somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গল্পঃ সিলেক্টিভ মেমোরি

০৩ রা নভেম্বর, ২০১৪ সকাল ১১:৪৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সিলেক্টিভ মেমোরির মানুষদের কাছে আজ ফ্রী মেমোরির মানুষরা বড্ড মার খাচ্ছে। মানুষের জিনোম এখন জন্মের পর প্রথমে ডিকোড করা হয়, পরে তার চিন্তার একটা রেঞ্জ নির্ধারণ করা হয়, শেষে সেই অনুযায়ী জিনোমকে সিলেক্টিভলি এনকোড করা হয়। নিউরনের অ্যাক্সন, ডেন্ড্রাইট এখন সেট করা প্রোগ্রামের নির্দেশ মোতাবেক কাজ করে। বিজ্ঞানের অগ্রগতি এতোটাই যে, ব্রেইন সেলগুলো মানুষের এখন এমনভাবে বায়াসড করা হয়েছে যেন সারা জীবনেও একজন সিলেক্টিভ মেমোরির মানুষ নিজের ভুলে কোন ধরণের দুর্ঘটনার মুখোমুখি না হয়।

এখন ২০৭১ সালের ডিসেম্বরের ১৩ তারিখ সন্ধ্যাবেলা। মারুফ কান্দিরপাড় ধরে দক্ষিণ দিকে হাঁটছে। ডিসেম্বর মাসে এখন আর শীত পড়ে না। গ্রিন হাউস ইফেক্ট পৃথিবীকে যথেষ্ট পরিমাণ উষ্ণ করে দিয়েছে, পৃথিবী থেকে (আসলে বাংলাদেশ) শীতকাল বিদায় করে দিয়েছে। অবাক করা বিষয় হচ্ছে, বিজ্ঞানের রথী-মহারথীদের ধারণা করা ২০৫০ সালের মধ্যে বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চল ডুবে যাওয়ার ভবিষ্যৎ বানী শেষ পর্যন্ত ফলেনি। এখনো মানুষ সূর্যোদয়-সূর্যাস্ত দেখার জন্য কুয়াকাটা যাচ্ছে। মারুফও গিয়েছিল বছর পাঁচেক আগে। বলে রাখা ভালো, মারুফের বয়স আশি পেরোলেও এখনো তার স্ট্যামিনা একবিংশ শতাব্দীর প্রথম দিককার বিখ্যাত অ্যাটলেট ওসাইন বোল্টের কাছাকাছি। মানুষ তার স্ট্যামিনা ধরে রাখতে শিখে গেছে।

মারুফ দক্ষিণ দিকে হাঁটতে হাঁটতে রামঘাটে চলে আসল। তার হটাত মনে পড়ল, ২০১৪ সালের নভেম্বরের কোন এক সন্ধ্যায় সে এখানে ভাপা পিঠা কিনে খেয়েছিল। ক্ষুধা না থাকা সত্ত্বেও ভাপা পিঠার গায়ে নারকেল আর গুড়ের মাখামাখি শিল্পের পর্যায়ে দেখে সে লোভ সামলাতে পারেনি। তখন নভেম্বরেও হালকা ঠাণ্ডা পড়ত। তার সেই দিনটির জন্য খারাপ লাগতে শুরু করল। ফ্রী মেমোরির মানুষেরা অনেক কিছু কন্ট্রোল করতে শিখে গেলেও এখনো আবেগ কন্ট্রোল করা শিখেনি। পৃথিবীতে মারুফের মত মুষ্ঠিমেয় যে কয়েকজন ফ্রী মেমোরির মানুষ এখনো বাস করে তারা মাঝে মাঝেই কারণে অকারণে নস্টালজিক হয়ে পড়ে। সিলেক্টিভ মানুষের আবেগ স্ট্রংলি কন্ট্রোল্ড। শুধুমাত্র আবেগ কন্ট্রোলের জন্য হলেও অনেক ফ্রী মেমোরির মানুষ এখন সিলেক্টিভ মেমোরি বেঁছে নিচ্ছে। ফ্রী মেমোরির উপর এই আগ্রাসন দিন দিন বেড়েই চলছে।

মারুফ সেই ভাপা পিঠাটি পিকচারাইজ করছিল। এখন আর ভাপা পিঠা পাওয়া যায় না। বছর সাতেক আগে সে দেশের সবচেয়ে বড় ই-কমার্স সাইটে একবার ঢু মেরেছিল, কোন ধরণের পিঠা পায়নি। ভাপা পিঠা দুনিয়া থেকে বিলুপ্ত হয়ে গেল ভেবে তার খারাপ লাগছে। সে মনে মনে বিজ্ঞানের এই অগ্রগতির জন্য নিজেকে দুয়ো দিচ্ছে। হাসিনা-খালেদার যুগে বিজ্ঞান বিজ্ঞান বলে সে অনেক চিল্লাচিল্লি করেছিল। এখন এই বিজ্ঞান মানুষের আবেগ নিয়ে খেলছে। ‘আম্মু যখন তালের পিঠা, চালের গুড়ির পিঠা, শিরিষের পিঠা বানাত, তখন আমাদের বিজ্ঞান পিছিয়ে ছিল ঠিকই কিন্তু আমাদের আবেগ অনেক এগিয়ে ছিল। এখন আমাদের আবেগ প্রায় শেষ পর্যায়ে’- সে ভাবল।

হটাত করে সে পেছন দিকে হট্টগোল টের পেল। দেখল সিলেক্টিভ মেমোরির মানুষরা ফ্রী মেমোরির মানুষদের ধাওয়া করছে। সে দৌড়ে ঠাকুরপাড়া দিয়ে কোন রকম পালিয়ে বাঁচল। দৌড়াতে দৌড়াতে সে তার বন্ধু সাকিরের কথা চিন্তা করছিল, সাকিরকে গত বছর জোরপূর্বক সিলেক্টিভ মেমোরি নিতে বাধ্য করা হয়েছিল। তার মনে পড়ল, সাকির, শুভ, রনিরা সবাই মিলে তারা কতবার ঝর্ণায় গোসল করেছিল, সাগরে দাপরে বেড়িয়েছিল, পাহাড়ে চষেছিল! বঙ্গোপসাগরে স্পীড বোটের মাঝে মোতাহেরের সাথে ঝগড়া লেগে যাওয়ার ঘটনা মনে পড়ছিল। কোন রকমে জান বাঁচিয়ে সে বাসায় ফিরল।

রাত সাড়ে ৮ টা। বহুবছর পর সে সামুতে লগিন করল। সামুতে এখন আর আগের মত মানুষ ব্লগার নেই। সামুর আর্কাইভ ঘেঁটে সে ২০১৪ তে ফিরে গেল। ভাপা পিঠাকে নিয়ে তার সেই সময়কার পোস্টটি পড়ল। দেশ সেইসময় কি পরিমাণ উত্তেজিতই না ছিল! কেউ আনন্দে, আবার কেউ বা ক্ষোভে! কেউ হরতাল করছিল, কেউ বা মিষ্টি বিলাচ্ছিল! মারুফ সেই দিনের স্বরূপ চিন্তা করছিল।

কাল ১৪ ডিসেম্বর। কাল তার অনেক কাজ। সকালে সামুতে মানুষ ব্লগার হিসেবে শেষ পোস্ট দিবে। সুন্দর জামাকাপড় পড়ে দশটা নাগাদ ধর্মসাগর পাড়ে যাবে। সেখানে প্রায় দু’ঘণ্টা বসে থাকবে। দুপুরে হেঁটে হেঁটে ঈদগাহ ময়দানে যাবে। সেখানে কিছুক্ষণ সময় কাটিয়ে সে রওনা দিবে কান্দিরপাড় জামে মসজিদের দিকে। সেখানে যোহরের নামাজ আদায় করে সে মাতৃভান্ডারের দিকে যাবে। মাতৃভাণ্ডার এখন আর রসমলাই বানায় না। কিছুক্ষণ পুরাতন স্মৃতি মনে করে সে আবেগাপ্লুত হবে। ক্ষুধার্ত পেট নিয়েই সে হেঁটে হেঁটে ৫ কিলোমিটার দূরে সাকিরের বাড়িতে যাবে। বিকেলবেলায় টাউন হলে কিছুক্ষণ বসে থাবে। সন্ধ্যায় শেষ বারের মত কোন এক ই-কমার্স সাইটে ভাপা পিঠা সার্চ করবে।

সে জানে, সে তখনো ভাপা পিঠা পাবে না। তারপর সে তার ফ্রী মেমোরি সত্তা ত্যাগ করবে, সিলেক্টিভ মেমোরি নিবে। ১০০ বছর আগে যে এদিন বাংলাদেশ প্রথম সিলেক্টিভ মেমোরি নেয়া শুরু করে!

৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

লবণ্যময়ী হাসি দিয়ে ভাইরাল হওয়া পিয়া জান্নাতুল কে নিয়ে কিছু কথা

লিখেছেন সম্রাট সাদ্দাম, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১:৫৪

ব্যারিস্টার সুমনের পেছনে দাঁড়িয়ে কয়েকদিন আগে মুচকি হাসি দিয়ে রাতারাতি ভাইরাল হয়েছিল শোবিজ অঙ্গনে আলোচিত মুখ পিয়া জান্নাতুল। যিনি একাধারে একজন আইনজীবি, অভিনেত্রী, মডেল ও একজন মা।



মুচকি হাসি ভাইরাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

মিল্টন সমাদ্দার

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ৩:০৬

অবশেষে মিল্টন সমাদ্দারকে গ্রেফতার করেছে ডিবি। এবং প্রেস ব্রিফিংয়ে ডিবি জানিয়েছে সে ছোটবেলা থেকেই বদমাইশ ছিল। নিজের বাপকে পিটিয়েছে, এবং যে ওষুধের দোকানে কাজ করতো, সেখানেই ওষুধ চুরি করে ধরা... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবন চলবেই ... কারো জন্য থেমে থাকবে না

লিখেছেন অপু তানভীর, ০২ রা মে, ২০২৪ সকাল ১০:০৪



নাইমদের বাসার ঠিক সামনেই ছিল দোকানটা । দোকানের মাথার উপরে একটা সাইনবোর্ডে লেখা থাকতও ওয়ান টু নাইন্টি নাইন সপ ! তবে মূলত সেটা ছিল একটা ডিপার্টমেন্টাল স্টোর। প্রায়ই... ...বাকিটুকু পড়ুন

যুক্তরাষ্ট্রে বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ ঠেকাতে পুলিশি নির্মমতা

লিখেছেন এমজেডএফ, ০২ রা মে, ২০২৪ দুপুর ১:১১



সমগ্র যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসগুলোতে বিক্ষোভের ঝড় বইছে। যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ কর্মসূচী অব্যাহত রয়েছে। একাধিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিক্ষোভ দমনের প্রচেষ্টা চালালেও তেমন সফল... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ ০১

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৫৫



নতুন নতুন শহরে এলে মনে হয় প্রতি টি ছেলেরি এক টা প্রেম করতে ইচ্ছে হয় । এর পেছনের কারন যা আমার মনে হয় তা হলো, বাড়িতে মা, বোনের আদরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×