কল্পনা করুন। আপনি একটি পাহাড়ী পথ বেয়ে হেঁটে যাচ্ছেন। হঠাৎ করে দেখলেন- ছোট একটা কুকুর রাস্তার পাশে । যখনি আপনি কুকুরটির পাশে গেলেন- কুকুরটি প্রচণ্ড জোরে চীৎকার করা শুরু করলো। আপনি রাগাণ্বিত হলেন। ভয় পেলেন।
কিন্তু এরপর পরই খেয়াল করলেন -কুকুরটির একটি পা ঝোঁপের ভিতর একটা ট্রাপের মাঝে আটকা পড়ে আছে। সাথে সাথেই আপনার ম্যুড রাগ থেকে কনসার্নে রুপ নিলো। আপনি অনুধাবন করতে পারলেন- কুকুরের এই সহিংসতার কারণ হলো- তার যন্ত্রণা । রাগ থেকে তার যন্ত্রণা, তার অসহায়ত্ব এবার আপনাকে স্পর্শ করলো। এটা আমাদের সবার ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। প্রতিটি আর্তনাদ কোনো না কোনো ট্রাপ। উইসডমের চক্ষু দিয়ে যখন কোনো কিছুর গভীরে দেখা হয়- তখনই অন্তররূপের উপলব্ধি হয়।
আমেরিকার একজন বিখ্যাত স্পিরিচ্যুয়াল ব্যক্তি এবং শিক্ষাবিদ -যিনি গত সপ্তাহে মারা যান। নামটা ঠিক মনে আসছেনা। একটা খুবই সুন্দর গল্প বলেছিলেন। আর যেকোনো একটি গল্পের শিক্ষা সারাজীবন মানুষ মনে রাখে। গল্পটা এরকম-
মানুষ যখন বনে যায়। তখন বনে নানা রকমের গাছ দেখে। কোনটি বাঁকা, কোনটি সোজা। আপনি খুব সহজেই বুঝতে পারেন- এর কারণ হলো- যথাযথ আলোর অভাব। ফলে, বিষয়টি আপনি খুব সহজেই মেনে নেন। কিন্তু যেই মাত্র আপনি বন থেকে মানুষের সমাজে আসেন। ঠিক তখনি- এই মেনে নেয়াটা আপনি হারিয়ে ফেলেন। আপনি জাজমেন্টাল হয়ে ওঠেন। এ বেঁটে কেন, এ খাটো কেন, এ মোটা কেন, এ পাতলা কেন ইত্যাদি ইত্যাদি। আর মানুষের যখন এরকম জাজমেন্টাল মন তৈরি হয় তখন আমি বলি- যথাযথ আলো না পাওয়া বৃক্ষদের দেখো। আর যে যেরকম আছে তাকে ঠিক সেরকমভাবে এ্যপ্রিশিয়েট করতে শিখো। -মানুষের মনন তৈরীর কি অপূর্ব শিক্ষা।
উপরের গল্পদুটো না পাওয়ার গল্প। এবার পাওয়ার পর একটি কৃতজ্ঞতার গল্প । আসলে গল্প না সত্য ঘটনা। ঘটনাটি একটি লেকচারে বলেছিলেন- রামকৃষ্ন মিশনের ভাইস চ্যান্সেলর Swami Atmapriyananda। উনাকে শ্রদ্ধা।
জুরিখে অনুষ্ঠিত এক আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান সম্মেলনে যোগ দিয়েছেন পৃথিবীর সেরা সেরা বিজ্ঞানীরা। তো, সন্ধ্যার এক বিশেষ সময় হঠাৎ করে দেখা যায়-অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি তাঁর আসনে নেই। সবাই একটু উৎকন্ঠিত। উনি গেলেন কই? কিছুক্ষণ পর দেখা গেলো- হলঘরের এক কোণায় উনি একটা ছোট মাদুরের উপর একাগ্র চিত্তে দাঁড়িয়ে আছেন এবং কিছুক্ষণ পর মাথা দিয়ে ভূমি স্পর্শ করছেন। কিছু সময় পর ফিরে এলে- সবাই বললেন-
আপনি হঠাৎ করে চলে গেলেন? তারপর দেখলাম- এক কোনায় দাঁড়িয়ে কী যেন করছিলেন?
উনি বললেন- আমি নামাজ পড়ছিলাম। এটা আমাদের সান্ধ্যকালীন প্রার্থণা। এরজন্য সময় থাকে খুবই কম। জানেনতো দৈনন্দিন আমাদের পাঁচবার নামাজ পড়তে হয়।
এবার ওরা খুব আশ্চর্য্য হয়ে বললো- আপনি এতো বড় বিজ্ঞানী, পদার্থবিদ হয়ে এসব সুপারস্টিশানে বিশ্বাস করেন?
উনি বললেন- এটা সুপারস্টিশান না। এটা হলো কৃতজ্ঞতা । আমি যতবড় পদার্থবিদ কিংবা বিজ্ঞানী হইনা কেন? সবার আগেতো আমি একজন মানুষ।
আর এই মানুষকে যিনি এতোবড় বিজ্ঞানী বানালেন- দুনিয়াজোড়া খ্যাতি এনে দিলেন- আমি কি সেই রাব্বুল আলামীনের প্রতি আমার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করবোনা। এটা কারো জন্য স্রেফ একটা সুপারস্টিশান আর কারো জন্য পরম প্রশান্তি। আর যা করলে আমার মনকে পরম শান্তিতে রাখে- সেই প্রার্থণা কি আমি করবোনা?
পদার্থ বিদ্যায় নোবেল পাওয়া পৃথিবী বিখ্যাত এই বিজ্ঞানী ছিলেন অধ্যাপক আব্দুস সালাম।
সবাই ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন। আলোর পথে থাকুন। আর যিনি মানুষ বানিয়েছেন- সেই রাব্বুল আলামীনের প্রতি কৃতজ্ঞতা।
যারা আলোর পথ দেখিয়েছেন তাদের প্রতিও কৃতজ্ঞতা।
মন যেখানে গিয়ে থেমে যায়- সেটাই আমার দেশ।
ভালোয় থাকো, আলোয় থাকো প্রিয় বাংলাদেশ।
নতুন বছরে সবার জন্য রইলো শুভকামনা।
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে ডিসেম্বর, ২০১৯ রাত ৮:২৫