somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ড. জাহিদ প্রধানঃ জাতির এক শ্রেষ্ঠ সন্তানের এমন পরিণতি..!!

২৮ শে অক্টোবর, ২০১৯ রাত ৮:৫৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

প্রথমবার ক্লাসে স্যার তার পরিচয় পর্বের সময় প্রশ্ন করলেন, “তোমরা জান, কয়টি ফন্টে মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিলো” । আমরা বলেছিলাম, ‘এগারোটি’ । স্যার হেসে বললেন, ‘না। দুইটি ফন্টে মুক্তিযুদ্ধ হয়েছে। এক, অস্ত্র হাতে সম্মুখযুদ্ধ। দুই, যন্ত্র হাতে বাঁজিয়ে গান গেয়ে বা ফুটবল পায়ে খেলে। আমি ছিলাম একজন স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শব্দসৈনিক।’ তারপর তার জীবন, পড়ালিখা তার আবিষ্কার নিয়ে অনেক কথাই বলেছিলেন সেদিন।


১৯৫৪ সালে নীলফামারীতে জন্ম। তিনি যখন ১৬ বছরের তরুণ তখনই দেশে শুরু হলো মহান মুক্তিযুদ্ধ। বাঙ্গালী জাতির উপর পাক বাহিনীর এমন পৈশাচিক নির্যাতন তিনি চোখ বুঁজে সহ্য করতে পারলেন না। তিনি খুব ভালো তবলা বাজাতে পারতেন। যোগ দিলেন ‘স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে’ । সেখান থেকেই বিভিন্ন দেশাত্নবোধক, অনুপ্রেরণামুলক গান তৈরি করে মুক্তিযোদ্ধাদের মনোবল বাড়িয়ে দেন। দীর্ঘ ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর দেশ স্বাধীন হলে বঙ্গবন্ধু উচ্চশিক্ষার জন্য তৎকালীন সোভিয়েত ই্উনিয়নে যে কয়জনকে পাঠান তাদের মধ্যে তিনি অন্যতম। মস্কোতে কৃতিত্বের সাথে ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করে সেখানকার এক বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনাও করেন। ১৯৮৬ সালে দেশে ফিরে এসে তিনি হাউস বিল্ডিং রিসার্চ ইনস্টিটিউটের কনসালটেন্ট হিসেবে যোগ দেন। তিনি ছিলেন নীলফামারী জেলা সমিতি ঢাকার সাধারণ সম্পাদক এবং স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র আহ্বায়ক কমিটির আহ্বায়ক।
১৯৯৪ সালে জুট জিও টেক্সটাইল ও জাহিদ’স মডেল আবিষ্কারের জন্য রাষ্ট্রীয় পদকে ভূষিত হন। দেশ-বিদেশে তার আবিষ্কার ব্যাপকভাবে প্রশংসিত হয়। তিনি বহু আন্তর্জাতিক সংস্থার সঙ্গে জড়িত ছিলেন। যুক্তরাষ্ট্রের ইন্টারন্যাশনাল ইরোসন কন্ট্রোল এসোসিয়েশন (আইইসিএ), ইন্টারন্যাশনাল জিওসিনথেটিক সোসাইটি, ভারতের এশিয়ান সোসাইটি ফর এনভায়রনমেন্টাল জিওটেকনোলজিসহ বিভিন্ন সংস্থার সদস্য ছিলেন। দেশে বিদেশের বিভিন্ন জার্নালে তার বহু সংখ্যক গবেষণা প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে।
শিক্ষাবিদ ড. জাহিদ হোসেন প্রধানের নাম বিশ্ব সাহিত্য ভবন থেকে প্রকাশিত শিশু-কিশোর মানচিত্র বইয়ে বাংলাদেশের কৃতি সন্তান হিসেবে অন্তর্ভুক্ত আছে। তিনি বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের বহির্পরীক্ষক হিসেবেও কাজ করেন। মস্কোর একটি বিশ্ববিদ্যালয়েও শিক্ষাকতা করেন তিনি।পাশাপাশি মহাকাশযান ডিজাইনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।
অথচ,
আবাসন ব্যবসায় নেমে রাজধানীতে নির্মাণ করেন বেশ কয়েকটি বহুতল ভবন। অথচ গত চার বছর তাকে ঠাঁই নিতে হয়েছিল অফিস কক্ষে। আজীবনের এই যোদ্ধাকে শেষটাই হার মানতে হয়েছে জীবনযুদ্ধে। ঋণের বোঝা, পরিবারের অসহযোগিতা, কাস্টমস কর্মকর্তাদের জিজ্ঞাসাবাদ- নিসঙ্গতা, হতাশা আর অপমানের হাত থেকে বাঁচতে বেছে নেন আত্মহত্যার পথ। বাড়ির একটি ফ্লাটে ফ্যানের সঙ্গে ঝুলে আত্মহত্যা করেন জাহিদ প্রধান।
কানাডা প্রবাসী ছেলে, আদরে বড় করা মেয়ে বা সব সম্পত্তি নিজের নামে নেওয়া স্ত্রী কেউ তার কোন খোঁজ রাখেননি। তার মতো একজন শিক্ষাবিদ, বিজ্ঞানী আমাদের থেকে চলে গেলেন । যা দেশ ও জাতির জন্য এক অপূরণীয় ক্ষতি। জাতির জন্য, দেশের জন্য করা যুদ্ধে জিতেছিলেন ঠিকই, কিন্তু হেরে গেলেন জীবনযুদ্ধে। তার মতো মানুষের এমন পরিণত কখনোই কাম্য ছিলো না।
ওপারে ভালো থাকুন, প্রিয় স্যার.....।
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে অক্টোবর, ২০১৯ রাত ৮:৫৫
৪টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধাদের মুমিনী চেহারা ও পোশাক দেখে শান্তি পেলাম

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:৫৮



স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে স্টেজে উঠেছেন বত্রিশ মুক্তিযোদ্ধা তাঁদের চব্বিশ জনের দাঁড়ি, টুপি ও পাজামা-পাঞ্জাবী ছিলো। এমন দৃশ্য দেখে আত্মায় খুব শান্তি পেলাম। মনে হলো আমাদের মুক্তিযোদ্ধা আমাদের মুমিনদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দুই টাকার জ্ঞানী বনাম তিনশো মিলিয়নের জ্ঞানী!

লিখেছেন সাহাদাত উদরাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ২:৫৯

বিশ্বের নামীদামী অমুসলিমদের মুসলিম হয়ে যাওয়াটা আমার কাছে তেমন কোন বিষয় মনে হত না বা বলা চলে এদের নিয়ে আমার কোন আগ্রহ ছিল না। কিন্তু আজ অষ্ট্রেলিয়ার বিখ্যাত ডিজাইনার মিঃ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×