somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সুশীল কাহারে বলে... পয়লা কিস্তি

০৩ রা এপ্রিল, ২০১০ রাত ১০:০৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


সুশীল ভাষায় সাধুঅংশ


বঙ্গদেশে তেমন কেহ আজকাল আর কেউ সুশীল হইতে রাজি নহেন। শুদ্ধু কি তাই, সকল বিচারে শুদ্ধ-সুশীলও অপরের প্রতি "সুশীল" বলিয়া অঙ্গুলি নির্দেশ করেন। ইহাতেও সমাপ্তি হৈলে চলিত, কাহাকেও "সুশীল" বলাতে আসলে হয় কীনা, সেই বিষয়ে কৈফিয়ত দিয়া মৌলিক গবেষণামূলক নিবন্ধও প্রণয়ন করেন।

সিভিল সমাজের বঙ্গীয় রূপ হিসাবে সুশীল সমাজের শীর্ষ আলোচনার কেন্দ্র পরিনত হইবার ঘটনাটি ঘটে ৯০ দশকের গোড়ার দিকেই। মূলতঃ এনজিও আর দাতাদের পৃষ্ঠপোষকতায় সুশীলারই রাজনীতির সবচে' বড় প্রভাবকে, রাজনৈতিক দলের বিকল্পে পরিনত হইবার মতো হুমকি হিসাবে পরিগণিত হইয়াছিলেন, অন্ততঃ তাহাদের মহাবৃক্ষ ফ. র মাহমুদ হাসানের পতনের পূর্ব পর্যন্ত। সেই রামও আজ নাই, সেই অযোধ্যাও নাই। কই আমলা-সেনাপতি-উদ্যোক্তা-সুশীল সমাজ (সাংবাদিক হইতে এনজিও কর্তা পর্যন্ত বিশাল বুদ্ধিজীব সম্প্রদায় জুড়ে বিস্তৃতি এর ধারণার) সহযোগে রাষ্ট্রটাই শাসিত হইবার কথা ছিল একদা, আজ মন্দার কালে সেই সবই রূপকথার রাজ্যপাটের মতো উধাও হইয়াছে, ভাটার সময়ে জোয়ারের ফেলিয়া যাওয়া ময়লা ফেনার মতই পিছনে রাখিয়া গিয়াছে একটি অপসম্ভাষণঃ তুই একটা সুশীল!

কাহারও প্রস্তাব অপছন্দ হইলে স্বয়ং মুন্সীও এই 'সুশীল' সম্বোধনে পিছপা হন না।

কিন্তু সুশীল কাহারা? কি তাহাদের বংশপরিচয়? কি কি নিদর্শন হইতে তাহাদের রোগ নিরুপন সম্ভব? কি-ইবা তাহাদের চিকিৎসা?

এক কথায় উত্তর দেয়া বড় শক্ত। তবে সংক্ষেপে এইটুকু বলা যায়, জগতের সকল সুশীলের রোগবৈশিষ্ট্য এক নহে, তাহার উৎপত্তিও এক নহে। অদ্য এই ব্লগ পরিসরে বড়জোর সুশীলের কয়েকটি পদ নির্দেশ করা সম্ভবপর, তাহাই করা যাউক।
ক. সুশীল সে, যে স্থিতাবস্থার পক্ষে। র‌্যাডিকালদের সাথে তার এই চিরকালের পার্থক্য যে, র‌্যাডিক্যাল পাল্টাইতে চায়, সুশীল বর্তমানরেই আরেকটু ভাল করায় আগ্রহী। সুশীল চায় বর্তমানটা আরেকটু বাসযোগ্য হউক, কিন্তু বিদ্যমান সম্পর্ক-কাঠামোতে বড় ধরনের বদল সে চায় না।

খ. এক প্রসঙ্গে যিনি সুশীল, অপর প্রসঙ্গে তিনি রীতিমতো র‌্যাডিক্যালো হৈতে পারেন। বঙ্গদেশের উচ্চবিত্ত সুশীল সমাজে নিয়মিতই এই দৃশ্য দৃষ্টিগোচর হয়: কেহ কেহ গার্মেন্টের শ্রমিকের মজুরি প্রশ্নে হয়তো সুশীল, কিন্তু নারীস্বাধীনতার প্রশ্নে র‌্যাডিক্যাল। আবার এইরূপও দেখা যায়, উৎপাদন-সম্পর্ক প্রশ্নে সুশীল, কিন্তু পরিবেশ রক্ষার প্রশ্নে র‌্যাডিক্যাল। কেহ কেহ থাকিতে পারেন, অধিকাংশ প্রসঙ্গে যিনি সুশীল। কেহ কেহ থাকিতে পারেন, অধিকাংশ প্রসঙ্গে যিনি র‌্যাডিক্যাল, অল্প কিছু বিষয়ে সুশীল। নারীমুক্তির বিষয়েই দেখা যাইবে, বহু বামপন্থী সুশীল মিউ মিউ, র‌্যাডিক্যাল নহেন মোটেও। নারীমুক্তির প্রশ্নে র‌্যাডিক্যাল, জাতির প্রশ্নে তীব্রতম প্রতিক্রিয়াশীল, এই রকম একজনের সাক্ষাতও তো ব্লগ আসিয়া পাইলাম।

সর্বদা না হইলেও প্রায়শঃই আর সকল বিষয়ে মিউ মিউ, অথচ নারী-পরিবেশ ইস্যুতে র‌্যাডিক্যালদের শৌখিন বলিয়াও কখনো কখনো সন্দেহ করা হয় ।

গ. সুশীল প্রজাতি কখনও মূল প্রশ্নের উত্তর প্রদান করেন না। পার্শ্বচিন্তার (যাহা সর্বদা অপ্রয়োজনীয় নহে, যাহার বিবেচনাও রাখা জরুরি বটেক) ডালপালা দ্বারা সঙ্কটের উৎপত্তিকে আড়াল করিয়া তাহার অবস্থানের অনির্দিষ্টদা রক্ষা করা তাহার অস্তিত্ব রক্ষার মতই জরুরি।

সুশীল কিন্তু সর্বদাই প্রতিক্রিয়াশীল নন। জাতিবিদ্বেষী, নারীবিদ্বেষী কিংবা মুক্তচিন্তার প্রতি কোন বিদ্বেষ অন্তর্গতভাবে তাহার নাই। তিনি সমাজকে পশ্চাতপানে টানিয়া রাখিতে চান, এই অপবাদ লেপন তাই সর্বদা সঙ্গত হইবে না।

তবে সুশীল কি হন? তিনি স্রেফ 'আপাতদৃষ্টে' যে বিষয়ে/প্রসঙ্গে সুশীল, সেই বিষয়ে চিন্তা/কর্মে কোন বিপ্লবাত্মক পদক্ষেপে আগ্রহী নন, তিনি বড়জোড় আরেকটু ভাল কিছুর সমর্থক।

আপাতদৃষ্টে? খারেজির শয়তানি এইখানে, আপাতদৃষ্টে জুড়িয়া দিয়াছে। আসলে জগতের সকল সুশীলতার পেছনেই, যে যে অংশে যতটুকু সুশীল, ওইটুকু আসলে তাহার প্রতিক্রিয়াশীলতা ঢাকিবার প্রয়াস। সুশীল প্রথবাবধি সতর্ক হইলে ইহার অনুসন্ধান করা প্রায়শই দুস্তর কর্মে পরিনত হয়, কিন্তু প্রায়শঃই তাহার পশ্চাতে পষ্ট পদছাপ ফেলিয়া যায়, আসুন পাঠক আজ আমরা জনবা পি. মুন্সী'র নানাবিধ মন্তব্য আর মৌলিক রচনায় সেই পলায়নপর, ক্রমবিকাশমান সুশীল চেহারার সন্ধান করি। এই কর্মে আমাদের প্রায় সময় ভ্রমনের মত কাজ করিতে হইবে, 'একটি' বুদ্ধিজীবী মনন তাহার জাতিপ্রশ্নে প্রতিক্রিয়াশীলতা ক্রমশঃ আড়াল করিতে করিতে কি করিয়া সুশীল হইয়া উঠিল, পাঠক, যদি ধৈর্য থাকে, তাহার উদঘাটনে আমাদের সঙ্গী হউন।

আর আমার ব্লগে ইতিপূর্বে একটি কথা বলিয়াছিলাম, প্রসঙ্গক্রমে আবারও বলিয়া রাখি: গালাগালির সাথে সুশীলতার কোন সম্পর্ক বা বিরোধ নাই, যদিও তেমন একটি সম্পর্ক প্রায়শই কল্পনা করা হয়, কেহ ভাষা ব্যবহারে সতর্কতার আবেদন করিলে 'আপনেও সুশীল হৈলন' কথাটি প্রায়শই শ্রবনে আসে। সুশীল কথাটির রাজনৈতিক মানেটা পরিস্কার: কোন একটি নির্দিষ্ট ক্ষেত্রে বা সামগ্রিক অর্থে যিনি সঙ্কটের বৈপ্লবিক রূপান্তর বা সমাধানের প্রয়াসী নন, তবে বর্তমানকে যিনি আরেকটু সহনীয় করার পক্ষপাতী। গালাগালির সাথে সুশীলতার সম্পর্কটা ভাব হয়েছে আসলে লক্ষণবিচার দিয়া, সারবত্তা বিচার দিয়া নহে। ভাষা ব্যবহারে বহু অসুশীল, গালাগালির প্রশ্নে যারা রীতিমত বস কিসিমের, তাহাদের কিন্তু রাজনৈতিক চেতনার দিক দিয়া অকাট্ট সুশীল।
...
জাতিবিদ্বেষের ছাপ: অসাধু ভাষায়
এই কাহিনীর শুরু বহু বহু কাল আগে। বাঘাইছড়ি নামের জায়গাটায় তখনও পাহাড়িদের ওপর সর্বশেষ দফায় খুন-অগ্নিসংযোগ-লুণ্ঠনের ঘটনা ঘটে নাই। পার্বত্য শান্তিচুক্তির একযুগ পূর্তি উপলক্ষ্য মুনশীয়ানা নামের আমার অগ্রজ ব্লগার একটি পোস্ট দিলেন, জনাব পি মুন্সী'র ওইখানে এই বিষয়ে করা একটি কমেন্টের একাংশ ছিল নিম্নরূপ:

" এখন কথা অল্পে সারব। যারা এখনও গা থেকে গোত্রের গন্ধ ছাড়াতে পারেনি ওদের কী বলবেন? ওরা জাতির মর্ম বুঝেছে? বাঙালির বিরুদ্ধে অস্ত্র ধরতে পারলেই আপনাআপনি জাতি হওয়া যায়?..."

হুম, এই হল শুরু। পাঠক, এই মন্তব্যে গণ্ধ ছাড়াতে পারার উপমাটির ব্যবহার লক্ষ্য করুন, এবং ভুলে না গিয়েও, মনের গভীরে রেখে দিয়েও আপাতত চেপেও যান। এটা সাহিত্যসমালোচনার ক্লাস না। যদি হত যে আমরা কিপলিং কি বারোজের জাতিদম্ভী সাহিত্যের আলোচনা করতে বসেছি, তাহলে খুব জরুরি বিষয় হতো এটাও। এইখানে আমরা রাজনীতির বিচার করতে বসেছি। কাজেই আপাতত শুধু খেয়াল করুন ওরা জাতির মর্ম বুঝেছে কিনা, সেই প্রশ্নটিই।

পি মুন্সী তাহলে জাতির মর্ম বোঝা বলে একটা বিষয় আছে, মানেন। সেইটা হওয়া যায়, হয়ে উঠতে হয়, সেইটাতেও একমত। খালি অমুকের পক্ষে তমুক কাজটি সেরে বা না সেরে আপনাআপনি হওয়া যায় কি না, সেইটাই 'আপাতত' তার প্রশ্ন।

আবার 'আপাতত' কেন? কারণ আছে, খারেজির শয়তানি। জাতি প্রশ্নটাই যে নিরর্থক, সেইটা তখনও মুন্সীজির মালুম হয় নাই। পরে যখন মালুম হলো, তখন এই কথাটা যে তিনি বলেছিলেন, তাও বেমালুম ভুলে গেলেন। ব্লগার মঞ্জু ভাই জাতি হয়ে ওঠার ব্যাখ্যা এবং জাতিগত অধিকার রক্ষায় প্রতিরাধের ন্যায্যতা নিয়ে চেপে ধরায় মুন্সী দ্রুতই ফিল করলেন, তার এই জাতি হয়ে ওঠার বিষয়টাতে তিনি ব্যাখ্যায় সামাল দিতে পারছেন না। কাজেই অন্য নীতি ধরলেন। এই পোস্টটায় তিনি দ্রুত গতিশীল হলেন, বদলে গেলেন
এই পোস্টে কমেন্ট লিখলেন:

" অনেকবার বলেছি কিন্তু কখনই আপনার চোখে ফেরাতে পারি নাই, তবু শেষবার বলি; আমার নিজের কথা লিখতে বা বাক্যগঠনে - ওতে কখনই জাতি, জাতিগত বা জাতিসত্ত্বা অথবা জাতি-রাষ্ট্র এমন কোন ধারণা নাই। এককথায় "জাতি" এই শব্দ কোথাও কোন পোষ্টে কখনও ইতিবাচক অর্থে ব্যবহার করিনি, করি না, কারণ "জাতি" শব্দ ব্যবহার করে আমার অবস্হান, কথা প্রকাশ করা যায় না। এজন্য "জাতি" আমার কথা বলবার ভাষা নয়, বরং পরিত্যায্য।.."

বুঝুন ঠ্যালা। মাত্র একজনের গণতান্ত্রিক লড়াইরে খাটো করলেন গোত্রের গণ্ধ ছাড়তে পারে নাই, কেমনে জাতি হয়া উঠব বইলা, আবার এখনই বলেন জাতি শব্দটাই তো ফালতো। এই কথাটা আসলে সর্বদা সুবিধাজনক অবস্থায় থাকা একজন ব্যবহার করতে পারে, করতে চায়, যে নিজের রাষ্ট্রবাদী অবস্থানের কারণে পরের জাতি গঠনের লড়াইরে ঠেকাইতে চায়, ক্ষুদ্র করতে চায় এবং বিভ্রান্তও করতে চায়। এবং বলা উচিত, ভিন্ন সংস্কৃতিকে-জাতিসত্তার এই বিকাশরে রূদ্ধ করার এই আতঙ্কের উৎসও আসলে রাষ্ট্র আর জাতিরে গুলায়া ফেলা, রাষ্ট্র ভাইঙ্গা যাইতে পারে বলে আতঙ্কে ভোগা, পি মুন্সী আসলে সেই আতঙ্কেরই শিকার। ওই একই উদ্ধৃতির শেষাংশটুকুতে তিনি বললেন:

কোন জনগোষ্ঠির আপন প্রতিনিধিত্ত্ব নিয়ে রাষ্ট্র হয়ে আত্মপ্রকাশ করতে চাইলে "জাতি" (জাতিসত্ত্বা, জাতীয়তাবাদের রাজনীতি) হওয়া অপ্রয়োজনীয়; ওটা জাতিরাষ্ট্র হতেই হবে বা হয়ে যাবেই এমন কোন কথা নাই; তবে এসব ভাবনার বিষয়ে অসচেতন থাকলে এতে কারও "জাতিসত্ত্বা", "জাতি"র মুক্তি ঘটছে - বলে একে মনে করে বসব; ওরা নিজেদেরও তাই মনে করতে পারে।
তবে এখানে মুল গুরুত্ত্বপূর্ণ কথা - রাষ্ট্র মানেই ওর পিছনে একটা "জাতি" আছে এটা আগাম (presuppose) ধরে নেবার আমাদের স্বভাব আছে - এই ভাবনাটা ভুল। রাষ্ট্র মানেই জাতিরাষ্ট্র নয় (ইনএভিটেবল নয়)। জাতি ও রাষ্ট্র সমার্থক নয়। এনিয়ে বিস্তারে আরও কথা বলতে হবে জানি। হয়ত পরের পোষ্টেই বলব। আপাতত সার কথা হলো, জাতি ও রাষ্ট্র সমার্থক নয়।


রাষ্ট্র মানে জাতি,এই কথা মুন্সী বারংবার স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন, যদিও তার সাথে তারা তর্কে লিপ্ত, তারাই ওটি কখনোই বিস্মৃত হননি। কারণটা খুব পরিস্কার, রাষ্ট্রের ভেতরে গণতন্ত্রের লড়াই শক্তিশালী থাকলে, প্রাধ্যান্যশীল জাতির বাইরের জাতিসত্তাগুলোর রাজনীতি বিকাশমান থাকলে রাষ্ট্রের মাঝেও সংখ্যালঘু জাতির জীবন আর সংস্কৃতি সহনীয় আবহওয়া পেতেও পারে। বরং উল্টোদিকে অধুনা তার সুহৃদ রাগ ইমন সমেত আরও কেউ পাহাড়িদের প্রতি হুংকার দিয়ে যা যা বলেছেন , , সেইটাকেও পরম স্নেহে এড়িয়ে গিয়েছেন।

কার্যক্ষেত্রে জাতি আর রাষ্ট্রের এই পার্থক্যটা ভুললেন স্বয়ং মুন্সীই, বাংলাদেশ রাষ্ট্র আর বাঙালি জাতিকে তিনি একাকার করে ফেলেছেন, এমন একাকার যেখানে পরের জন্য আর যায়গা থাকার অবকাশ থাকে না। কি কি করে জাতি হওয়া যায়, ইতিহাসে হয়েছে, সেই বিবেচনায় আজ আমরা যাবো না। বরং মুন্সীর রাজনৈতিক চেতনার বিবর্তনই আমরা দেখতে চাই, তাই আমরা দেখব আরেকটা পোস্টে : মুন্সী কি কি করে জাতি হওয়া যায়, তার ফর্দ পেশ করছেন, আর তা করতে গিয়ে তার পরিত্যায্য জাতি শব্দটাকেই কতটা ইতিবাচক অর্থে মহান করেছেন:

" পাহাড়িদের এখনকার জীবন উৎপাদন সম্পর্ক এর জন্য প্রস্তুত নয়, অবিকশিত বলে; বস্তুগত উৎপাদন সম্পর্ক, স্তর, মালিকানা সম্পর্ক অবিকশিত - এর বিকশিত হয়ে স্তর অতিক্রম করে উঠতে সময় দিতে হবে। ব্যক্তিবোধ, উৎপাদন সম্পর্ক, মালিকানার ধরণে বদল আসতে হবে। এখন পর্যন্ত তা যতটুকু হয়েছে আমরা দেখছি তা এসেছে সমতলীদের সাথে সীমিত লেনদেন ও সমতলীদের উৎপাদন সম্পর্কের সাথে সীমিত সম্পর্কের কারণে। মোটা দাগে বললে, নিজেদের ভুমিসহ অন্যান্য মালিকানার ধরণ, সমতলীদের সাথে অমীমাংসিত সমস্যাগুলো ইত্যাদির কারণে পার্বত্য এলাকা একটা বিচ্ছিন্ন দ্বীপের মত হয়ে আছে। এটা মুগুর মেরে বা চিন্তায় বিপ্লব ঘটিয়ে করার বিষয় নয়। জীবনের বৈষয়িক উৎপাদন ও সম্পর্কের পরিবর্তনের কাজটা চিন্তায় করে ফেলার কাজও না বরং কোদালী কাজ; ব্যাপক সামাজিক উৎপাদনে একটা লেনদেনে জড়িয়ে বা ঘটিয়ে তবেই এ জায়গায় পৌছানো সম্ভব। এই ব্যাপক লেনদেনের সমাজ গড়ে তোলার কাজটা বিচ্ছিন্ন হয়ে করবে না উপস্হিত বাংলাদেশ রাষ্ট্রের ভিতরে থেকে করবে তা নির্ণয় একদম আলাদা আলোচনার প্রসঙ্গ। কিন্তু জাতি হয়ে উঠতে চাইলে সেক্ষেত্রে এই বাধাকে এড্রেস করতে পারতেই হবে। এছাড়া, পাহাড়ি রাজনৈতিক চিন্তা এগুলো বুঝবার জন্য কতটা পরিপক্ক হয়েছে সেটাও একটা ফ্যাক্টর।
এখনকার বৈষয়িক (বস্তুগত) জীবন উৎপাদন পদ্ধতি, স্তর, সম্পর্কের অপ্রস্তুতি বা ঘাটতি ওদের জাতি হয়ে উঠার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় বাধা হয়ে আছে। এই বাধাগুলো কি করে অপসারণ করবে, এর জন্য রাজনৈতিক চিন্তা, পরিকল্পনা কী নিচ্ছে - তার উপর নির্ভর করছে তারা কেমন জাতি হবে, আদৌও হতে পারবে কী না। তবে এই হওয়া না হওয়ার সাথে পাহাড়িরা বিচ্ছিন্ন হতে পারবে না এই ইস্যুটা সম্পর্কিত নয়। জাতি না হয়েও বিচ্ছিন্ন হওয়া সম্ভব তবে, তা অন্য আলোচনার বিষয়; সে আলোচনা এখানকার বিষয় নয়।
তাহলে জাতি হয়ে উঠার ব্যাপারটা জনগোষ্ঠির কেবল চিন্তায় বিপ্লবের নয়, বৈষয়িক জীবন উৎপাদন সম্পর্কের একটা বিপ্লবও বটে। তুলনা করে বললে, পূর্ব পাকিস্তানে এই বৈষয়িক প্রস্তুতির দিকটা পরে পাওয়া, তৈরিই ছিল বা আগেই অর্জিত ও হাজির ছিল বলে কেবল চিন্তায় বিপ্লব ঘটিয়ে বাঙালি বলে জাতি হওয়া সহজে সম্ভব করে ফেলতে পেরেছিল।..."


এই বক্তব্যের উত্তরে সঙ্গত কারণেই কিন্তু আসে যে, মুন্সীর কথাটা মূলগত ভাবে ভুল। রাষ্ট্র হবার জন্য সর্বদা আগে থেকে জাতি হয়ে থাকাটা জরুরি নয়, জাতি হয়ে ওঠার জন্যও রাষ্ট্র জরুরি নয। রাষ্ট্র পাবার আগেই বাঙালি একটি জাতি ছিল, কিংবা রাষ্ট্র না পেয়েও পাঞ্জাবী বলে একটা জাতি আছে। পশতু আরেকটা জাতি। রাষ্ট্র পেয়েও ভারত অনেকগুলো জাতির সমাহার। এইখানে 'জাতি' কথাটার মানে আদতে নিজের সংস্কৃতি, স্বাতন্ত্র, ভাষা আর ইতিহাস ঐতিহ্য সম্পর্কে সচেতন একটি জনগোষ্ঠী, কিংবা এমনও হতে পারে উৎপাদন পদ্ধতির পশ্চাতপদতা সত্ত্বেও বেলুচের জাতিয়তার বোধ কেউ কি অস্বীকার করতে পারে? তারা কি যথেষ্ট রক্ত দিয়া এই জিনিসটা এখনো বুঝায়া দিতে সক্ষম হয় নাই? এই আত্মসচেতন হওয়ার প্রক্রিয়া মধ্য দিয়েই জাতি হয়ে ওঠে।
এবার ওই উদ্ধৃতিরই পরের অংশ দেখুন:

" কোন জনগোষ্ঠির আপন প্রতিনিধিত্ত্ব নিয়ে রাষ্ট্র হয়ে আত্মপ্রকাশ করতে চাইলে "জাতি" (জাতিসত্ত্বা, জাতীয়তাবাদের রাজনীতি) হওয়া অপ্রয়োজনীয়; ওটা জাতিরাষ্ট্র হতেই হবে বা হয়ে যাবেই এমন কোন কথা নাই; তবে এসব ভাবনার বিষয়ে অসচেতন থাকলে এতে কারও "জাতিসত্ত্বা", "জাতি"র মুক্তি ঘটছে - বলে একে মনে করে বসব; ওরা নিজেদেরও তাই মনে করতে পারে।
তবে এখানে মুল গুরুত্ত্বপূর্ণ কথা - রাষ্ট্র মানেই ওর পিছনে একটা "জাতি" আছে এটা আগাম (presuppose) ধরে নেবার আমাদের স্বভাব আছে - এই ভাবনাটা ভুল। রাষ্ট্র মানেই জাতিরাষ্ট্র নয় (ইনএভিটেবল নয়)। জাতি ও রাষ্ট্র সমার্থক নয়। এনিয়ে বিস্তারে আরও কথা বলতে হবে জানি। হয়ত পরের পোষ্টেই বলব। আপাতত সার কথা হলো, জাতি ও রাষ্ট্র সমার্থক নয়।..."


এখন আর নিপীড়িত কেউ জাতি হয়ে ওঠার মধ্যে তার মুক্তির লড়াইয়ের বিকাশ না খুঁজুক, রাষ্ট্রটা বরং জাতির না হয়ে সবার হোক, এই মুন্সীর কামনা। এই কামনাতে দোষের কিছু নাই। আমারও তাই কামনা। কিন্তু আগের গোত্রের গন্ধমোছার কমেন্টের সাথে মিলিয়ে পড়লে পস্ট বোঝা যায় মুন্সী মূল লক্ষ্য পরিস্কার, রাষ্ট্রের মাঝেও অন্য জাতিসত্তাগুলোর জাতি হিসাবে বিকাশটা মানতে তার অক্ষমতা। মানে মুন্সী নিজেই আসলে রাষ্ট্রে আর আর জাতির উপস্থিতি মানতে পারেন না, কারণ কার্যত তিনি রাষ্ট্র আর জাতিরে এক কৈরাই দেখেন।

চলবে...
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা এপ্রিল, ২০১০ রাত ১১:৫৩
২৭টি মন্তব্য ১৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে...

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে,
পড়তো তারা প্লে গ্রুপে এক প্রিপারেটরি স্কুলে।
রোজ সকালে মা তাদের বিছানা থেকে তুলে,
টেনে টুনে রেডি করাতেন মহা হুলস্থূলে।

মেয়ের মুখে থাকতো হাসি, ছেলের চোখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অহমিকা পাগলা

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১৪


এক আবেগ অনুভূতি আর
উপলব্ধির গন্ধ নিলো না
কি পাষাণ ধর্মলয় মানুষ;
আশপাশ কবর দেখে না
কি মাটির প্রণয় ভাবে না-
এই হলো বাস্তবতা আর
আবেগ, তাই না শুধু বাতাস
গায়ে লাগে না, মন জুড়ায় না;
বলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩




তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×