somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

জেনারেল জ্যাকবের বিশেষ সাক্ষাৎকার: ‘মুক্তিযোদ্ধাদের ভূমিকাই বড় ছিল

৩০ শে আগস্ট, ২০১২ দুপুর ১:০৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

লে. জেনারেল জে এফ আর জ্যাকব। বাংলাদেশ অভ্যুদয়ের সঙ্গে নিবিড়ভাবে ঘনিষ্ঠ একটি নাম। তাঁর স্কুল ও বিশ্ববিদ্যালয়জীবন কেটেছে পর্যায়ক্রমে দার্জিলিং ও কলকাতায়। সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজ থেকে স্মাতক ডিগ্রি নিয়ে সেনাবাহিনীতে যোগ দেন ১৯৪১ সালে। তখন বয়স ১৮, জন্নসূত্রে ইহুদি। সরকারি নথিতে তাঁর জন্ন তারিখ ২ মে ১৯২১. চিরকুমার। একাত্তরের স্বাধীনতা সংগ্রামকালে তিনি ভারতের সামরিক বাহিনীর পূর্বাঞ্চলীয় কমান্ডের চিফ অব জেনারেল স্টাফ ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধে ভূমিকার জন্য পিভিএসএম (পরম বিশিষ্ট সেবা মেডেল) খেতাবে ভূষিত হন। ১৯৭৮ সালের জুলাইয়ে তিনি অবসর নেন। ১৯৯৭ সালে প্রকাশিত হয় তাঁর সারেন্ডার অ্যাট ঢাকা, বার্থ অব এ নেশন। ২৮-২৯ সেপ্টেম্বর ২০০৮ সালে এই অন্তরঙ্গ সাক্ষাৎকারটি নেওয়া হয় দিল্লিতে তাঁর আর কে পুরামের ফ্ল্যাটে। সাক্ষাৎকারটি গ্রহণ করেন প্রথম আলোর সহযোগী সম্পাদক মিজানুর রহমান খান








প্রথম আলো: আপনার নামের আগে জেএফআর শব্দটি দেখছি। নামকরণের গল্প বলুন।
জ্যাকব: পুরো নাম জ্যাকব ফ্রেডারিক রালফ জ্যাকব। কর্মক্ষেত্রে আমার উপনাম ছিল ‘জেক’ .আরবি জানা মা আমাকে একটি আরবি উপনামেও ডাকতেন। ‘ফারাজ’ , এর অর্থ সুখ। তৃতীয় নাম রালফ বা রাফায়েল, এটি বাইবেলের একটি নাম।
প্রথম আলো: আপনার পূর্বপুরুষেরা কোথাকার?
জ্যাকব: ২০০ বছর আগে বর্তমান ইরাক বা সিরিয়ার কোনো অঞ্চল থেকে আমার পূর্বপুরুষেরা ভারতবর্ষে আসেন।
প্রথম আলো: ঠিক কোন এলাকা থেকে?
জ্যাকব: আমরা বাগদাদ থেকে এসেছি। পূর্বপুরুষেরা বিশুদ্ধ ইহুদি ছিলেন।
প্রথম আলো: ইসরায়েলের হারিয়ে যাওয়া ১০টি গোত্রের (বাইবেলে বর্ণিত টেন মিসিং-ট্রাইবস) একটি উত্তর-পূর্ব ভারতে রয়েছে বলে একটি দাবি করা হয়। আপনি কি তা বিশ্বাস করেন?
জ্যাকব: এ নিয়ে ব্যাপকভিত্তিক আলাপ-আলোচনা আছে। আমি এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞ নই। এর উত্তর আমার জানা নেই।
প্রথম আলো: ১৯৫৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রে প্রশিক্ষণে গিয়ে আপনি চিতাবাঘের দাঁত নিয়ে সমস্যায় পড়েছিলেন। বাঘ-বৃত্তান্ত বলুন।
জ্যাকব: বহু বছর আগে আমি দিল্লিতে কুতুবমিনারের কাছাকাছি একটি রেঞ্জে ট্রেনিংয়ে ছিলাম। একদিন শুনলাম একটি চিতাবাঘ গ্রামবাসীকে বড় ভোগাচ্ছে। প্রায়ই ছাগল ধরে নিচ্ছে। আমি খুব কাছ থেকে চিতাবাঘটিকে শিকার করেছিলাম। বিমানে বহনকালে ওই চিতাটির একটি দাঁত খসে পড়ে। আমি দন্ত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হই। চিকিৎসক প্রথমে অপমানিত বোধ করেছিলেন। পরে উপযুক্ত সম্মানীর বিনিময়ে তিনি তা মেরামত করেন।
প্রথম আলো: ইহুদি ও বৌদ্ধ সংস্কৃতির মধ্যে কি কোনো মিল খঁুজে পান? আপনার তো পড়াশোনা রয়েছে।
জ্যাকব: আমি বিশেষজ্ঞ নই। বড় যে ধার্মিক, তাও নই। চোখ জুড়ানো নৈসর্গিক সৌন্দর্যখচিত লাদাখে আমি বহু মঠ ঘুরেছি। সব ধর্মের প্রতি আমার শ্রদ্ধা রয়েছে।
প্রথম আলো: ২৬ মার্চ আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরু হলো। আপনার বিবরণমতে কমান্ডার ইন চিফ হিসেবে জেনারেল স্যাম মানেকশ ইন্দিরাকে রাজি করালেন যে এপ্রিলের মধ্যেই বাংলাদেশে ভারতীয় অভিযান পরিচালিত হওয়া উচিত। আপনি বেঁকে বসলেন। বললেন, ১৫ নভেম্বরের আগে কোনোক্রমেই সম্ভব নয়। এতে তিনি ‘হতাশ ও অধৈর্য’ হলেন।
জ্যাকব: প্রত্যেক ব্যক্তির কিন্তু নিজস্ব ধ্যান-ধারণা থাকবেই।
প্রথম আলো: কিন্তু আপনার বইয়ে যুদ্ধ পরিকল্পনায় মানেকশর সামগ্রিক ভূমিকা কিন্তু ধূসর। ফোর্ট উইলিয়ামে একাত্তরের আগস্ট বৈঠকে মানেকশ বললেন, খুলনা ও চট্টগ্রাম দখল করতে পারলেই যুদ্ধ শেষ হবে। এমনকি আত্মসমর্পণের দলিলে স্বাক্ষরদাতা লে. জেনারেল জগজিৎ সিং অরোরাও ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত এই মত পোষণ করেন। আপনি ছাড়া ঢাকার পতন চিন্তা কারও মাথায় ছিল না। তাহলে কি বলা যায়, একজন জ্যাকব না হলে বাংলাদেশের স্বাধীনতার যুদ্ধের ইতিহাস ভিন্ন হতে পারত?
জ্যাকব: আমি এভাবে দেখি না। মানেকশর ছিল একটি দৃষ্টিভঙ্গি, আমার ভিন্ন। হয়তো তিনিও সঠিক বলে প্রমাণিত হতে পারতেন, আমি তা জানি না। তিনি আমার বস ছিলেন। তাঁর নির্দেশ মেনে চলাই ছিল আমার কাজ। আমি একজন ভালো সৈনিক ছিলাম। তা ছাড়া দুজন একই ভাবনা ভাবতে পারেন না।
প্রথম আলো: ভারত সরকারের তরফে মুক্তিযোদ্ধাদের সাহায্য ও সহযোগিতা দেওয়ার বিষয়ে আপনি লে. জেনারেল এ এ কে নিয়াজির পিআরও সিদ্দিক সালিকের ‘উইটনেস টু সারেন্ডার’ থেকে তথ্য ধার করেছেন। সালিক লিখেছেন, মুক্তিযোদ্ধাদের তিনটি পর্যায়ে সহযোগিতা দেওয়া হয়। এটা কি সঠিক?
জ্যাকব: মোটামুটি এটাই সত্য। সালিক জানতেন কী ঘটেছিল।
প্রথম আলো: নিজের ঘরের তথ্য দিতে নির্ভর করলেন অন্যের ওপর। কেন?
জ্যাকব: আমাকে এটা স্পষ্ট করতে দিন যে ভারত সরকারের সুস্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে, মুক্তিযোদ্ধাদের বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করা যাবে না। মুক্তিযোদ্ধাদের বিষয়টি এখনো ক্লাসিফায়েড (গোপনীয়) হিসেবে বিবেচিত। সে কারণেই আমি অন্যের ওপর নির্ভর করেছি।
প্রথম আলো: সালিকের মতে বাংলাদেশের এক লাখ গেরিলাকে প্রশিক্ষণ দিতে ভারত প্রশিক্ষণ শিবির স্থাপন করেছিল। কনভেনশনাল বা প্রথাগত যুদ্ধের জন্য ৩০ হাজার এবং গেরিলা কৌশল অবলম্বনের জন্য ৭০ হাজারকে প্রস্তুত করা হয়। এই তথ্য সঠিক?
জ্যাকব: শতভাগ না হলেও সাধারণভাবে সঠিক বলতে পারেন।
প্রথম আলো: আপনি লিখেছেন, মুক্তিযোদ্ধারা একটি বাদে সব ম্যাপ জোগাড় করতে পেরেছিল। তাতে কি সমস্যা হয়েছিল?
জ্যাকব: আমাদের কাছে পূর্ব পাকিস্তানের কোনো ম্যাপই ছিল না। যে ম্যাপ ছিল তা ৫০ বছরের পুরোনো। ম্যাপ ছাড়া কীভাবে কী করব, তা বুঝে উঠতে পারছিলাম না। তখন এম এ জলিলসহ অন্যান্য সেক্টর কমান্ডারের কাছে ম্যাপের প্রয়োজনীয়তা ব্যাখ্যা করলাম। তাঁরা দ্রুত সংগ্রহ করলেন। শুধু বগুড়া বা অন্য কোনো একটি এলাকার ম্যাপ পাওয়া গেল না, কিন্তু তাতে অসুবিধা হয়নি। আমরা পুরো যুদ্ধে পাকিস্তান সরকারের তৈরি করা ম্যাপই ব্যবহার করি।
প্রথম আলো: মুক্তিযুদ্ধের সেক্টর কমান্ডারদের সঙ্গে আপনার বৈঠকের বিষয়ে কিছু বলবেন কি?
জ্যাকব: অনানুষ্ঠানিকভাবে তাদের সঙ্গে আমার বৈঠক হতো। সরকার হয়তো একদিন এসব বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করবে।
প্রথম আলো: পাকিস্তানি বাহিনীর সাঙ্কেতিক বা ওয়্যারলেস বার্তা ধরার ব্যাপারে আপনাদের সাফল্য কেমন ছিল?
জ্যাকব: এ কাজে খুবই সফল ছিলাম। আমরা তাদের গুপ্ত বার্তার অনেকটাই ধরে ফেলতাম। এ বিভাগটি সরাসরি আমার অধীনে ছিল। পাকিস্তানি বাহিনীর গতিবিধি সম্পর্কে আমরা আগাম ধারণা পেতাম। অনেক আক্রমণ ডিকোডিংয়ের ভিত্তিতে হয়েছে। সাগরে সাবমেরিন ‘গাজি’র উপস্থিতি আমরা আগেই টের পাই। একে সহজেই উড়িয়ে দেওয়া হয়।
প্রথম আলো: মার্কিন সপ্তম নৌবহর কি সত্যি মার্কিন নাগরিকদের নিতে এসেছিল?
জ্যাকব: এটা খুবই বিতর্কিত। আমি তো আত্মসমর্পণ নিয়ে ১৩-১৪ ডিসেম্বরে নিয়াজির সঙ্গে কথা বলা শুরু করি। আমরা বিদেশি নাগরিক বহনে জাতিসংঘের একটিসহ চারটি বিমান অবতরণের অনুমতি দিই। ১১ ডিসেম্বর তারা চলে যায়। সুতরাং এরপর মার্কিন নাগরিকদের বহনের কথা বলে সপ্তম নৌবহর পাঠানোর তো যুক্তি নেই। ওটা ছিল ‘শো অব ফোর্স’।
প্রথম আলো: আপনার বইয়ে একাত্তরের ওয়ার থিয়েটারের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন ভারতীয় সামরিক বাহিনীর পদস্থ কর্মকর্তাদের মধ্যে সম্পর্কের টানাপোড়েনের একটি চিত্র ফুটে উঠেছে। এটা কি মুক্তিযুদ্ধের ওপর সামগ্রিকভাবে কোনো নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছিল?
জ্যাকব: অবশ্যই ফেলেছিল। অনেকের সঙ্গেই ব্যক্তিগত সম্পর্কের খুব টানাপোড়েন যাচ্ছিল। একজনের সঙ্গে আরেকজনের মুখ দেখাদেখিও বন্ধ ছিল। সৌভাগ্যবশত তাঁদের প্রত্যেকের সঙ্গেই আমার সম্পর্ক ছিল ভালো।
প্রথম আলো: ঢাকা অভিযানের পরিকল্পনা দয়া করে খুলে বলবেন কি?
জ্যাকব: ভারতের সেনা সদর দপ্তর ঢাকার জন্য কোনো সেনা বরাদ্দ করেনি। কারণ, ঢাকা দখলের কোনো চিন্তাই তাঁদের ছিল না। আমি আমার লক্ষ্য অর্জনে বেছে নিই টাঙ্গাইলকে। কারণ ছিল মূলত তিনটি। প্রথমত, টাইগার সিদ্দিকীর সাহায্য পাব। তাঁর অধীনে ২০ হাজার সশস্ত্র মুক্তিযোদ্ধা ছিল। তিনি তাঁর বাহিনী দিয়ে আমাদের ছত্রিসেনাদের সুরক্ষা দেবে। দ্বিতীয়ত, জায়গাটা সীমান্ত থেকে খুব দূরেও নয়। তৃতীয়ত, ঢাকার সঙ্গেও যুদ্ধের দূরত্ব বেশি নয়। আমরা উত্তর দিক থেকে ঢাকা আক্রমণের পরিকল্পনা করি। আমরা আশা করি, সিদ্দিকী আমাদের সঙ্গে ঢাকামুখী মার্চে অংশ নেবেন। ছত্রিসেনা পাঠানোর আগে আমি ক্যাপ্টেন পি কে ঘোষকে পাঠাই সিদ্দিকীকে ব্রিফ করতে। তাঁকে ঢাকা অভিযানের জন্য প্রস্তুতি নিতে বলি, যাতে তিনি ঢাকায় পাকিস্তানিদের বিরুদ্ধে পূর্ণ বিদ্রোহ নিশ্চিত করতে পারেন। নভেম্বরে সিদ্দিকীকে এই বার্তা দেওয়া হয়। সিদ্দিকী প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ছিলেন। যুদ্ধ বেধে গেলে তিনি কথা অনুযায়ী ছত্রিসেনা অবতরণে সহায়তা দেন। কিন্তু পাকিস্তানি বাহিনী প্রত্যাহার শুরু করলে তিনি আক্রমণ থেকে বিরত ছিলেন।
প্রথম আলো: সিদ্দিকী বাহিনীর এত অস্ত্রশস্ত্রের জোগান আপনারাই দিয়েছিলেন? কী ধরনের অস্ত্র ছিল?
জ্যাকব: পুরো অস্ত্র আমরাই দিই। রাইফেল, এলএমজি, গ্রেনেড, বিস্কোরক ছিল।
প্রথম আলো: সিদ্দিকীর ওই সিদ্ধান্ত কি সুচিন্তিত ছিল?
জ্যাকব: আমি জানি না। তাঁকেই জিজ্ঞেস করে জানুন, পাকিস্তানিরা যখন সরে যাচ্ছিল, তখন তিনি কী করেছিলেন? আর কেন তিনি ভারতীয় সেনাদের সঙ্গে ঢাকায় মুভ করেননি? যুদ্ধবিরতির পরেই কেবল তিনি তাঁর কিছু সেনা ঢাকায় পাঠান। আমি তাঁকে ১৬ ডিসেম্বরে ঢাকায় দেখি। না, আমি কোনো বিতর্কে যেতে চাই না। তিনি আপনাদের জাতীয় বীর। আমি ইতিহাসের বিবরণ দিচ্ছি মাত্র। টাঙ্গাইলে যখন ছত্রিসেনা নামল, তখন তিনি ভালো ভূমিকা রাখলেন। তাঁদের নিরাপত্তা তাঁরই দেওয়ার কথা ছিল; কিন্তু তিনি সেনাদের সঙ্গে ঢাকায় মুভ করেননি। আমি সিদ্দিকীকে বুঝতে পারিনি। তিনি নিশ্চয় মহান সৈনিক।
প্রথম আলো: মস্কোপন্থি ডিপি ধর একাত্তরে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পরিকল্পনা বিভাগের প্রধান। আত্মসমর্পণের কয়েক দিন পরই আপনি তাঁকে বলেছিলেন, বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে হিন্দু সম্প্রদায়ের জন্য নিরাপত্তা নিশ্চয়তা, ছিটমহলগুলোর যথাযথ বিন্যাস এবং চট্টগ্রাম বন্দরসহ রেল ও নৌ ট্রানজিট বিষয়ে চুক্তি করতে। তাঁকে সতর্কও করেছিলেন যে এটা এখনই না করলে ভবিষ্যতে করা খুবই দুরূহ হবে। কীভাবে এমন দূরদর্শী হতে পারলেন?
জ্যাকব: আমি বাস্তবতার নিরিখেই কথাটা বলেছিলাম। সীমান্তের মানুষের জন্য ছিটমহলের ফাঁড়া বহুদিনের। আর ট্রানজিট তো একপক্ষীয় নয়, এটা বহুমুখী হতে পারে। বাংলাদেশ ভারতের ভূখণ্ড দিয়ে নেপাল যেতে পারে। ডিপি ধর কিন্তু আমার সঙ্গে একমত হননি।
প্রথম আলো: নক্সালবাড়ি আন্দোলন কি কোনোভাবে আমাদের মুক্তিযুদ্ধে প্রভাব রেখেছিল?
জ্যাকব: চারু মজুমদারের সেই আন্দোলন দমনে সেনাবাহিনীকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। ১৯৬৯−১৯৭২ পর্যন্ত আমি ইস্টার্ন কমান্ডের চিফ অব স্টাফ ছিলাম। এ সময় তাদের দমনে পরিচালিত বিশেষ অভিযানের দায়িত্ব আমিই পালন করছিলাম। সরকার এ জন্য আমাকে পশ্চিমবঙ্গে দুই আর্মি ডিভিশন এবং ৫০ প্যারাস্যুট ব্রিগেড মোতায়েনের অনুমতি দেয়। পরে তাদের যুদ্ধের কাজে লাগে। সৌভাগ্যবশত একাত্তরের পরিস্থিতির কাছাকাছি সময়ে ওই অভিযান শেষ করতে পেরেছিলাম। এর উল্লেখ আমার বইয়ে নেই।
প্রথম আলো: যুদ্ধকালে ভারত কি সোভিয়েত ইউনিয়ন বা অন্য কোনো মিত্র দেশ থেকে অস্ত্র সহায়তা পেয়েছিল?
জ্যাকব: না। আমরা পাইনি। স্থানীয়ভাবে যা উৎপাদিত হয়েছে, তা-ই ব্যবহার করা হয়।
প্রথম আলো: গওহর আইয়ুব দাবি করেছেন যে মানেকশ পঁয়ষট্টির যুদ্ধের ভারতীয় সামরিক পরিকল্পনা পাকিস্তানের কাছে বিক্রি করেছিলেন?
জ্যাকব: গওহর যখন এই দাবি করেন, তখন মানেকশ খুবই অসুস্থ, হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। মানেকশ একজন সম্মানিত ব্যক্তি। আমি মনে করি না যে এটা আদৌ সত্য। এর কোনো ভিত্তি নেই।
প্রথম আলো: আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে একমাত্র নারী ছিলেন অরোরার স্ত্রী ভান্তি অরোরা। সত্যি?
জ্যাকব: সত্যি। আমার কাছে তাঁর ফটো রয়েছে। তিনি মারা গেছেন।
প্রথম আলো: মুক্তিযুদ্ধের কোন স্মৃতি আপনাকে তাড়া করে ফেরে?
জ্যাকব: তাজউদ্দীন আহমদ একজন ব্রিটিশ এমপির সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে চেয়েছিলেন। সীমান্তের কাছাকাছি একটি স্থানে বৈঠক বসল। কিন্তু দ্রুত বিপদ টের পেলাম। গোলাগুলি চলল। বললাম, প্রধানমন্ত্রী জলদি করুন। কারণ, পাকিস্তানি সেনারা খুব কাছাকাছি অবস্থান করছে এখন। আমরা তাঁদের নিরাপত্তায় আমাদের সীমান্তে সেনা মোতায়েন করেছিলাম। সেদিন চেকপয়েন্টের মাস্টে আমার তদারকিতে বাংলাদেশের পতাকা উড়ল। সে পতাকা আর নামেনি। এ স্মৃতি আমাকে মাঝেমধ্যে আবেগাপ্লুত করে।
প্রথম আলো: আপনার সাম্প্রতিক ঢাকা সফরের অভিজ্ঞতা কেমন হলো।
জ্যাকব: আমি আনন্দিত যে বাংলাদেশের বর্তমান সেনাবাহিনী দারুণভাবে পেশাদারিত্ব ও দক্ষতা অর্জন করেছে। আমি সেনাপ্রধান জেনারেল মইন উ আহমেদ ও অন্য কর্মকর্তাদের সঙ্গে ঢাকায় খুব ভালো সময় কাটিয়েছি। আপনাদের সেনাবাহিনীর শৃঙ্খলাবোধ দেখে আমি অত্যন্ত মুগ্ধ।
প্রথম আলো: আপনার এই ধারণা কি নতুন?
জ্যাকব: বাংলাদেশের সামরিক বাহিনীকে আগে এমন প্রত্যক্ষভাবে তো আমি জানতাম না। কিন্তু সফরকালে আমি ভীষণ সন্তুষ্ট হলাম। হাইলি প্রফেশনাল আর্মি। খুবই ভালো প্রশিক্ষিত। খুবই ভালো শৃঙ্খলাপরায়ণ। আমার অন্তরের সবটুকু উষ্ণতা দিয়ে তাদের জানাই অভিনন্দন। সেনাবাহিনীর আতিথেয়তা আমাকে আনন্দে উদ্বেলিত করেছে। সেনাপ্রধান খুবই চমৎকার মানুষ। আমি ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে অব্যাহত ভালো সম্পর্ক দেখতে চাই। দুই দেশের অবশ্যই উচিত হবে একত্রে কাজ করা। সহযোগিতার হাত প্রসারিত করতে হবে। উভয়ের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত করতে হবে। উভয় দেশেই রয়েছে যথেষ্ট দারিদ্র্য। আমাদের অভিন্ন সমস্যা রয়েছে।
ভুলবেন না যেন আমি বাংলাদেশের একজন মহান বন্ধু। বাংলাদেশের ভীষণ অনুরাগী। দয়া করে আমার বরাতে এমন কিছুই লিখবেন না, যাতে বাংলাদেশের জনগণের সঙ্গে আমার সম্পর্কে কোনো চিড় ধরে। বাংলাদেশের জনগণ আমার একান্ত আপনজন। আমি তাদের ভালোবাসি। ঢাকা সফরকালে মুক্তিযোদ্ধারা পরম মমতায় আমাকে আলিঙ্গন করেছেন। আমি জনগণের ভালোবাসায় একেবারে সিক্ত হয়ে ফিরেছি।
প্রথম আলো: পেশাদারির বিবেচনায় পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সঙ্গে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কোনো তুলনা করবেন কি?
জ্যাকব: না। আমি তো দীর্ঘদিন পাকিস্তান সেনাবাহিনী সম্পর্কে কিছুই জানি না।
প্রথম আলো: মুক্তিযুদ্ধের মুখ্য ব্যক্তিত্বের মধ্যে হাতে গোনা যে কজন বেঁচে আছেন, আপনি তাঁদের একজন।
জ্যাকব: আমি জানি না, আমি মুখ্য ব্যক্তিদের একজন কি না। আমি আমার কাজ করেছি। কাজটা পছন্দের ছিল। সৈনিকের কর্তব্য পালন করেছি মাত্র।
প্রথম আলো: আর এটাই আপনার সামরিক জীবনের শ্রেষ্ঠতম সাফল্য।
জ্যাকব: হ্যাঁ। আমি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে অংশ নিয়েছি। কিন্তু এটাই আমার জীবনে অনন্য সুযোগ, যা ইতিহাসের ওপর প্রভাব রাখতে পারে। সৈনিক হিসেবে আমি আমার সর্বোত্তম সামথর্য ও বিবেক দিয়ে পরিচালিত হওয়ার চেষ্টা করেছি। আমি রাজনীতিক নই, রাজনীতির সব সমস্যা বুঝতেও পারি না। আমাকে কাজ দেওয়া হয়েছিল। আমি সবচেয়ে ভালো উপায়ে তা করতে চেষ্টা করেছি। ব্যস, এটুকুই।
প্রথম আলো: শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধীর ভূমিকা মূল্যায়ন করুন।
জ্যাকব: ইন্দিরা গান্ধী সাহস ও অঙ্গীকার প্রদর্শন করে গেছেন পুরো সময়। তিনি নিক্সন-কিসিঞ্জারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ান। বাংলাদেশের স্বাধীনতার নেপথ্যে ছিলেন তিনি এবং সেই যোগ্যতা তাঁর নিরঙ্কুশভাবেই ছিল। বাংলাদেশের স্বাধীনতাই ইন্দিরার জীবনের সর্বোত্তম মুহূর্ত। বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য তাঁর ‘ফুল ক্রেডিট’ প্রাপ্য। সেটা ছিল তাঁর রাজনৈতিক ইচ্ছা। এ প্রসঙ্গে ইন্দো-সোভিয়েত মৈত্রী চুক্তির কথাও বলতে হয়, যা ছিল পাকিস্তান ছাড়াও চীনের তরফে সম্ভাব্য কোনো অনিষ্টের বিরুদ্ধে রক্ষাকবচ।
প্রথম আলো: কেন ইন্দিরা এমন সাহসিকতার সঙ্গে বাংলাদেশ অভ্যুদয়ে ভূমিকা রেখেছিলেন। আপনার মূল্যায়ন কী?
জ্যাকব: ইন্দিরা ছিলেন গণতান্ত্রিক নেতা। তিনি দেখলেন, সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতা মুজিবকে স্তব্ধ করা হয়, তাঁকে কারাগারে নেওয়া হয়। নৃশংসতা, উদ্বাস্তু স্রোত তাঁকে বিচলিত করে।
প্রথম আলো: একাত্তরে যুক্তরাষ্ট্র, সোভিয়েত ইউনিয়ন, চীন ও মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো তাদের নিজ নিজ জাতীয় স্বার্থ ও পররাষ্ট্রনীতির আলোকে বাংলাদেশের পক্ষে-বিপক্ষে অবস্থান নেয়। সেই দৃষ্টিকোণ থেকে আপনি ভারতের অবস্থানকে কীভাবে ব্যাখ্যা করবেন?
জ্যাকব: যুক্তরাষ্ট্র পাকিস্তানকে সমর্থন দেয়। কারণ, তাদের মাধ্যমে তারা চীনের সঙ্গে দোস্তি করার উদ্যোগ নেয়। অন্যদিকে রাশিয়ার সঙ্গে ছিল আমাদের মৈত্রী চুক্তি। সোভিয়েত ইউনিয়ন ১৯৪৭ সালের ভারত বিভক্তির বিপক্ষে ছিল। তাই তারা মৈত্রী চুক্তি করল। চীন যাতে সংঘাতে না জড়ায়। তারা জড়ালে আমাদের জন্য যুদ্ধজয় কঠিন হতো।
প্রথম আলো: বাংলাদেশের বিজয়কে যদি আমরা কেবলই সামরিক নিরিখে দেখি, তাহলে বিশ্বের ইতিহাসে এর কি কোনো নজির আছে?
জ্যাকব: বাংলাদেশে কিন্তু মূলত ছিল জনগণের সংগ্রাম। আমরা কেবল তাতে সহায়তা দিয়েছি।
প্রথম আলো: অন্য কোনো নজির?
জ্যাকব: ভিয়েতনামেরটাও স্বাধীনতার লড়াই। মার্কিন হস্তক্ষেপের মধ্য দিয়ে যার সূচনা। তবে সেটা ভিন্ন প্রকৃতির। বাংলাদেশে জনগণের সংগ্রাম। মুক্তিযোদ্ধারা দারুণ প্রশংসনীয় ভূমিকা পালন করেন। আমেরিকায়ও স্বাধীনতার যুদ্ধ ছিল। তারা ব্রিটিশদের উৎখাত করে। ব্রিটিশরা সাতচল্লিশে ভারত ছেড়ে যায়। আর ভারত ভাগ তো বিপর্যয় ডেকে আনে।
প্রথম আলো: অনেকে বলেন, ভারতে নিযুক্ত শেষ ভাইসরয় মাউন্টব্যাটেন বাংলাদেশের জন্ন দেখেছিলেন।
জ্যাকব: আমি জানি না। তাঁর সঙ্গে মাত্র দুবার আমার সাক্ষাৎ ঘটে। প্রথম দেখা, আমি তখন সেকেন্ড লেফটেন্যান্ট। ১৯৪২ সালের আগস্টে জাহাজে চেপে বোম্বে থেকে বসরায় যাই। উত্তর ইরাকে কর্মরত ছিলাম কিছুদিন। এরপর সমুদ্রপথে করাচি হয়ে শিয়ালকোট। অতঃপর বার্মায়। আরাকান উপকূলীয় যুদ্ধে আমরা রামরি দ্বীপ দখল করি। এ সময় জাপানি বিমান হামলায় আমি আহত হই। আমাদের বলা হয়েছিল, আমরা মাদ্রাজে বিশ্রাম নেব। কিন্তু পৌঁছাতে না পৌঁছাতেই আবার নতুন অভিযানের প্রস্তুতির নির্দেশ আসে। আমরা ভয়ানক হতাশ হই। এ সময় আমাদের নৈতিক মনোবল দেখতে এসেছিলেন লর্ড লুইস মাউন্টব্যাটেন। দ্বিতীয়বার দেখা, ১৯৬০ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ফোর্ট ব্রাগে। তখন অনেক বিষয় নিয়ে কথা হয়। তিনি ভারতের প্রতি তাঁর ভালোবাসার কথা বলেন। কিন্তু দেশভাগের প্রশ্ন আসেনি।
প্রথম আলো: একাত্তরের আগে পাক সেনাবাহিনীতে আপনার অনেক বন্ধু-সহকর্মী ছিল?
জ্যাকব: হ্যাঁ, নিশ্চয়, নবম ডিভিশনের জিওসি শওকত রেজা। পরে তিনি ডিজিএমও হন। তিনি ছিলেন আমার ব্যাটারি ক্যাপ্টেন। বার্মা ক্যাম্পেইনে সেকেন্ড ইন কমান্ড ছিলেন।
প্রথম আলো: অন্য কেউ?
জ্যাকব: আজমত ছিলেন। সেকান্দার হায়াত।
প্রথম আলো: যুদ্ধের সময় কারও সঙ্গে কথা হয়েছিল?
জ্যাকব: আমি যাঁদের জানতাম তাঁদের কারও সঙ্গে কথা হয়নি। নবম ডিভিশন দুর্নাম অর্জন করেছিল। ম্যাসকারনহাস অনেক লিখেছেন।
প্রথম আলো: ১৬ ডিসেম্বরের পরে কি তাঁদের কারও সঙ্গে কথা হয়েছিল?
জ্যাকব: না। আমার তেমন কোনো আগ্রহও ছিল না। পরে কখনো পাকিস্তানেও যাইনি। ১৯৪৩ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালে শিয়ালকোটে ছিলাম। পাকিস্তানের স্মৃতি এতটুকুই।
প্রথম আলো: এমন কিছু বলুন, যা আপনি আপনার বইয়ে লেখেননি।
জ্যাকব: পাকিস্তানি একজন ব্রিগেডিয়ারকে নিয়ে পাকিস্তানি স্টাফ কারে চেপে আপনাদের পুরোনো এয়ারপোর্ট থেকে নিয়াজির হেডকোয়ার্টারে যাচ্ছিলাম। এ সময় আমাদের গাড়ি লক্ষ্য করে মুক্তিযোদ্ধারা গুলি ছোড়েন।
প্রথম আলো: তার মানে ‘ফ্রেন্ডলি ফায়ার?’
জ্যাকব: অনেকটা তা-ই।
প্রথম আলো: এই ঘটনাটা কি বইয়ে নেই? কখনো কি প্রকাশ করেছেন?
জ্যাকব: না। আপনাকেই বলছি। আমি এ ঘটনা লিখিনি। কারণ, মুক্তিযোদ্ধারা তো আর আমাকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়েননি। আমিই ছিলাম পাকিস্তান আর্মির গাড়িতে। তাঁরা তা জানতেন না। গুলি আসতেই আমি গাড়ি থেকে লাফিয়ে নেমে পড়ি।
প্রথম আলো: আপনি এ ঘটনা আপনার বইয়ে একেবারেই উল্লেখ করেননি?
জ্যাকব: ঈষৎ ইঙ্গিত রয়েছে। ১৬ ডিসেম্বরের সকাল সোয়া নয়টায় জেনারেল স্যাম মানেকশ আমাকে টেলিফোন করেন। বলেন, দ্রুত ঢাকায় গিয়ে আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানের গোছগাছ করতে। যশোরে হেলিকপ্টার বদলে ঢাকার আকাশে পৌঁছাতে দেখি একটি হেলিকপ্টার চক্কর কাটছে। টারমাকে ১৮টি পাক যুদ্ধবিমান (পরে জেনেছি ওগুলো ছিল ভূপাতিত). আমরা দেখলাম বিমানবিধ্বংসী কামানের নল আমাদের হেলিকপ্টারের দিকেই তাক করা। আমাদের এয়ার কমোডর ফিরে যেতেই চাইলেন। কিন্তু আমি পাইলটকে অবতরণের নির্দেশ দিই। পাকিস্তান ইস্টার্ন কমান্ডের চিফ অব স্টাফ ব্রিগেডিয়ার বকর সিদ্দিকীর সাক্ষাৎ মিলল। জাতিসংঘ প্রতিনিধি ও ফরেন প্রেস কোরও ছিল। তো আমরা নিয়াজির সদর দপ্তরের উদ্দেশে রওনা দিলাম। পথিমধ্যে মুক্তিবাহিনী আমাদের আটকায়। তারা মেজাজে যুধ্যমান, ভাঙচুর শুরুর জন্যও প্রস্তুত ছিল। আমি তাদের বোঝালাম, বাংলাদেশ সরকারের কাছে একটি রক্তপাতহীন ক্ষমতা হস্তান্তরই আমাদের লক্ষ্য হওয়া উচিত।
প্রথম আলো: আপনি বইয়ে লিখেছিলেন, ওই সময় ফরেন প্রেস ছিল। তারা কি গুলিবর্ষণের কথা জেনে গিয়েছিল।
জ্যাকব: না, তারা পরে এসেছিল।
প্রথম আলো: ১৬ ডিসেম্বর কয়টার দিকে এ ঘটনা ঘটে?
জ্যাকব: দুপুর ১২টার দিকে।
প্রথম আলো: আপনি বইয়ে লিখেছেন, ‘অন দ্য ওয়ে টু নিয়াজি’স হেডকোয়ার্টার্স, উই ওয়্যার স্টপড বাই দ্য মুক্তিবাহিনী’।
জ্যাকব: এখানে পড়তে হবে উই ওয়্যার স্টপড বাই ফায়ার , আমি গাড়ি থেকে লাফিয়ে নেমে বলি, থামুন থামুন।
প্রথম আলো: আপনি কেন পাকিস্তানি আর্মির গাড়িতেই চড়েছিলেন?
জ্যাকব: আমরা তো কেবল হেলিকপ্টারে এসেছি। তাদের গাড়িতে না চড়ে উপায় কী? নিয়াজির হেডকেয়ার্টারে তো আমি হেঁটে যেতে পারব না।
প্রথম আলো: আপনি লিখেছেন, একাত্তরের যুদ্ধের কোনো কর্তৃপক্ষীয় বা নৈবর্যক্তিক বিবরণ এখনো বের হয়নি। একটি সরকারি ইতিহাস প্রস্তুত করা হলেও তা প্রকাশিত হয়নি। তবে এর লেখকদেরও সংবেদনশীল দলিলাদি দেখতে দেওয়া হয়নি।
জ্যাকব: বাষট্টি সালের যুদ্ধের ইতিহাস, হ্যাণ্ডারসন রিপোর্ট আজও অপ্রকাশিত। একাত্তরের ইতিহাস নিয়ে নানা দৃষ্টিভঙ্গি আছে।
প্রথম আলো: আপনি কি মনে করেন এটা প্রকাশিত হওয়া উচিত?
জ্যাকব: উচিত। কোনোভাবেই বিকৃত ইতিহাস কাম্য নয়। ট্রুথ মাস্ট কাম।
প্রথম আলো: ভারত সরকার ভাবতে পারে এ বিষয়ে এখনো স্পর্শকাতরতা রয়েছে। আপনি কি মনে করেন এটা এখন ছাপার সময়।
জ্যাকব: আমি তা-ই মনে করি। দীর্ঘ সময় পেরিয়ে গেছে।
প্রথম আলো: যুক্তরাষ্ট্র ইতিমধ্যে অনেক কিছুই ডিক্লাসিফাই বা উন্নুক্ত করেছে।
জ্যাকব: হ্যাঁ। সবচেয়ে চমকপ্রদ লেগেছে যে আত্মসমর্পণের পরেও কিসিঞ্জার নিক্সনকে বলছেন, ওয়েলডান, উই গট পাকিস্তান টু সিজফায়ার। এটা কোনো কথা হলো? আমেরিকানরা কিন্তু সারেন্ডার আশা করেনি।
প্রথম আলো: রাশানদের আশা কী ছিল?
জ্যাকব: আমি তা জানি না। তবে তারা আমাদের চাপ দিচ্ছিল যাতে তাড়াতাড়ি যুদ্ধ শেষ করি।
প্রথম আলো: আজ এত বছর পরে আপনার কী মনে হয়? নিক্সন-কিসিঞ্জার কেন এভাবে মরিয়া হয়ে পাকিস্তান ও ইয়াহিয়ার পক্ষ নিল।
জ্যাকব: কৃতজ্ঞতা থেকে। চীনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের দোস্তির সেতুটা তৈরি করেছিল পাকিস্তান।
প্রথম আলো: এটাই কি একমাত্র কারণ ছিল?
জ্যাকব: আমার তাই মনে হয়। অন্য কারণ থাকতে পারে। তবে এটাই মূল কারণ।
প্রথম আলো: একাত্তরের যুদ্ধের বিষয়ে আপনার কাছে কি কোনো মূল্যবান দলিল রয়েছে? ব্যক্তিগত কোনো সংগ্রহশালা?
জ্যাকব: কোনো দলিলপত্র নেই। বইটা লিখেছি আমার ব্যক্তিগত নোট থেকে।
প্রথম আলো: আপনি কি ডায়েরি লিখতেন?
জ্যাকব: না, তবে নোট রেখেছি।
প্রথম আলো: সেই নোট কি আছে? দেখতে পারি?
জ্যাকব: বই লেখার পর আমি তা নষ্ট করে ফেলেছি। আমার ব্যক্তিগত সংগ্রহ কিছুই নেই। হাতের লেখা খুব খারাপ। তাই নোটগুলোও রাখিনি। তাতে আমার মত ইত্যাদি লেখা ছিল।
প্রথম আলো: তাই বলে কোনো স্মৃতিই নেই?
জ্যাকব: কিছুই নেই। কেবল একটি চিঠি। জেনারেল গিলের। কিন্তু তা যুদ্ধের পরে লেখা। অবশ্য জেনারেল মানেকশ ৮ মার্চ ১৯৭৮ আমাকে যে একটা প্রশ্নপত্র দিয়েছিলেন সেটাও ছিল। তার মূল কপি এখন নেই। নোটের সঙ্গে কিছু কাগজপত্রও আমি নষ্ট করেছি।
প্রথম আলো: তাহলে যুদ্ধের কোনো প্রত্যক্ষ স্মৃতিই নেই?
জ্যাকব: তিন সপ্তাহ আগে আমি একটি ভিডিও ক্লিপ পেয়েছি। ৮ ডিসেম্বরের দিকে পাকিস্তানিরা পশ্চিমাংশে মহড়া দিচ্ছিল। তারা গুজব প্রচার করছে অমৃতসর, শ্রীনগর, জম্মু দখল করে নিয়েছে। তারা যুদ্ধে জয়ী হচ্ছে। পূর্ব পাকিস্তানে তোমরা লড়াই চালিয়ে যাও। এসব খন্ডন করে তখন যে ব্রিফ করছিলাম তারই একটি ভিডিও ক্লিপি।
আমাদের সিস্টেমে কোনো রেকর্ড ব্যক্তিগত সংগ্রহে রাখার নিয়ম নেই। তাই রাখিনি। তবে আমার নোটে রাখা এমন কোনো একটি বাক্যও রাখিনি, যা বইতে লিখিনি। যুদ্ধের পরে আমি কয়েকটি ব্যক্তিগত চিঠি পেয়েছিলাম, তা দেখাব না। সে চিঠিগুলো যুদ্ধবিষয়ক নয়, বন্ধুবান্ধবদের লেখা। কোনো সরকারি কিছুই আমার কাছে নেই, এটা নিশ্চিত। আমি বইতে যা দিইনি, তার চেয়ে ঢের বেশি আপনাকে বলে ফেলেছি।
প্রথম আলো: আত্মসমর্পণের অনুষ্ঠানে আপনার হাতে একটি ঘড়ি দেখা গেছে। সেটি থাকলে ছবি নিতে চাই।
জ্যাকব: হ্যাঁ সেটি কিন্তু রক্ষিত আছে। তবে আপাতত দেখাতে পারছি না। কারণ তালাবদ্ধ।
প্রথম আলো: আপনি কেন নিয়াজিকে তার তরবারি সমর্পন করতে বলেছিলেন?
জ্যাকব: ইতিহাস প্রাচীন প্রথা হলো পরাজিত জেনারেল তাঁর তরবারি বিজয়ী জেনারেলের কাছে সমর্পন করেন। নিয়াজি বললেন, আমার তরবারি নেই। বললাম, তাহলে পিস্তল দিন, তাতেই চলবে। আমি যখন তার পিস্তলটি পরীক্ষা করলাম, দেখলাম অকেজো, কতকাল পরিস্কারই করা হয়নি। এটা নিশ্চয় কোনো জেনারেলের পিস্তল হতে পারে না। যাক, সমর্পনতো প্রতিকী ছিল।
প্রথম আলো: পিস্তলটি এখন কোথায়?
জ্যাকব: দেরাদুনের মিলিটারি একাডেমিতে।
প্রথম আলো: মুক্তিযুদ্ধের সবর্াধিনায়ক জেনারেল এম এ জি ওসমানীর সঙ্গে আপনার সম্পর্ক কেমন ছিল?
জ্যাকব: ওসমানী মহান জাতীয় নেতা ছিলেন। কোনো সমস্যা ছিল না তাঁর সঙ্গে আমার। আমি তাঁকে খুবই পছন্দ করি। কিন্তু আমরা ভাবতাম ভিন্নভাবে। কেবল ওসমানীই নন। মানেকশসহ অনেকের সঙ্গেই আমার ভাবনার বৈপরীত্য ছিল। ওসমানী আমাকে বলেছিলেন, ইস্ট বেঙ্গলকে তিনি নিয়মিত পদাতিক ব্যাটালিয়ন হিসেবে দেখতে চান। আর সেটি পাকিস্তান আর্মির মডেলেই রাখতে আগ্রহী।
প্রথম আলো: এতে কি সমস্যা সৃষ্টি হয়েছিল?
জ্যাকব: পাকিস্তান সেনাবাহিনীকে সৃষ্টি করা হয়েছিল পাঞ্জাবের মতো ভূখন্ডে নির্দিষ্ট ধরনের শত্রুর বিরুদ্ধে যুদ্ধ পরিচালনার জন্য। পাকিস্তান আর্মির ডিজাইনটা ছিল প্রধানত পশ্চিম পাকিস্তানের জন্যই। এমনকি ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টকেও গড়া হয়েছিল ভারতের বিরুদ্ধে ভবিষ্যৎ কোনো সম্ভাব্য যুদ্ধের জন্য। তাদের যেসব অস্ত্রে প্রশিক্ষিত করা হয় তার পেছনেও ছিল ওই চিন্তা। সুতরাং একাত্তরের যে সময়টাতে ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের বাঙালি সৈন্যদের যুদ্ধ করতে হয় সে জন্য তাদের একটি ভিন্ন রণকৌশল নেওয়া অপরিহার্য হয়ে পড়ে। যাতে তারা নদীমাতৃক, ঝোপঝাড়, ধানক্ষেতবেষ্টিত বাংলাদেশে পাকিস্তানিদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করত পারে।
প্রথম আলো: কেন ওসমানী সেটা করেছিলেন?
জ্যাকব: অন্য কোন কারণে নয়। তিনি যেহেতু পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে প্রশিক্ষিত ছিলেন, তাই তিনি সেই সাংগঠনিক কাঠামোর আলোকেই হয়তো ভেবেছেন। অন্য কোনো কারণ নয়। ওসমানি এতেই অভ্যস্ত ছিলেন। তিনি ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টকে সেভাবেই দাঁড় করাতে চেয়েছিলেন। তবে পাকিস্তান আর্মিকে ধানক্ষেত, বনবাদাড় ও নদীবেষ্টিত ভুখণ্ডে যুদ্ধের জন্য তৈরি করা হয়নি। তাঁরা চেনে পাঞ্জাবের ভূখন্ড। সেক্ষেত্রে ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টকে বাংলাদেশের ভূ-প্রকৃতির আলোকে তৈরি করা প্রয়োজন ছিল।
প্রথম আলো: তাহলে সামরিক দৃষ্টিকোণ থেকে ওসমানী সাহেবের ওই চিন্তা ভুল ছিল?
জ্যাকব: না, আমি তাঁর সামরিক পরিকল্পনার বিচার করতে পারি না। তিনি বাংলাদেশের অধিনায়ক হিসেবে পরিকল্পনা নিয়েছেন। আমি আমার মতো সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমাদের ভিন্ন মত ছিল, কেবল এটুকু বলতে পারি।
প্রথম আলো: আত্মসমর্পণের অনুষ্ঠানে তাঁর অনুপস্থিতিকে কীভাবে দেখেন?
জ্যাকব: আমি নির্দেশনা দিয়েছিলাম যে, এমএজি ওসমানি এবং মুক্তিযুদ্ধের উপপ্রধান সেনাপতি একে খোন্দকার থাকবেন। তাছাড়া তিনি তো যুদ্ধবিরতি সম্পর্কে জনতেন। কিন্তু তিনি সিলেট গিয়েছিলেন। তাকে আনতে হেলিকপ্টার পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু পথে বৈরী গুলিবর্ষণে সেটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। যথাসময়ে সেটি আর মেরামত করা যায়নি।
প্রথম আলো: তিনি কি তবে সুচিন্তিতভাবেই আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠান এড়িয়েছিলেন?
জ্যাকব: আমি তা জানি না। আমি তাঁর উপস্থিতি একান্তভাবেই চেয়েছিলাম। সুতরাং সেটা আমাদের ভুল নয়। তাকে ইচ্ছে করে দূরে সরিয়ে রাখার কথা নেহাৎ অপপ্রচার। খন্দকার তো ছিলেন।
প্রথম আলো: জেনারেল ওসমানী ১৯৭১ সালের ১৪ এপ্রিল মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক ও সামরিক উপদেষ্টা হয়েছিলেন। তাঁকে বাছাই করার প্রক্রিয়া সম্পর্কে আপনার কি কোনো ধারণা ছিল?
জ্যাকব: আমি জানতাম না। তিনি জ্যেষ্ঠ ছিলেন। আগেই বলেছি, আমার সঙ্গে অনেক বিষয়ে তাঁর মতের গরমিল হয়, সমস্যা হয়।
প্রথম আলো: আপনি যুদ্ধজয়ের জন্য মুক্তিবাহিনীকে এবং ওসমানী নিয়মিত বাহিনীকে প্রধান শক্তি বিবেচনা করেছিলেন?
জ্যাকব: ঠিক তাই। আমি আমার সবটুকু মনোযোগ মুক্তিবাহিনীর প্রতি ঢেলে দিয়েছিলাম। কিন্তু তিনি নিয়মিত ব্যাটালিয়ন গড়তেই মনোযোগী হন। আমি তাতে কিছু মনে করিনি। কিন্তু সমস্যা হয়, আমি মুক্তিবাহিনীর জন্য যাদের সবচেয়ে মেধাবী ও যোগ্য মনে করেছি, তিনি তাঁর বাহিনীর জন্য তাদেরকেই আশা করলেন। নিয়মিত বাহিনী গড়তে সময়ের প্রয়োজন ছিল বেশি। আমি মুক্তিবাহিনীর প্রতি খুবই আস্থাবান ছিলাম। বাংলাদেশ কিন্তু মুক্তিবাহিনী ও নিয়মিত উভয় বাহিনীর জন্য গর্ব করতে পারে। কারণ তাঁরা অসামান্য ভুমিকা রাখে। তবে তুলনামূলকভাবে মুক্তিবাহিনীই নিয়মিত বাহিনীর চেয়ে কার্যকর ভূমিকা রেখেছে। তাদের ভূমিকাটাই বড় ছিল
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা সেপ্টেম্বর, ২০১২ দুপুর ২:২৮
৭টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বাংলাদেশের লোকসংস্কৃতিঃ ব্যাঙের বিয়েতে নামবে বৃষ্টি ...

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:০০



অনেক দিন আগে একটা গল্প পড়েছিলাম। গল্পটা ছিল অনেক এই রকম যে চারিদিকে প্রচন্ড গরম। বৃষ্টির নাম নিশানা নেই। ফসলের মাঠ পানি নেই খাল বিল শুকিয়ে যাচ্ছে। এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশি ভাবনা ও একটা সত্য ঘটনা

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:১৭


আমার জীবনের একাংশ জুড়ে আছে; আমি চলচ্চিত্রাভিনেতা। বাংলাদেশেই প্রায় ৩০০-র মত ছবিতে অভিনয় করেছি। আমি খুব বেছে বেছে ভাল গল্পের ভাল ছবিতে কাজ করার চেষ্টা করতাম। বাংলাদেশের প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাকি চাহিয়া লজ্জা দিবেন না ********************

লিখেছেন মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:৩৫

যখন প্রথম পড়তে শিখেছি তখন যেখানেই কোন লেখা পেতাম পড়ার চেষ্টা করতাম। সেই সময় দোকানে কোন কিছু কিনতে গেলে সেই দোকানের লেখাগুলো মনোযোগ দিয়ে পড়তাম। সচরাচর দোকানে যে তিনটি বাক্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

=এই গরমে সবুজে রাখুন চোখ=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১

০১।



চোখ তোমার জ্বলে যায় রোদের আগুনে?
তুমি চোখ রাখো সবুজে এবেলা
আমায় নিয়ে ঘুরে আসো সবুজ অরণ্যে, সবুজ মাঠে;
না বলো না আজ, ফিরিয়ো না মুখ উল্টো।
====================================
এই গরমে একটু সবুজ ছবি দেয়ার চেষ্টা... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×