শেখ নিয়ামত আলী সাহেব ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হবার পরে, চিন্তা করলেন দেশ ও দশের উন্নয়ন করা দরকার...।
তিনি প্রথমেই জোর দিলেন শিক্ষার উপর, দেখা গেল সেই বছরই এসএসসি পরীক্ষার সারাদেশে গণহারে নকল হলো; তিনি কিছুই করতে পারলেন না, শুধু চেয়ে চেয়ে দেখলেন!
তারপর জোর দিলেন, কৃষি উন্নয়নে; দেখা গেল সেই বছরই তার দলের সরকার সার সরবরাহ করতে ব্যর্থ হল; গ্রামের প্রান্তিক কৃষকেরা সার না পাওয়াতে জমিতে ধান উৎপাদন কমে গেলো!
এরপরে জোর দিলেন সেচ ব্যবস্থার উপর; দেখলেন সেই বছর তার সরকার বিদ্যুৎ যোগান দিতে পাড়লো না। ধানের জমি খরায় ফেটে চৌচির হয়ে গেলো!
তিনি এবার জোর দিলেন রাস্তাঘাটে; মাটি কেটে কাঁচা রাস্তা বাধাই করলেন, পুকুর খনন করে মাছ ছাড়ার ব্যাবস্থা নিলেন আর সেই বছরই বন্যায় এলো; বন্যায় কাঁচা রাস্তা, পুকুর ঘাট সবই ভাসিয়ে নিয়ে গেলো!
তিনি একদিন বিকেলে মন খারাপ করে উন্নয়ন নিয়ে ভাবছিলেন আর পান চিবুচ্ছিলেন, এমন সময়... তার বাড়ীর সামনে দিয়ে যাচ্ছিল তারই ছেলেবেলার বন্ধু; মাস্টার হারিস মিয়া...।
হারিস মিয়া খুব মনোযোগ দিয়ে গত দুই বছর খেয়াল করে দেখেছে, তার বাল্যবন্ধু শেখ নিয়ামত আলী নির্বাচিত হবার পরে মহা উৎসাহে যে দিকেই জোর দিয়ে উন্নয়ন করতে চেয়েছে; সে দিকেই উন্নয়ন না হয়ে অনুন্নয়ন হয়েছে। তাই সে তার একটা অনুন্নয়নের ইচ্ছা নিয়ে বন্ধুর বাড়ীতে এসেছে; যদি কিছু একটা হয়...!
তো হারিস মিয়ার হয়েছিল পিঠের ব্যাথা, সে ডাক্তার দেখানোর পর জানতে পারে মস্তবড় একটা ফোড়া দানা বেঁধে ক্রমশঃ বড় হচ্ছে পিঠে। মানে একটা বড়সর উন্নয়ন হচ্ছে পিঠের উপর...! সারা পিঠ ব্যাথার পরে এখন সারা শরীরে ব্যাথা ক্রমশঃ ছড়িয়ে পড়ছে। এমন অবস্থায় তার মনেপড়ে গেলো শেখ সাহেবের কথা!
শেখ নিয়ামত আলী বারান্দায় ইজি চেয়ারে বসেছিল; হারিস মিয়াকে দেখেই বলল, কি হারিস মিয়া খবর কি? এদিকে আসো, আমার কাছে কোন কাজ আছে নাকি? থাকলে বল, দেখি তোমার জন্য কিছু করতে পারি কিনা?
হারিস মিয়া ব্যাথায় কাঁপতে কাঁপতে বলল; বন্ধু, আমার যা সমস্যা তা একমাত্র তুমিই সমাধান করতে পারবা; তুমি আমার পিঠে একটু হাত রাখো; দেখি, উন্নয়নটা ঠেকানো যায় কিনা?
শেখ নিয়ামত আলী কিছু না বুঝেই হারিস মিয়ার পিঠে হাত রাখল... এদিকে হারিস মিয়া ব্যাথায় কাঁপতে কাঁপতে ভাবতে লাগলো, উন্নয়ন ঠেকানোর জন্য তুমি ছাড়া কে আছে আর এই দুনিয়ায়...।
...
২৩-০১-২০১৬
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ১০:৩৯