somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

টিপাইমুখ বাঁধ নিয়ে কিছু ভাবনা- সৈয়দ টিপু সুলতান

২৭ শে জুলাই, ২০০৯ বিকাল ৩:৪৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

নিউইয়র্কভিত্তিক আন্তর্জাতিক ফারাক্কা কনফারেন্সের (আইএফসি) অন্যতম প্রধান সংগঠক, লেখক সৈয়দ টিপু সুলতান এর টিপাই মুখ নিয়ে ভাবনা --

প্রেক্ষাপটঃ এক
­আমার শিক্ষক প্রথিতযশা সাহিত্যিক ও ইত্তেফাক পত্রিকার সম্পাদক-রাহাত খান
এবার একুশে বইমেলায় প্রকাশিত আমার তিনটি বইয়ের মধ্যে বাংলাদেশের নদী পানির ন্যায্য অধিকার, সমস্যা ও সমাধানের আলেখ্যে রচিত বইখানা নিয়ে ইত্তেফাক অফিসে স্যারের সাথে দেখা করতে গেলাম­
­টিপু সুলতান, তোমরা পানি পাবে না। কস্মিনকালেও না।
­ কারণ?
­ কারণ সোজা। গ্যাস-তেল-বন্দর-যোগাযোগ দাও­ পানি নাও।
­স্যার, তেল-গ্যাস-বন্দরের সাথে পানির কী সম্পর্ক। ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ করছে, মানুষ মরছে, ঘরবাড়ি গুঁড়িয়ে দিচ্ছে; কিন্তু সিন্ধু নদের চুক্তির তো কখনো বরখেলাপ হয়নি। তা ছাড়া পাকিস্তানের মতো আমাদের সাথে ভারতের অবস্থা খারাপ নয়। স্যার, কমপক্ষে ১৯৯৬ সালের পানি চুক্তি মানলেই তো আমরা বেঁচে যাই।
­টিপু সুলতান, ওসব যুক্তি উক্তি দিয়ে আর যাই হোক, পানি পাবে না।
পদ্মার ভাঙনের মতো পায়ের নিচের মাটি যেন সরে গেল। নিজেকে খুব একা মনে হলো। রক্তাক্ত মন আর অবসন্ন দেহ টেনে টেনে নিচে নেমে আসলাম। গাড়ির কাচ নামিয়ে একখণ্ড তারাভরা আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকলাম নির্লিপ্ত নয়নে।
প্রেক্ষাপটঃ ২
স্বনামধন্য ড. খন্দকার সুফিয়ান­
­অমায়িক, সংস্কৃতিমনা, প্রতিভাবান ইঞ্জিনিয়ার। অসংখ্য সংগঠনের সাথে জড়িত। অভিজ্ঞতার আলোকে বহুজাতিক কোম্পানিতে চাকরির বদৌলতে বহুদেশ ঘুরেছেন নির্মাণ বিষয়ক কার্যক্রমের জন্য। অন্যান্য নির্মাণ ব্যবস্থাপনার সাথে ড্যাম ও ব্যারাজ নির্মাণেও তার প্রতিভা ও অভিজ্ঞতার স্বাক্ষর রেখেছেন। সম্প্রতি ভারত গিয়ে ড্যাম, ব্যারাজ ও জলবিদ্যুৎ নিয়ে সরকারি ও বেসরকারি উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তাদের সাথে কথাবার্তা বলেছেন।
বাংলাদেশ সোসাইটি, নিউইয়র্কের অফিসে কর্মকর্তাদের আতিথেয়তায় আন্তর্জাতিক ফারাক্কা কমিটি (আইএফসি) আয়োজিত টিপাইমুখ বাঁধের ওপর মতবিনিময় সভা। মরণ বাঁধ ফারাক্কার মতো টিপাইমুখ বাঁধ, বাংলাদেশের ভূ-প্রকৃতি, জীববৈচিত্র্য আর্থ-সামাজিক ও পরিবেশগত বিপর্যয় নিয়ে আলোচনার এক পর্যায়ে ড. সুফিয়ান অনেকটা উঁচু স্বরে বলে ওঠলেন, আসলে টিপাইমুখ বাঁধ বাংলাদেশের জন্য অভিশাপ তো নয়ই, বরং আশীর্বাদ। তিনি তার কোম্পানি উঊডইঊজজণ-র লোগোসহ ছাপা টিপাইমুখ বাঁধের একটি সম্ভাব্য মডেল দেখিয়ে বোঝাতে চাইলেন, কিভাবে টিপাইমুখ বাঁধের সাহায্যে জলবিদ্যুৎ তৈরির সময় শুষ্ক মৌসুমে এখানকার চেয়ে বেশি ও বর্ষা মৌসুমে কম প্রবাহিত হবে বরাক নদীর পানি। ফলে বাংলাদেশের জন্য আশীর্বাদ। রঙিন ছবিসহ বর্ণনা দেখে সাংবাদিকরাও নড়েচড়ে বসলেন। আমরা সবাই হতবাক। তবে ড. সুফিয়ান বিবেকপ্রসূত উপলব্ধি থেকে ছোট্ট করে বললেন, টিপাইমুখের ভাটিতে প্রস্তাবিত (শুক্লা কমিশন) ফুলের তাল ব্যারাজ হলে আশীর্বাদের পরিবর্তে অভিশাপ হতে পারে। নিউইয়র্কের পত্রিকাগুলোর সাংবাদিকদের বেশির ভাগই টিপাইমুখ বাঁধ বাংলাদেশের জন্য আশীর্বাদ ড. সুফিয়ানের এই তত্ত্বের ওপর ভিত্তি করে নিউজ করলেন। একটি পত্রিকা ড. সুফিয়ান হাঁটে হাড়ি ভেঙে দিয়েছেন বলে রমরমা নিউজ করলেন। এতে দেশের ক্ষতি হলো কি না তা ভেবে দেখা হলো না। আমি যে ড. সুফিয়ানকে চারটি প্রশ্ন রেখেছিলাম বেশির ভাগ পত্রিকায় তা উল্লেখও করা হলো না। আমার নিচে উল্লিখিত প্রশ্নগুলোর উত্তর দেয়ারও ‘সময় হয়নি’ ড. সুফিয়ানের!
১. যদি টিপাইমুখ বাঁধ বাংলাদেশের জন্য আশীর্বাদই হতো তবে ৯৫ শতাংশ বাংলাদেশী ও ভারতীয় বিজ্ঞানী কেন এটা শুধু বাংলাদেশের জন্য নয়, মনিপুরের জন্যও কেন অভিশাপ হিসেবে আখ্যায়িত করছেন? আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন পানি প্রকৌশলী ড. আইনুন নিশাত ও ড. কামরুল ইসলামের মতেও কেন টিপাইমুখ বাঁধ বাংলাদেশের জন্য অভিশাপ?
২. যেখানে ফারাক্কা বাঁধের ব্যাপারে ভারতের যাবতীয় আন্তর্জাতিক নদী কনভেনশনের নিয়ম-কানুন লঙ্ঘন, ১৯৯৬ সালের দ্বিপক্ষীয় চুক্তি লঙ্ঘন ও অনবরত কূটনৈতিক মিথ্যাচারিতা শতভাগ প্রমাণিত, সেখানে ড. সুফিয়ান বলেছেন, শুক্লা কমিশন অনুযায়ী টিপাইমুখ ও আমলশিদের মাঝামাঝি ফুলের তাল ব্যারাজ নির্মিত হচ্ছে সেচ প্রকল্পের জন্য এবং তার বক্তব্য অনুযায়ী (যা চিত্রে দেখিয়েছেন) বাংলাদেশের জন্য জীববৈচিত্র্য, অর্থনৈতিক ও পরিবেশগত বিপর্যয় অবশ্যম্ভাবী, সেখানে কিভাবে বাংলাদেশের জন্য আশীর্বাদ হবে?
৩. ড. সুফিয়ানের কাছে কি টিপাইমুখ প্রকল্পের মৌলিক বিজ্ঞানসম্মত জ্ঞান ও পরিবেশগত কোনো জরিপ আছে কি? বাংলাদেশের উজানে বরাক নদীর ওপর আরো অনেক ছোট ছোট ড্যাম ও ব্যারাজের পরিকল্পনার তথ্য আছে কি?
বিদ্যুৎ তৈরির জন্য জলাধারে একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ পানির প্রয়োজন হয়, যার চাপ টারবাইন ঘুরে বিদ্যুৎ উৎপাদন করবে। ফলে বর্ষা মৌসুমে এখানকার তুলনায় কিছুটা কম পানি আসবে আর শুষ্ক মৌসুমে এখনকার চেয়ে কিছুটা বেশি পানি পাওয়া যাবে­ যা বোঝার জন্য পানি বিজ্ঞানীর প্রয়োজন হয় না। কিন্তু তিনি কি নিশ্চিত যে, ভারতীয় কর্তৃপক্ষ শুষ্ক মৌসুমে কৃষি কাজের জন্য যখন পানির প্রয়োজন হবে, ঠিক সেই সময়েই পানি ছাড়বে বাংলাদেশের স্বার্থে নিজের বিদ্যুৎ তৈরির স্বার্থকে জলাঞ্জলি দিয়ে?
নিপকোর (নর্থ ইস্টার্ন ইলেকট্রিক পাওয়ার করপোরেশন) ১৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হলেও প্রকৃতপক্ষে বিদ্যুৎ উৎপাদন হবে ৪১২ মেগাওয়াট। সেই ক্ষেত্রে ভারত থেকে বিদ্যুৎ আমদানির অলীক কল্পনা কিভাবে বাংলাদেশী দেশপ্রেমিক ইঞ্জিনিয়ারের চিন্তায় আসতে পারে (যা তিনি এক পর্যায়ে বলেছেন)?
৪. পৃথিবীর পাঁচটি মারাত্মক ভূমিকম্পের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার মধ্যে ভারতের এই উত্তর-পূর্বাঞ্চল এলাকা অন্যতম। ১৯১৮ সালের ৮ জুলাইয়ের ভূমিকম্পের এপিসেন্টার ছিল শ্রীমঙ্গল আর রিখটার স্কেল মাত্রা ছিল ৭.৬। সেই প্রেক্ষাপটে ১৬২.৫ মিটার উঁচু অর্থাৎ প্রায় ৫৩০ ফুট উচ্চতাসম্পন্ন টিপাইমুখ ড্যাম এলাকায় ভূমিকম্পে বাঁধ ভেঙে গেলে মনিপুর ছাড়াও সিলেট অঞ্চলসহ বাংলাদেশের বিরাট এলাকায় কী পরিমাণ ধ্বংসযজ্ঞ চলবে, তা কি ড. সুফিয়ানের জানা আছে?
চারটি প্রশ্নের উত্তরের জন্য যখন দাঁড়ালেন, তখন সাংবাদিকরা রাত গভীর হয়ে যাওয়ার কথা বলতেই অনুষ্ঠানের সমাপ্তি টানতে হলো।
প্রেক্ষাপটঃ ৩
পানিমন্ত্রী শ্রী রমেশ চন্দ্র সেন
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে এই মন্ত্রী মহোদয় বললেন, আগে টিপাইমুখ বাঁধ তৈরি হোক, তারপর আমরা আলোচনা করব। হায়রে অভাগা দেশের দুর্ভাগা মন্ত্রী। ফারাক্কা বাঁধের তিক্ত ও ধ্বংসাত্মক অভিজ্ঞতার পরও একটি দেশের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীর এমন উক্তির পর খোদ ভারতের পরিবেশবিদরাই নির্বাক ও বোকা বনে গেছেন। একটি টকশোতে ড. আসিফ নজরুল বলছিলেন, আমি সাড়ে চার বছর আন্তর্জাতিক নদ-নদীর অঙ্গন ও আনুষঙ্গিক বিষয়াদি নিয়ে গবেষণা করেছি; কিন্তু কোনো দেশের মন্ত্রী তো দূরের কথা, নিু পর্যায়ের কর্মকর্তাকেও দেশের স্বার্থবিরোধী এমন মন্তব্য করতে দেখিনি। দেশ যত দুর্বল, ছোট কিংবা গরিবই হোক না কেন। শুধু বলতে ইচ্ছে করছে, হে ধরিত্রী, তুমি দু’ভাগ হয়ে যাও­ আমি তোমাতে আশ্রয় গ্রহণ করি।
কাবেরী নদীর পানির প্রাপ্যতা নিয়ে ভারতের কর্নাটক ও তামিলনাড়ু রাজ্যের বিরোধ শতবর্ষেরও ওপরে। অনেক বাগ্বিতণ্ডার পর ১৯২৪ সালে যে চুক্তি হয় তাও এক সময় ভেস্তে যায়। বিরোধ এমন পর্যায়ে পৌঁছে যে, ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার সাবেক প্রধানমন্ত্রী ভিপি সিংকে প্রধান করে তিন সদস্য বিশিষ্ট ট্রাইব্যুনাল গঠন করে। ট্রাইব্যুনালের সিদ্ধান্ত কর্নাটক রাজ্যে না মানাতে সুপ্রিমকোর্টের বিশেষ বেঞ্চকে হস্তক্ষেপ করতে হয় ১১ ডিসেম্বর ১৯৯১ সালে। ফলে দুই রাজ্যের মধ্যে দাঙ্গায় ১৯ জন মারা যায় এবং মাসাধিককাল স্কুল, কলেজ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকে। এমনকি তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী জয়ললিতা অনশন ধর্মঘট পালন করেন। পরিশেষে ৫ ফেব্রুয়ারি ২০০৭ সালে সর্বশেষ ব্যয়ে পানি ব্যবস্থাকে বিন্যাস করা হলো। যেখানে একই দেশের অভ্যন্তরে পানিবণ্টন ব্যবস্থা নিয়ে রাজ্যে রাজ্যে, মানুষে মানুষে মুখোমুখি অবস্থান গ্রহণ করতে পারে, মুখ্যমন্ত্রী স্বয়ং অনশন করতে পারেন। কেন্দ্রীয় সরকারের আদেশ অমান্য করতে পারেন, এমনকি দাঙ্গা সংঘটিত হতে পারে­ সেখানে একটি দেশ অন্য একটি স্বাধীন সার্বভৌম দেশকে ন্যায্য পানির হিস্যা থেকে বঞ্চিত করে যাচ্ছে বছরের পর বছর, বাঁধ দিয়ে যাচ্ছে একটির পর একটি নদীর ওপর। আন্তর্জাতিক নিয়মকানুন ভঙ্গ করছে প্রতিনিয়ত। অভিন্ন নদ-নদী প্রবাহিত দেশগুলোর বহুপক্ষীয় সমস্যাকে উপেক্ষা করছে অনবরত। এমনকি বিদ্যমান ১৯৯৬ সালের অসম পানি চুক্তি অমান্য করছে ধারাবাহিকভাবে। সেখানে বাংলাদেশের জনগণ এই মানবসৃষ্ট প্রবল অন্যায়ের বিরুদ্ধে ও জীবনের অপর নাম পানির ন্যায্য হিস্যার দাবিতে বজ্র নির্ঘোষে ফেটে পড়াই যে স্বাভাবিক।
অভিন্ন নদ-নদী প্রবাহিত দেশ ভারত, চীন, নেপাল, ভুটান ও বাংলাদেশের মধ্যে মেকৎরিভার কমিশনের আদলে, জাতিসঙ্ঘের তত্ত্বাবধানে কমিশন গঠনই কেবল উদ্ভূত সমস্যার সমাধানের কৌশল হতে পারে। কারণ এই অঞ্চলের সবার জন্য আছে যথেষ্ট পানি এবং এর উৎস। আঞ্চলিক কমিশন গঠনের উদ্দেশ্য ও করণীয়ঃ ১. সম্মিলিত ও সমন্বিত প্রচেষ্টায় পানির অপচয় কমিয়ে আনা। ২. বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোণ থেকে বিশ্লেষণ করে নির্দিষ্ট স্থানে বড় বড় জলাধার তৈরি করে ন্যায্যপ্রাপ্যতার ভিত্তিতে শুষ্ক মৌসুমে সুষ্ঠু বণ্টন। ৩. বিদ্যুৎ উৎপাদন ও নিয়মতান্ত্রিকভাবে বণ্টন। ৪. সেচ প্রকল্পে পানির সঞ্চালন। ৫. মৎস্যসম্পদের ব্যাপক উন্নয়ন। ৬. চাকরির সংস্থান। ৭. আঞ্চলিক দেশগুলোর মাঝে সততা, স্বচ্ছতা, সমতা, সহযোগিতা ও সহমর্মিতার ভিত্তিতে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান। ৮. সর্বোপরি পরিবেশগত ভারসাম্যহীনতা থেকে রক্ষা করে বৈশ্বিক উষ্ণতার বিশ্ব প্রচেষ্টাকে সহায়তা করা।
প্রেক্ষাপটঃ ৫
টিপাইমুখ এলাকায় সামরিক বেষ্টনী
নিপকো (ঘঊঊচঈঙ) মনিপুরবাসীর জন্য অনেক সুবিধার মধ্যে ৪৩ মেগাওয়াট ফ্রি বিদ্যুৎ পরিবেশনার ঘোষণা করেছে। তারপরও আঞ্চলিক সংগঠনগুলো সম্মিলিতভাবে টিপাইমুখ ড্যামের বিরুদ্ধে আন্দোলন করছে। ভারতীয় রাষ্ট্রদূত পিনাক রঞ্জন হরহামেশাই বলে বেড়াচ্ছেন, বাংলাদেশের জনগণের জন্য আমরা মঙ্গলপ্রদীপ জ্বালাতে চাচ্ছি। অথচ তারা আমাদের সাথে রাজনীতি করে ভুল বুঝায়ে ফুঁৎকার দিয়ে মঙ্গলপ্রদীপ নিভিয়ে দিতে চাচ্ছে। বেরসিক বাংলাদেশী জনগণ! অথচ তারা ভালো করেই জানেন, এই ৪১২ মেগাওয়াট (যদি লক্ষ্যমাত্রা ১৫০০ মেগাওয়াট) বিদ্যুতের জন্য মনিপুরের ২৯৩ বর্গকিলোমিটার এলাকা ওয়াটার রিজার্ভারের নিচে নিমজ্জিত হবে। এর মধ্যে ৪ হাজার ৭৬০ হেক্টর বাগান ও ২ হাজার ৫৩ হেক্টর ধানী জমি, ১৭৮.২১ বর্গকিলোমিটার বন হারিয়ে যাবে­ হারিয়ে যাবে ১০৫টি গ্রাম। দেখা দেবে ওই অঞ্চলে পরিবেশগত ভারসাম্যহীনতা। এত কিছু জেনেও মনিপুরবাসী আর বসে থাকতে পারে না। আর তাই অপরাধবোধই সরকার ও নিপকো’র নিরাপত্তার অভাব সংযোজন করেছে। তাই পুরো এলাকায় সামরিক স্থাপনা বসানো হচ্ছে। বরাদ্দ করা হয়েছে ৪০০ কোটি রুপি।
প্রেক্ষাপটঃ ৬
বিষাক্ত আর্সেনিকে আক্রান্ত দেশের বেশির ভাগ জনগণ
বাংলাদেশের বেশির ভাগ অর্থাৎ প্রায় ৮ কোটি লোক বিষাক্ত আর্সেনিকে আক্রান্ত। উল্লেখ্য, মরানদী অঞ্চলে এর প্রকোপ অধিক। যেমন ভাগীরথী অববাহিকা ও পদ্মা অববাহিকায় বর্তমানে ব্যাপক আর্সেনিক বিষক্রিয়া দেখা দিয়েছে। তেমনি বরাক নদীর ওপর ড্যাম/ব্যারাজ তৈরি হলে মেঘনা অববাহিকায়ও আর্সেনিক দূষণ দেখা দেবে। যুগ যুগ ধরে জমা হওয়া পলিমাটিতে পলিবাহিত আর্সেনোপাইরাইট রয়েছে। যত দিন পানির নিচে থাকে, তত দিন থাকে নিষ্ত্র্নিয় অবস্থায়। পানি শুকিয়ে গেলে অথবা পানির স্তর নিচে নামলে এই খনিজ পদার্থটি বাতাসের অক্সিজেনের সাথে মিশে পানিতে দ্রবণীয় আর্সেনিকের বিষাক্ত যৌগিক পদার্থ তৈরি করে। ধীরে ধীরে এই বিষাক্ত পদার্থের ভূগর্ভের পানিতে পরিস্রাবণ ঘটে। ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে না নামলে এবং স্বাভাবিক পুনর্ভরণ প্রক্রিয়া চলমান থাকলে এই দূষণ ঘটতে পারে না। এক দিকে মরণবাঁধ ফারাক্কা, অন্য দিকে তিস্তার ওপরে গজলডোবা, ব্রহ্মপুত্রের ওপর আন্তঃনদী সংযোগ পরিকল্পনা আর মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা টিপাইমুখ বাঁধ যদি তৈরি হয়, তবে বাংলাদেশের ৮০ শতাংশ মানুষই আর্সেনিকে আক্রান্ত হবে।
প্রেক্ষাপটঃ ৭
ভারতীয় হাইকমিশনার পিনাক রঞ্জন চক্রবর্তী
টিপাইমুখ বাঁধ নির্মিত হলে বাংলাদেশের কোনো ক্ষতি হবে না। এ নিয়ে বাংলাদেশে রাজনৈতিক চিন্তায় অসত্য প্রচার করা হচ্ছে (ইত্তেফাক, ২০ মে ২০০৯)। পিনাকের এই উক্তির সাথে তাল মিলিয়ে বাণিজ্যমন্ত্রী কর্নের ফারুক খান বলেছেন, টিপাইমুখ বাঁধের সাহায্যে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হলে বাংলাদেশ সেখান থেকে বিদ্যুৎ আমদানি করবে। সেখানে কী হচ্ছে, সেটি নিয়ে যারা বেশি কথা বলছেন, তারা না জেনেই বলছেন (নয়া দিগন্ত, ২৭ মে ২০০৯)
পিনাক রঞ্জন চক্রবর্তী­ নমস্বঃ আপনার কূটনৈতিক ভূমিকা। ভুল হোক, শুদ্ধ হোক, জেনে হোক, না জেনে হোক­ সরকারি চাকরির নিমকস্বত্ব রক্ষার্থে, জনগণের না হোক সরকারি নির্দেশ অনুযায়ী কাজ করছেন। ধন্যবাদ আপনাকে। কায়মনে আশীর্বাদ করি আপনি দীর্ঘজীবী হোন। কিন্তু মন্ত্রী ফারুক খান কার স্বার্থ রক্ষা করছেন? নিজের? দেশের? না অন্য দেশের?

সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে জুলাই, ২০০৯ বিকাল ৫:১৯
৭টি মন্তব্য ১১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সবুজের মাঝে বড় হলেন, বাচ্চার জন্যে সবুজ রাখবেন না?

লিখেছেন অপলক , ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:১৮

যাদের বয়স ৩০এর বেশি, তারা যতনা সবুজ গাছপালা দেখেছে শৈশবে, তার ৫ বছরের কম বয়সী শিশুও ১০% সবুজ দেখেনা। এটা বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থা।



নব্বয়ের দশকে দেশের বনভূমি ছিল ১৬... ...বাকিটুকু পড়ুন

আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে লীগ আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে জামাত

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৪৬


বাংলাদেশে রাজনৈতিক ছদ্মবেশের প্রথম কারিগর জামাত-শিবির। নিরাপত্তার অজুহাতে উনারা এটি করে থাকেন। আইনী কোন বাঁধা নেই এতে,তবে নৈতিক ব্যাপারটা তো অবশ্যই থাকে, রাজনৈতিক সংহিতার কারণেই এটি বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪৩

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

চা বাগানের ছবি কৃতজ্ঞতা: http://www.peakpx.com এর প্রতি।

আমাদের সময় একাডেমিক পড়াশোনার একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। চয়নিকা বইয়ের গল্পগুলো বেশ আনন্দদায়ক ছিল। যেমন, চাষীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×