somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নবীন লেখকলেখিকাদের জন্য :: কীভাবে বই বের করবেন

০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০১২ দুপুর ১২:৫৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

একুশে বইমেলা-২০১৩ সমাগত

উপ-শিরোনাম দেখে অবাক হচ্ছেন? অবাক হবার কারণ নেই। যাঁরা বই প্রকাশ করতে চান, প্রস্তুতি গ্রহণের জন্য এখনই উপযুক্ত সময়। নবীন লেখকলেখিকাদের জন্য এটি একটি অবশ্যপাঠ্য প্রবন্ধ। রেডি রেফারেন্স হিসাবে প্রিন্ট করে রাখলে বেশি উপকার পাবেন বলে মনে করি।

মূল প্রবন্ধটি নিচে 'ভূমিকা' থেকে শুরু হয়েছে। ভূমিকার আগে কিছু গুরুত্বপূর্ণ কথা বলে নিই। একটা বই প্রকাশের আগে আপনাকে যথেষ্ট প্রস্তুতি নিতে হবে। আপনি যদি ব্লগলেখক হয়ে থাকেন, ব্লগে প্রকাশিত নিজের লেখাগুলো কিছুদিন পর পর পড়ুন। দেখবেন, অনেক কিছুই আপনার বদলাতে ইচ্ছে করছে, অনেক শব্দ বা বাক্য আপনার মন:পুত হচ্ছে না, অনেক শব্দ বা বাক্য বাহুল্য মনে হচ্ছে। এগুলো একটা একটা করে গভীর মনোযোগ সহকারে পড়ুন আর এডিট করুন। একটা শব্দের পরিবর্তন আপনার লেখার মান অনেক উপরে নিয়ে যেতে পারে। প্রথমবার যে-শব্দটার জন্য আপনার অনেক তৃষ্ণা ছিল, কিন্তু কিছুতেই আপনার মনে সেটি উদয় হয় নি, এডিটিঙের সময় হুট করে তা মাথায় ঢুকে যেতে পারে। ওটি জায়গামতো বসিয়ে দিন। যে-কথাগুলো নিস্প্রয়োজন তা কেটে বা ছেঁটে ফেলুন। এটি নিরীক্ষা করার উপায় হলো: 'এ লাইনটি কেটে ফেললে কি কোনো ক্ষতি হচ্ছে?' ক্ষতি না হলে তা রেখে দেয়ার দরকার নেই।

বানানের ব্যাপারে খুব বেশি সতর্ক থাকুন। 'বাংলা একাডেমী বাংলা বানান-অভিধান' বইটি সব সময় হাতের কাছে রাখুন। এমনকি সবচেয়ে পরিচিত শব্দটির বানানও অভিধান দেখে নিশ্চিত হয়ে নিন। ধারণা, নাকি ধারনা? ধরণী, নাকি ধরণি? সরণী, নাকি সরণি? তীর, নাকি তির? দাদী, নাকি দাদি? ধরণ, নাকি ধরন? আপনি জানেন যে, প্রথমোক্ত বানানগুলোই সঠিক, কিন্তু অভিধান খুলে অবাক হয়ে দেখবেন যে ২য় বানানগুলো সঠিক। অতএব, বানানের ব্যাপারটা খুব সহজ না। আপনি একজন লেখক অথচ প্রতিটি বাক্য ভুল বানানে পরিপূর্ণ, তা গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। বানানের জন্য বাংলা একাডেমী প্রমিত বাংলা বানানের নিয়মটাটা আগে ভালোভাবে রপ্ত করে নিন। যাঁরা কবিতা লেখেন, তাঁদের জন্য এ পোস্টটা অনেক উপকারে আসবে মনে হয়।

আরো কিছু ছোটোখাটো ভুলভ্রান্তি থাকে, যা ঠিক করে লিখলে ছাপার হরফ বা পৃষ্ঠা দেখতে সুন্দর লাগে। যেমন যতিচিহ্নের ব্যবহার:

ক) যতিচিহ্ন সবসময় অক্ষরের পর কোনো 'স্পেস' ব্যবহার না করে লিখুন।

খ) যতিচিহ্নের পর সবসময় একটি 'স্পেস' ব্যবহার করুন (হাইফেন ছাড়া)।

এগুলো না করলে ছাপা হওয়া বইটি অসুন্দর দেখাবে। কিংবা, প্রকাশকের কাছে উপস্থাপন করার সময় তিনি এটি নতুন করে ছাপতে কিংবা এডিট করতে বলবেন, যা অনেক সময়-সাপেক্ষ হবে।

ভূমিকা - এ আর্টিকেলটি কারা পড়বেন?

এ আর্টিকেলটি শুধু তাঁদের জন্য, যাঁরা লেখালেখি করেন, এবং বই প্রকাশ করতে আগ্রহী, কিন্তু কীভাবে এ কাজটি করতে হবে সে ব্যাপারে কোনো ধারনা রাখেন না। তাঁদের জন্য কিছু টিপস।

এ আর্টিকেলটি পড়ে নবীন লেখকলেখিকাগণ যেমন উপকৃত হবেন, প্রকাশকগণও চোখের আড়ালে পড়ে থাকা অনেক প্রতিভার সন্ধান পেয়ে আনন্দিত হবেন বলে ধারনা করছি। এতে নবীন লেখকদের সাথে প্রকাশকদের একটা সেতু বন্ধন গড়ে উঠবে।

এ আর্টিকেলটি আমার অভিজ্ঞতার ফসল। অনেকের পক্ষেই এটা পড়ে সবকিছু বুঝে ওঠা সম্ভব না। আরো কিছু জানতে চাইলে মন্তব্যের ঘরে প্রশ্ন করুন, অথবা মেইল করুন এই ই-মেইলে : [email protected]



প্রথম অধ্যায়

বই ছাপতে গেলে মোটামুটি সাতটি প্রধান ধাপের মধ্য দিয়ে এগোতে হয়, যেমন:
ক। প্রচ্ছদ
খ। কম্পোজ বা টাইপ করা ও ট্রেসিং বের করা
গ। পেস্টিং, প্লেট ও মেকিং
ঘ। কাগজ
ঙ। ছাপা
চ। বই বাঁধাই
ছ। বই বাজারজাত করণ। এটিই হলো প্রধান ধাপ

কতোগুলো বই ছাপবেন? এটি খুব গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত যা সর্বাগ্রে ঠিক করে নিতে হবে। নবীন লেখক হিসেবে আমার পরামর্শ ২০০-৩০০ বই ছাপুন। বই বিক্রির ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসী হয়ে থাকলে ৫০০ কপি পর্যন্ত ছাপতে পারেন।

১। প্রচ্ছদ।

নিজে আঁকতে পারেন, বা কোনো নামিদামি শিল্পীকে দিয়ে আঁকাতে পারেন। শৌখিন কোনো বন্ধুকে দিয়েও এ-কাজটি করানো যেতে পারে। যে কোনো লেখকের প্রথম পছন্দ বর্তমানে ধ্রুব এষ, সচরাচর হুমায়ূন আহমেদের বইয়ের প্রচ্ছদশিল্পী তিনি। তসলিমা নাসরিনের ক-এর প্রচ্ছদ এঁকেছেন কাইয়ুম চৌধুরী। বিখ্যাত শিল্পীরা দুই থেকে পাঁচ হাজার টাকা নিয়ে থাকেন, এমনকি এর চেয়েও বেশি। কম খরচে করতে চাইলে শিক্ষা-নবিশদের খোঁজ করুন, যাঁরা বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় টুকিটাকি কাজ করছেন। তাঁদের প্রচ্ছদ দেখে আপনি সন্তুষ্ট হলে তাঁদেরকেও সন্তুষ্ট করে দিন। কারো সন্ধান না পেলে আপনার প্রকাশককে বলুন, তিনি মুহূর্তের মধ্যে অনেক রেডিমেড প্রচ্ছদ কিংবা পরিচিত শিল্পীর খোঁজ দিতে পারবেন। প্রচ্ছদ হওয়ার পর এটি প্রকাশকের নিকট হস্তান্তর করুন। পজিটিভ বের করার জন্য এটিকে এবার কম্পিউটারে নিতে হবে। দশ ফর্মা সাইজের তিনশত কপি প্রচ্ছদের কম্পিউটার গ্রাফিক্স সহ তিন থেকে পাঁচ হাজার টাকা খরচ পড়বে। এই খরচ কিন্তু প্রচ্ছদশিল্পীর পারিশ্রমিকের অতিরিক্ত, যা গ্রাফিক্স ডিজাইনারকে দিতে হয়।


২। কম্পোজ বা টাইপ করা।

আপনার পুরো পাণ্ডুলিপি প্রকাশকের কাছে দেয়ার পর মনোনীত হলে তিনি ওটা কম্পোজ করতে দিয়ে দিবেন। ১৬ পৃষ্ঠা বা প্রচলিত কথায় ৮ পাতায় এক ফর্মা। প্রতি ফর্মা টাইপিং সহ ট্রেসিং বের করতে বর্তমান বাজারদর গড়ে তিনশত টাকা; প্রুফ চেকিং হবে দু বার। আপনি নিজে টাইপ করতে পারলে এ খরচটি বেঁচে যাবে। সেক্ষেত্রে বই ছাপবার জন্য আপনাকে পেইজ সেট-আপ করে নিতে হবে।

পেইজ সেট-আপ। ফাইল মেনুতে যান> পেইজ সেট-আপ> পেপার সাইজ> ১১ বাই ৮.৫ সিলেক্ট করুন। ওরিয়েন্টেশন দিন ল্যান্ডস্কেপ। মার্জিনে যান। টপ .৮ এবং বটম .৮। লেফট ও রাইট উভয়ই .৭। গাটার ০, ফ্রম এজ .৫ করে। ব্যস, পেইজ সেট-আপ হয়ে গেলো। এবার টেক্সটে আসুন। তারপর চলুন ফরম্যাট মেনুতে। যান কলামে। নাম্বার অফ কলাম সিলেক্ট করুন ২ (দুই)। উইড্‌থ এন্ড স্পেসিং-এ যান। উইড্‌থ হবে ৪.০০ এবং স্পেসিং হবে ১.৬। এরপর যান ট্যাব সেটিং-এ। ডিফল্ট ট্যাব স্টপস দিন .২। এভাবে সেটিং সম্পন্ন করার পর যা হলো তাতে বইয়ের পাতার মাপ হবে উচ্চতা ৮.৫ ইঞ্চি এবং প্রস্থ প্রায় ৫.৫ ইঞ্চি। কিন্তু যে-অংশটুকুতে লেখা উঠবে (একে ম্যাটারিয়াল বা ম্যাটার বলে) তার মাপ হবে ৭ ইঞ্চি বাই ৪.০০ ইঞ্চি। এরপর টাইপের জন্য ফন্ট নির্বাচন। সব ফন্টেই সুন্দর ছাপা ওঠে না। বর্তমানে বেশিরভাগ টাইপিস্ট সুটুনি এমজে-তে টাইপ করেন। যেসব পিসি থেকে ট্রেসিং বের করা হয়, ওগুলোতে সুটুনি এমজে-তেই কোনোরূপ ঝামেলা ছাড়া কাজ করা যায়। আদর্শলিপি এক্সপ্যান্ডেড (স্কেল ৭৫ পার্সেন্ট)-এও ভালো ছাপা হয়। আপনি নিজে টাইপ করে ট্রেসিং বের করার জন্য বাংলাবাজারে আসুন, আপনার প্রকাশকের মাধ্যমে ট্রেসিং বের করুন। নিজেও করতে পারেন। ভালো ট্রেসিং পেপারে এক ফর্মা প্রিন্ট করতে ৮০ থেকে ১২০ টাকা লাগবে। মনে রাখবেন, এটি হতে হবে মিরর প্রিন্ট।


৩। পেস্টিং, প্লেট ও মেকিং।

প্রতি ফর্মা পেস্টিং বাবদ ৩০ থেকে ৬০ টাকা। শুরুতেই প্রকাশকের সাথে চুক্তি করতে হবে আপনি কী ধরনের প্লেট ব্যবহা করবেন। মোটামুটি মানের নতুন (পিএস) প্লেটের দাম মেকিং সহ ৩০০ থেকে ৭০০ টাকা। ডিপিএস (একবার ব্যবহৃত) প্লেটের দাম এর অর্ধেক। তবে আপনি পিএস নাকি ডিপিএস প্লেটে বই ছাপবেন তা আগেই প্রকাশকের সাথে কথা বলে ঠিক করে নিন। পিএস প্লেটে ছাপা হয় খুব পরিষ্কার ও কোনোরূপ দাগ বা কালো ফোটামুক্ত; ডিপিএস প্লেটে কালো কালো ছোটো বিন্দু পড়ে কাগজের উপর, এতে ছাপা ঝকঝকে দেখায় না। অনকে দামি প্লেটও আছে। ইত্যাদি গ্রন্থ প্রকাশের প্রকাশক জয়নাল আবেদীন জুয়েল সাহেবের কাছে ২০ জানুয়ারি ২০১২ তারিখে খোঁজ নিয়ে জানা যায় যে তাঁর প্রকাশনীতে পেস্টিং বাবদ ফর্মা প্রতি ৫০ টাকা এবং প্লেট ফর্মা প্রতি ২৭০ টাকা হিসাবে নেয়া হয়।


৪। কাগজ।

ধরুন বইটি পাঁচ ফর্মা সাইজের। এক রিমে ১০০০ তা (ডাবল ডিম ৫০০ তা-য় এক রিম, যা সিংগেল ডিম-এ ১০০০ তা হয়)। ১০০০ তা-কে ৫ ফর্মা দিয়ে ভাগ করুন। ভাগফল ২০০। অর্থাৎ, ১ রিম কাগজে ৫ ফর্মা সাইজের ২০০ কপি বই হয়। ৫৫, ৬০/৬১, ৬৫, ৭০, ৮০, ১২০ গ্রাম, ইত্যাদি ওজনের কাগজ পাওয়া যায় বই ছাপবার জন্য। তবে বেশিরভাগ বই ছাপা হয় ৭০ গ্রাম ওজনের কাগজে, এরপর ৮০ গ্রাম। ১২০ গ্রাম ওজনের কাগজের বই খুব কম দেখা যায়। ইত্যাদি গ্রন্থ প্রকাশের প্রকাশক জয়নাল আবেদীন জুয়েল সাহেবের কাছে ২০ জানুয়ারি ২০১২ তারিখে খোঁজ নিয়ে জানা যায় যে বর্তমানে ভালো মানের ৮০ গ্রাম ওজনের কাগজ ২৬০০ টাকার ওপরে; ৭০ গ্রাম ওজনের কাগজ ২১০০-২৫০০ টাকা রিম। আপনার বই ছাপতে যে পরিমাণ কাগজ লাগবে, তার চেয়ে প্রতি পাঁচ রিমের জন্য অতিরিক্ত হাফ থেকে এক রিম কাগজ বেশি কিনতে হবে; কারণ, ছাপাখানায় প্রচুর কাগজ নষ্ট হয়ে যায়।


৫। ছাপা।

প্রতি ফর্মা ছাপাখরচ ২০০-৪০০ টাকা, একটা নির্দিষ্ট সংখ্যক বই পর্যন্ত। তারপর বাড়বে। ইত্যাদি গ্রন্থ প্রকাশের প্রকাশক জয়নাল আবেদীন জুয়েল সাহেবের কাছে ২০ জানুয়ারি ২০১২ তারিখে খোঁজ নিয়ে জানা যায় যে তাঁর প্রকাশনীতে বর্তমানে ২৫০ টাকা হারে ছাপাখরচ নেয়া হয়ে থাকে।


৬। বাঁধাই।

ইত্যাদি গ্রন্থ প্রকাশের প্রকাশক জয়নাল আবেদীন জুয়েল সাহেবের কাছে ২০ জানুয়ারি ২০১২ তারিখে খোঁজ নিয়ে জানা যায় যে তাঁর প্রকাশনীতে ৫ ফর্মা সাইজের জন্য ১১-১২ টাকা এবং ১০ ফর্মা সাইজের জন্য ১৩-১৪ টাকা দরে প্রতিটি বই বাঁধাই করা হয়ে থাকে। উৎকৃষ্ট বাঁধাইয়ের জন্য বই-প্রতি ১৫ টাকার উপরে খরচ পড়ে। সাধারণ মানের ছোট বইয়ের ক্ষেত্রে পাঁচ-সাত টাকায় হয়ে যায়। তবে সবকিছুই আপনাকে আগেভাগে ঠিক করে নিতে হবে।


৭। বই বাজারজাত করণ।

আপনি নতুন লেখক হয়ে থাকলে আমার পরামর্শ হলো সমস্ত বই আপনি আপনার নিজের কাছে নিয়ে যান। হ্যাঁ, শুরুতেই আপনি চুক্তি করুন, সমস্ত বই আপনাকে একদিনেই সরবরাহ করতে হবে। মনে রাখবেন, নবীন লেখক কখনো বই বিক্রির টাকা নিজের পকেটে নিতে পারেন না। পনর হাজার টাকায় বই ছাপলে আপনাকে ধরে নিতে হবে সতর হাজার টাকাই আপনি জলে ফেলে দিচ্ছেন:) অতিরিক্ত দুই হাজার হলো আকিকা ও আনুষঙ্গিক খরচ; একজনকে বই হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলতে হবে আমার এই বইটি পড়ে শেষ করতে পারলে তোমাকে একশ, দুইশ, হাজার টাকা পুরস্কার দিব, তবেই না কেউ আপনার বই পড়বে। অবশ্যই ব্যতিক্রম আছে, তা হতে পারে আপনার ক্ষেত্রেও। এবার বইগুলো নিজের কাছে নেয়ার পর, বন্ধুদের মাঝে বিনা মূল্যে বা ন্যায্য মূল্যে কিংবা চড়াদামে বিক্রি করুন (যেহেতু আপনি এতো কষ্ট করে লিখেছেন)। পত্রপত্রিকার মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষদের সাথে বন্ধুত্ব করুন। সৌজন্য সংখ্যা পাঠান। দশজনকে দশটা বই পাঠালে হয়তো তিনচার জনে প্রতিক্রিয়া জানাবে। তিনজন খুব প্রশংসা করে চিঠি লিখবে। সেই প্রশংসায় অনুপ্রাণিত হয়ে হয়তো আরেকটা বই সত্বর লিখে ফেলবেন, এমন সময় দেখবেন যার একটুখানি প্রশংসার জন্য আপনি অধীর আগ্রহে দিন গুনছিলেন, তাঁর একটা চিঠি পেলেন- এটা কোনো বই-ই হয় নি, এতো বিরক্তিকর। যে কোনো লেখকের জন্য এই ধাক্কাটা হলো দুঃসহনীয়। এটা কাটিয়ে ওঠাই হলো বুদ্ধিমানের কাজ। অনেকেই এই এতোটুকু আঘাতে ভর্তা হয়ে যান, আর কোনো লেখাই লিখতে পারেন না। এটা আপনার জন্য সতর্ক বাণী- আপনার লেখা সবাই খাবেন না; যাঁরা খান না তাঁদের খাওয়ানোর জন্য জোর করবেন না; যাঁরা খাচ্ছেন ভেবে নিন তাঁরাই আপনার প্রকৃত বন্ধু; তাঁরা আপনার লেখার মান সম্বন্ধে সম্যক অবহিত আছেন, তারপরও আপনাকে উৎসাহিত করবার জন্য অতোটুকু প্রশংসা করে থাকেন। তাঁদেরকে শ্রদ্ধা করুন। লিখুন। লিখুন। লিখুন।


সারাংশ

সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ, প্রকাশক মহোদয়কে সবিনয়ে অনুরোধ করুন আপনার ৩০০ বই আপনাকে একদিনেই সরবরাহ করবার জন্য। ঢাকায় একুশে বইমেলায় লেখকদের বই কিন্তু নিজস্ব প্রকাশক ছাড়া অন্য প্রকাশকের স্টলে রাখা নিষিদ্ধ। বইমেলার বাইরে বাজারের স্টলগুলোতে আপনি বই নিয়ে তাঁদের কাছে অফার করে আশাহত হবেন- তাঁরা নিতে চাইবেন না, বলবেন- জায়গা নেই। আপনার সমস্ত বইয়ের খরচ বাবদ পুরো টাকা একবারই প্রকাশকের হাতে দিয়ে দিতে হবে, বই ছাপাবার আগে। টানাটানি থাকলে এ টাকা ধাপে ধাপে দিতে পারেন; প্রকাশককে এ ব্যাপারে অনুরোধ করতে পারেন। সাধারণত সবগুলো বই একবার ছাপা হলেও সবগুলো একসাথে বাঁধাই করা হয় না। বই ধীরে ধীরে বিক্রি হয়, আর নতুন করে বাঁধাই করা হয়। আর এতোসব চুক্তি সম্ভব হবে তখনই যখন আপনি কোনো ছোটোখাট প্রকাশকের সাথে এ কাজ করবেন। বড় বড় প্রকাশকগণের সাথে এহেন হাঙ্গামা করতে পারবেন না। আপনার পাণ্ডুলিপি ভালো হলে বড় প্রকাশকগণ বই ছাপতে রাজি হবেন সম্পূর্ণ বিনা পয়সায়; শুধু একটাই শর্ত হয়তো তাঁরা দেবেন যে প্রকাশিতব্য বইটির ৮০% বই আপনাকে কিনে নিতে হবে:):)


বই ছাপতে খরচের খতিয়ান, এবং আমার বইয়ের বিজ্ঞাপন:):):)

সবগুলো হিসাব সম্পূর্ণ মনে নেই। তবে কাছাকাছি হিসাবগুলো নিম্নরূপ:

২০০৩ সনে আমির প্রকাশন থেকে ৯ ফর্মা সাইজের আমার স্খলন উপন্যাসের ৫০০ কপি ছাপতে ৩০ হাজার টাকা খরচ হয়েছিল।

২০০৪ সনে আমির প্রকাশন থেকে ১০ ফর্মা সাইজের আমার অন্তরবাসিনী উপন্যাসের ৩০০ কপি ছাপতে ২০ হাজার টাকা খরচ হয়েছিল।

২০০৪ সনে আমির প্রকাশন থেকে ৮ ফর্মা সাইজের আমার একটা ছোটগল্প সংকলন 'সুগন্ধি রুমাল'-এর ৩০০ কপি ছাপতে ১৮ হাজার টাকা খরচ হয়েছিল।

২০০৪ সনে আমির প্রকাশন থেকে ৬ ফর্মা সাইজের আমার খ্যাতির লাগিয়া উপন্যাসের ৩০০ কপি ছাপতে ১২ হাজার টাকা খরচ হয়েছিল।

২০০৫ সনে ইত্যাদি গ্রন্থ প্রকাশ থেকে ১৬ ফর্মার ৩০০ কপি সবুজ অঙ্গন সাহিত্য সংকলন, কবিতা ও ছোটগল্পের ২০টি অণুগ্রন্থ একত্রে ছাপতে আমার ৪৫ হাজার টাকা খরচ হয়েছিল।

২০০৫ সনে ইত্যাদি গ্রন্থ প্রকাশ থেকে ৬ ফর্মা সাইজের আমার কবিতার বই অন্বেষা-এর ৩০০ কপি ছাপতে ১৮ হাজার টাকা খরচ হয়েছিল।

২০০৬ সনে ১৪ ফর্মার ৩০০ কপি সবুজ অঙ্গন অণু-উপন্যাস সংকলন, ১২ জন নবীন লেখকের ১২টি অণুগ্রন্থ একত্রে ছাপতে আমার ৩৫ হাজার টাকা খরচ হয়েছিল।

২০০৬ সনে ইত্যাদি গ্রন্থ প্রকাশ থেকে ১০ ফর্মা সাইজের আমার আই-ফ্রেন্ড উপন্যাস-এর ৩০০ কপি ছাপতে ২০ হাজার টাকা খরচ হয়েছিল।

২০০৭ সনে ইত্যাদি গ্রন্থ প্রকাশ থেকে ৮ ফর্মা সাইজের আমার কবিতার বই 'নিঃসঙ্গ সময়ের সুখপাখি '-এর ৩০০ কপি ছাপতে ১৮ হাজার টাকা খরচ হয়েছিল।

২০০৯ সনে ইত্যাদি গ্রন্থ প্রকাশ থেকে ৫ ফর্মার ২০০ কপি সবুজ অঙ্গন আন্তর্জালিক কবিতাগুচ্ছ ছাপতে আমার ১৭ হাজার টাকা খরচ হয়েছিল।

২০১০ সনে ইত্যাদি গ্রন্থ প্রকাশ থেকে ৭ ফর্মার ২০০ কপি সবুজ অঙ্গন ব্লগীয় কবিতাসংকলন ছাপতে ২০ হাজার টাকার বেশি খরচ হয়েছিল।

২০১০ সনে পালকি প্রকাশন থেকে ৬ ফর্মা সাইজের সবুজ অঙ্গন ১৫শ সংখ্যার ২০০ কপি ছাপতে ১৬ হাজার টাকা খরচ হয়।

২০১১ সনে পালকি প্রকাশন থেকে সবুজ অঙ্গন ১৬শ সংখ্যার ২০০ কপি ছাপতে ১৩৫০০ টাকা খরচ হয়। কভার পেইজ আমি করেছিলাম, কাজেই ঐ খরচটা ধরা হয় নি।

২০১২ সনের একুশে বইমেলায় পালকি প্রকাশন থেকে ৬ ফর্মা সাইজের সবুজ অঙ্গন ১৭শ সংখ্যার ২০০ কপি ছাপতে ১৫০০ টাকা খরচ হয়।


উপরের বইগুলোর অধিকাংশই খুব অপরিচিত প্রকাশনী থেকে ছাপানো হয়েছিল। ইত্যাদি গ্রন্থ প্রকাশ থেকে ছাপাতে খরচ একটু বেশি পড়েছিল, যেহেতু তাঁদের স্ট্যান্ডার্ড খুব ভালো। এই হিসাব বিবরণী থেকে নিজের জন্য প্রস্তুতি নিতে পারেন:):)


দ্বিতীয় অধ্যায়

প্রথম অধ্যায় পড়ে অনেকেই হয়তো বই প্রকাশ করার একটা সাহস পেয়ে গেছেন। কিন্তু তারপরও ভাবছেন কীভাবে প্রকাশকের কাছে কথাটা তুলবেন, কিছুটা লজ্জা, 'পাছে লোকে কিছু বলে' ভাব, ইত্যাদি।
হাতে গোনা দু-একটা প্রকাশনী ছাড়া সবাই আপনার বই প্রকাশ করার জন্য সম্মত হবেন, এটা মনে রাখবেন। আপনার শুধু প্রয়োজন তাঁদের সাথে একটা সমঝোতা করে নেয়া। এরপর দেখবেন, আপনার প্রকাশকই আপনার সবচেয়ে বড় ও ঘনিষ্ঠ বন্ধু হিসেবে গড়ে উঠেছেন।

কোন্‌ প্রকাশকের কাছে যাবেন?

প্রতিটা বইয়ের ৪ অথবা ৬ কিংবা ৮ নং পৃষ্ঠায় প্রকাশনীর ঠিকানা ও ফোন নম্বর দেয়া থাকে। আপনার পছন্দমতো প্রকাশকের কাছে গিয়ে বলুন আপনি একটা গল্প বা কবিতা বা উপন্যাস বা প্রবন্ধ সংকলন বের করতে চান- ৩০০ কপি। আগেই বলে নিন যে লেখার সফট কপি আপনিই তৈরি করে দেবেন। তারপর প্রকাশকই আপনাকে এগিয়ে নিয়ে যাবেন।

আমার কাছে এ মুহূর্তে কয়েকটা প্রকাশনীর নম্বর আছে। এদের কাছ থেকে সবুজ অঙ্গন সহ আমার নিজের বই প্রকাশ করা হয়েছে বলে তাঁদের সাথে আমার ঘনিষ্ঠতা সবচাইতে বেশি।

জহিরুল আবেদীন জুয়েল (ইত্যাদি গ্রন্থপ্রকাশ) : ০১৭১৫৪২৮২১০
কবি আদিত্য অন্তর (ইত্যাদি গ্রন্থ প্রকাশ) : ০১৭১২২৩৫৩৪২
পান্থ বিহোস (পালকি প্রকাশন) : ০১৬৭৩৬৩৬৭৫৭
কবি ইমন মজুমদার (মুক্ত স্বদেশ) : ০১৭১২৬৭১৩৪৬
কবি তৌহিদুল ইসলাম কনক (আমির প্রকাশন) : ০১৯১৮১৯১১৯০


এ ছাড়া নিচের কয়েকটা প্রকাশনীর নম্বর আমার কাছে আছে, কিন্তু তা আপডেটেড কিনা জানি না :

আগামী প্রকাশনী (ওসমান সাহেব) : ০১৮১৯২১৯০২৪
একাডেমী প্রেস এন্ড পাবলিকেশন লিঃ (সাহানা রহমান) : (নামটা বোধ হয় সঠিক হলো না) : ৮১২৫৩৯৪
রাইটারস ইংক (প্রফেসর নিয়াজ জামান) : ৯৩৩৫৬০৭


আপনি নিজেও একজন কবি বা লেখকের স্পন্সর হতে পারেন।

অনেকেই লেখেন না, কিন্তু মনে খুব সাধ বা শখ পোষেন বই ছাপবার। আপনি আপনার পছন্দের দু-একজন লেখক বেছে নিন, যাঁদের বই ছাপবার খরচ আপনি নিজে বহন করবেন। আপনার এই পবিত্র চেষ্টায় একজন নিভন্ত অথচ সম্ভাবনাময় লেখক সেরা লেখক রূপে গড়ে উঠতে পারেন। মনে রাখুন, নবীন লেখকদের বই সচরাচর বিনে পয়সায় কেউ ছাপেন না। প্রতিভাধর অনেক ভালো লেখকের নিজের টাকায় বই বের করার সামর্থ থাকে না। আপনার কারণে তাঁরা লেখক হিসেবে পরিচিত লাভ করার সুযোগ পেয়ে যেতে পারেন।


সবুজ অঙ্গন কোনো প্রকাশনী নয়

অনেকেই সবুজ অঙ্গন থেকে বই প্রকাশ করা যায় কিনা জানতে চান, এবং সবুজ অঙ্গন থেকে বই প্রকাশ করার ইচ্ছেও প্রকাশ করেন। তাঁদের জ্ঞাতার্থে জানাচ্ছি যে, সবুজ অঙ্গন কোনো প্রকাশনী সংস্থা নয়। সবুজ অঙ্গন একটি সাহিত্যপত্রিকা, যা বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন প্রকাশনী থেকে প্রকাশ করা হয়েছে, যেমন- ইত্যাদি গ্রন্থ প্রকাশ, পালকি প্রকাশনী, আমির প্রকাশন, যা উপরে উল্লেখ করা হয়েছে।

খুব সংক্ষিপ্তভাবে লেখা হলো। তারপরও কিছু যদি কেউ জানতে চান, লিখুন নিচে।


সবাই ভালো থাকুন।


হ্যাপি ব্লগিং।


বিভিন্ন পাঠকের সুপারিশ ও মন্তব্য পড়তে এবং আপনার জিজ্ঞাসা থাকলে এখানে ক্লিক করুন।
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই সেপ্টেম্বর, ২০১২ ভোর ৬:৩৯
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে...

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে,
পড়তো তারা প্লে গ্রুপে এক প্রিপারেটরি স্কুলে।
রোজ সকালে মা তাদের বিছানা থেকে তুলে,
টেনে টুনে রেডি করাতেন মহা হুলস্থূলে।

মেয়ের মুখে থাকতো হাসি, ছেলের চোখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অহমিকা পাগলা

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১৪


এক আবেগ অনুভূতি আর
উপলব্ধির গন্ধ নিলো না
কি পাষাণ ধর্মলয় মানুষ;
আশপাশ কবর দেখে না
কি মাটির প্রণয় ভাবে না-
এই হলো বাস্তবতা আর
আবেগ, তাই না শুধু বাতাস
গায়ে লাগে না, মন জুড়ায় না;
বলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩




তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×