somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অনিশ্চয়তা তত্ত্ব ০৩

১৪ ই মে, ২০১২ রাত ১০:২৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

চাষা রাদারফোর্ড " এই জীবনে শেষ বারের মতো ক্ষেতের আলু তুললাম" বলে বাক্স গুছিয়ে যখন ইংল্যান্ডের জাহাজে উঠলেন যখন সে বছরই ক্যামব্রীজ বাইরের ছাত্রদের গবেষণার সুযোগ করে দিয়েছিলো, পূর্বে ক্যাভেন্ডিস ল্যাবে শুধুমাত্র ক্যামব্রীজের শিক্ষার্থী ছাড়া অন্য কেউ গবেষণার সুযোগ পেতো না। রাদারফোর্ডের শিক্ষক জে জে থম্পসনের অনুরোধে ট্রিনিটি কলেজে শিক্ষার্থী জীবন শুরু হয়েছিলো রাদারফোর্ডের।

রাডারফোর্ড রেডিও ট্রান্সমিশন ডিটেকটর তৈরি করেছিলেন, ক্যামব্রীজে সে গবেষণাই করছিলেন, রেডিও ট্রান্সমিশন ডিটেক্টরের পাল্লা বেড়ে মাইলখানেক হওয়ার পর ক্যামব্রীজ আর লন্ডনে বিভিন্ন ডিনার পার্টিতে ঘনঘন দাওয়াত পেতেন রাদারফোর্ড, সেখানে তাকে রেডিও ওয়েভ ট্রান্সমিশন ডিটেকটরের কার্যকারিতা দেখাতে হতো। সাদামাটা রেডিও ওয়েভ মোটা মোটা দেয়াল ভেদ করে চলে যেতে পারে এই অভুতপূর্ব দৃশ্য দেখে আমোদিত হতো উপস্থিত অতিথিরা, কিন্তু এইসব ডিনার পার্টিতে উপস্থিত মহিলাদের পোশাক নিয়ে চাষা রক্ষণশীল রাদারফোর্ডের আক্ষেপের শেষ ছিলো না, মোটাদাগে তাদের অর্ধনগ্নই বলতেন তিনি।

এমনই সময় উইলিয়াম রন্টজেন এক্স রে আবিস্কার করলেন, তার হাতের এক্স রে ইমেজের প্রতিচ্ছবি প্রায় সকল নামজাদা ইউনিভার্সিটিতে পাঠানো হয়েছিলো। এ সময়েই এক্স রে বিষয়ে ইউরোপের গবেষণাগারে আগ্রহ বৃদ্ধি পায়। প্রতিপ্রভ স্ফটিক নিয়ে গবেষণা করার পারিবারিক প্রথা ছিলো বিক্যুরেল পরিবারে। তার দাদা, বাবার কাছ থেকে উত্তরাধিকার সূত্রে তিনিও ইউরেনিয়ামসমৃদ্ধ একটি প্রতিপ্রভ স্ফটিক পেয়েছিলেন।

এক্স রের জনপ্রিয়তায় তিনিও প্রতিপ্রভ স্ফটিক থেকে দুর্ঘটনাক্রমে তড়িৎচুম্বকীয় বিকিরন আবিস্কার করেন। তার এই আবিস্কার এক্স রে উন্মাদনায় ভোগা ইউরোপে তেমন আলোড়ণ তৈরি না করলেও মেরি কুরি এবং পিয়েরি কুরিকে আলড়িত করেছিলো। তারা আকরিক পরিশুদ্ধ করে প্রথমে পোলোনিয়াম এবং পরে রেডিয়াম আবিস্কার করলেন, উভয় মুৌলই ইউরেনিয়ামের চেয়ে অনেক বেশী তেজস্ক্রিয়। তারা এ আবিস্কারের জন্য দুইবার নোবেল পেয়েছেন, এবং পরবর্তীতে তাদের কন্যাও নোবেল পেয়েছেন।

১৮৯৫ থেকে ১৮৯৮ এর ভেতরে দুর্ঘটনাক্রমে তেজস্ক্রিয়তা এবং এক্স রে বিকিরণ আবিস্কৃত হয়, রাদারফোর্ডও তেজস্ক্রিয়তা বিষয়ে আগ্রহী হয়ে উঠেন। রাদারফোর্ড আর জে জে থম্পোসনের অনুমাণ ছিলো ক্যাথোড রে টিউবে গ্যাস আয়নিত হয়, আয়নিত গ্যাসকে তড়িৎক্ষেত্রে রাখলে সেটার বিচ্যুতি ঘটবে এমন আশা নিয়ে পরীক্ষা করে দেখা গেলো চৌম্বকক্ষেত্রে আয়নিত গ্যাস বিচ্যুত হয়, পরবর্তীতে গ্যাসের গতির দিকে তড়িৎক্ষেত্র স্থাপন করে দেখা গেলো তড়িৎ ক্ষেত্রেও আয়ন প্রবাহকে বিচ্যুত করতে পারে- তড়িৎ চৌম্বকীয় বলের পরিমাণ সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা থাকায় থম্পসন ১৮৯৮ সালেই ক্যাথোড রে টিউবের আয়নের ভর এবং আধানের অনুপাত নির্ণয় করলেন এবং দেখা গেলো এ অনুপাত হাইড্রোজেন আয়নের ভর ও আধানের অনুপাতের হাজার গুণ বেশী। থম্পসন ঘোষণা করলেন এটাই পরমাণুর মূল উপাদান, অসংখ্য ইলেক্ট্রন একত্রিত হয়ে একটি পরমাণু গঠন করে এবং এদের গঠনের ধাঁচের উপর পরমাণুর বর্ণালী নির্ভর করে।

থম্পসনের এ অনুমাণ পরবর্তীতে রাদারফোর্ড ভ্রান্ত প্রমাণ করেন, তিনি আবিস্কার করেন প্রতিটি পরমাণুর কেন্দ্রে একটি ধনাত্মক আধানবাহী নিউক্লিয়াস বিদ্যমান। কিন্তু থম্পসনের এই ঘোষণা এক ধরণের জাতীয়তাবাদী বিতর্ক তৈরি করে, থম্পসনের পরমাণু মডেলের তীব্র বিরোধিতা করেন উইলহেম ওসওয়াল্ড, এ সময় থম্পসনকে সমর্থন করেন লর্ড কেলভিন এবং ফিটজেরাল্ড। তারা জার্মানদের নিস্প্রাণ বিজ্ঞান চর্চায় ব্রিটিশ বিজ্ঞানীরা প্রাণের স্পন্দন নিয়ে এসেছে এমনভাবেই থম্পসনের মডেলকে উপস্থাপন করেন।

থম্পসনের পরমাণু মডেলের অনেক রকমের খামতি ছিলো, রাদারফোর্ড, তার শিক্ষকের মতোই তীক্ষ্ণ মেধাবী বিজ্ঞানী ছিলেন, তেজস্ক্রিয়তা নিয়ে গবেষণা করবার সময় তিনি আবিস্কার করলেন একটি তেজস্ক্রিয় মৌল মূলত তিন ধরণের বিকিরণ দেয়, আলফা, বিটা এবং গামা বিকিরণ- আলফা বিকিরণে প্রাপ্ত কণিকাকে সংরক্ষণ করে দেখা গেলো এটা মূলত হিলিয়াম। সে সময়েই পরমাণুর আভ্যন্তরীণ গঠন বিষয়ে এক ধরণের প্রাথমিক ধারণা বিজ্ঞানীদের ভেতরে দানা বাধতে থাকে, কিন্তু কেউই আসলে নিশ্চিত করে মডেলটা তৈরি করতে পারছিলেন না।

তেজস্ক্রিয়তা নিয়ে কুরি পরিবারের নিয়মতান্ত্রিক গবেষণায় জানা গেলো তেজস্কিয়তার পরিমাণ( কোনো নির্দিষ্ট সময়ে একটি তেজস্ক্রিয় মৌল কি পরিমাণ বিকিরণ দিবে) নির্ধারণ করে সে মৌলটির পরিমাণ- একটি নির্দিষ্ট সময় পর তেজস্ক্রিয়তার পরিমাণ কমে যায়, একই সাথে মৌলটির ভরও পরিবর্তিত হয়। তেজস্ক্রিয়তার উৎস কিংবা কারণ সম্পর্কে আলাদা করে কিছু বলতে না পারলেও তারা তেজস্ক্রিয় মৌলের হাফ লাইফের ধারণাটা প্রতিষ্ঠিত করেন।

একই সাথে পদার্থবিজ্ঞানের জগতে পুনরায় ঢুকে যায় অনিশ্চয়তা- কোন মৌলটি তেজস্ক্রিয় বিকিরণ করবে সেটা কিভাবে নির্ধারিত হয়, পরীক্ষা বলছে একটি নির্দিষ্ট সময়ে অর্ধেক পরমাণুর তেজস্ক্রিয় বিকিরণ করবে কিন্তু কোন অর্ধেক মৌল এ বিকিরণ করবে সেটা নির্ধারণ করে কে? নিশ্চিত ভবিষ্যত বানী বিষয়ে পূর্বতন বিজ্ঞানীদের বিশ্বাসে তীব্র আঘাত আসলো এভাবেই। কখন কোন মৌলটি বিকিরণ করবে সেটাও নির্ধারিত নয়, কি কারণে বিকিরণ হবে সেটাও নির্ধারিত নয় কিন্তু সামগ্রীক ভাবে পরিমাণগত বিবেচনায় দেখা যাচ্ছে একটি তেজস্ক্রিয় মৌলের অর্ধেক পরমাণুই হাফ লাইফ শেষে তেজস্ক্রিয় বিকিরণ করছে।

রাদারফোর্ড এমন তেজস্ক্রিয় মৌল নিয়ে গবেষণা করছিলেন কানাডার ম্যাকগিল ইউনিভার্সিটিতে, সেখানে তিনি দেখলেন একটি তেজস্ক্রিয় মৌল কয়েক ধরণের তেজস্ক্রিয় বিকিরণ প্রদান করতে পারে, তিনি সেসবের আলাদা তালিকাও তৈরি করলেন।
পরবর্তীতে তিনি ম্যানচেস্টার ইউনিভার্সিটিতে অধ্যাপক হিসেবে যোগদান করেন। এবং আলফা কণিকার বিকিরণ দিয়ে পদার্থের গঠন পর্যবেক্ষণের পরীক্ষা শুরু করেন।

১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=এই গরমে সবুজে রাখুন চোখ=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১

০১।



চোখ তোমার জ্বলে যায় রোদের আগুনে?
তুমি চোখ রাখো সবুজে এবেলা
আমায় নিয়ে ঘুরে আসো সবুজ অরণ্যে, সবুজ মাঠে;
না বলো না আজ, ফিরিয়ো না মুখ উল্টো।
====================================
এই গরমে একটু সবুজ ছবি দেয়ার চেষ্টা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হালহকিকত

লিখেছেন স্প্যানকড, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:১২

ছবি নেট ।

মগজে বাস করে অস্পষ্ট কিছু শব্দ
কুয়াসায় ঢাকা ভোর
মাফলারে চায়ের সদ্য লেগে থাকা লালচে দাগ
দু:খ একদম কাছের
অনেকটা রক্তের সম্পর্কের আত্মীয় ।

প্রেম... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×