ও গবেষনাগার স্থাপন করা হবে। সরকার প্রয়োজনীয় ফান্ডের ব্যবস্থা করবে। বাজেটের একটি বড় অংশ শিক্ষা ও গবেষণা খাতে খরচ করা হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগে গবেষণা ও একাডেমিক অর্জনকে গুরুত্ব দেওয়া হবে। কোন সুপারিশ গ্রহণযোগ্য হবে না।
(৩) একটি দেশকে এগিয়ে নিতে হলে নাগরিকদের মানসিক ও শারিরীক সুস্থতা দরকার। এজন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। সরকারি হাসপাতালগুলোতে সর্বাধুনিক চিকিৎসা সরঞ্জাম সরবরাহ করা হবে। কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোকে মিনি হাসপাতালে রুপান্তর করা হবে যাতে এখানে ছোট খাটো অপারেশন করা যায়। প্রতিটি উপজেলায় নাগরিকদের জন্য সরকারের তত্বাবধানে একটি কম্পিউটারাইজ ডাটা বেইজ থাকে। এসব ডাটা বেইজে রোগীদের যাবতীয় চিকিৎসা বিষয়ক নথি সংরক্ষিত হবে। কোন ল্যাবরেটরি টেস্টের প্রয়োজন হলে তা সরকারি খরছে হাসপাতালের মধ্যেই করা হবে। প্রয়োজনীয় ঔষধ সামগ্রী হাসপাতাল থেকে সরবরাহ করা হবে। অসুস্থ রোগীদের যাতায়াতের জন্য সরকারি এম্বুলেন্স সেবা চালু করা হবে। হঠাৎ কোন দূর্ঘটনা ঘটলে তাৎক্ষণিক ডাক্তার ও এম্বুলেন্স পাঠিয়ে নিকটস্থ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হবে। সরকারি ডাক্তারদের প্রাইভেট প্রেকটিস বন্ধ করে দেওয়া হবে। ফলে প্রাইভেট হাসপাতাল, ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও ঔষধ কোম্পানীগুলোর হয়রানি থেকে রোগীরা নিষ্কৃতি পাবে। রাজধানী সহ সারা দেশে পার্ক নির্মাণ করা হবে। খেলাধুলার জন্য স্টেডিয়াম সহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা হবে।
(৪) কৃষিখাতে ব্যাপক উন্নয়ন করা হবে। বাংলাদেশ কৃষিপ্রধান দেশ হলেও অধিক জনসংখ্যা এবং চাষের জমির সল্পতার জন্য উন্নত প্রযুক্তি নির্ভর কৃষি পণ্য উৎপাদনের কোন বিকল্প নেই। এজন্য কৃষকদের উন্নত প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ করে গড়ে তোলা হবে। চাষের প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম বিনা সুদে কৃষি ঋণের মাধ্যমে কৃষকদের দেওয়া হবে। প্রয়োজনীয় সার, বীজ ও কীটনাশক ভর্তুকি দিয়ে সরবরাহ করা হবে। পানি সেচের জন্য হাওরগুলোতে বড় বড় পাম্প বসানো হবে। বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করা হবে।
(৫) একটি দেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নের জন্য যোগাযোগ ও অবকাঠামোর উন্নয়ন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এজন্য দেশের সড়ক ও রেল পরিষেবাকে ঢেলে সাজানো হবে। রাজধানীর সাথে দেশের জেলা ও বিভাগীয় শহরগুলোর উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তোলা হবে। ঢাকার চারপাশে দশ লেনের একটি রিং রোড নির্মাণ করা হবে। এর সাথে দেশের বিভাগীয় শহরগুলোকে পাঁচ লেনের রাস্তা (HighwaY) নির্মাণ করে সংযুক্ত করা হবে। দেশের সবগুলো বিভাগীয় ও জেলা শহরকে রেলপথে সংযুক্ত করা হবে। এজন্য রাজধানীর রিং রোডকে কেন্দ্র করে পাঁচটি অত্যাধুকিক রেল স্টেশন এবং পাঁচটি বাস স্টেশন স্থাপন করা হবে। দূরপাল্লার বাস ও ট্রেনগুলো সুলভ ও আরামদায়ক হবে। এগুলো পরিচালনায় পেশাদারিত্ব থাকবে। ড্রাইভারদের লাইসেন্স দিতে কড়াকড়ি আরোপ করা হবে। পরিবহনে সিন্ডিকেট ও চাঁদাবাজি শুন্যের কোটায় নামিয়ে আনা হবে।
(৬) দেশের পর্যটন সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে পর্যটন বান্ধব পরিবেশ সৃষ্টি করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে। পর্যটকদের নিরাপত্তার জন্য আইনশৃঙ্খলা ব্যবস্থার উন্নয়ন করা হবে। রাজধানী সহ দেশের বড় বড় শহর, নগর এবং পর্যটকদের বিচরণের এলাকাগুলোতে তথ্যকেন্দ্র চালু করা হবে। এছাড়া এসব পর্যটক মুখর স্থানগুলোকে বিশ্বমানে উন্নীত করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে। টুরিস্ট পুলিশ ও সিসিটিভি ক্যামেরা বাড়ানো হবে। নতুন নতুন পর্যটন এলাকা তৈরী করা হবে; এজন্য সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করা হবে। পর্যটকদের কাছে দেশের সংস্কৃতি, ইতিহাস ও ঐতিহ্যকে তুলে ধরা হবে। ভিসা সহজিকরণ সহ নিরাপত্তার বিষয়টি সর্বাধিক গুরুত্ব দেওয়া হবে। রাজধানীর অদূরে ১০০ তলার অধিক অত্যাধুনিক একটি ভবন নির্মাণ করে আধুনিক সুবিধা সম্বলিত একটি স্মার্ট সিটি গড়ে তোলা হবে। পরবর্তীতে বিভাগীয় শহরগুলোতেও তা সম্প্রসারণ করা হবে।
(৭) নাগরিকদের নিরাপত্তা ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করা হবে। চুরি, ছিনতাই, ডাকাতি রোধে প্রয়োজনীয় পুলিশ মোতায়ন করা হবে। প্রতিটি উপজেলায় কমপক্ষে তিনটি করে পুলিশ ফাঁড়ি তৈরী করা হবে। এসব ফাঁড়িতে শতাধিক পুলিুশ মোতায়ন করা হবে। পুলিশের দুর্নীতি রোধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। সবার জন্য সমান অধিকার নিশ্চিত করতে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করা হবে। এজন্য দেশের প্রতিটি উপজেলায় একটি ম্যাজিস্ট্রেট কোর্ট এবং ইউনিয়ন পর্যায়ে একটি করে আইনি সহায়তা কেন্দ্র স্থাপন করা হবে। কেউ মিথ্যা মামলা করলে শাস্তি হিসেবে বাদীকে বড় অংকের জরিমানা ও কমপক্ষে এক মাসের জেলের বিধান থাকবে। মিথ্যা সাক্ষী দাতাদের বেলায়ও একই আইন প্রযোজ্য হবে। দেশের ভিআইপি (VIP) সংস্কৃতিতে লাগাম টেনে ধরা হবে। সরকারি চাকরিজীবীদের দুর্নীতি ও নাগরিকদের হয়রানি শুন্যের কোটায় নামিয়ে আনতে কার্যকরী পদক্ষেপ নেওয়া হবে। তারা প্রভু নয়, জনগনের সেবক এই মানসিকতায় পরিচালিত হতে হবে।
(৮) দেশের উন্নয়ন, কর্মসংস্থান এবং বেকারত্ব রোধের জন্য নতুন নতুন উদ্যোক্তা তৈরী করা হবে। এজন্য কর্মমুখী/কারিগরি ও ভকেশনাল ট্রেনিং এর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। উদ্যোক্তাদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ, মূলধন যোগান ও সাহস দিয়ে সহায়তা করা হবে। এজন্য শিল্প মন্ত্রণালয়ের অধীনে আলাদা বিভাগ চালু করা হবে। দেশে ন্যুনতম মজুরী ব্যবস্থা চালু করা হবে। সরকারি চাকরীতে নিয়োগ বাণিজ্য বন্ধ করা হবে; ঘুষ আর স্বজনপ্রীতি কঠোর হস্তে দমন করা হবে। তরুণদের জন্য ব্যাপক কর্মসংস্থানের যথাযথ উদ্যোগ নেওয়া হবে।
(৯) দেশের উন্নয়নকে তরান্বিত করতে বৈদেশিক মূদ্রার সংরক্ষণ একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এজন্য দক্ষ ও পেশাদার নাগরিকদের উপযুক্ত প্রশিক্ষণ দিয়ে বিভিন্ন দেশে ভাল চাকরি কিংবা ব্যবসার জন্য পাঠাতে সরকার সহায়তা করবে। ধীরে ধীরে অদক্ষ শ্রমিকদের বিদেশগামীতা কমিয়ে আনা হবে; এরা যাতে সম্মানের সাথে নিজ দেশে পরিবার পরিজন নিয়ে শান্তিতে থাকতে পারে সে ব্যবস্থা করা হবে। নারী শ্রমিকদের মধ্যপ্রাচ্য সহ অন্যান্য দেশগুলোতে পাঠানো বন্ধ করা হবে। দেশে বিকল্প কর্ম সংস্থানের ব্যবস্থা করা হবে। নারী ও শিশু পাচার রোধে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হবে। দেশ থেকে মুদ্রা পাচারকারীদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করা হবে; দোষীদের বড় অংকের জরিমানা সহ জেলে ঢুকানো হবে।
(১০) দেশের সংসদীয় গণতন্ত্রকে ঢেলে সাজানো হবে। সংসদকে দু'কক্ষ বিশিষ্ট করা হবে। রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতায় ভারসাম্য আনা হবে। একজন সংসদ সদস্যকে কমপক্ষে স্নাতক ডিগ্রিধারী হতে হবে। জীবনে কখনো ফৌজদারি মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হলে; কিংবা সন্ত্রাসী চাঁদাবাজি, চুরি, ডাকাতি এবং খুনি হিসেবে আদালত দ্বারা কখনো দন্ডপ্রাপ্ত হলে এসব লোকজন সারা জীবনের জন্য সংসদ সদস্য হওয়ার অযোগ্য বিবেচিত হবে। অবসরপ্রাপ্ত সরকারী কর্মচারীরা রাজনীতি করতে পারলেও রিটায়ার্ড করার পর সংসদ সদস্য হতে পারবেন না। যাদের দ্বৈত নাগরিকত্ব আছে কিন্তু বউ বাচ্চারা দীর্ঘদিন থেকে বিদেশে স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন তারা বাংলাদেশের নাগরিক হলেও সংসদ সদস্য পদে নির্বাচন করতে পারবেন না। সাংসদদের জন্য প্লট/ফ্লাট বরাদ্দ বাতিল করা হবে; শুল্কমুক্ত গাড়ি আমদানীর সুবিধা বাতিল করা হবে। সংসদে আইন করে 'মাননীয়' শব্দটি নিষিদ্ধ করা হবে; যাতে মাননীয় বলতে বলতে কেউ চাটুকারিতা করতে না পারেন। বিরোধী দল ওয়াকআউট করতে পারবে তবে কোন অধিবেশন একটানা বয়কট করতে পারবে না। সরকারের নীতি ও কর্ম পরিকল্পনা জানতে এবং ভবিষ্যতে তার ধারাবাহিকতা রাখতে বিরোধী দল থেকে ছায়া মন্ত্রী (Shadow Minister) করা হবে। দুইবারের বেশি প্রধানমন্ত্রী হওয়া যাবে না। জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ কোন বিষয়ে সরকারি ও বিরোধী দল একসাথে বসে সিদ্ধান্ত নেবে। প্রয়োজনে দলের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে সংসদে ভোট দেওয়া যাবে এই আইনটি প্রচলন করা হবে। সংসদ সদস্যরা বাধ্যতামূলক অধিবেশনে যোগ দিতে হবে; আইনের বিভিন্ন দিক, বাজেট ও বিল উত্থাপন সহ গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে হবে।
(১১) দেশের শতকরা প্রায় ৮০% মানুষ গ্রামে বাস করে। এজন্য গ্রামীন জনগোষ্ঠীর জীবন-মান উন্নয়নের কোন বিকল্প নেই। শিল্প প্রতিষ্ঠান স্থাপন ও অবকাঠামো উন্নয়নে ব্যাপক বরাদ্দ দেওয়া হবে। শতভাগ শিক্ষা নিশ্চিত করা হবে। মানুষকে সচেতন করে তুলতে প্রশিক্ষণ ও সেমিনারের আয়োজন করা হবে। গ্রামের বিভিন্ন জাতি-গোষ্ঠীর মধ্যে সংস্কৃতির আদান প্রদান এবং সম্পর্ক উন্নয়নের জন্য প্রতিটি গ্রামে একটি করে 'কমিউনিটি হল' গড়ে তোলা হবে। পাশাপাশি একটি পাঠাগার ও ইন্টারনেট ক্যাফে প্রতিষ্ঠা করা হবে। দুই বছরের মধ্যে গ্রামগুলোতে শতভাগ বিদ্যুতায়ন করা হবে এং ইন্টারনেট পরিষেবা দেশের প্রান্তীক জনপদে পৌছে দেওয়া হবে।
(১২) সত্যি বলতে কী আমাদের দেশের ছোট-বড় প্রায় সকল শহরই অপরিকল্পিত উপায়ে গড়ে উঠেছে। এসব শহর প্রতিষ্ঠায় ছিল না কোন পরিকল্পনার ছক। নাগরিক সুযোগ সুবিধা ও নিরাপত্তার বিষয়টি কখনো গুরুত্ব পায়নি। নেই প্রয়োজনীয় সড়ক ও ফুটপাতের ব্যবস্থা। পাবলিক ট্রান্সপোর্টের নাজুক অবস্থা নিরসনে উদ্যোগ নেওয়া হবে এবং বিষয়গুলো অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সমাধান করা হবে। জলাবদ্ধতা নিরসনে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। ঢাকা থেকে গার্মেন্টস ফ্যাক্টরি সহ অন্যান্য শিল্প প্রতিষ্ঠানকে জেলা ও বিভাগীয় শহরগুলোতে স্থানান্তর করা হবে। ঢাকার মত বিভাগীয় শহরগুলোতে মেট্রো রেল পরিষেবা চালু করা হবে। ঢাকায় পাতাল রেল চালু করা হবে এবং রাস্তায় আলাদা বাস ও সাইকেল লেন থাকবে। পাবলিক বাসগুলো উন্নত প্রযুক্তি নির্ভর ও আরামদায়ক হবে। সকাল ৭টা থেকে সন্ধা ৭টা পর্যন্ত প্রাইভেট কার/জীপ/লাইটেস ইত্যাদি বাহনগুলো রাজধানীর প্রধান এলাকাগুলোতে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা থাকবে; একান্ত প্রয়োজনে ঢুঁকতে চাইলে পাঁচশত টাকা চার্জ হিসেবে দিতে হবে। তবে প্রয়োজনীয় পাবলিক সার্ভিসের ব্যবস্থা হওয়ার পরে এ আইন কার্যকর হবে।
(১৩) দেশের পরিবেশ উন্নয়নে সর্বত্র বনায়ন করা হবে। রাস্তার পাশে এবং খোলা মাঠে গাছ লাগানো হবে। বনভূমি সুরক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে এবং নতুন করে বনায়ন করা হবে। শহরের রাস্তার পাশে ফুল, ফল ও ঔষধি গাছ লাগানো হবে। বন্য প্রাণী সংরক্ষণে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে। সুন্দরবনের উন্নয়ন ও সুরক্ষা নিশ্চিত করা হবে। দেশের প্রধান নদীগুলোতে বেড়িবাঁধ তেরী করে বন্যা নিয়ন্ত্রণ করা হবে। নদীগুলো ড্রেজিং করা হবে। নদী ভাঙন রোধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে। বৈষয়িক জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সৃষ্টি বিপর্যয় থেকে দেশকে সুরক্ষা দিতে কার্যকরী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
(১৪) দুর্নীতি আমাদের সমাজের একটি বড় সমস্যা। এজন্য একটি কার্যকরী ও স্বাধীন দুর্নীতি দমন কমিশন গঠন করা হবে। এ কমিশন হবে সম্পূর্ণ স্বাধীন। যেকোন সময় যে কাউকে সরকারের অনুমতি ছাড়া প্রয়োজনে গ্রেফতার করতে পারবে। মাদক আমাদের সমাজকে গিলে খাচ্ছে। দেশকে মাদকমুক্ত করতে দেশব্যাপী মাদক বিরোধী অভিযান পরিচালনা করা হবে। মাদকের উৎপাদন বন্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। প্রতিবেশী দেশগুলো থেকে যাতে মাদক ঢুকতে না পারে সেজন্য সীমান্তে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হবে। মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের লোকবল বাড়ানো হবে। মাদকের বিরুদ্ধে ব্যাপক প্রচারণা চালানো হবে। মাদক চোরাচালানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কোন সম্পৃক্ততা পাওয়া গেলে চাকরি থেকে বরখাস্ত সহ কঠিন শাস্তির বিধান করা হবে।
(১৫) ধর্মকে পুঁজি করে যারা ব্যবসা করে; সাধারন ধর্মপ্রান মানুষদের বিভ্রান্ত করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থ নেওয়া হবে। ভন্ড পীর নামধারীদের আইনের আওতায় আনা হবে। যারা বিভিন্ন সভা সমাবেশে ধর্মের নামে অন্য ধর্মকে গালি দেয়; ভিন্ন অনুসারীদের কটাক্ষ করে তাদেরকে শাস্তির আওতায় আনা হবে। দেশের বড় বড় মাজারগুলো থেকে গাঁজাখোর, মদখোর ও মাজার ব্যবসায়ীদেরকে বের করে দেওয়া হবে। এজন্য ধর্মীয় বড় আলেমদের সমন্বয়ে একটি বোর্ড গঠন করে তাদের নির্দেশমতো শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে।
(১৬) একটি দেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেক নারী। এজন্য দেশের উন্নতি ও অগ্রগতির জন্য নারীর ক্ষমতায়ন ও কর্মসংস্থান জরুরী। নারীদের কর্মসংস্থানের জন্য সুন্দর কর্ম পরিবেশ আবশ্যক; তাদের কর্মের সাথে নিরাপত্তা ও স্বাধীন সত্তা জড়িত। এজন্য সংসদে ৩০ জন সংরক্ষিত নারী আসনে সরাসরি নির্বাচনের মাধ্যমে সংসদে প্রতিনিধি নির্বাচন করা হবে। প্রতিটি উপজেলায় নারীদের জন্য একটি করে ভাইস চেয়ারম্যান পদ সৃষ্টি করা হবে। প্রতিটি গ্রামে একটি করে নারী সংগঠন গড়ে তোলা হবে। তাদেরকে প্রয়োজনীয় পরামর্শ প্রদান করার জন্য সরকারি তরফে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
(১৭) ছাত্র রাজনীতি আমাদের সমাজের এক অভিশাপের নাম। আইন করে ছাত্র রাজনীতি বন্ধ করা হবে। ছাত্রদের মধ্যে নেতৃত্বগুণ গড়ে তোলার লক্ষ্যে ছাত্র সংসদ নির্বাচন চালু করা হবে; তবে এখানে কোন রাজনৈতিক দলের লেজুড়বৃত্তি করা চলবে না। ছাত্ররা লেখাপড়ার পাশাপাশি ছুটির দিনগুলোতে যাতে পার্ট টাইম কাজ করতে পারে সেজন্য দেশব্যাপী কর্মসংস্থানের উপযুক্ত ক্ষেত্র তৈরী করা হবে। এতে তারা পকেটমানির পাশাপাশি কর্মদক্ষতা অর্জন করতে পারবে। তরুণদের জন্য কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হবে। এজন্য সরকারের তরফ থেকে দেশি বিদেশি শিল্প উদ্যোক্তাদের সব রকম সহযোগিতা করা হবে। রপ্তানীমুখী শিল্প গড়ে তুলতে উদ্যোক্তাদের উৎসাহিত করা হবে।
(১৮) আধিবাসী ও পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর জন্য বিশেষ উন্নয়নমূলক পরিকল্পনা গ্রহণ করা হবে। চাকরির ক্ষেত্রে বাড়তি সুবিধা প্রধান করা হবে। তাদের ভাষা ও সংস্কৃতিকে সুরক্ষা দেওয়া হবে। 'সংখ্যালঘু' শব্দটি আইন করে নিষিদ্ধ করা হবে; একটি স্বাধীন ও সভ্য দেশে কেউ সংখ্যালঘু নয়। সবাই সমান নাগরিক অধিকার ও মর্যাদা ভোগ করবে। অসাম্প্রদায়িক চেতনার দেশকে গড়ে তোলা হবে। পৃথিবীর উন্নত, পরিকল্পিত ও শিল্পোন্নত দেশগুলো জনসংখ্যাকে জনসম্পদে রুপান্তর করেছে। আমাদের মত সল্পোন্নত দেশে অধিক জনসংখ্যা সম্পদ না হয়ে ব্যাপক সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে মানুষকে সচেতন করা হবে; এজন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে। শারীরিক ও মানসিক প্রতিবন্ধীদের জন্য উপযুক্ত ভাতার ব্যবস্থা করা হবে; যাতে তারা সম্মানের সাথে পরিবার ও সমাজে চলাফেরা করতে পারেন।
(১৯) সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকে নিয়ন্ত্রণ করা হবে। ফেইসবুক, ইউটিউব সহ অন্যান্য শক্তিশালী যোগাযোগ মাধ্যমগুলো শিশু ও কিশোরদের জন্য সীমিত করা হবে। ইন্টারনেটকে সেন্সরশীপের আওতায় আনা হবে; যাতে অল্প বয়সী ছেলে মেয়েরা ১৮+ বিষয়গুলো ইন্টারনেটে খুঁজে না পায়। ইন্টারনেট সাপোর্ট করে এমন ডিভাইজগুলোতে রেজিস্ট্রেশন করার সময় বয়সের প্রমাণপত্র দেখিয়ে নিবন্ধন করা বাধ্যতামূলক করা হবে।
(২০) মহান ভাষা আন্দোলন এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্ভুদ্ধ হয়ে দেশকে পরিচালনা করা হবে। মহান মুক্তিযুদ্ধের শহীদ/হারিয়ে যাওয়া বীরদের নাম তালিকাভুক্ত করা হবে। নতুন করে মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা করা হবে; ভূয়াদের বাদ দিয়ে তাদেরকে আইনের আওতায় এনে শাস্তি প্রদান করা হবে। মুক্তিযুদ্ধে যেসকল বীর বাঙালি নিজের জীবন বিলিয়ে দিয়েছেন তাঁদের সবাইকে 'বীরশ্রেষ্ঠ' উপাধিতে ভূষিত করা হবে; যিনি দেশকে স্বাধীন করতে নিজের জীবনকে বিসর্জন করলেন তাঁর চেয়ে বড় মুক্তিযুদ্ধা কেউ হতে পারে না। তাদের সবাই আমাদের কাছে বীরশ্রেষ্ঠ। স্কুল কলেজের পাঠ্যসূচীতে দেশের মূল্যবোধ, জাতীয় ঐক্য, সামাজিক দায়িত্ব এবং মাতৃভাষাকে লালন করার তাগিদ থাকবে।
পরিশেষে, গণতান্ত্রিক সরকার ব্যবস্থা হলো পৃথিবীর সর্বাধুনিক শাসন ব্যবস্থা। এ প্রক্রিয়ায় ভোটের মাধ্যমে জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হন বলে সরাসরি দেশের নাগরিকদের সম্পৃক্ততা থাকে। এজন্য যোগ্য প্রার্থী নির্বাচন করতে ভোটারদের সচেতনতা জরুরী। বাংলাদেশ গণতন্ত্রিক দেশ হলেও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া/ধাপগুলো গণতান্ত্রিক নয়। এখানে নমিনেশন কেনা-বেচা হয়; ভোটার কেনা হয়; জাল ভোট দেওয়া হয়; ভোট বাক্স ছিনতাই হয়; ভোটকেন্দ্রে যেতে বাঁধা দেওয়া হয়; অযোগ্য প্রার্থীদের নমিনেশন দেওয়া হয়। এগুলো আর যাই হোক, গণতন্ত্র নয়। আগামী ৩০শে ডিসেম্বরের জাতীয় সংসদ নির্বাচনটি সুষ্ঠু হোক এবং ভোটাররা যাতে নিরাপদে ভোট দিয়ে সৎ ও যোগ্য প্রার্থী নির্বাচিত করেন এই প্রত্যাশা রইলো।।

ফটো ক্রেডিট,
গুগল।
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে ডিসেম্বর, ২০১৮ ভোর ৪:১২

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



