somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

M

১০ ই আগস্ট, ২০০৬ সকাল ৭:২৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

নাসীর মাহমূদ
মেয়ের নাম_ উপমা। বাবা কবি বলেই মেয়ের এ রকম ডাকনাম।
কবিদের যা হয়। বাড়ি-গাড়ি নেই। এ্যাপার্টমেন্টের ছোট্ট একটি ভাড়া বাসায় জীবনযাপন। বাইরে থেকে বুঝার উপায় নেই বাসাটা এতো ছোট। দেশের স্বল্প আয়ের মানুষের জন্য কিসত্দিতে মূল্য পরিশোধের সুবিধা দিয়ে এই বাসাগুলো বানিয়েছিল সরকার। কিন্তু বড়লোকেরাই পেয়েছিল বেশিরভাগ পস্নট। যারা পস্নটগুলো পেয়েছে তারা এখানে কমই থাকে। তারা ভাড়া দিয়ে দেয়। সেই সুবাদেই উপমার বাবার এই ফস্ন্যাটে ভাড়া থাকা। তিনতলার মুখোমুখি ফ্যাটটাতে থাকেন পঁয়ষট্টি বছরের এক বৃদ্ধ।
উপমার মায়ের নাম সোহাগী। মেয়েকে সোহাগ বিতরণ করাই তার কাজ। মেয়ের বয়স পাঁচ। এখনো স্কুলে যায় না। মায়ের কাছেই পড়ে। মা ভালো শিৰিতা। স্টাডিজে এম এ ফার্স্ট কাস। ফলে শিৰাটা ভালোই হয়। একাডেমিক এবং আদর্শিক দুটোই। মা প্রতিদিন সকাল সকাল চলে যান কলেজের মর্নিং শিফটের কাস নিতে। দু'টো কাস নিয়েই ফিরে আসেন। এই ফাঁকে উপমা বৃদ্ধের গল্পের একজন মুগ্ধ শ্রোতা হিসেবে তাঁকে সঙ্গ দেয়। বৃদ্ধও যথাসম্ভব তাঁর জ্ঞানের বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়ে উপমাকে জ্ঞানী করে তোলার চেষ্টা করেন। আজীবনের সঞ্চিত জ্ঞান মুগ্ধ শ্রোতার কাছে বিলিয়ে দেবার সুযোগ পেয়ে বৃদ্ধ মহাখুশি। সোহাগী মেয়ের জন্য এখনো নিয়মিত দুধওয়ালার কাছ থেকে দুধ রাখেন। বৃদ্ধও রাখেন। মায়ের অবর্তমানে মাঝে মাঝে উপমা নিজেই বাড়ির গেটে গিয়ে মগে করে দুধটা নিয়ে আসে। নিজেরটা এবং বৃদ্ধেরটাও। বৃদ্ধ প্রায়ই 'না' করেন। কিন্তু উপমা বলে 'আম্মু বলেছে এতে আমার অনেক সওয়াব হবে।' বৃদ্ধ আর কথা বলেন না, মনে মনে দোয়া করেন।
একদিন উপমা বৃদ্ধের জন্য দুধ এনে তার ঘরে আর বসলো না। বৃদ্ধ যতোই বললো, 'আজ গল্প শুনবে না'! উপমা কিছুই না বলে তাদের ঘরে চলে যায়। বৃদ্ধ বুঝতে পারে যে কিছু একটা হয়েছে! তিনি দৈনিকটির প্রতি খানিকটা নজর বুলিয়ে নিয়ে উপমাদের বাসায় গেলেন। ততৰণে প্রভাষিকা কলেজ থেকে বাসায় ফিরেছেন। বৃদ্ধ উপমাকে জিজ্ঞেস করলেন, 'কী হয়েছে দাদু! তুমি আজ গল্প না শুনেই চলে এলে যে! তোমার কী মন খারাপ'! উপমা কোনো জবাব দেয় না। সোহাগী দুধের মগটা একবার দেখে নেয়। তারপর বৃদ্ধকে বলেন- 'আমি বুঝতে পেরেছি! আপনি আপনার ঘরে যান, ওকে আমি এুণি পাঠাচ্ছি।' বৃদ্ধ তার ঘরে চলে যান।
ঃ কী আজো বুঝি দুধগুলো ফেলে দিয়েছো!
- হঁ্যা মা, কীভাবে যে হাতের কনুইটা সিঁড়ির রেলিংএ লেগে মগটাতে ঝাঁকুনি খেল, বুঝতে পারলাম না!
ঃ আলস্নাহকে অনেক শুকরিয়া যে মগটা ভাঙেনি। সবগুলো দুধই কি পড়ে গেছে!
_ না, একটা মগের প্রায় সবটাই পড়ে গেছে, অপরটার পড়েনি। সেটা দাদুকে দিয়ে এসেছি।
ঃ খুব ভালো কাজ করেছো!
- কিন্তু মা! তুমি কী করে বুঝলে!
ঃ সিঁড়িতে অাঁকাবাঁকা সাপের মতো দুধের একটা শুকনো ধারা দেখেছি। আচ্ছা তুমি দাদুর কাছে যাও! আমি তোমার জন্য দুধ বানিয়ে আনছি।
উপমা নিঃশব্দে বৃদ্ধের কাছে গিয়ে সালাম দেয়। বৃদ্ধের শেলফে দেশী-ভিনদেশী গল্পের বই থরে থরে সাজানো। জাং শু, ঈশপ, আইরিশ রূপকথা, কালীলা ও দিমোনা, বিহারম্নল আনোয়ার, দাসত্দানে রাসত্দান আরো অনেক গল্পের বই। সেগুলো দেখছিলেন তিনি। উপমাকে দেখে খুশি হয়ে বলেন- 'বোসো দাদু! আজ তোমাকে একটা মজার গল্প শুনাবো। খুব মনোযোগ দিয়ে শুনতে হবে।' উপমার কৌতূহলী মুখে গোলাপি হাসি ছড়িয়ে পড়ে। আলতোস্বরে সে বৃদ্ধকে বলে 'থ্যাঙ্ক ইউ'! বৃদ্ধ বলে ধন্যবাদ আমাকে নয় বরং গল্পকারকেই দেয়া উচিত। উপমা বলে- 'কেন!'
'কেন! এ সম্পর্কেই বরং আজ তোমাকে গল্প শোনাই চলো'! বৃদ্ধ বুক শেলফ হাতড়াতে হাতড়াতেই গল্প বলতে শুরম্ন করে দেন। আচ্ছা দাদু! বলো তো! আমাদের দেশে কোন ঋতুতে বৃষ্টি হয়! উপমা 'বর্ষা ঋতুতে' বলেই গল্পে মনোযোগ দেয়।
হঁ্যা! ঠিক বলেছো। গ্রীষ্মকালে খরতাপ আর বৃষ্টিহীনতার ফলে চারদিক খাঁখাঁ করে! মাঠ-ঘাট পর্যনত্দ ফেটে যায়। প্রকৃতির বুকে ফাটলের ছাপ মানুষের মনেরও পড়ে। মানুষ হা-পিত্যেস করে মরে। প্রচণ্ড তৃষ্ণায় প্রকৃতির বুক যখন শুকিয়ে যায় তখন আসে বৃষ্টি। বৃষ্টির পর বৃষ্টির এই মৌসুমই হলো বর্ষা ঋতু। বৃষ্টি এসে গ্রীষ্মের তৃষ্ণা মিটিয়ে দেয়। আর মানচিত্রের বিচিত্র বক্ররেখার মতো ফেটে ফেটে থাকা জমিন এক পেট খেয়ে দেয় দীর্ঘ সুখনিদ্রা। নিদ্রা থেকে জেগে দেখে টাক মাথায় সবুজ চুল। শরতের মৃদু হাওয়ায় আলতো দোল। কাশের বন, শিউলি বন আরো কতো বিচিত্র রঙরূপ। বৃষ্টির প্রতি তার মন কৃতজ্ঞতায় ভরে ওঠে নিমেষেই। জমিন অমনি বৃষ্টির প্রতি তার অনত্দরের কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বলে হে বৃষ্টি, তোমার জন্য আজ আমার, আমার সকল উদ্ভিদ শিশুদের বেঁচে থাকা। তুমি না এলে আমরা তো শুকিয়ে মরে যেতাম। এই ফুল-ফসলের সবুজ আর দেখতে পেত না বিশ্ববাসী। তোমাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। বৃষ্টি এই কথা শুনে সাতরঙ হাসি হেসে বললো- আমাকে ধন্যবাদ জানিয়ে লাভ নেই। তুমি বরং বৃষ্টির মা মেঘকে ধন্যবাদ জানাও। আমি তো তার অশ্রম্নমাত্র। তোমার তৃষ্ণা সহ্য করতে না পেরেই তো সে অমন কাঁদে।' মেঘ এ সময় সাদা জামা পরে ঘুরে ঘুরে দেখছিল তার প্রিয় ভূমিকে। জমিন দ্রম্নত মেঘের দিকে তাকিয়ে বললো ওগো বৃষ্টির মা! তোমার যাত্রা শুভ হোক। তোমার ভালোবাসার কান্নায় আমরা জীবন পেয়েছি। তোমাকে অনেক ধন্যবাদ।' মেঘ তখন অট্টহাসিতে জমিনকে কাঁপিয়ে দিয়ে বললো ধন্যবাদ আমাকে নয় বরং সূর্যকে দাও। যে পানিকে তাপ দিয়ে বাষ্প বানিয়ে মেঘ বানায়। জমিনের ভেতর এবার কেমন যেন কম্পন অনুভূত হলো। সে। দ্রম্নত সূর্যের দিকে তাকিয়ে বললো হে মহান সূর্য! হে দয়ালু মেহেরবান! পৃথিবীর সকল আলোর উৎস তুমি! তুমি না থাকলে পৃথিবী অন্ধকার, আমার গাছপালা মরে যেত। তুমি যে কতো ভাবে পৃথিবীবাসীর উপকার করো, তার কোনো ইয়ত্তা নেই। তুমি সমুদ্রের পানিকে মেঘে পরিণত না করলে আমরা বৃষ্টির অভাবে মরে যেতাম। তোমাকে অনেক ধন্যবাদ!' সূর্য এ কথা শুনে জমিনের পিঠে তার তপ্ত জিহ্বাটি একবার লেহন করে বললো- 'তোমার কথাটি ঠিক নয়। সমুদ্র যদি তার পানিকে আমার রশ্মির তাপে বাষ্প হতে না দিত, তাহলে আমার সাধ্য ছিল না তাকে মেঘমালায় পরিণত করি। ফলে তোমার ধন্যবাদ পাবার যোগ্য আমি নই।' জমিন উপায়নত্দর না দেখে শেষ পর্যনত্দ সমুদ্রের তীরে দাঁড়িয়ে তাকে ডেকে বললো, 'হে কুলকিনারাহীন মহা সমুদ্র! তুমি অনেক উদার! তুমি তোমার পানিকে বাষ্প বানিয়ে ঊধের্্ব পাঠাও। আর ঐ বাষ্প মেঘ হয়ে বৃষ্টিরূপে আমার প্রাণ রৰা করে। তুমি আমাকে সাহায্য না করলে কী বিপদই না হতো! তোমার প্রতি তাই আমি কৃতজ্ঞ।'
সমুদ্র জমিনের কথা শুনে উপকূলে তার হাসির ঢেউ তুলে বললো, 'আমার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানানোর প্রয়োজন নেই। প্রকৃত কৃতজ্ঞতা জানানো উচিত আলস্নাহর প্রতি, যিনি আমাকে, তোমাকেসহ পৃথিবীর সবকিছু সৃষ্টি করেছেন। তারপর সৃষ্টিরাজির মধ্যে পারস্পরিক শৃঙ্খলা তৈরি করে দিয়ে যার যার দায়িত্ব বুঝিয়ে দিয়েছেন এবং যার নির্দেশে সকল সৃষ্টি তার নিজ নিজ দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে।'
উপমা এতোৰণ গভীর মনোযোগের সাথে গল্প শুনছিল। এবার বললো, তা-ই!
হঁ্যা ঠিক তাই! বৃদ্ধ শিৰকের মতো বললেন- আর এজন্যই আমি বলেছিলাম ধন্যবাদ আমাকে নয় বরং গল্পের স্রষ্টাকে দাও।
এবার বুঝতে পেরেছি... উপমার কথা শেষ না হতেই বৃদ্ধ বলে উঠলেন এবার ভাবো তো! একটা গল্প সৃষ্টি করার কারণে যদি আমরা গল্পকারের কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করি, তাহলে সমগ্র বিশ্বের সকল কিছু যিনি আমাদেরই কল্যাণে সৃষ্টি করেছেন তাঁর প্রতি কতো বেশি বেশি কৃতজ্ঞতা জানানো উচিত!
উপমার জবাব দেয়ার আগেই তার মা তার হাতে দুধের গস্নাস তুলে দিলেন। উপমা দুধটুকু খেয়ে নিয়ে বললো, 'আলহামদুলিলস্নাহ'!
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে ডিসেম্বর, ১৯৬৯ সন্ধ্যা ৭:০০
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

লিখেছেন এস.এম. আজাদ রহমান, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৪৪



বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

কেন বিএনপি–জামায়াত–তুরস্ক প্রসঙ্গ এখন এত তপ্ত?
বাংলাদেশের রাজনীতিতে দীর্ঘদিন ধরে একটি পরিচিত ভয়–সংস্কৃতি কাজ করেছে—
“র”—ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা নিয়ে রাজনীতিতে গুজব,... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিশ্চিত থাকেন জামায়েত ইসলাম এবার সরকার গঠন করবে

লিখেছেন সূচরিতা সেন, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৪২


আমাদের বুঝ হওয়ার পর থেকেই শুনে এসেছি জামায়েত ইসলাম,রাজাকার আলবদর ছিল,এবং সেই সূত্র ধরে বিগত সরকারদের আমলে
জামায়েত ইসলামের উপরে নানান ধরনের বিচার কার্য এমন কি জামায়েতের অনেক নেতা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×