২৫০০ সালের ফাল্গুন মাসের একটি সকাল। বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের খেলা দেখতে প্রায় ২০ লাখ মানুষ জমায়েত হয়েছে শনিগ্রহের বাংলাভূমি অঞ্ছলের বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে। অত্যাধুনিক এই স্টেডিয়ামটিতে রয়েছে কৃত্রিম বায়ুমন্ডলসহ জীবন ধারণের সব ব্যবস্থা।
বুক ভরে শ্বাস নেয় ইলিয়াস আলী। সত্যিকারের অক্সিজেনের সাথে খুব একটা পার্থক্য নেই মনে হচ্ছে তার। গোলাকার ক্রিকেট স্টেডিয়ামটার দিকে একবার চোখ বুলিয়ে নেয় সে... মানুষ আর মানুষ।
সবাই মেতে আছে উৎসবের আমেজে। শনিগ্রহের বাংলাভূমি অঞ্চলটাই সবচাইতে আকর্ষণীয়...পাহাড়ে ঘেরা বিশাল এই অঞ্চল যুদ্ধ করে দখল করেছিল বাংলাদেশ থেকে আগত তরুন যোদ্ধারা। তার দাদাও ছিল একজন যোদ্ধা। এরপর তারা তিলে তিলে জীবনধারনের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করে সেই বীরের বংশধররা...কথাগুলো মনে হলে বুকটা গর্বে ফুলে উঠে তার।
পৃথিবীতে জন্ম নেয়া ইলিয়াস আলী ছোটবেলায় বাবার হাত ধরে এসেছিল বাংলাভূমিতে। সেই থেকে সে এখানেই আছে।
শনিগ্রহের কালো আকাশের বুকে বাংলাদেশ থেকে আসা স্পেসবাসগুলো উড়ে বেড়াচ্ছে এখনো। হয়তো আরো মানুষ আসছে আজকের এই ঐতিহাসিক ক্রিকেট ম্যাচটি দেখতে...প্রতিপক্ষ ভারত। স্টেডিয়ামে ভারতের সমর্থকও কম না।
আজকের খেলায় বিশেষ অতিথি বাংলাদেশের মাননীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী। খেলা দেখতে এসেছেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীও।
খেলা শুরু হল... মনে প্রানে ইলিয়াস আলী চাইছে বাংলার দামাল ছেলেরা জয় ছিনিয়ে আনুক ভারত এর বিরুদ্ধে।
সারা বিশ্ব দেখছে এই খেলা...বাংলাদেশ আর বাংলাভূমির সবকটি মানুষ বাংলাদেশের জয় চায় যেকোন মুল্যে। চরম জমে উঠেছে খেলা...
ইলিয়াস আলী তার চারিপাশের মানুষগুলোর দিকে তাকায়। বিজয় সন্নিকটে জেনে সকল বাংলাদেশীদের মুখ উজ্জল। ইলিয়াস আলী বিজয়ের জন্য অপেক্ষা করছে।
জয় আসল। সারা স্টেডিয়াম কাঁপিয়ে বাংলার দুর্বার সৈনিকরা জয় ছিনিয়ে আনল... এরপর বাংলাদেশ ও বাংলাভূমির লাল সবুজ পতাকাটা নিয়ে তারা মাঠ প্রদক্ষিন করতে লাগল... ভারতের খেলোয়াড়রা হার মেনে নিস্প্রভ মুখে মাঠ ছেড়ে চলে যেতে লাগল ।
ইলিয়াস আলী’র কণ্ঠে বিজয়ের উল্লাস। সারা স্টেডিয়ামের সাথে গলা মিলিয়ে বিজয় উল্লাস করছে সে। এখন বিজয়ের সনদ তুলে দেয়া হবে তার দেশের খেলোয়াড়দের হাতে। গর্বিত হৃদয়ে অপেক্ষা করছে সে...
এসে গেল সেই কাঙ্ক্ষিত সময়। পুরো বাংলাদেশ চোখবড় করে তাকিয়ে আছে বাংলাদেশের মাননীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী’র হাতে থাকা সনদটির দিকে... এসময় মন্ত্রীমহোদয় মাইক্রোফনটি কাছে টেনে নিলেন। মন্ত্রী হয়তো কিছু বলবেনএই আনন্দে উচ্ছ্বসিত হয়ে... কিন্তু ইলিয়াস আলী অবাক হয়ে লক্ষ্য করে মন্ত্রীর মুখ উজ্জল নয়। সারা বাংলাদেশের সকল মানুষ যখন জয়ের খুশিতে উজ্জল তখন মন্ত্রীমহোদয়ার মুখ কালো কেন...?? ভেবে পায় না ইলিয়াস আলী......
স্টেডিয়াম এর লাখো মানুষের মত ইলিয়াস আলীও শুনতে থাকে মাননীয় মন্ত্রীর বানী...
'' একটি খেলায় জয় পরাজয় থাকবে... তাই বলে এতটা বিজয় উল্লাস এর কি আছে ?? ভারত তোমাদের বন্ধু রাষ্ট্র, তারা তোমাদের দয়া করে, তাই বাংলাদেশ বেঁচে আছে.. তাদেরকে পরাজিত করে তোমরা তাদের সাথে খারাপ ব্যাবহার করেছ। এখন আবার বিজয় উল্লাস করে তাদেরকে অপমান করা আমি মানব না। যারা বিজয় উল্লাস করছে তারা সব স্বাধীনতা বিরোধি, ইসলামী সন্ত্রাসী !!
তোমাদের সবাইকে আইন এর আওতায় আনা হবে। ''
এই বলে মন্ত্রী সনদ পত্রটি একটানে ছিড়ে ফেলে মঞ্চ ত্যাগ করলেন।
ইলিয়াস আলী নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছে না যেন স্টেডিয়াম এর লাখো মানুষ এর মত অবাক চোখে তাকিয়ে রইল সে।
কে যেন কানের কাছে ফিসফিস করে বলছে...
'' এ আমাদের দেশের মানুষ হতেই পারে না... হয়তো অন্য কেউ...অথবা হয়তো মানুষ না... হয়তো অন্য কিছু…… "
বিঃদ্রঃ কাউকে বা কোন বিশেষ গোষ্ঠীকে হেয় করার জন্য এ পোস্টটি লেখা হয়নি। এটা নিছক কল্পনা মাত্র.....
সবাইকে ধন্যবাদ।
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে অক্টোবর, ২০১২ রাত ১০:০৫