শুধু শেষে আরেকটু বলি, চিন্তার অস্বচ্ছতা কখনো কখনো লাভজনক বটে। মুন্সীর চিন্তার সততা বিষযক পোস্টে Click This Link প্রশ্নোত্তর তার কমেন্টে একটা অসাধারণ বিষয় চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছিলেন। তার লাইনে আগালেই চোখে পড়বে, পাহাড় প্রশ্নে মুন্সীর পোস্টগুলার সবচে বড় খাদক কারা? ব্লগে মোটামুটিভাবে যারা ডানপন্থী বলে পরিচিত। মনজু ভাই যতই বিরক্ত হন সর্বদাই পাহাড় প্রশ্নে ডানপন্থী কমেন্টগুলাতেই মুন্সীর পিঠ চাপড়ানোতে, মুন্সী কিন্তু পিঠ চাপড়ানো ছাইড়া চূড়ান্ত কথাটাই বৈলা ফালাইছে এই একটা মন্ত্যব্যে:
" নীতিগত ভিত্তি আকারে একটা কথা পাঠক সবাইকে বিশেষত, মোমিন, রনকান্ত, ফারিহান ইত্যাদি সকলকে বলতে চাই।
আমাদের এমন একটা জায়গায় দাঁড়িয়ে কথা বলতে পারতে হবে যেখানে আমরা যেন সমতল, সেটেলারদেরসহ পাহাড়িদেরও প্রতিনিধি। তবেই আমরা সকলের নেতা হয়ে আবির্ভুত হতে পারব; আপনাতেই ওটাই সমাধানের একমাত্র রাস্তা হয়ে উঠবে।
এটা অবশ্যই সত্যি যে সমতল বা বিশেষ করে সেটেলারদের স্বার্থ বলে আলাদা কিছু আছে। একইভাবে বলা যায়, পাহাড়িদের স্বার্থ বলে আলাদা কিছু আছে। ফলে সমতল বা বিশেষ করে সেটেলারদের স্বার্থের প্রতিনিধিত্ত্ব এবং পাহাড়িদের স্বার্থের প্রতিনিধিত্ত্ব বলে আলাদা বিষয় আছে।
কিন্তু তা সত্ত্বেও এই ধরণের বিশেষ বিশেষ স্বার্থ আছে এটা স্বীকার করে নিয়ে আবার সকলের স্বার্থের প্রতিনিধি, সকলের নেতা, বাংলাদেশের নেতা হয়ে সমাধানের কথা বলতে শিখতে হবে, খুঁজে বার করতে হবে।
মোমিন, রনক্লান্ত ফারিহানদেরকে পাহাড়িদেরও নেতা হতে পারতে হবে।
এটাই একমাত্র সমাধান। তবে বাংলাদেশকে খুঁজে পাওয়া যাবে।..."
পাঠক, পাহাড় প্রশ্নে মুনশী একটি সুশীল। তবে তার সুশীলতা অন্যদের তুলনায় র্যা ডিক্যাল এই অর্থে, বাংলাদেশের আর কোন সুশীলই (সুশলরা কেন জানি সেক্যুলার হয়, এই কারণেই বহু র্যা ডিক্যালই আবার সেক্যুলারিজমরে দেক্তে পারেন না!) রনক্লান্ত বা মোমিন বা ফিউশন বা এই জাতীয় ব্লগারদের ট্রাকরেকর্ড যাদের জানা আছে, বিশেষকরে তাদের হাতেই জাতির ভাগ্য তুলে দিতে রাজি হবেন না বলেই অনুমান করি।
তাইলে আম্রা পাইলাম, মুন্সী এই অর্থে পাহাড় প্রশ্নে সুশীল, যে শেষ বিচারে উনি পাহাড়ের বর্তমান স্টেলমেট পরিস্থিতিরেই টিকায়া রাখার দাওযাই দেন। তিনি পাহাড়ে ৮০ দশকের পর বসানো বাঙালি সেটলারদের নিয়া কোন কর্মসূচি দিতে সক্ষম নন, সুশীলের এইটা একটা গূরুত্বপূর্ণ লক্ষণ। কারণটা সরল: সুশীল মুন্সী পাহাড়ে রক্তারক্তি চান না মোটেই, কিন্তু পাহাড়িদের জমি দখল করে যে স্ট্রাটেজিক সুবিধা রাষ্ট্র তাদের আন্দোলন দমনে ব্যবহার করছে, সেইটাকে হারাতে মুন্সী নারাজ। ফলে জমির বিষয়টারে যথাসম্ভব ঝুলায়া দেয়া তার সমাধানের নেট ফলাফল। যতক্ষণ না পাহাড়িদের ভূমির অধিকার স্বীকার করা হয়, অনুপ্রবেশকারীদের চিহ্নিত করার মৌলিক সিদ্ধান্ত নেয়া হয়, কোন কমিশনের দেখাদেখিতেই, পাহাড়িদের গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষা পাবে না। মুন্সী সুশীল এই অর্থে যে, রাগইমনের ফ্যাসিস্ট মতামতের সমালাচনা করেন না, বরং তার পিঠ চাপড়ে দেন। মুন্সী পয়লা বলেন, ওরা জাতি হৈতে পারে নাই। তারপর বলেন জাতি প্রশ্নটাই নিরর্থক। তারপর বলেন: ওদের আদিবাসী বানানো এনজিও ফান্ডের ধান্ধা। তারপর বলেন, আদিবাসী কিনা সেই প্রশ্নটারেও উনি নিরর্থক ভাবেন। তারপর.... ইত্যাদি ইত্যাদি।
কিন্তু মুন্সী এই একটা স্থলে ভীতিকর রকমের রাডিক্যাল: তিনি বিদ্রোহী রনক্লান্তরে জাতির নেতা শুধু তাই না, পাহাড়িদেরও নেতা বানানোর স্বপ্ন দেখেন।
আইডিয়া রুলস: এই হৈল মহর্ষি পি. মুন্সীর আপ্ত বাক্য। আইডিয়া রুল করবে এইটাবা শুধু স্বাভাবিক নয়, আইডিয়া যাদেরকে রুল করে, তাদের দিয়েও অনেক সময় আইডিয়াবাজের চেহারাটা চেনা যায়। আর এইটা ঘটে চরম মূহুর্তগুলোতে, পাহাড়ের এই চরম ঘটনায় আমরা দেখলাম একাধারে ডানপন্থী, জাতিবিদ্বেষী, পাহাড়ে নির্মূল আন্দোলনের সমর্থন আর জমিদখলের পাণ্ডারা এই সঙ্কটমূহুর্তে দলে দলে মুন্সীর ব্যাটেলিয়নে যোগ দিয়েছেন।
কথা সত্যি, আইডিয়া রুলস। মুন্সীর আইডিয়ার রাজ্যের উজির-নাজির-উপদেষ্টা-প্রজাদের সন্নিবেশ আমাদের রীতিমতো আতঙ্কিতই করে।
আমাদের কপাল আসলেই ভালো যে মুন্সী পাহাড় প্রশ্নে তার মহান "আইডিয়া" দ্বারা নানান কিসিমের ফ্যাসিস্ট, ডানপন্থী, নৃশংস চিন্তাবিদদেরইকেই "রুল" করেন।
চিন্তার সততা প্রয়োজন, স্বচ্ছতার প্রয়োজন আরো বেশি।
আমিন।
আগের কিস্তিগুলো
Click This Link বাঘাইছড়ির বর্বরতা আর মুন্সীর 'বাঘআসা'র জুজু
সুশীল কাহারে বলে; (ইত্যাদি, আগ্রহ হৈলে জাস্ট আগের তিনটা পোস্ট ঘাটেন।)