বিক্রমপুরের আজিজুল হক চিশতী নিজে গান লেখেন, সুর করেন। তাঁর অনুরক্তরা সেই গান গেয়ে বেড়ান বিভিন্ন আসরে। চিরায়ত বাংলা গানের যে ভাষা বৈশিষ্ট্য, আজিজুলের গানে তার প্রতিধ্বনি আছে। তবে আজিজুলের গান কেবল ভাষার ঐতিহ্যেই সমৃদ্ধ নয়, তাঁর গানে আছে ভাবুক বাঙালির আধ্যত্মিক অভিব্যক্তিও।
গানগুলো সংগ্রহ করেছেন হালিম আবদুল্লাহ ।
দেহ তত্ত্ব
একটা মাটির ভাণ্ড কী কাণ্ড এ ব্রহ্মাণ্ড ধরিয়াছে,
সে হইলে কভুও লণ্ডভণ্ড ব্রহ্মাণ্ড ফেলে না নিচে ॥
তার অঙ্গ গড়া জল-মাটি আর পঞ্চভূতের রস নিয়ে
অনঙ্গ তার রূপের বাহার সারা অঙ্গে যায় বয়ে গো
ভিতরে তার আলোর বাত্তি জ্বলে সারা দিবারাত্রি
সে অনন্ত কালের যাত্রী ঘোরে কালের পিছে পিছে ॥
তার সঙ্গে থাকে মহাকাল আর ভাবি কালের প্রাণ পাখি
এক ঘরেতে পাল গুটিয়ে অন্য ঘরে দেয় উঁকি গো
জন্ম আছে মৃত্যু নাই তার জন্ম মৃত্যু হয় একাকার
আজিজুল কয় বুঝ কারবার না হইলে তোর জনম মিছে ॥
সৃষ্টি তত্ত্ব
অনঙ্গ বিহঙ্গ তুমি অঙ্গে করো খেলা
নিস্তরঙ্গ জলে ভাসাও চতুরঙ্গের ভেলা রে
অনঙ্গ দেব
পরম আনন্দে করো খেলা ॥
গুপ্ত থাকো কলির ভিতর মুক্ত রঙিন ফুল
আবার পাখনা মেল প্রজাপতি গন্ধে হও আকুল ॥
রমণীয় রমণ রসে সাঁতার বেসামাল
গোপনে সৃজন কর সৃষ্টি মহাকাল ॥
সপ্তরাগে যন্ত্র বীণায় বাঁধ মধুর সুর
সুরে কারো অঙ্গ হাসে কেহ ব্যথাতুর ॥
আজিজুল কয় লাগলে গায়ে অনঙ্গের ছোঁয়া
জীবন পুড়িয়া ওড়ে চন্দনের ধোঁয়া ॥
সাধন তত্ত্ব
সুজন মাঝিরে নিদ্রা না রে যাইও
উজানে ভাসাইছ ডিঙা সাবধানে চালাইও ॥
একেতো বিপরীত স্রোতরে মাঝে বহে উত্তরের বাও
আবার ভাটির মানুষ আঁকড়ে ধরে ডুবাইতে চায় নাও ॥
আকাশেতে চোখ রাখিওরে মাঝি কখন উঠিবে শুকতারা
তুমি দিক ভুলিলে ঠিক করিও গন্তব্যের ধারা ॥
হাওয়ায় টানে জলে টানে রে মাঝি এ দেহে না সয়
আবার কোন টানেনি ডুবে নৌকা আজিজুল পায় ভয় ॥
বিচ্ছেদ
আমি কৃষ্ণ প্রেমের মর্ম বুঝলাম না সজনী গো
আমি নিগূঢ় প্রেমের মর্ম বুঝলাম না ॥
সে নিত্য ব্যথায় ডুবায় মোরে
কলঙ্ক দেয় ভব সংসারে
তবু তাহার তৃষ্ণা মিটে না সজনী গো
সে কীট হয়ে রয় বমূলে
দংশিলে অন্তর জ্বলে সজনী গো
তবু দারুন বিষে মরণ আসে না ॥
তার ভিতর কালো বাহির কালো
প্রকাশে বিকাশে আলো
কালো আলোর প্রভেদ মানে না সজনী গো
সে রঙ্গে খেলে রঙ্গে মিশে
অবলা বুঝিবে কিসে সজনী গো
অধম আজিজুল তার মানে বুঝল না ॥

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।





