তালহা বিন নজরম্নল
বিশ্ব মাতিয়ে গেল বিশ্বকাপের আরেকটি আসর। ফের চার বছরের অপেৰা। জার্মানিতে যখন চলছিল বিশ্বকাপ 2006 এর জমজমাট আসর, তখনই কিন্তু দৰিণ আফ্রিকায় চলছিল বিশ্বকাপ আয়োজনের জোর প্রস্তুতি। হঁ্যা, 2010 সালের বিশ্বকাপ ফুটবলের আসর বসবে দৰিণ আফ্রিকায়। আফ্রিকা মহাদেশে ওটাই হবে প্রথম বিশ্বকাপ আসর। আফ্রিকার এ দেশটি 1998 ও 2002 বিশ্বকাপে খেললেও এবার তারা পেরোতে পারেনি বাছাই পর্বের গণ্ডি। 2010 এ তারা খেলবে স্বাগতিক হিসেবে। নিজেদের মাটিতে তারা আগের সব ব্যর্থতাকে মুছে ফেলতে চাইবে সন্দেহ নেই। 2003 এ বিশ্বকাপ ক্রিকেট আয়োজন করে সফলতার মুখ দেখতে পারেনি ক্রিকেটের এই শক্তিশালী দলটি। বিশ্বকাপ ফুটবল প্রস্তুতিতে এ বিষয়টিও তাদের মাথায় প্রবলভাবে কাজ করবে তা বলার অপেৰা রাখে না। এ লেখাটি যখন তৈরি হচ্ছে তখন জার্মান বিশ্বকাপের প্রথম পর্বও শেষ হয়নি। প্রতিটি দলের দু'টি করে খেলাও শেষ হয়নি। আর এ প্রতিবেদন যখন তোমাদের হাতে তখন অল্প কয়েকটি ম্যাচ বাকি থাকলেও থাকতে পারে। 9ই জুলাই শেষ হওয়ার কথা বিশ্বকাপ ফুটবল 2006। 2002 এ এশিয়ার মাটিতে যে বিশ্বকাপের আসর বসেছিল তার থেকে এবারের আসরের শুরম্নটা অন্যরকম ছিল। আলোড়ন জাগানো তেমন কিছু না থাকলেও হতাশ করার মতো কিছু ছিল না। প্রথম রাউন্ডটা অনত্দত! চমকহীন থাকবে বলে মনে হয়। কারণ দু'টি ম্যাচ শেষেই কয়েকটি দল নিশ্চিত করে ফেলে দ্বিতীয় রাউন্ডে খেলা।
এবারের আসরের শুরম্ন থেকে যাদের ফেভারিট মনে করা হয়েছিল তাদের মধ্যে জার্মানি, ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা, ইংল্যান্ড ও হল্যান্ড খুব সহজেই দ্বিতীয় রাউন্ডে চলে যায়। তবে ব্রাজিলের খেলা হতাশ করে সবাইকে। সাবেক চ্যাম্পিয়নদের মধ্যে ফ্রান্স প্রথম দুই ম্যাচে জয়ের মুখ দেখতে পারেনি। 1998 সালে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর 2002 এ প্রথম পর্ব থেকেই বিদায় নেয় তারা। 3 ম্যাচে 2টি হারে ও 1টি ড্র করে। কোন গোলই করতে পারেনি সেবার। এবারও প্রথম ম্যাচে তারা গোল করতে ব্যর্থ হয়। কোন মতে ড্র করে সুইজারল্যান্ডের সঙ্গে। পরের ম্যাচে দৰিণ কোরিয়ার বিপৰে প্রথম গোলের দেখা পায়। গোলটি করেন থিয়েরি হেনরি। তবে জয়ের জন্য ওই গোলটি যথেষ্ট ছিল না। কারণ খেলার শেষ দিকে দৰিণ কোরিয়ার পার্ক জিসুং গোল করে খেলায় সমতা নিয়ে আসেন। ফলে এ লেখা পর্যনত্দ ফ্রান্সের দ্বিতীয় রাউন্ডে ওঠাই অনিশ্চয়তার মধ্যে। এবারের বিশ্বকাপে বেশ কয়েকজন খেলোয়াড় নজরকাড়া নৈপুণ্য দেখিয়ে তারকা খ্যাতি অর্জন করেছেন। এদের মধ্যে আর্জেন্টিনার রিকুয়েলম, স্যাভিওলা, ব্রাজিলের কাকা, জার্মানির পডোলস্কি প্রমুখ। ছোট দলগুলোর মধ্যে ইকুয়েডরের অগাস্টিন দেলগাদো ও টেনেরিও অসাধারণ খেলেছেন। বিশ্বসেরা খেলোয়াড় হয়েও রোনালদো, হেনরি, রোনালদিনহো, মাইকেল ওয়েন, শেভচেনকো, নেদভেদ হতাশ করেছেন। জিদান, দ্রগবা, ইয়র্ক ইসিয়েন প্রমুখ ভাল খেললেও দলের ব্যর্থতার জন্য তাদের নৈপুণ্য ঢাকা পড়ে যায়।
বিশ্বকাপে এবার কাদের খেলা নজর কাড়লো সবার? উনিশ-কুড়ির এদিক ওদিকের রবিনহো, মেসি, রম্ননি, তেভেজ ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো, নাকি তিরিশের আশপাশের কাফু, জিদান, ফিগো, স্যাভিওলা, নেদভেদ, শেভচেঙ্কোদের দিকে পড়বে ভোট? জার্মানির মাঠে এখনও পর্যনত্দ যা চলছে, তা থেকে বলা যেতেই পারে উত্তরটা বোধহয় একেবারেই সহজ নয়। মেসি, তেভেজদের পাশে ফিগো, স্যাভিওয়ালারা নজর টানছেন। তবে ফিফার দেয়া জার্মানি বিশ্বকাপের সংখ্যাতত্ত্ব বলছে এবার 32টি দেশের যে 736 জন ফুটবলার সোনার বুটের লড়াইয়ে নেমেছেন, তাদের গড় বয়স 27 বছর 4 মাস। এর থেকে হয়তো ফুটবলারদের পরিণত হয়ে ওঠার বয়সটা কিছুটা হলেও আন্দাজ করা যাবে। বয়সের গড়ে এবারের ফুটবল মহাযজ্ঞে সব থেকে সিনিয়র তিনটি টিম পাবলো নেদভেদের চেকপ্রজাতন্ত্র, জিনেদিন জিদান, থিয়েরি অঁরিদের ফ্রান্স এবং বিশ্বকাপে অভিষেক ঘটা ব্রায়ান লারার দেশ ত্রিনিদাদ ও টোবাগো। তিনটি দলেরই গড় বয়স 29 বছর 1 মাস। অন্যদিকে বিশ্বকাপে অভিষেককারী আর এক দেশ ঘানা এবারের সবচেয়ে তরম্নণ দল, গড় বয়স 25 বছর দু'মাস। টুর্নামেন্টের সব থেকে কম বয়সী পেস্নয়ার অবশ্য ইংল্যান্ডের থিও ওয়ালকট, উদ্বোধনের দিন যার বয়স ছিল 17 বছর 85 দিন। অন্যদিকে সব থেকে বষর্ীয়ান ফুটবলার তিউনিসিয়ার গোলরৰক আলি বোউমনিজেল, যার বয়স 40 বছর আড়াই মাস। এবার জার্মানিতে সব থেকে অভিজ্ঞ ফুটবলারের নামটা কাফু। ব্রাজিল অধিনায়ক এ পর্যনত্দ তিনটি ফাইনালসহ খেলেছেন বিশ্বকাপের 17টি ম্যাচ। বিশ্বকাপে সব থেকে বেশি, 25টি ম্যাচ খেলার রেকর্ডের অধিকারী এখনও জার্মানির বিশ্বকাপ জয়ী অধিনায়ক লোথার ম্যাথায়ুস। 68 বছর বয়সে সব থেকে প্রবীণ টোগোর বিতর্কিত কোচ অটো ফিস্টার, সব থেকে নবীন ডাচ কোচ মার্কো ভ্যান বাসত্দেন, গত 11ই জুন নেদারল্যান্ডসের প্রথম ম্যাচের দিন যিনি 42 বছরে পড়েছেন। তবে বিশ্বকাপে সব থেকে বেশি ম্যাচ খেলেছেন একমাত্র জার্মান কোচ জার্গেন কিন্সমান। বিশ্বকাপের 17 ম্যাচে কিন্সমানের গোলের সংখ্যা 11। জার্মানিতে শেষ পর্যনত্দ যতজন তারকাই আলো ছড়ান না কেন সকলের মধ্যে সব থেকে 'ওজনদার' ফুটবলারের তকমাটা ইতিমধ্যেই চেকপ্রজাতন্ত্রের জান কোলারের ঝুলিতে। ওজন যার 100 কিলোগ্রাম। উচ্চতাতেও তিনি বাকি সকলকে ছাড়িয়ে সার্বিয়া ও মন্টিনিগ্রোর নিকোলা জিজিকের কাঁধে কাঁধে। দুই ফুটবলারই 2.02 মিটার লম্বা। অন্যদিকে 59 কিলোগ্রামের সব থেকে 'ফুরফুরে' খেলোয়াড় সৌদি আরবের আল শলহউব। ইকুয়েডরের 1.62 মিটার উচ্চতার ক্রিশ্চিয়ান লারা সব থেকে বেঁটে। ওজন আর ফর্ম নিয়ে বিতর্ক যতই বাড়ুক, গোল করায় সবার থেকে এখনও এগিয়ে সেই রোনালদোই। বিশ্বকাপে তার মোট গোল 12। অন্যদিকে, 736 জন খেলোয়াড়ের মধ্যে ফুটবলের সর্বোচ্চ আসরে হ্যাটট্রিক করার সম্মান রয়েছে শুধুমাত্র পতর্ুগালের পাওলেটা (2002-এ পোল্যান্ডের বিরম্নদ্ধে) এবং জার্মানির মিরোসস্নাভ কোজের (বিশ্বকাপ শুরম্নর ন'দিন আগে সৌদি আরবের বিরম্নদ্ধে) এদিকে, একটা ব্যাপারে ইতিমধ্যেই রেকর্ড করে ফেলেছে 2006-এর জার্মানি। এবারের টুর্নামেন্টে বিশ্বকাপ অভিষেক ঘটেছে ছ'টি দেশের অ্যাঙ্গোলা, আইভরিকোস্ট, ঘানা, টোগো, ত্রিনিদাদ ও টোবাগো এবং ইউক্রেনের। 1930 এবং 1934 সালের প্রথম এবং দ্বিতীয় বিশ্বকাপের পর থেকে এই প্রথম এতগুলো নতুন দলকে একসঙ্গে কোনও বিশ্বকাপের আসরে দেখা গেল।
ফিফা ওয়ার্ল্ড কাপ ডট কম
ফিফা বিশ্বকাপের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট ঠিকানা হচ্ছে http://www.fifaworldcup.com। ইন্টারনেটের চরম উৎকর্ষতার যুগে বিশ্বব্যাপী মানুষ ফুটবলের খবর জানতে প্রতিনিয়ত এ ওয়েবসাইটে যাচ্ছে। এ ওয়েবসাইটে বিশ্বকাপ সংক্রানত্দ নানা ধরনের তথ্য ও ছবি পাওয়া যায়। বিশ্বকাপ শুরম্নর প্রথম সপ্তাহে 120 কোটি পাতা দেখেছে সারা পৃথিবীর ইন্টারনেট ব্যবহারকারীরা। এর মধ্যে 12ই জুন 62 লাখ ব্রাউজার এ ওয়েবসাইটে প্রবেশ করেন।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



