লেখালেখি (কবিতা, গল্প আর উপন্যাস) বিষয়ে এদেশে একজন লেখক/লেখিকার প্রধান বাধা তার পরিবারের লোকজন, তারপরেই আছে আত্মীয়-পরিজন। কারণ, সবাই চায় আপনি ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার কিংবা একজন পাইলট হোন।
.
আপনার সহপাঠিরাও বাধা, কেননা তারা চায় আপনি একটু বেশি মনোযোগ দিয়ে পড়াশুনা করে বন্ধুদের নোট সরবরাহ করতে থাকুন।
.
পাড়ার বন্ধুরাও বাধা, কেননা আপনি পড়াশুনা আর লেখালেখি নিয়ে পরে থাকলে; ওদের সাথে খেলাধুলা আর আড্ডা দেয়ার মানুষ একজন কমে যায়।
.
আপনি যদি চাকরিজীবী হোন; তাহলে আপনার কলিগ বলবে ভাই কাজে মনোযোগ দিন, এই বয়সে কাব্য লিখতে গিয়ে বউ-বাচ্চা নিয়ে পথে বসবেন নাকি?
.
আসলে ভাবটা এমন, যেন সবাই আপনার ভালো চায় কেবল আপনি সেটা ধরতে পারছেন না!
.
আপনি যদি অফিসের কাজে ভাল হোন; তাহলে সমস্যা নেই। কিন্তু মাঝারি মানের হলে, "কবি" কিংবা "সাহিত্যিক" বলে আপনাকে ক্ষ্যাপানোর লোকের কোনই অভাব হবে না।
.
এতোসব বাধার কথা শুনে; ভাবছেন, আমি একজন নিরাশাবাদী মানুষ?
জি না, ভুলেও সেটা ভাববেন না। এই লেখাটা পড়তে থাকুন।
.
আপনি আপনার অবসর সময়ে আপনার মতো লিখতে থাকুন। এদেশের বিখ্যাত (!?) কবিদের কথা শুনে আপনার মন নিশ্চয়ই খারাপ হবে, আপনি যদি লেখাকে নিজের বাচ্চা কিংবা প্রেমিকার মতো ভালবাসেন তাহলে কারো কথায় কান না দিয়ে নিজের মতো লিখে যান।
.
মনে রাখবেন, চোখের জলে নদী বানালেই সাহিত্য হয় না। একালের সাহিত্য মানে ব্যাপক পড়াশুনা তারপর নিজের গল্পটা নিজের মতো করে নিজের ভাষায় সুন্দর করে সবার জন্য পরিবেশন করা।
.
আরো মনে রাখবেন, আপনি যে যন্ত্রণার ভেতর দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছেন, সেই একই যন্ত্রণা দুনিয়ার সব লেখকই পেয়েছেন।
.
যাই হোক কথাটা হচ্ছে, একটা গিটারকে ভালোভাবে বাজানোর জন্য যেমন তারগুলো পরিমান মতো টাইট দিতে হয়, তেমনই আপনার মনকে টাইট দিন মানে শক্ত করুন।
.
লেখালেখির বিষয়ে কোন বাধাই মানবেন না। এগিয়ে যান নিজের মতো, তারপর একদিন দেখবেন আপনি গল্প/কবিতা/উপন্যাসের মাধ্যমে যে ফুলটি ফুটিয়েছেন তার সুবাসে ভালোবেসে এগিয়ে আসছে অজানা অচেনা মুগ্ধ মনের শত শত মানুষ।
.
লেখালেখি একটা একার সাধনা, দলবেধে খেলাধুলা কিংবা যুদ্ধ করা যায়; কিন্তু সাহিত্য সন্ন্যাসীর মতো একা করার বিষয়।
.
আপনি নির্লিপ্ত মানুষ হয়ে; মানুষের কাছে, মানুষের গল্পটাই বলতেই থাকুন; মানুষ নিশ্চয়ই একদিন খুঁজে নেবে আপনার হ্রদয়ের ঠিকানা।
----
০৪-০৩-২০১৬
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই মার্চ, ২০১৬ রাত ৯:৪০