somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ঘুম ভাঙ্গেনি...

০৪ ঠা এপ্রিল, ২০০৯ রাত ১০:৪০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

১.

ঘুম ভাংতেই মনে হলো, আজকের সকালটা অন্যরকম, একদম আর দশটা সকালের মতো নয়। ঘাড়টা একটু কাত করে বেডসাইড টেবলের উপরের ঘড়িতে একবার চোখ বুলিয়ে নিল মিলি। হুমম...আসলেই অন্যরকম একটা সকাল। ঘড়ির ঘন্টার কাঁটাটা ছয় এর ঘরে, শেষ কবে ছয়টায় ঘুম ভেঙ্গে উঠেছে মনে করতে পারলো না! আলতো পায়ে নিজের ঘর ছেড়ে বেরুলো। পাশের ঘরেই মা-বাবা ঘুমুচ্ছেন, ফ্যানের শনশন আওয়াজ ছাপিয়ে তাদের দীর্ঘ নিয়মিত নিঃশ্বাসের আওয়াজ শুনতে পেল। তারপরে নীরবে ঘর ছেড়ে বেরিয়ে এল মিলি। বেরুনোর সময় সদর দরজাটা টেনে দিল, কান পেতে শুনে নিল অটোমেটিক লকের ক্লিক আওয়াজ। ধীরে ধীরে ছাদের দিকে পা বাড়ালো।


সূর্য উঠেছে ঠিকই, নাহলে আকাশটার এতো আলো-আলো হওয়ার রহস্যটা কি? দালান-কোঠার ফাঁক-ফোকরে আটকা পড়েছে বেচারা সূর্য, আরো ঘন্টা দু-একের আগে মুক্তি পাচ্ছে না নিশ্চিত। কাক সম্প্রদায়ের নিত্যিদিনের নিয়মিত কা-কা কলরব ছাপিয়ে হরেক রকম পাখির কিচির মিচির শুনতে পেল মিলি। তার মধ্যে চড়ুইয়ের সংখ্যাই বেশি। দিন শুরু হতে না হতেই তাদের ব্যস্ততা চোখে পড়ার মতো। ফুড়ুৎ-ফুড়ুৎ করে এদিক সেদিক উড়ছে। সাথে আরো কিছু নাম না জানা পাখিও দল পাকিয়েছে, শালিক-দোয়েল-ফিঙ্গে হবে হয়তো! বাতাসটাও বেশ লাগছে। অনেকদিন পর সকালে উঠে ভালো লাগছে মিলির, একটু ক্লান্তও লাগছে। রাতটা খুব ভালো যায়নি, হাজারো সব অহেতুক চিন্তা ভিড় করেছিল, কি করলে কি হবে-না হবে...এইসব। প্রায় সারাটা রাত অঘুমো থাকার পরে শেষ রাতের দিকে একটু তন্দ্রামতো এসেছিল। কি এক অদ্ভূত টানে সে তন্দ্রাঘুম ভেঙ্গে চলে এল ছাদে...খারাপ হয় নি একেবারে! ক্লান্ত মিলি রেলিং এ পা ঝুলিয়ে বসে রইলো, গুনগুন করতে লাগলো কোনো এক অজানা সুরে...




২.

মিলির বাবা শওকত সাহেব এক্রোফোবিয়াক, উচ্চতাকে ভীষণ ভয় তার। ঠিক যে উচ্চতাকেই ভয় পান, তা না। শওকত সাহেবের ব্যাপারটা একটু অদ্ভূত। ছেলেবেলার তার দস্যিপনা এমনই ছিল যে নিজের গ্রাম তো বটেই আশেপাশের দু-তিন গ্রামে তার জ্বালায় কোনো পাখির বাসা আস্ত থাকতো না। আম-কাঠাঁলের গাছ থেকে শুরু করে তাল-সুপারি আর নারকেল গাছগুলোর চূড়ায় চূড়ায় ছিল তার অবাধ বিচরণ। সেই শওকত সাহেবই তরুণ বয়সে যখন শহরে পা দিলেন তখন রীতিমত চমকে গেলেন উঁচু উঁচু দালান দেখে। সারা জীবন মাটির অথবা টিনের একতলা ঘর দেখে এসেছেন, ওই তাল-নারকেল গাছগুলোর চাইতেও যে উঁচু দালান হতে পারে, তা উনার কল্পনাতেও আসেনি। হলের রুমমেটের বাবা বাংলাদেশ ব্যাংকে চাকরি করতেন, একদিন খুব শখ করে দেখতে গেলেন ৩২ তলা দালানের বাহার। ছাদে উঠে যখন নিচের দিকে তাকালেন, হঠাৎ আতংকে যেন শিউরে উঠলেন। গাড়িঘোড়া মানুষগুলো একেবারে গুড়ি গুড়ি পিঁপড়ার মতো দেখতে উপর থেকে...এতো উপর থেকেও স্পষ্ট দেখতে পেলেন যেন পিচ ঢালা কালো রাস্তাটা। একবার মনে মনে যেন কল্পনা করে ফেললেন, পা ফসকে পড়লে পুরো ছাতু।


সেই থেকে উচ্চতাকে তাঁর ভীষণ ভয়। আজকাল দু-তিনতলার ছাঁদ থেকেও নিচের দিকে তাকাতে ভয় হয়। তবু ধানমন্ডির মতো জায়গায় আজকাল তিনতলার নিচে কোনো বাড়ীই নেই-- এসব বলে-টলে মিলির মা তাঁকে দিয়ে বাড়িটা তিনতলা করিয়েছেন। বাড়ি বানালে কি হবে, ছাদে ভুলেও যান না তিনি। এই শেষ বয়সে মর্নিং ওয়াকের জন্য ছাদের বদলে পাশের ধানমন্ডি লেক বেছে নিয়েছেন। নামাজ শেষে মিলির মা তাই শওকত সাহেবকে ঘুম থেকে ডেকে তুললেন। ডায়বেটিস অথবা হার্টের সমস্যা শওকত সাহেবের নেই। তবু শেষ বয়সে আশেপাশের সমবয়সীদের সাথে একটু বন্ধুত্বের লোভেই মর্নিং ওয়াকে বের হন। মিলির মা তেমন একটা বের-টের হন না। তাই দরজাতেই শওকত সাহেবকে বিদায় জানিয়ে তিনি বারান্দায় এসে দাঁড়ালেন। বারান্দা থেকে স্বামীর যাওয়ার দৃশ্যটা দেখবেন বলেই হয়তো...


বারান্দার গ্রিলের ফাঁক দিয়ে নিচের দিকে তাকাতেই তার গা হিম হয়ে এলো। ছোপ-ছোপ রক্তের মধ্যে একটা মেয়ের নিথর দেহ পড়ে আছে গেটের সামনে, মরেই গেছে হয়তো... আশেপাশে মর্নিং ওয়াকওয়ালাদের গুঞ্জনরত একটা ছোট্ট ভিড়। মেয়েটার জামাটা অনেকটাই মিলির সবুজ-হলুদের মিশেল জামাটার মত! গত ফাল্গুনে তিনিই তো কিনে দিয়েছিলেন...
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১০ সন্ধ্যা ৬:১৬
১৭টি মন্তব্য ১৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় পণ্য বয়কটের কেন এই ডাক। একটি সমীক্ষা-অভিমত।।

লিখেছেন সাইয়িদ রফিকুল হক, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৩:১৫



ভারতীয় পণ্য বয়কটের কেন এই ডাক। একটি সমীক্ষা-অভিমত।।
সাইয়িদ রফিকুল হক

বিএনপি ২০২৪ খ্রিস্টাব্দে দেশে অনুষ্ঠিত “দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে”-এ অংশগ্রহণ করেনি। তারা এই নির্বাচনের বহু আগে থেকেই নির্বাচনে অংশগ্রহণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×