নাস্তিক!
আপনের মা আর বোন কি নিরাপদ ওদের থেকে?
ওরা নাস্তিক!!
সমকামী হবার বৈধতার জন্যই নাস্তিক হয়েছে।
ব্যাটা নাস্তিক!!!
নাস্তিক দারোয়ান আর ড্রাইভার মিলে বাপের গাড়ির তেল চুরি করেছে।
বলগে আসিয়া মাথা গুরিয়া গেল বাহে। মনে পড়িল রবার্ট ওয়েন নামের এক ভদ্রলোকের কাহিনী।
উনবিংশ শতকেও ইউরোপে শ্রমিকদের অবস্থা ছিল খুবই করুণ। একদিকে গ্রাম থেকে উচ্ছেদ হওয়া চাষারা শহরের বস্তিতে ভীড় জমাত, আর তাদের অপেক্ষা করে ছিল কারখানা মালিকরা। গেটের বাইরে হাজার বেকার শ্রমিকের ভীড় থাকায় পাল্লা দিয়ে কমত মজুরি।
সেই সময়কার কাহিনী।
বস্তিবাসী গরিব লোকজনের নৈতিকতার মান নিয়ে ভদ্রলোকদের দুঃশ্চিন্তার শেষ ছিল না। এরা বৌ পেটায়, বেতনের টাকা মদ খাইয়া উড়ায়া ফেলে, পতিতাতে অরুচি নাই, পোলাপাইনের খবর নেয় না... আর শালার বেটারা যেন জন্ম নোংরা। পারলে ইচ্ছা কইরা কাদায় গড়াগড়ি খায়।
ফকিন্নীর পুতেরা কাদায় গড়াগড়ি খাক, চার্চে যাওয়া বন্ধ করুক আর বেশ্যাগমন করুক- তাতে ভদ্রলোকদের কি? অনেক কিছু। ছিচকে চুরি, রাহাজানি আর মাস্তানি তো আছেই, সমাজের পরিবেশটারেও তো এর বিষায়ে তুলছে। কারখানায় কামে ফাঁকি দেয়া আর চুরি করাও একটা বড় আপদ। ... আর সবচে' বড় কথা, নিয়মনীতি নাই বইলা এরা যে হারে অবাধ্য হওয়া শুরু করল, তাতে তো রাষ্ট্র টেকানোই মুশকিল!
তাই পুলিশ বাড়লো, আইন কড়া হইল... সাথে আগায়া আসলেন পুরুত ঠাকুররাও; দলে দলে বস্তিতে বস্তিতে হাজির হইয়া লোকজনরে বুঝানো শুরু করলেন:
বাবারা বেশ্যাগমন করে না। পাপ।
বাবার রাহাজানি করে না। পাপ।
বাবারা সন্তানের অবহেলা করে না। পাপ।
বাবারা মদ খায়না। পাপ।
বাবারা রোববার কইরা গির্জায় আসো। পুন্য।
শ্রমিকরা মন দিয়া ওয়াজ শুনে, প্রতিজ্ঞা করে। কান্দে। কয়দিন চার্চে যায়। তার্পর যেই সেই।
ফকিন্নীগুলার আসলে জাতই ওই, কেমনে ওগো ভাল করবা: মাথা নাড়েন দুঃখী-সহমর্মী বড়লোকেরা।
রবার্ট ওয়েন নামের এক নতুন শিল্পপতি কিন্তুক আরেক রকম ভাবলেন। তিনি করলেন কি, শ্রমিকদের জন্য বেতন বাড়ায়া দিলেন, তাগো সন্তানদের লেখা পড়ার ব্যবস্থা করাইলেন, বাসস্থানের দিকে নজর দিলেন... আর পাদ্রীগো প্রবেশ একেবারে বন্ধ কইরা দিলেন।
দেখা গেল পাদ্রীরা যা চায়, তাদের অনুপস্থিতিতে তাই বহুগুন বাড়ল: ওয়েনের কারখানার শ্রমিকরা তাদের মেয়েদের পতিতাবৃত্তিতে পাঠাইত না, নোংরাও তারা থাকতো না, কাজ করতো খুশি মনে, মদ খাইত লুকায়া চুরায়া (ওয়েনের এই এট্টা দোষ আছিল, মদ দেখতারতো না), আর বৌ পেটানো একদম প্রায় বন্ধ!
কিন্তু রক্তচোষা না হইয়াও ওয়েনের কারখানা বহুগুন লাভ করল!!
চতুর্দিকে ধন্য ধন্য পড়ল। তারে আইজ এই মন্ত্রী ডাইকা এই সাফল্যের খোঁজ নেয় তো কাইল তমুক বিজ্ঞজন ইন্টারভিউ করে, এই হইল অবস্থা। ওয়েন হইলেন ইউরুপের একজন সেলিব্রেটি। তিনি একই সাথে কারখানা মালিকের লাভ আর শ্রমিকদের অবস্থা ভাল রাখা- একলগে দুই রাস্তাই দেখায়া দিছেন।
ওয়েন সম্পর্কে আর কয়ডা কথা বলা দরকার: তিনি ছিলেন সমবায় আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা। আর ইংল্যান্ডের শ্রমিক আন্দোলনেরও তিনিই আদি রুপকারদের একজন। প্রথম দিককার একজন সমাজতন্ত্রীও তিনিই।
...
অ্যা! কারখানা মালিক সমাজতন্ত্রী!
জ্বি, জনাব। ওয়েন একটা আজব জিনিস আবিষ্কার করলেন, অন্যদের চেয়ে বেশি বেতন দিলেও তার কারখানার যে লাভ, তার উৎস কি... এই প্রশ্ন তিনি নিজেরে শুধাইলেন। জবাব পাইলেন: শ্রমিকের উৎপন্ন চুরি।
তাই তিনি কইলেন, সকল সম্পদই চুরি। এখন, আমার ব্যক্তিগত মতামতের ওপর আমার কারখানার শ্রমিকরা ভাল থাকবে, এইটা অন্যায়। আর দ্বিতীয়ত, তীব্র প্রতিযোগিতার সময়গুলোতে এই সব ভাল ব্যবস্থা টিকায়ে রাখা সম্ভব না। কারণ, আরেক কারখানার মালিক সস্তা পণ্য ছাইড়া এমন কোম্পানিরে বাজার ছাড়া করব।
কাজেই উপায় একটাই: সমাজতন্ত্র। স্যোসিয়ালিজম শব্দটার আদিপ্রবক্তাদেরও একজন তিনি।
এইবার কিন্তু ওয়েন আর সেলিব্রেটি থাকলেন না। ভদ্রলোকেরা তারে দূর দূর করল, জীবন বিষায়া তুলার ব্যবস্থা করল। কিন্তু তাতে কী, যে আবিষ্কার তিনি করলেন, জীবন ভর তার বিকাশে প্রাণপন চেষ্টা করলেন।
ইংলান্ডের শ্রমিক আন্দোলন আর গণতান্ত্রিক অধিকারের আন্দোলনের তিনি তাই আদিপুরুষদের একজন।
...
বইটা খুইজা পাইলাম না বইলা আরো বিস্তারিত দিতে পার্লাম না, ব্লগের বিজ্ঞজনেরা যদি আরো কিচু জানেন, কইয়েন। তয় অতো ইতিহাসে অবশ্য আমাগো এই পুস্টে দরকারো নাই। কতা ঐ নৈতিকতা আর নাস্তিকতা নিয়া।
আসল কতা ঐ শিরোনাম।
গাধারা সেই প্রশ্নই তোলে, জ্ঞানীরা যা অনেক আগেই সমাধা করে ফেলেছে- গ্যেটে।
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে আগস্ট, ২০০৯ রাত ২:৩০