somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

অন্তু নীল
মস্তিষ্কের ভিতর আমার এই ক্ষুদ্র জীবনটিকে আরো অনেক বেশি সুন্দর রুপে যাপন করি। স্বপ্ন দেখি, স্বপ্ন দেখতে ভালোবাসি, আর ভালোবাসি স্বপ্ন দেখাতে । জীবন উপভোগই জীবনের একমাত্র উদ্দেশ্য।

-গুরুদেবের সাথে চা-আলাপ -:)

১০ ই জুন, ২০১৬ রাত ১১:১৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



কদিন আগে ক্যাম্পাসে মামার টঙ দোকানে বসে লেবু চা পান করছিলাম। এর মধ্যে কোত্থেকে যেন হঠাৎ গুরুদেবের আগমন। গুরুদেব মানে আমাদের বিশ্বকবি “রবিন্দ্রনাথ ঠাকুর”। লম্বা আলখাল্লা, চুল দাড়ি সব আগের মতই ঠিকঠাক, কিন্তু হাতে একটা লম্বা মাঠা বাঁশ। আমি বেশ ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলাম। কি বলব না বলব ভেবে শেষে বসতে বললাম। আরো এক কাপ চা অর্ডার করে আমি গুরুদেব কে জিজ্ঞেস করলাম,

-তা গুরুদেব আপনি হঠাৎ এখানে, এই অবস্থায় ? আপনাকে তো বেশ চিন্তিত দেখাচ্ছে। কোনো সমস্যা ?

আমার প্রশ্নের জবাব দেওয়ার আগে তিনি মামাকে উদ্দেশ্য করে বললেন,

-হ্যারে হারাধন, চায়ে একটু চিনি কম দিস। সকাল থেকে টেনশনে সুগারটা একটু বেড়েছে।

এরপর আমি আবার জিজ্ঞেস করলাম,
-গুরুদেব বললেন না যে, আপনার হঠাৎ আগমনের হেতু। তাছারা টেনশনই বা কিসের আপনার? ওখানে তো বেশ ভালোই থাকার কথা।
তিনি বললেন,

-ওখানে আর ভালো থাকি ক্যামনে রে। তোরা ভালো থাকতে দিলি কই !

-কেন গুরুদেব, কী হয়েছে?

-(আওয়াজ উচু করে) কী হয়েছে; কী হয়নি সেটা বল ! রোজকার মত আজ সকালেও প্রাকৃতিক কাজ কম্ম সেরে ল্যাপটপ টা নিয়ে বসলুম। ভাবলুম একটু ইউটিউবে ঢুকে দু’চারটে গান-টান শুনি। কিন্তু না, তা আর হল কই। এক ভিডিওতে দেখলুম, কোথাকার কোন এক ছোকরা চোখে সানগ্লাস লাগিয়ে হাতে মাইক্রোফোন নিয়ে বসুন্ধরা সিটি কমপ্লেক্সে ঘোরাঘুরি করছে। তার সাথে একজ ক্যামেরা ম্যানও আছে।

- হ্যা, তো কী হয়েছে? শুটিং টুটিং করবে হয়তো।

-আরে না, শুটিং টুটিং কিচ্ছু না। ও গিয়েছে সাক্ষাতকার নিতে। আর সাক্ষাতকার নিতে গিয়ে কী বলছে জানিস ?

-কী বলছে?

-বলছে, “আমি একজন রবীন্দ্র গবেষক। তাঁর লেখা গানগুলোর উপর আমি একটা গবেষণা চালাচ্ছি।”

-হ্যা, ঠিকি তো আছে গুরুদেব। আপনার লেখা নিয়ে তো দেশে বিদেশে বিস্তর গবেষণা হচ্ছে। এ তো আপনার ভালো লাগার কথা।

-হ্যা, তা বটে। কিন্তু ঐ হতচ্ছারা কী করছে জানিস, ও বিভিন্ন লোকজনের কাছে যাচ্ছে আর জিজ্ঞেস করছে, “আপনি কি রবীন্দ্রনাথের ‘রয়েছি নিশির পানে চাহিয়া’ গানটি শুনেছেন ?” আর লোকজনও তাতে বেশ সায় দিচ্ছে। অনেকে বলছে, ‘রয়েছি নিশির পানে চাহিয়া’ গুরুদেবের তো বেশ বিখ্যাত গান। কেউ আবার বলছে, ‘রয়েছি নিশির পানে চাহিয়া’ তো আমার খুঊব খুঊব খুঊব প্রিয় গান, ওটা না শুনলে তো রাতে আমার ঘুমই আসেনা। আর একজন তো গানটা গেয়েই শোনাল,
“রয়েছি নিশির পানে চাহিয়া
তুমি মেলিয়া রাখ গো হিয়া”।

-হ্যা তো গুরুদেব, ঠিকিই তো আছে। ঐ গানটা তো বেশ ভালো, আর কথাগুলোও কি চমতৎকার লিখেছেন। সত্যিই আপনি বসস ।

-তুইও বলছিস সে কথা ? শেষ পর্যন্ত তুইও ওদের কাতারে চলে গেলি !

-কেন গুরুদেব, আমি আবার কী দোষ করলাম ? আমি তো আপনার অনেক বড় ফ্যান।

-তুইও ওদের মত বলছিস আর বলছিস কী দোষ করলাম !
ওরে হতচ্ছারা, ‘রয়েছি নিশির পানে চাহিয়া’ শিরোনামের কি কোনো গান আমি লিখেছি ? বাপের জম্মেও তো আমি ঐরকম কোনো গান লিখিনি।

-অ্যা ! সেকি গুরুদেব, লিখেন নি ? তাহলে সবাই যে বলছে...?

-ওরা সবাই গুল মারছে। মিথ্যে বলে নিজেকে বাঙালি সংস্কৃতি মনা হিসেবে জাহির করার চেষ্টা করছে। আসলে ঐ শিরনামের কোনো গানই আমার নেই।

-তাইলে ঐটা কার গান ?

-হ্যা, আমিও খুজছিলুম ঐটা কার গান। শেষমেশ গুগলে সার্চ দিয়ে জানতে পারলুম, ঐটা একটা ইংরেজি গানের বাংলা অনুবাদ।

-কোন গানটা গুরুদেব ?

-ঐ যে, ‘জরিনার সোকেছ’ না ‘জেনিফার লোপেজ’ নামক মেয়েটার গানটা, “Waiting for tonight” এর বাংলা ভার্সন “রয়েছি নিশির পানে চাহিয়া”।

আমি সাথে সাথে জিহব্বায় কামর দিলাম। আমি কখনই ভাবিনি অন্যদের সুরে সুর মিলিয়ে এভাবে গুরুদেবের হাতে ধরা খাব। সাথে সাথে গুরুদেবের কাছে ক্ষমা চাইলাম। আর বললাম,
-গুরুদেব আমাকে ক্ষমা করবেন। আমি সত্যিই আপনার অনেক বড় একজন ফ্যান। আমি আপনার সবগুলো রচনাই পড়ার চেষ্টা করছি।

এবার গুরুদেব আমার দিকে আর চোখে তাকালেন আর বললেন,
-সত্যিই তুই যদি আমার অনেক বড় ফ্যান হোস, তাহলে লেখাটার শুরুতেই আমার নাম লিখতে ভুল করেছিস কেন ? রবীন্দ্রনাথের জায়গায় “রবিন্দ্রনাথ” লিখেছিস কেন ? তোর এই লেখাটা যারা পড়ল, শুরুতেই তো তোকে কয়েক ডজন ......দিয়েছে রে হতচ্ছারা। নে, এবার হজম কর। অবশ্য, সবার মাথায় সেটা খেলবেও না।

গুরুদেব এবার ঝারলেন (বিরক্ত হয়ে), তোরা কবে ভালো হবি বল তো ? সবসময় চাপার উপর থাকিস, নিজেকে জ্ঞানী বলে জাহির করার চেষ্টা করিস। আমি কী করিনি তোদের জন্য বল ! বাংলাটাকে বিশ্বের দরবারে নিয়ে গেলুম। ভাবলুম আমার দায়ীত্ব এবার শেষ। প্রথম নোবেলটা পর্যন্ত এনে দিলুম। সেটাও তোরা চুরি করে খেলি !

আমি মাথা নিচু করে রইলাম। কারণ মাথা উচু করে রাখার মত অবস্থা তখন ছিল না আমার। অনেকক্ষন নীরব রইলাম আমি। মুখ দিয়ে কোনো কথা বেরুলো না। অবশেষে গুরুদেবই নিরবতা ভেঙ্গে দিলেন আর বললেন,

“এবার তবে আসলুম রে, দেখি ঐ হতচ্ছারাটাকে খুজে পাই কি না।”

এই বলে গুরুদেব হাতের বাঁশটাকে শক্ত করে ধরলেন আর যেতে যেতে একটা লম্বা নিঃশ্বাস ফেলে বিরবির করে বললেন,

“ষোলো কোটি জনগনের হে মুগ্ধ জননী
রেখেছো ডিজিটাল করে, মানুষ কর নি”।
.........................................................

এরপর সকালে ঘুম ভাঙ্গতেই নাস্তা সেরে আমি সোজা চলে গেলাম বইয়ের দোকানগুলোর দিকে। গিয়ে প্রমিত বাংলা বানানের একটা বই কিনে নিয়ে আসলাম। আজ হতে শুদ্ধ বাংলা চর্চার অভিজান শুরু হল আমার।

এ যাত্রায় তো গুরুদেবের হাত থেকে বেচে গেলাম। ভবিষ্যতে যেন গুরুদেবের বাঁশের কবলে পরতে না হয়। ;)

সর্বশেষ এডিট : ১২ ই জুন, ২০১৬ রাত ১২:১৯
৯টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বরিষ ধরা-মাঝে শান্তির বারি

লিখেছেন বিষাদ সময়, ০৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:১৬





মাসের আধিক কাল ধরে দাবদাহে মানব প্রাণ ওষ্ঠাগত। সেই যে অগ্নি স্নানে ধরা শুচি হওয়া শুরু হলো, তো হলোই। ধরা ম্লান হয়ে, শুষ্ক হয়, মুমূর্ষ হয়ে গেল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=নীল আকাশের প্রান্ত ছুঁয়ে-৭ (আকাশ ভালোবেসে)=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:১৯

০১।



=আকাশের মন খারাপ আজ, অথচ ফুলেরা হাসে=
আকাশের মন খারাপ, মেঘ কাজল চোখ তার,
কেঁদে দিলেই লেপ্টে যাবে চোখের কাজল,
আকাশের বুকে বিষাদের ছাউনি,
ধ্বস নামলেই ডুবে যাবে মাটি!
================================================
অনেক দিন পর আকাশের ছবি নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

পানি জলে ধর্ম দ্বন্দ

লিখেছেন প্রামানিক, ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৫২


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

জল পানিতে দ্বন্দ লেগে
ভাগ হলোরে বঙ্গ দেশ
এপার ওপার দুই পারেতে
বাঙালিদের জীবন শেষ।

পানি বললে জাত থাকে না
ঈমান থাকে না জলে
এইটা নিয়েই দুই বাংলাতে
রেষারেষি চলে।

জল বললে কয় নাউযুবিল্লাহ
পানি বললে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সমস্যা মিয়ার সমস্যা

লিখেছেন রিয়াদ( শেষ রাতের আঁধার ), ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৭

সমস্যা মিয়ার সিঙ্গারা সমুচার দোকানে প্রতিদিন আমরা এসে জমায়েত হই, যখন বিকালের বিষণ্ন রোদ গড়িয়ে গড়িয়ে সন্ধ্যা নামে, সন্ধ্যা পেরিয়ে আকাশের রঙিন আলোর আভা মিলিয়ে যেতে শুরু করে। সন্ধ্যা সাড়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

এই মুহূর্তে তারেক জিয়ার দরকার নিজেকে আরও উন্মুক্ত করে দেওয়া।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৬ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:২৬


তারেক জিয়া ও বিএনপির নেতৃত্ব নিয়ে আমি ব্লগে অনেকবারই পোস্ট দিয়েছি এবং বিএনপি'র নেতৃত্ব সংকটের কথা খুব স্পষ্টভাবে দেখিয়েছি ও বলেছি। এটার জন্য বিএনপিকে সমর্থন করে কিংবা বিএনপি'র প্রতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×