[উৎসর্গ : আমার প্রিয় কয়েকজন ব্লগার ব্লগ ছেড়ে দিয়েছেন এবং কয়েকজন মনে কষ্ট নিয়ে লিখে যাচ্ছেন - তাদেরকে।]
১.
এক ছিলেন ঈশ্বর - ব্যতিক্রমী ঈশ্বর। অন্যান্য ঈশ্বরদের যেমন শুধু এক কাপ চা খেলেই দিনটা পার হয়ে যেত - এই ঈশ্বরের আবার কফি না খেলে চলতোই না। আর কিছু হোক বা না হোক সারাদিন তার টেবিলে কফি মগে ধোঁয়া চাই-ই চাই। তাও আবার যেনতেন কফি নয়- জ্যামাইকান ব্লু মাউনটেইন। যাই হোক, কফি খরচ কমাতে না পারায় এই ঈশ্বরকে প্রতি বছর মোটা অংকের বাজেট ঘাটতিতে পড়তে হচ্ছিল। পৃথিবীর মানুষগুলো বেয়াড়া হয়ে যাওয়ায় দিন দিন তারা প্রার্থনা আশংকাজনকভাবে কমিয়ে দিচ্ছিল, আর সেই সাথে উপাসনালয়গুলোও জীর্ন হয়ে মাটিতে মিশে যাচ্ছিল। তো ইনকামের ঐ খাতও বন্ধ।
ঈশ্বর ভেবে দেখলেন মানুষের সাথে আর পেরে উঠা যাবে না, তবে আশার কথা হচ্ছে এই- যেভাবে পরিবেশ বিপর্যয় ঘটছে, তাতে পশু-পাখি সমাজ দিশে হারা। পশুদের খাবার-দাবারের পিছে খরচ বেশি হওয়ায় এই মন্দাকালে তাদের নিয়ে বিজনেসে নামার প্ল্যান বাতিল। বাকি রইলো কেবল পাখি। ঈশ্বর লক্ষ্য করলেন, পাখিদের জন্য কোন অভয়াশ্রম নেই। যেই ভাবা, সেই কাজ- ছোটখাট একটা পাখি মেলা দিয়ে শুরু করলেন। নিশ্চিত দ্বিতীয় কোন প্ল্যাটফর্ম না থাকায় দলে দলে নানান জায়গা থেকে নানান জাতের পাখি এসে ভিড় করতে লাগলো। পাখিরা এসে গান গায়, ডালে ডালে উড়ে বেড়ায়। অনেক পাখি তাদের আত্মীয় স্বজনদেরও ডেকে এনে ভিড় বাড়িয়ে দিল। পৃথিবীর শান্তিপ্রিয় মনুষগুলো এর ফাকে মেলার খবর জেনে গেছে। তারা তাদের কর্মচঞ্চল দিনের শেষে মাঝে মাঝে এসে দু'দন্ড জিরিয়ে যেত।
২.
তো ভিড় যেখানে আছে, আর আছে শান্তি - কর্পোরেটরা সেখানে লাদি ছাড়বেই। মেলার খবর তাদের কানেও পৌঁছুলো। তারা মাঠ পর্যায়ের তদন্ত শেষে ঈশ্বরের দরবারে গিয়ে হাজির। ঈশ্বরকে তারা অভয়ারন্য করার প্যাকেজ প্রস্তাব দিল। সুযোগ মতো তার বাজেট ঘাটতির কথা জানিয়ে দিলেন। কর্পোরেটরা ঈশ্বরকে আশ্বস্ত করে ফিরে গেল। ঈশ্বরের কপাল থেকে মেঘ সরে গিয়ে নূরের ঝিলিক দেখা দিল। তিনি হাঁক দিলেন, কে কোথায় আছিস? একটু জ্যামাইকা থেকে ঘুরে আয় না!
অভয়ারন্য গড়ে উঠলে পাখি সমাজে ঈদের ফূর্তি লেগে গেল। পাখিরা দলে দলে গান গায়, ঘুরে বেড়ায়, ডিম পাড়ে, তা দেয়, ডিম ফুটে বাচ্চা বেড়োয়, বাচ্চাদের কিঁচির-মিচির - সে এক অপূর্ব দৃশ্য। ঈশ্বর যখন বুঝতে পারলেন পাখিরা আর এ জায়গা থেকে যাচ্ছে না কোথাও, তখন তিনি বিশাল এক সভা ডাকলেন। সভায় তার প্র-পিতামহের গল্প শোনালেন। ঈশ্বরের প্র-পিতামহ গান পছন্দ করতেন না মোটেও। একবার বেহুলার স্বামীকে সর্প দংশন করলে সুযোগ বুঝে তিনি বেহুলাকে খুশি মতো নাঁচিয়ে নিয়েছিলেন- এ গল্প শেষে ঈশ্বর বললেন, আমিও আমার অভয়ারন্যে গান বরদাস্ত করবো না। নাঁচতে চাইলে ঠিক আছে, কিন্তু গান কখনওই না। কিন্তু গান না গাইলে তো পাখিদের আর চলে না। তারা চুপি চুপি গান গাইতো, আর ঈশ্বর ধরতে পারলে তাদের ঠোঁটে ক্লীপ গুজে দিত- কারও এক সপ্তাহ, কারও এক মাস এমন বিভিন্ন মেয়াদে। তারপরও পাখিরা এখানেই পড়ে থাকতো। জায়গাটা জনপ্রিয় করেছে তারাই, আর মায়াও পড়ে গেছে ততদিনে।
৩.
অর্থের বড় চরিত্র হচ্ছে- সে কখনো একা আসে না, সাথে অনর্থ নিয়ে আসে ঢের। ঈশ্বরের দু'হাত ভরে টাকা আসতে লাগলো, আর আসতো লাগলো কিছু কু-অভ্যাস। কফি পানের অভ্যাস তো আগেই ছিল। তার সাথে সবচেয়ে ভয়াবহ যে কু-অভ্যাস যোগ হলো তা হচ্ছে, কফির সাথে সাথে পাখিদের বাচ্চাগুলোকে চিবিয়ে খাওয়া, আর টেবিলে আছড়ে ডিম ভাঙ্গা। পাখিরা সব অত্যাচার মেনে নিয়েছিল, কিন্তু তাদের বাসা থেকে ডিম আর বাচ্চা গায়েব হয়ে যাওয়াটা মেনে নিতে পারে নি। প্রতিবাদ করেও কোন লাভ হলো না। মন খারাপ করে দলে দলে পাখিরা অভয়ারন্য ছেড়ে চলে যেতে লাগলো।
এদিকে পাখিরা চলে যাওয়ায় মানুযও আর খুব একটা এদিকে আসে না। কর্পোরেটরা ঈশ্বরকে চেঁপে ধরলো। ঈশ্বর আদর করে কর্পোরেটদের গাল টিপে দিলেন। বললেন, আমি হলাম ঈশ্বর। পাখিরা চলে গেছে তো কি এমন হয়েছে! ডিম আমি বানিয়ে দেব। আমি তা দিয়ে আবার বাচ্চা ফুটাবো। তারপর দেখবেন, দলে দলে আবার আসছে শান্তপ্রিয় মানুষ। ... যে কথা সেই কাজ, ঈশ্বর বসে মস্ত কোৎ দিলেন। কিন্তু ডিম আর বেরোয় না। শুয়ে, উপুড় হয়ে, চিৎ হয়ে, শেষ পর্যন্ত মানুষের কর্মসূত্রের সবগুলো আসন প্রয়োগ করেও কোন লাভ হলো না।
শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত, ঈশ্বর তার মস্ত কফি পটে বসে ট্রাই করছেন। কি ট্রাই করছেন, আর কি বেরুলো- জানতে চাইলে আপনারা সময়-সুযোগ মতো একবার ঈশ্বরের সাথে যোগযোগ করতে পারেন।
[সতর্কীকরন: আপনার পোস্টগুলোর ব্যাক আপ রাখুন। যে কোন মুহূর্তে হাওয়া হইয়া যাইতে পারে]
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে ফেব্রুয়ারি, ২০০৯ দুপুর ১:২৫

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




