আগের কিস্তি: সুশীল কাহারে কয়...
Click This Link
আহা! অবশেষে আমাদের সেই মিষ্টি রোদপোয়ানো তর্ক-বিতর্কের দিন সমাপ্ত হৈল।
এরই মাঝে কখন যেন ঘটে গেল বাঘাইছড়ির সেই ঘটনা। শেখ ফজলে এলাহি পোস্ট দিলেন, তার প্রতিক্রিয়ায় ব্লগে দেশপ্রেম আর জাতিবিদ্বেষের আগুন জ্বালালেন রাগ ইমন, এমনকি এও দাবি করলেন পাহাড়িরা আদিবাসী নন, ধারণা করি তার কাছে যে একান্ত মৌলিক ইতিহাস গ্রন্থ আছে, ওইখানে লন্ডন নগরের স্বাধীনতা, ইলুমিনাত্তি ও ফ্রিম্যাসন চক্রান্তসহ আরও কিছু প্রসঙ্গের পাশাপাশি বাঙালিরাই যে পাহাড়ে আদি বসবাস শুরু করেছিল, তাও হয়তো বলা আছে। গরিব আমরা সেই আদিপুস্তক হতে বঞ্চিত বলে তা কখনও জানতেও পারি নাই।
কিন্তু আশ্চর্য একটা বিষয় দেখা গেল ফজলে এলাহির ওই পোস্টে। পি মুন্সী ওই রকম হিংস্র, জাতিবিদ্বেষী এবং ইতিহাসের মিথ্যা ব্যাখ্যায় পূর্ণ রাগইমনের কমেন্টটার কোন প্রত্যুত্তর না দিয়ে এলাহির ওই যথেষ্ট প্রয়োজনীয় এবং সময়োচিত লেখাটার মাঝেই আবিষ্কার করলেন আন্তর্জাতিক নানান চক্রের সাথে ফজলে এলাহির সচেতন বা অচেতন সম্পর্ক!! আর সেই সুত্রেই পি মুন্সী কর্তৃক ফজলে এলাহি আখ্যায়িত হলেন 'সুশীল' অভিধায়! রাগইমনের আগুনে ঘি ঢেলে মুন্সী ব্লগে উত্তেজনা ছড়ালেন এই বলে যে, পার্বত্য চট্টগ্রাম ভাঙার আন্তর্জাতিক চক্রান্ত প্রায় পূর্ণ, পূর্ব তিমুরের উদাহরণ... দেশে নীলটুপি পরিহিত আন্তর্জাতিক বাহিনী আসতে যাচ্ছে... হায়েনাদের বিপরীতে দেশপ্রেমিকদের দেশরক্ষায় ঐক্যবদ্ধ হওয়া দরকার ইত্যাদি। শেখ ফজলে এলাহীর পোস্টে মুন্সী যে বিশাল উস্কানিমূলক কমেন্ট দিয়েছিলেন, পরে যা একটি পোস্ট আকারেও দিলেন, ব্লগে নৃশংস দেশপ্রেমের হিস্টিরিয়া ছড়ানোতে যার ভূমিকা অনস্বীকার্য: ওখান থেকে শুধু ছোট্ট একটি অংশ উদ্ধৃত করি।
" মানে কী আপনি চান বাংলাদেশ ব্লু হেলমেটের নামে বিদেশিদের লীলা ক্ষেত্র হয়ে উঠুক।
যারা শান্তি মিশনে সেনা খ্যাপ মেরে এসেছে এমন কোন অফিসারকে খুঁজে বের করে একবার জেনে নেনে ঐদেশের মানুষ, সেনা সবার মর্যাদার কী হাল দেখে এসেছে। ভেবেন না আপনি এমন প্রস্তাবক বলে আপনি এর বাইরে থাকবেন।
লর্ডের এই ব্লু হেলমেট ফর্মুলাতেই পূর্ব তীমুর আলাদা হয়েছিল।
আমার উপরের কথার সারকথা হলো, পার্বত্য চট্টগ্রামের সমস্যাকে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের নিরাপত্তা সমস্যা, নিরাপত্তার জন্য হুমকি তৈরির ইস্যুতে উত্তরণ ঘটাতে চাচ্ছে, বাংলাদেশ রাষ্ট্রকে ছিন্নভিন্ন করে করে ফেলার চেষ্টা এটা - এই ঘোলা জলে মাছ শিকারে নেমেছে লর্ড আ্যববুরি, তার বাংলাদেশি কিছু চাকর-বাকর আর ভারত। এদের নাম বাদ দিয়ে আপনার এই পাঠক সহানুভুতি যোগাড়ের চেষ্টা আপনাকে বাদ দিতে হবে।
পার্বত্য চট্টগ্রামের ভুমি সমস্যা আমরা কী করে সমাধান করব সেটা এখন আর মুল ইস্যু নয় - বাংলাদেশ রাষ্ট্রের নিরাপত্তা সমস্যা তৈরি করছে যারা সেই হায়নার দলের বিরুদ্ধে আমাদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে রুখে দাঁড়াতে হবে। নইলে বাংলাদেশকেও বাঁচানো যাবে না। এরা শেখ হাসিনাকেও গিলে খাবে। কাউকে ছাড়বে না, মাইনাস ফর্মুলার কিছুই দেখেন নাই এখনও। কাজেই এটাই আমাদের প্রথম কাজ।
এবার দ্বিতীয় প্রসঙ্গ:
পাহাড়ি এলাকায় সমতলের কেউ বসবাস করতে পারবে কী না? এটাই আপনার পোষ্টের মুল বিতর্ক, প্রায়ই ব্লগের মুল ইস্যু হয়ে উঠে, পক্ষে বিপক্ষে আমরা কথা বলছি।
রাগ ইমন ঠিকই বলছেন, সাংবিধানিকভাবে এটা সারা বাংলাদেশের সব নাগরিকের অধিকার। কোন কোর্টও এটা রুখতে পারবে না কারণ এটা সাংবিধানিক অধিকার।..."
পাঠক খেয়াল করুন আবারো, মুন্সীর 'দেশগেল দেশগেল, বাঘা আইল' চিৎকারের নীচে বাঘাইছড়ি কতখানি চাপা পড়ল। খুন-অগ্নিসংযোগ আর, আর যা যা সব ঘটে থাকে, যখন শেষ হলো, মুন্সী হয়তো একটু লজ্জা পেলেন। তাই পরের পোস্টগুলোতে রাষ্ট্রের নিরাপত্তা, ব্লুহেলমেট আর ইস্যু হল না। বাঘাইছড়ির রক্ত লাশ আর পোড়া ছাইয়ে বাঘের জুজু হয়তো চাপা পড়লো। ব্লগার শয়তান আর আমি উভয়েই তাকে এ বিষয়ে আরও কিছু বলার জন্য উস্কেছিলাম। কিন্তু বিধিবাম। তিনি আর রা টি করলেন না। শুধু তাই না, এই মুন্সী খেপেছিলেন মুনশীয়ানার পোস্টে তারে রাষ্ট্রবাদী বলার দায়ে!
বাঘের জুজু গেল, আইসো এইবার পাহাড়িদের রক্ষার উপায় নিয়া মুন্সীর ভাবনা!
এইবার বরং পাহাড় থেকে সেনাপ্রত্যাহারের দাবিটির জটিল বিশ্লেষণে মত্ত হলেন মুন্সী, নীলহেলমেটের আন্তর্জাতিক দুঃস্বপ্নের অবসান ঘটল আচমকাই, কোন ব্যাখ্যা না দিয়ে। মু্ন্সীর আগের উদ্ধৃতির নিন্মরেখ দেয়া অংশ মোতাবেক যখন রাষ্ট্রর নিরাপত্তার হুমকি প্রমাণ করা গেল না, এই পোস্টে এই পোস্টে
জনাব মুন্সী লিখলেন
" এই পরিস্হিতিতে পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে সেনা প্রত্যাহার করার প্রাকটিক্যাল অর্থাৎ মাঠের মানে হলো,
পাহাড়ি ও সমতলী উভয়ের মধ্যে পরস্পর পরস্পরকে নির্মুল, বিতারণ করে সমাধান - এই এথনিক ক্লিনজিংয়ের যে ধারণার দুই পক্ষে বিদ্যমান তাকে কার্যকর হতে দেয়া। এর আরও সোজা মানে হলো, আমরা পাহাড়ী সমস্যা ক্লিনজিংয়ের মাধ্যমে সমাধানের অপশনটা তুলে নিলাম। আমরা নিপীড়ন, অত্যাচারের লোমহর্ষক ঘটনাগুলোর ছবি দেখে বা ঘটনা শুনে তা থেকে হয়ত এর স্বাভাবিক মানবিক প্রতিক্রিয়া হিসাবে সেনা প্রত্যাহারকে সমাধান মনে করছি - যথেষ্ট ভেবে বা না ভেবে তাঁরা এই অপশনে যাচ্ছেন।..."
হুম। এইবার, এতক্ষণে তার মনে পড়লো লোমহর্ষক সব ঘটনা ঘটেছে, কিন্তু সাথে বিচক্ষণ মনটা সেনাপ্রত্যাহারের দাবিটাকে আর আন্তর্জাতিক চক্রান্তের অংশ না ভাবলেও এটা ভাবতে ভুললো না যে, সেনাপ্রত্যাহার দাবিকারীরা দেশবিরোধী না হলেও তারা যথেষ্ট ভাবেন নাই, সরলীকরণ করেছেন ইত্যাদি। এরও জবাবে বলা হলো সেনাপ্রত্যাহার মানে এই না যে, রাষ্ট্র তার বিবেচনায় যেখানে সেনানিবাস রাখা প্রয়োজন মনে করে, সেই অধিকারকে খর্ব করা। এর মানে কেবল এই যে, পাহাড়িদের দৈনন্দিন জীবনে, সামাজিক-অর্থনৈতিক জীবনে এবং সর্বোপরি তাদের ভূমি দখল হয়ে যাওয়াতে সেনাবাহিনী যেন আর ভূমিকা রাখতে না পারে।
কিন্তু প্রথম দফায় মুন্সী ছিলেন জাতি গঠন বিষয়ক তত্ত্ব নিয়া মশগুল, দ্বিতীয় দফায় ঠিক খুনের ঘটনার সময়টাতে তারে দেখা গেল দেশপ্রেমের আগুন জ্বালতে, খুন শেষে তৃতীয় দফায় মুন্সী একটু মেলোড্রামাটিক! পাহাড়ে সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপের অভাবে যে আরও ভয়ানক এথনিক ক্লিনজিং ঘটবে, তাতে বাঙালিরা নিকেষ হয়ে যেতে পারে, শেষ বিচারে পাহাড়িরা জিতবে এমন কথাও নাই!
মেলোড্রামার বৈশিষ্ট্য সর্বদা হয় এই যে, অতিনাটুকেপনার আড়ালে বাস্তব দুনিয়াটা আড়ালে পড়ে। পাহাড়ে সেনাপ্রত্যাহার নিশ্চয়ই জমি সমস্যার সমাধান না করে ঘটবে না, ওইখানে পাহাড়িদের জমিতে সেনাবাহিনী কর্তৃক বসানো দরিদ্র বাঙালিদের পুনর্বাসনের জন্য রাষ্ট্র নিশ্চয়ই উদ্যোগ নেবে, এবং নিতে বাধ্যও বটে। সেইসব আড়াল করে মুন্সীই বরং অতিসরলীকৃত জাতিগত মরণপন ক্লিনজিং এর একটি চিত্র একে পাঠককে ভড়কে দেবার চেষ্টা করলেন। এবং সেইটা করে পাহাড়ে অচলাস্থার স্থিতাবস্থাকে সেটলার ও সেনাবাহিনী উভয়ের উপস্থিতি আর ক্ষমতাকে দীর্ঘায়িত করতে চাইলেন।
রিফাত হাসানের সুশীল বিষয়ক কবিতার উদ্ধৃতি দিয়েই বলা উচিত, মুন্সী এই সমস্যার সমাধানে রৌদ্রে পুড়তে রাজি নন, সহজতম রাষ্ট্রপছন্দ সমাধানটাতেই একটু মানবীয় ছাপ দিয়ে দায় সারলেন তিনি।
আশ্চর্য কি, ব্লগ- রাজ্যের স্কাউন্ড্রেলরা জমায়েত হলো মু্ন্সীর পেছনে।
চলবে...
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই এপ্রিল, ২০১০ সকাল ৭:৫৮