somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

খোরশেদ খোকন
আমার জন্ম টাঙ্গাইলের হামজানি গ্রামে। শৈশব, কৈশোরে দেশের বিভিন্ন জেলা শহরে ছিলাম; বাবার সরকারী চাকুরীর জন্যে। কলেজ ছিল টাঙ্গাইল জেলায়। তারপর পড়াশুনা ঢাবি'র ফিন্যান্স বিভাগ। গত নয় বছর যাবত প্রাইভেট ব্যাংকে কর্মজীবন চলছে। www.facebook.com/khokonz

আত্মকথা-৩: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ভ্রমণের স্মৃতি...

১১ ই নভেম্বর, ২০১৪ রাত ১১:২২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

১৯৯৭ সালে এইচ.এস.সি. পরীক্ষা দিয়েছিলাম টাঙ্গাইলের লায়ন নজরুল কলেজ থেকে। পরীক্ষার পর ঢাকার ধানমন্ডি ১৫ নম্বর এলাকার সিদ্দিক বাগ মেস-এ থাকতাম। সে সময় ফার্মগেটের এক কোচিং সেন্টার থেকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি ফর্ম কিনেছিলাম এবং কোচিং সেন্টারের মাধ্যমেই ফর্ম জমা দিয়েছিলাম।

এইচ.এস.সি.-তে রেজাল্ড আমার ভালই ছিল। যাই হোক, এক সকালে আমি আর মিঠু (Mohammad Anisur Rahman) আমাদের গ্রামের বাড়ি টাঙ্গাইল জেলার কালিহাতি থানার দুর্গাপুর ইউনিয়নের কদিম-হামজানি গ্রাম থেকে পায়ে হেটে রওনা হলাম ভুয়াপুর। তখন যমুনা নদীর উপর সেতুটি নির্মাণাধীন ছিল। ভুয়াপুর থেকে লঞ্চে গেলাম সিরাজগঞ্জ। সিরাজগঞ্জ থেকে বাসে বগুড়া গেলাম। বগুড়া দুপুরের নাস্তা করে বাসে রওনা হলাম রাজশাহী। নাটোরের পথে বিকেল বেলা যাচ্ছিলাম আর মনে মনে জীবনানন্দ দাশ এর বনলতা সেন কে ভাবছিলাম। এক সময় বাস থামল, আমরা নাটোর শহরের কাছে চা পান করলাম। বিকেলের শেষ প্রান্তে রাজশাহী শহরে পৌঁছালাম। আমার সহপাঠী মিঠু আর আমি আমার পকেটে থাকা সাজ্জাদ ভাইয়ের তালাইমারি এলাকার মেসে গেলাম, দেখি সাজ্জাদ ভাই নেই। মেসের কেউ বলতে পারলো না সাজ্জাদ ভাই কোথায়। আমাদের মাথায় যেন আকাশ ভেঙ্গে পড়লো...!?

সে সময় মোবাইলের যুগ ছিলো না। তাই বাড়িতে/গ্রামে ফোন করে রাজশাহীতে থাকে এমন কোন পরিচিত জনের খোঁজ/খবর করতে পারলাম না। আমরা দু’জন মন খারাপ করে, হাটতে হাটতে বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় গেলাম। গিয়ে দেখি নোটিশ ঝুলছে, যার বিষয়বস্তু হচ্ছে “ভর্তি পরীক্ষা ৩ দিন পেছানো হয়েছে”। নোটিশ দেখে, দুর্ভাবনা আর অসহায়তা বাড়তে লাগলো...!?

সে সময় আমাদের গ্রামে পত্রিকা পাওয়া যেতো না, তাই আমরা সকালে সংবাদ জানতে পারি নাই। এদিকে বয়স কম থাকলে যা হয়, মানে আমরা ভ্রমণে কোন পত্রিকা পড়ি নাই। (সে সময় পত্রিকা পড়া বুড়োদের কাজ মনে করতাম, হা হা হা)

আমাদের পকেটে যে পরিমাণ “টাকা-পয়সা” ছিল, তা “যাতায়াত ভাড়া” বাদে সাজ্জাদ ভাইয়ের মেসে থেকে একদিন হাত খরচের সমান...!? আমরা পাঁচ টাকার বাদাম কিনে দু’জনে খেতে খেতে হাটাহাটি করতে লাগলাম।

আমি আমার এক গ্রাম সম্পর্কের ভাইয়ের (সালাউদ্দিন) সাথে কিছু দিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্যার এ এফ রহমান হলের জি-২ নম্বর রুমে ছিলাম। সালাউদ্দিন ভাই সে সময় চারুকলায় “বিপাশা হায়াত”-এর সহপাঠী ছিল। সে আমাকে ঢাকা শহরে থাকার জন্য মেস খোঁজা-খুঁজির বিষয়ে খুব সাহায্য করেছিল। তাই বিশ্ববিদ্যালয়ের হল জীবন এবং জেলা ভিত্তিক সমিতির বিষয়ে আমার একটা ধারণা ছিলো।

আমি মিঠুকে বললাম, আসো আমরা এমন কাউকে খুঁজি যে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে এবং টাঙ্গাইল জেলায় বাড়ি। আমরা খুঁজতে খুঁজতে শের-এ-বাংলা হলের আলম ভাই নামক এক লোককে পেলাম। সে ছিল গাজীপুর জেলার, সে জানালো বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র/ছাত্রীদের ক্লাস বন্ধ/ছুটি চলছে তাই, টাঙ্গাইলের কাউকে খুঁজে পেতে সময় লাগবে। যাই হোক, অবশেষে টাঙ্গাইলের ছাত্র মানে রাজ্জাক ভাইকে পাওয়া গেলো। রাজ্জাক ভাই আমাদের গ্রামের বাড়ির ঠিকানা জানলেন, ভর্তি পরীক্ষার প্রবেশ পত্র দেখলেন তারপর বললেন, তোমরা দু’জন থাকতে পারো আমার সাথে কিন্তু তোমাদের ভর্তি পরীক্ষার প্রবেশ পত্র আমার কাছে বন্ধকী থাকবে আর তোমাদের নিজেদের রান্না নিজেই করে খেতে হবে।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মতিহার হলে, আমাদের ৪ দিনের আবাসিক জীবন শুরু হলো ভর্তি পরীক্ষার প্রবেশ পত্র বন্ধকী
রেখে আর বিনোদপুর বাজার থেকে চাল, ডাল, মশলা দিয়ে রান্না করা খিচুড়ি দিয়ে (আহ! নিজের রান্না খিচুড়ি যে কত স্বাদের ... হা হা হা)।

আমাদের তেমন পড়াশুনা করার ছিলনা, তাই আমি আর মিঠু সারাদিন রাজশাহী শহর আর বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা হেটে বেড়াতাম। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের তিনটা পাশাপাশি মেয়েদের হল (মন্নু জান, খালেদা জিয়া, বেগম রোকেয়া...) আছে যার সামনে একটা মাঠ আছে সেখানে আমাদের সেই সে বিকেল আর সন্ধ্যাগুলোকে জীবনে কোনদিন ভুলবো না।

তারপর, এক সময় পরীক্ষা শেষ হল আর আমরা রাজশাহী থেকে টাঙ্গাইল চলে আসলাম।

আমি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাব বিজ্ঞান বিভাগে চান্স পেয়েছিলাম কিন্তু পড়া হয়নি। এদিকে মিঠু তার পরের বছর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাব বিজ্ঞান বিভাগে চান্স পেয়েছিলো আর ২০০৫ সালের দিকে পড়াশুনা শেষ করেছে।

জীবনে অনেক বার রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে গেছি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় গেছি। চাকরি নিয়ে থাকতে গেছি। আর এখন ইচ্ছে হলেই বেড়াতে যাই...আসলে, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাকৃতিক পরিবেশ আর তার সহজ সরল জীবনকে ভালবেসে ফেলেছি...।
৩টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×