পদ্মা সেতু। হ্যা, স্বপ্নের পদ্মা সেতুর উদ্বোধনের আজ। দেশের দক্ষিনাঞ্চলের ২১টি জেলার মানুষের জন্য দীর্ঘদিনের একটি লালিত স্বপ্নের বাস্তবায়ন। বিশেষ করে বৃহত্তর ফরিদপুর অঞ্চলের ব্যবসা-বাণিজ্য এবং শিল্পায়নে এই সেতুর গুরুত্ব সীমাহীন। যাদের অক্লান্ত পরিশ্রম এবং পরিকল্পনায় দেশের ইতিহাসের অন্যতম বৃহৎ একটি প্রকল্প সফলতার মুখ দেখেছে তাদের সবাইকে ধন্যবাদ।
এদেশের একজন মানুষকেও আপনি পাবেন না যিনি পদ্মা সেতু বিরোধী কিংবা পদ্মা সেতু হলে কারো ক্ষতি হবে এমনটি কেউ বলতে পারবে না। এজন্য পদ্মা সেতু উদ্বোধন উপলক্ষে নাশকতার আশংকা নিছক গুজব এবং উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের সাজুগুজু অবস্থার প্রতি মানুষের দৃষ্টিপাত নিবদ্ধ করতেই এই গুজব ছড়ানো হতে পারে। এখন জনগনের করের টাকায় নির্মিত পদ্মা সেতুর বাজেট মাত্র ক'বছরের ব্যবধানে ৯ হাজার কোটি টাকা থেকে প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকায় উন্নীত হলে তা নিয়ে জনগন যদি প্রশ্ন তোলেন তার মানে এই না যে তিনি পদ্মা সেতুর বিরোধীতা করছেন। এই দেশ জনগনের, সেতুর টাকাও জনগন দিয়েছেন। সরকার আসে, সরকার যায়। ক্ষমতা আসে, ক্ষমতা চলে যায়। জনগন ভোটাধিকার প্রয়োগ করে সিদ্ধান্ত নেয় কে বা কারা দেশ পরিচালনা করবেন। রাষ্ট্র পরিচালনা করা মানে রাষ্ট্রের মালিক জনগনের জন্য কাজ করা। এটা কারো দয়া কিংবা কৃতিত্বের কিছু নয়। রাষ্ট্রের ঋণের বোঝা জনগনের ঘামের পয়সায় উশুল হয় বলে নাগরিকদের সব প্রশ্নের সঠিক এবং যৌক্তিক উত্তর দেওয়া ক্ষমতাসীনদের সাংবিধানিক দায়িত্ব।
পদ্মা সেতুর চেয়ে প্রায় পৌনে চারগুণ (১ লক্ষ ১৩ হাজার কোটি টাকা) বেশি ব্যায়বহুল 'রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র' নিয়ে খুব একটা মাতামাতি, হৈচৈ নেই। তাহলে দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে ব্যায়বহুল এই প্রকল্প আলোচনায় এতো পেছনে কেন? না, সম্ভবত ভুল বললাম; রূপপুর প্রকল্পের আবাসিক ভবনে প্রতিটি বালিশ কিনতে ৫ হাজার ৯৫৭ টাকা খরচ এবং প্রতিটি বালিশ আবাসিক ভবনের খাটে তোলার জন্য ৭৬০ টাকা মজুরি দেখানো নিয়ে অনেক আলোচনা সমালোচনা হয়েছে। অন্যদিকে কভারসহ প্রতিটি কমফোর্টের (লেপ বা কম্বলের বিকল্প হিসেবে ব্যবহৃত) দাম ধরা হয়েছে ১৬ হাজার ৮০০ টাকা। এভাবে ফ্রিজ, ইলেকট্রিক কেটলি, ওয়াশিং মেশিন, ডাইনিং টেবিল থেকে শুরু করে বিভিন্ন আসবাব ও পণ্য ক্রয়ে অস্বাভাবিক মূল্য দেখানো হয়েছে। এতে শতকোটি টাকার দুর্নীতির প্রমাণও মিলেছে।
পদ্মা সেতু তৈরীতে নিশ্চয় এমনটি হয়নি। কোন প্রকার দুর্নীতি হইলে নিশ্চয় মিডিয়ায় আসতো। আমাদের সুদক্ষ দুদক ঠিকই প্রমাণ করতো। অবশ্য পদ্মা সেতুর তো ঘুমানোর কোন প্রয়োজন নেই। এজন্য বালিশ, বিছানা চাদর কিনতে হয়নি, এগুলো পদ্মা সেতুতে তুলতে জার্মানীর তৈরী কোন স্পেশাল ক্রেন আনতে হয়নি। আর ফ্রিজ, ইলেকট্রিক কেটলি, ওয়াশিং মেশিন, ডাইনিং টেবিল তো দরকার নেই। পদ্মা সেতুর খিদেও নেই, গরম লাগার কোন অজুহাত নেই, স্যুট-টাই পরে পারফিউম মেখে প্রেমিকাকে খুশি করার কোন উসিলা নেই। শুধু পা ক'খানা পানিতে ভিজিয়ে রাখতে পারলেই খুশি।
শুনেছি উদ্বোধনী অনুষ্টানে নোবেল বিজয়ী শান্তির দূত ডক্টর মোহাম্মদ ইউনুস সাহেব দাওয়াত পেয়েছেন। অবশ্য প্রমত্ত পদ্মার প্রবল স্রোতে নাকানিচুবানি কিংবা কারো ধাক্কায় ব্রিজ থেকে পড়ে যেতে পারেন জেনে এই বয়সে অনুষ্ঠানে উপস্থিত হওয়ার ঝুঁকি নেবেন বলে মনে হয় না। হাজার হাজার কোটি টাকার মালিক এই সফল অর্থনীতিবিদ শুধুমাত্র গ্রামীণ ফোনের অংশীদারত্বের মুনাফা বাবদ বছরে কমপক্ষে ১ হাজার কোটি টাকা আয় করলেও দেশের প্রলয়ঙ্কারী বন্যা পরিস্থিতিতে খালি হাতে দেশে আসতে বিবেকে বাঁধবে। ভদ্রলোক বলে কথা। তারচেয়ে তিনি ক্লিনটন ফাউন্ডেশন, বিলগেটস-মেলেন্ডা ফাউন্ডেশনে প্রতি বছর কয়েক কোটি ডলার অনুদান করুন। এতে বিদেশীদের কাছে নিজের কদর বাড়বে, নতুন নতুন পুরষ্কার এবং সম্মাননা পাওয়ার সুযোগ হবে। ডুবে যাওয়া বঙ্গদেশে অনুদান দিলে তো আরেকটা নোবেল কেউ ছুঁড়ে মারবে না।
পদ্মা সেতুর উদ্বোধন উপলক্ষে আজ নাকি বুয়েট (বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়) বন্ধ। হয়তো পদ্মা সেতুটি বুয়েটের সুদক্ষ প্রকৌশলীরা এবং ছাত্ররা মিলেই তৈরী করেছেন। নিশ্চয়ই উনাদের সংবর্ধনা দিতেই প্রতিষ্ঠানটি বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। আজকের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের আলোকসজ্জা, খানাপিনা আর নাচগানের বাজেট মাত্র ৪ কোটি ৭৫ লক্ষ টাকা। ৩০ হাজার কোটি টাকার সেতুর তুলনায় তা খুবই সামান্য!
ফটো ক্রেডিট,
গুগল।