২০১০ সালের কথা; তখন পূর্ব লন্ডনের ক্যানরি ওয়ার্ফ (Canory Wharf) এর একটি বাসায় ক্লাস নাইনে পড়া একটি ছাত্রীকে ম্যাথমেটিকস্ পড়াতাম। মেয়েটির আঙ্কেল সময়-সুযোগ পেলে আমার সাথে গল্পগুজব করতেন। একদিন দুইশত পঞ্চাশ পাউন্ডে কেনা নতুন একটি প্যান্টের বেল্ট দেখালে অনেকটা নির্বাক হয়ে ফ্যাল ফ্যাল করে তার দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিলাম। একটা সামান্য বেল্টের এতো দাম! হিসাব করে দেখলাম বাংলাদেশী টাকায় প্রায় ৩০ হাজার! বেল্টখানা আগ্রহভরে হাতে নিয়ে দেখলাম উল্টোদিকে খোদাই করে লেখা "হানন্ড্রেড পারসেন্ট কাউ লেদার"; পাশে ছোট্ট করে লেখা "মেড ইন ইন্ডিয়া।" আমার এতো অবাক হবার আসল কারণ হলো তখন পর্যন্ত এক্সপেন্সিভ শপিং মল কিংবা বিখ্যাত কোন ব্রান্ডের সাথে পরিচিত ছিলাম না।
এর কিছুদিন পর লন্ডনের বিখ্যাত হ্যারডসে (Harrods) একটি লেডিস হ্যান্ডব্যাগের দাম দশ হাজার পাউন্ড (১২ লক্ষ টাকা) দেখলাম। তবে এবার গরুর চামড়া নয়; ব্যাগটি নাকি পাইথন সাপের চামড়া দিয়ে তৈরী! এছাড়া জুতা, পার্স সহ নিত্য ব্যাবহার্য অনেক কিছুই পাইথন ট্যাগে দেখলাম। সেদিন হ্যারমিয (Hermes) ব্রান্ডের কুমিরের চামড়া দিয়ে তৈরী একটি হ্যান্ডব্যাগের দাম একশো হাজার পাউন্ড (১ কোটি ২০ লাখ টাকা) ট্যাগ মারা চোখে পড়েছিল। এতো দামী ব্যাগেরও ক্রেতা আছে! কল্পনাকেও হার মানালো। তাহলে বিশ্বব্যাপী অজগর আর কুমিরের চামড়ার রমরমা ব্যবসা আর চোরাকারবারিদের এতো লম্ফ-ঝম্ফের আসল কারণ এই! হঠাৎ মনে হলো, আচ্ছা তাহলে মানুষের চামড়া দিয়ে তৈরী জুতা কিংবা ব্যাগ তো আরো দামী হবার কথা। আছে নাকি?
পরক্ষণে মনে হলো, দেশীয় গরুর চামড়ার জুতা/ব্যাগের চেয়ে অজগর সাপ আর কুমিরের চামড়ার দাম যেহেতু অনেক বেশি সেহেতু দেশীয় সস্তা মানুষের মোটা আর অনুভূতিহীন চামড়া, অজগরের মতো শক্তিশালী আর ভয়ঙ্কর সাপের চামড়ার মতো দামী হবে না। তবে দেশের এলিট ব্যবসায়ী কিংবা রাজনীতিবিদ কিংবা আমলাদের চামড়ার দাম নিশ্চয় আমাদের চেয়ে বেশি হবে। এমনকি পাইথনের চেয়েও বেশী দামী হওয়ার কথা; কারণ এদের দেখলে পাইথনও ভয়ে কুঁকড়ে যায়।
ফ্যাক্ট- কোরবানীর পশুর চামড়া নিয়ে সিন্ডিকেট।
ফটো ক্রেডিট,
গুগল।
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে আগস্ট, ২০১৯ রাত ১২:৪৭