somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

খালেদার চালে কাবু হাসিনা

২১ শে অক্টোবর, ২০১৩ রাত ১০:৫৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :




প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও জাতীয় সংসদে বিরোধী দলের নেত্রী খালেদা জিয়ার মধ্যে রাজনৈতিক চাল চলে আসছে দীর্ঘ বছর ধরে। মহাজোট সরকারের শুরু থেকে খালেদা বধে হাসিনার চাল, হাসিনা বধে খালেদার নতুন নতুন রাজনৈতিক চাল চলে আসছে। মহাজোট সরকারের প্রথম দিন থেকে আজকের বিকেলের আগ পর্যন্তও রাজনৈতিক চালে শেষ পর্যন্ত নানাদিক মিলিয়ে জয়ী ছিলেন শেখ হাসিনা।

আজ সোমবার বিকেলে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া সংবাদ সম্মেলনে এমন এক রাজনৈতিক চাল খেলেছেন, এই এক চালে কাবু হয়ে গেলেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা। উল্টে গেলো পাশা। সাবেক স্বৈরাচার এরশাদকে দিয়ে আজ সকালেও ‘বিএনপিকে ছাড়া নির্বাচনে যাবে না জাতীয় পার্টি’- সরকারের এ নাটকও শেখ হাসিনাকে শক্ত রাখতে পারেনি। প্রধানমন্ত্রীকে কাবু হতেই হলো।

১৯৯৬ ও ২০০১ সালের তত্ত্বাবধায়ক সরকারে থাকা ২০ উপদেষ্টার মধ্যে থেকে ১০ জনের সমন্বয়ে একটি নির্বাচনকালীন সরকার গঠনে আজ প্রস্তাব করেছেন খালেদা জিয়া। তিনি বলেছেন, ‘ওই ২০ জন থেকে আওয়ামী লীগ পাঁচ জন আর বিএনপি পাঁচ জনের নাম প্রস্তাব করবে। সর্বজন গ্রহণযোগ্য একজন ব্যক্তিকে ওই সরকারের প্রধান করা হবে। প্রয়োজনে তাদের বর্তমান সংসদে নির্বাচিত করে আনা যেতে পারে, যেভাবে সংরক্ষিত মহিলা আসনে নির্বাচন করা হয়।’ খালেদা জিয়ার আজকের রাজনৈতিক চালের পর শেখ হাসিনার নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে আগের সব পরিকল্পনা উল্টে যাচ্ছে! খালেদার প্রস্তাব অনুযায়ী দুই দলের পাঁচ জন করে দশজনের সরকার শেষ পর্যন্ত গঠন নাও হতে পারে। আবার হতেও পারে। এখানে লক্ষ্যণীয় হচ্ছে, এ প্রস্তাব নিয়ে আওয়ামী লীগকে অনেক ভাবতে হবে। এর আগে খালেদার আর কোনো প্রস্তাব নিয়ে মহাজোট সরকারকে এতো ভাবতে হয়নি।

সূত্র জানায়, ‘ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ভেবেছিল, খালেদা জিয়া নির্দলীয় তত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুর্নবহালের দাবি জানিয়ে সরকারের ব্যর্থতা, দুর্নীতি, অনিয়ম, মন্ত্রী-সংসদ সদস্যদের দুর্নীতি, প্রধানমন্ত্রী পরিবারের দুর্নীতি ইত্যাদি তুলে ধরবেন আজকের সংবাদ সম্মলনেও। অর্থাৎ, খালেদা গৎবাঁধা কথাবার্তা বলবেন। এ পরিকল্পনা থেকে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে জবাব হিসেবে বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোট সরকারের আমলের ব্যর্থতা, অনিয়ম, দুনীর্তি, মৌলবাদের উত্থান, যুদ্ধাপরাধীদের ক্ষমতার শরীক করা, তারেক-কোকোর বিদেশে টাকা পাচার ইত্যাদি তুলে ধরা হবে। সেজন্য আওয়ামী লীগের কয়েক নেতা প্রস্তুতও ছিলেন। আর খালেদা যেভাবেই বলুন, যতোই আন্দোলনের হুমকি দিন, আওয়ামী লীগ কিছুতেই তত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থায় ফিরে যাবে না। তাতে দোষারোপের রাজনীতি চলতে থাকবে। এসব চলতে থাকার মধ্যেই চলে আসবে নির্বাচনের সময়। বিএনপি না এলে যারা নির্বাচনে আসবে, তাদের নিয়েই শেষ পর্যন্ত আগামী সংসদ নির্বাচন হবে। এরশাদ, ইনু, মেনন, দিলীপ বড়ুয়াদের দলগুলো তো আছেই। শেখ হাসিনাই থাকবেন নির্বাচনকালীন সরকারের প্রধান। কিন্তু খালেদা জিয়া নির্দলীয় তত্বাবধায়ক সরকারের বদলে আজ কৌশলে প্রধানমন্ত্রীর সর্বদলীয় সরকার ব্যবস্থার দিকেই থাকলেন। ১৮ অক্টোবর জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনকালীন সর্বদলীয় সরকার গঠনের প্রস্তাব দেন। তাতে যোগ দেয়ার জন্য বিএনপির পক্ষ থেকে নামও আহবান করেন প্রধানমন্ত্রী।’

আজকে খালেদা জিয়া বক্তব্যে যোগ করলেন, ‘১৯৯৬ ও ২০০১ সালের তত্ত্বাবধায়ক সরকারে থাকা ২০ উপদেষ্টার মধ্যে থেকে ১০ জনকে নিয়ে সরকার গঠনের প্রস্তাব। ওই ২০ জন থেকে আওয়ামী লীগ পাঁচ জন আর বিএনপি পাঁচ জনের নাম প্রস্তাব করবে। গত ১৮ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রীর সর্বদলীয় সরকার গঠনের প্রস্তাবের তিনদিনের মাথায় পাল্টা আজকে এই প্রস্তাব তুলে ধরলেন বিরোধীদলীয় নেতা। ‌কৌশলে হলেও খালেদার আজকের প্রস্তাব শেখ হাসিনার সর্বদলীয় সরকারের প্রস্তাবকে সমর্থন করেই।

এবার গণ্ডগোল বাধাচ্ছে খালেদা জিয়ার ‘সর্বজন গ্রহণযোগ্য একজন ব্যক্তিকে নির্বাচনকালীন সরকারের প্রধান করা হবে।’ প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনকালীন সরকারের প্রধান হবেন, এটা তিনি নিজে এখনো পর্যন্ত বলেননি। তবে প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা এইচটি ইমাম, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম জানিয়ে দিয়েছেন, ‘শেখ হাসিনাই হচ্ছেন নির্বাচনকালীন সরকারের প্রধান।’
খালেদা জিয়ার নতুন প্রস্তাবের পরও শেখ হাসিনা নির্বাচনকালীন সরকারের প্রধান হতে পারবেন, কিন্তু তাতে দেশ-বিদেশের সমর্থন আওয়ামী লীগের দিকে থাকবে না। প্রধানমন্ত্রী বাদে অন্য কাউকে নির্বাচনকালীন সরকার প্রধান করা হলে ‘পরাজয়’ আওয়ামী লীগের। ঘুরেফিরে শেষ পর্যন্ত ওই সরকার তত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার রুপ পাচ্ছে। তত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে বিএনপির আন্দোলন সার্থক হচ্ছে!

তবে খালেদার আজকের প্রস্তাবে আরেকটা ‘গণ্ডগোল’ বাধঁবে বিএনপির ঘরে বা জোটে। আওয়ামী লীগ থেকে সাফ জানিয়ে দেয়া হয়েছে, ‘নির্বাচনকালীন সর্বদলীয় সরকারে যুদ্ধাপরাধীদের দল জামায়াত ছাড়া সব দলের প্রতিনিধিত্বের সুযোগ আছে।’ ১৯৯৬ ও ‘০১ সালের তত্ত্বাবধায়ক সরকারে থাকা ২০ উপদেষ্টার মধ্যে থেকে আওয়ামী লীগ পাঁচ জন আর বিএনপি পাঁচ জনের নাম প্রস্তাব করবে। এখানে জামায়াত নেই। শেষ পর্যন্ত এরকম সরকার গঠন হলে আর জামায়াতের প্রতি সহানুভূতিশীল কোনো উপদেষ্টার নাম বিএনপি প্রস্তাব করলে আওয়ামী লীগ কি তা মানবে? বিএনপি তখন জামায়াতের কাছে কি জবাব দেবে? বিষয়গুলো বিএনপির ব্যাখ্যা করা জরুরি। কেননা, ‘জামায়াত-বিএনপি একে অন্যের ভাই-ভাই’।
৮টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্মৃতিপুড়া ঘরে

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৩০



বাড়ির সামনে লম্বা বাঁধ
তবু চোখের কান্না থামেনি
বালিশ ভেজা নীরব রাত;
ওরা বুঝতেই পারেনি-
মা গো তোমার কথা, মনে পরেছে
এই কাঠফাটা বৈশাখে।

দাবদাহে পুড়ে যাচ্ছে
মা গো এই সময়ের ঘরে
তালপাতার পাখাটাও আজ ভিন্নসুর
খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯




মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজীব নূর কোথায়?

লিখেছেন অধীতি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪

আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×