somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

দ্বৈত নীতির কষাঘাতে বিকৃত হচ্ছে ইতিহাস। আর জাতি হিসাবে আমরা বিভ্রান্ত।

১২ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ রাত ১:২৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমরা বাঙ্গালীরা জাতি হিসেবে দুইটা স্বত্তায় নিজেদেরকে তুলে ধরেছি বিশ্বের কাছে, সবসময়। যখন আমরা দুর্নীতিতে শীর্ষ হই বা নিজেরাই নিজেদের সাথে বেইমানি করি বা কাপুরুষের মত
ঘরে বসে শুধু নিউজ চ্যানেল পাল্টাই তখন নিজের অজান্তেই কতবার না বলি এই বাঙ্গালের দ্বারা কিচ্ছু হবেনা। ঠিক আরেকটা ভিন্ন রুপের কথা হল, বাহান্ন, একাত্তর বা কোন গণজাগরনের কথা ঊঠলেই গায়ে কাঁটা দিয়ে শরণ করিয়ে দেয়, বাঙ্গালীরা পারে অধিকার আদায়ের প্রশ্নে আপোষহীন রাজনীতিতে নিজেদের
প্রতিষ্ঠা করতে।

আমি যুদ্ধের পরবর্তী প্রজন্ম। বাবা বলতেন "ঠিক যখন লাখো যোদ্ধার রক্তে একটা নতুন মানচিত্র খোদায় করা হল, সেখানে সবুজের সমারোহে তপ্ত বালি ঠাণ্ডা হল। তখন তোর জন্ম।" আমি অনেক নিশ্চিন্ত অনুভব করতাম এই ভেবে যে, আর কখনও এমন দিন আসবেনা যে দিন গুলোর কথা বলতে বলতে বাবার চোখে জল আসত। আমি তখন ছোট ছিলাম। কতটুকুই বা বুঝতাম, যে রাজনীতির খেলা কখনও বন্ধ হয়না। রাতের ঠাণ্ডা বালি
সকালের প্রখরতায় আবার উত্তপ্ত হয়, সবুজ পুড়ে ছাই হয়ে যায়।

বড় হওয়ার সাথে সাথে বাঙ্গালীর দুটা স্বত্তার সাথে পরিচিত হতে থাকলাম। একদিকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা নিয়ে নিজেকে বীরের সন্তান ভেবেছি, তো কখনও জাতির কলঙ্কিত অধ্যায়ের জন্য "ব্লাডি বাঙ্গালী" গালিটা হজম করে বালিশে মুখ গুজে কেঁদেছি।
আমাকে প্রতিবাদী হতে দেয়নি সেই "দুইটা স্বত্তা", যা নিয়ে আমার কথা শুরু করেছিলাম। আজ বাঙ্গালী তার বাঙ্গালীয়ানা ভাতে আর মাছে সীমাবদ্ধ রাখেনি। বরং আরও বিচিত্রতা নিয়ে উত্তর উত্তর বিকাশ ঘটিয়ে চলেছে নিজেদের। আর সেই বিকাশের পূর্ণ রুপ গুলোর মধ্যে মোটা দাগে বিকশিত হয়েছে নিজেদের মধ্যে লড়াই। আন্দোলনের বৈচিত্র্যতা আরও সভ্য হয়ে রুপ নিয়েছে মধ্যযুগীয় বর্বরতায়। সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন হবে এটাই স্বাভাবিক। তাই বলে ইংরেজ তাড়াও নীতিতে লাঠি, কাস্তে আর বন্দুক নিয়ে সহিংস হয়ে ওঠা কতটা নৈতিক অবক্ষয় সে প্রশ্নটা কিন্তু থেকেই যায়। তর্কের খাতিরে যদিও বা তা মেনে নেই, যে এর বিকল্প বা অদ্বিতীয় কিছু নেই, তবে এইটুকু না বললেই না, যে সাধারন মানুষের জীবন যাত্রায় বাধা দেওয়ার প্রশ্নে, তা কতটুকু সমর্থন যোগ্য। হরতালের আগের রাতে ইচ্ছেমত, রাস্তায় দাঁড়ানো গাড়ি ভাঙ্গা বা তাতে আগুন লাগানো কিংবা এরুপ সহিংসতা সত্যিই কি আমাদের জাতিগত চিত্রকে কলঙ্কিত করেনা? সেই রকম বর্বরতার এক চরম সীমা দেখলাম যুদ্ধ অপরাধীর বিচারের ইস্যুতে, যেখানে কলংকিত একটা অতীতকে প্রায়শ্চিত্তের মাধ্যমে শুধরাবার চেষ্টা চলছে। হাস্যকর হলেও সত্য ,সেখানে অনেক বাঙ্গালীরা নাকি মুক্তিযুদ্ধ কালীন অপরাধের কোন অস্তিত্তই খুঁজে পায়না। কেউ আবার স্বাধীনতা যুদ্ধের সত্যতা নিয়েও প্রশ্ন তোলে। কেউ বলে রাষ্ট্র হবে নিরপেক্ষ। আবার কেউ দাবী করে বসে নিরপেক্ষতার শর্ত আমরা বুঝিনা, সংখ্যা গরিষ্ঠের ভিত্তিতেই রাষ্ট্রের ধর্ম নির্ধারন করতে হবে। এই বাঙ্গালীরা দুইটা স্বত্তায় বিভক্ত হয়ে আজ দুইটা অখণ্ড রাষ্ট্রের দাবীদার। একটা মুক্তি যুদ্ধের সপক্ষের শক্তি আর অন্যরা বিরোধী হিসাবে প্রতিষ্ঠা পেতে যেন মড়িয়া। ইতিহাসের পাতাগুলোও আজ যথেষ্ট অপরিষ্কার।
ভালো মন্দের সিংহাসনে আজ কাকে কোথায় বসাব তা চিন্তা করতেই চুল চেড়া বিশ্লেষণ করা লাগে। শাহবাগে যখন ঘৃণ্য অপরাধের জন্য ফাঁসির দবীতে তরুণরা সোচ্চার হয়েছে তখন কেউ সমর্থন দেবে কি দেবে না, তা নিয়ে জটিলতার কমতি নেই কোথাও। জানিনা এর শেষ পরিণতি রাজনীতির কোন আভিধানিক অর্থে শেষ হবে, তবে বলতে পারি একটা দেশ, একটা জাতি, একটা স্বপ্ন, একটা দাবী, একটা উচ্চারণ আর বেঁচে থাকার একটাই অবলম্বন এমন স্বপ্ন তো আমি দেখি।
৪টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বাংলাদেশে কোন প্রজন্ম সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত? ১৯৭১ থেকে একটি সংক্ষিপ্ত ভাবনা

লিখেছেন মুনতাসির, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৮:৪৩

বাংলাদেশে দুর্নীতির প্রশ্নটি প্রায়ই ব্যক্তি বা দলের দিকে ছুড়ে দেওয়া হয়। কিন্তু একটু গভীরে গেলে দেখা যায়, এটি অনেক বেশি প্রজন্মভিত্তিক রাজনৈতিক - অর্থনৈতিক বাস্তবতার সঙ্গে যুক্ত। ১৯৭১ এর পর... ...বাকিটুকু পড়ুন

চাঁদগাজীর মত শিম্পাঞ্জিদের পোস্টে আটকে থাকবেন নাকি মাথাটা খাটাবেন?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৫৭



আমাদের ব্রেইন বা মস্তিষ্ক কিভাবে কাজ করে লেখাটি সে বিষয়ে। এখানে এক শিম্পাঞ্জির কথা উদাহরণ হিসেবে টেনেছি মাত্র।

ধরুন ব্লগে ঢুকে আপনি দেখলেন, আপনার পোস্টে মন্তব্যকারীর নামের মধ্যে "জেন একাত্তর" ওরফে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টি দিল্লী থেকে।

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:১৫


((গত ১১ ডিসেম্বর ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টির ইতিবৃত্ত ১ শিরোনামে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম। সেটা নাকি ব্লগ রুলসের ধারা ৩ঘ. violation হয়েছে। ধারা ৩ঘ. এ বলা আছে "যেকোন ধরণের... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের হাদিকে গুলি করা, আর আওয়ামী শুয়োরদের উল্লাস। আমাদের ভুল কোথায়?

লিখেছেন তানভির জুমার, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৫৩



৩০ জনের একটা হিটলিস্ট দেখলাম। সেখানে আমার ও আমার স্নেহের-পরিচিত অনেকের নাম আছে। খুব বিশ্বাস করেছি তা না, আবার খুব অবিশ্বাস করারও সুযোগ নাই। এটাই আমার প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

এ যুগের বুদ্ধিজীবীরা !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৪০


ডিসেম্বর মাসের চৌদ্দ তারিখ বাংলাদেশে বুদ্ধিজীবী দিবস পালন করা হয়। পাকিস্তান মিলিটারী ও তাদের সহযোগীরা মিলে ঘর থেকে ডেকে নিয়ে হত্যা করেন লেখক, ডাক্তার, চিকিৎসক সহ নানান পেশার বাংলাদেশপন্থী বুদ্ধিজীবীদের!... ...বাকিটুকু পড়ুন

×