
পৃষ্টা ২৩-২৫
‘নন্দিরগাঁও আমার জন্ম হয়েছিল।’ বলে উদাসিনী রান এগিয়ে দিলে অপলকদৃষ্টে তাকিয়ে রাহীম বলল, ‘জানি না কেন আমার চোখ কানে কানে বলছে, মাংস নাড়াছড়া করেছিল।’
‘তুমি শিকার করেছ এবং আগুনের পাশে বসে আমি পুড়েছি। নির্ভয়ে খাও, আমি পেতনী নয়।’
‘সত্যি বলছ তো? আচ্ছা এক কাজ করি, ছোট দাদিকে এক রান খাওয়ালে জীবনে আর উলটা পালটা করবেন না।’
‘ধনেশের মাংস বুড়ির পেটে হজম হবে না।’
‘ওগো বুড়ি, আমার পেটে কাতুকুতু হচ্ছে কেন?’
‘আমি বুড়ি নাকি?’
‘ভুল হয়েছে। আমি বলতে চেয়েছিলাম, বাড়িরকাজ করার জন্য বাড়ি যেতে পারব? দয়া করে হ্যাঁ বলো।’
‘পানি পান করবে না?’
‘আগামীকালের গতকাল পানি পান করলে আমার বুকে গিঁট-গিরা লাগবে না।’ বলে রাহীম ঊর্ধ্বশ্বাসে দৌড়ে পাকঘরে প্রবেশ করে শিউরে বলল, ‘আম্মা গো আম্মা, আমি আর পাখি শিকার করব না।’
‘তোর কী হয়েছে?’ ব্যস্তকণ্ঠে বলে মা পাশে গেলে চোখ কপালে তুলে রাহীম বলল, ‘আকাশ থেকে ধনেশপাখি উড়ে এসেছিল গো আম্মা।’
‘এসব কী বলছিস?’
‘উদাসিনী বুড়ির গাঁটে গরম মশলা ছিল। হাত পা অবশ হয়ে আমার পেটের ভিতর আমলাচ্ছে। আমি আর শিকপোড়া খাব না।’
‘চাচি তোকে খোঁজাখুঁজি করছেন। দেখা কর যেয়ে।’
‘আম্মা গো, দাদির মুরগির ধারে পাশে আমি যাইনি।’
এমন সময় ছোট দাদি যেয়ে মুখ খিঁচিয়ে বললেন, ‘তিনটা মুরগি খুঁজে পাচ্ছি না।’
‘নিশ্চয় শিয়ালরা হজম করেছে। আমি আর তোমার মুরগি পাহারা দেব না।’ বলে রাহীম শিউরে উঠলে কিল দেখিয়ে দাদি বললেন, ‘আরেকটা উধাও হলে তোকে মজা শিখাব। যা, তোর দাদাকে ডেকে নিয়ে আয়।’
‘আরেকবার ফোকলা দাঁত কিড়িমিড়ি করলে দাঁতের ডাক্তার হব, আমার কথা অন্তরে গেঁথে রাখবে।’ পিছমোড় দিয়ে আড়চোখে তাকিয়ে নিম্নকণ্ঠে বলে রাহীম বেরিয়ে ছোটদাদাকে ডেকে পাকঘরে পাঠিয়ে সে তার কাজে ব্যস্ত হয়। পরদিন কলেজ কামাই করে বাউণ্ডুলের মত হাঁটে। প্রবীণ লোক তাকে ডেকে সকাতরে বললেন, ‘বাবা, খুব পিয়াস লেগেছে। পানি পান করাতে পারবে?’
‘নিশ্চয়।’ বলে রাহীম দৌড়ে খালিবাড়ি যেয়ে গাছে উঠে ডাব পেড়ে তেগ দিয়ে কেটে নিয়ে এগিয়ে দিয়ে বলল, ‘এই নিন পানি।’
ডাবের পানি পান করে বুক ভরে শ্বাস টেনে তার মাথায় হাত বুলিয়ে শান্তকণ্ঠে উনি বললে, ‘তোমার নাম কী?’
‘আব্দুর রাহীম।’
‘মোহাম্মাদ যোগ করলে আরও উত্তম হবে।’ বলে উনি মৃদু হাসলে রাহীম মাথা দুলিয়ে বলল, ‘জি, এখন থেকে মোহাম্মাদ যোগ করে বলব।’
উনি বুক ভরে শ্বাস টেনে হাস্যোজ্জল মুখে তার দিকে তাকিয়ে বললেন, ‘আমার পাশে বসো। তুমি সত্যি রাহীম। পিয়াসে গলা শুকিয়ে খুব কষ্ট হয়েছিল। আল্লাহ যেন তোমাকে রাহীম নামের উপযুক্ত করেন, তোমার জন্য এই দোয়া করব। জানো, রাহমান এবং রাহীম নামের মহিমায় আল্লাহ পাপীদেরকে ক্ষমা করেন এবং পূন্য করে পূণ্যবান হওয়ার সাধ্য দেন। পাপীর পাপের কারণ জগত ধ্বংস করেন না। বৃষ্টি বর্ষিয়ে প্রাণহীন মাটিতে প্রাণের সঞ্চার করেন। বাতাস সঞ্চালন করে জগতবাসিকে জীবিত রাখেন।’
‘আমিন। আপনার দোয়া যেন আল্লাহ কবুল করেন।’ বলে রাহীম কলমের দিকে তাকালে উনি বললেন, ‘নেবে?’
‘আপনি কী দিয়ে লিখবেন?’
‘আমার কয়েকটা আছে। মনে রাখবে, কালি ছাড়া কলম নিষ্প্রাণ। পানি ছাড়া কালি হয় না এবং কলম ছাড়া লেখা যায় না।’
‘আমাকে উপদেশ করুন।’
‘আল্লাহ সর্বজ্ঞানী, নবিজি সঃ জ্ঞানের শহর এবং আলি রাঃ হলেন সদর দরজা। আধ্যাত্মিক সাধনায় আল্লাহকে জানার এবং বোঝার চেষ্টা করলে তুমি গূঢ়তত্ত্ব জানতে পারবে। জানতে হলে পড়তে হয় এবং জ্ঞানীরা বিচক্ষণ। মনে রাখবে, প্রাণের চেয়ে ঈমানের মূল্য অনেক বেশি এবং বেঈমানরা দোজখে যাবে। সত্যাসত্য জেনে সত্য বলবে। মিথ্যা হল পাপের কারখানা। নমাজ কখনো ছাড়বে না। নমাজ সত্যবাদী বানায় এবং ভাগ্য সুপ্রসন্ন করে। নমাজিরা ধুলো-মুঠি ধরলে সোনা-মুঠি হয়। অন্যায় ভাবে সত্য এবং কারো অধিকার নষ্ট করবে না। পাপ করলে সাথে সাথে তওবা করবে। সামর্থ্য হলে হজে যাবে। মা বাবার মনে কখনো কষ্ট দেবে না। মা বাবার অবাধ্যরা আল্লাহর অবাধ্যতা করে। আত্মীয়স্বজনদের সাথে সম্পর্কচ্ছেদ করবে না। প্রতিবেশীর সাথে সদ্ব্যবহার করবে। অনাথ বিধবাকে আদর এবং সাহায্য করবে। মনে রাখবে, আল্লাহ সর্বক্ষণ আমাদের সাথে এবং সর্বত্র বিরাজমান। সবসময় সাত্ত্বিক ভাবে আল্লাহর নাম জপবে। কলম দিয়ে সর্বপ্রথম আল্লাহর আদেশ এবং নিষেধ কাগজে লেখা হয়েছিল। কলম দিয়ে এমন কিছু লিখবে না, যা পাঠে পাঠক তোমাকে মূর্খ এবং দাম্ভিক ভাববে। লোক-দেখানুর জন্য তুমি এমন কিছু করতে যেয় না, যার প্রতিফল ভোগ করতে তুমি নিজে অনিচ্ছুক।’
‘দয়া করে আমার জন্য দোয়া করবেন।’
তার মাথায় হাত বুলিয়ে সালাম করে হাঁটতে শুরু করে উনি বললেন, ‘আল্লাহর রং গ্রহণ করো, আল্লাহর রং-এর চাইতে উত্তম রং আর কার হতে পারে? এবং আমরা তাঁরই এবাদত করি।’
‘নিশ্চয় আমি আল্লাহর এবাদত করি।’ বলে রাহীম ডানে বাঁয়ে তাকিয়ে অলিক সুন্দর পাখি দেখে আশ্চর্যান্বিত হয় এবং মন্ত্রমুগ্ধের মত অনুসরণ করে নন্দিবনে যায়। তাকে দেখে গণ্ডা কয়েক টুনটুনি এককাট্টা হয়ে হট্টগোল শুরু করে। অপলকদৃষ্টে তাকিয়ে ডান চোখ টিপে নিশানা করে ঢিল মারলে মেয়েলি আর্তনাদ বাতাসে প্রতিধ্বনিত হয়। দৌড়ে যেয়ে এক কিশোরীকে মাটিতে বসে কাঁদতে দেখে হাসার চেষ্টা করে বলল, ‘আমি তোকে দেখিনি। এবারের মত ক্ষমা করে দিলে জীবনে আর টুনটুনি শিকার করব না।’
অনতিদূর থেকে আরেক কিশোরী হেঁকে বলল, ‘এই যূথী, কী হয়েছে?’
‘সাইদা জলদি আয়, এই কানা আমার পিঠে ঢিল মেরেছে।’ বলে যূথী দাঁত খিঁচিয়ে হাতের ইশারায় সাইদাকে ডেকে আঞ্চলিক ভাষায় বাখান শুরু করে। রাহীম মাথা দিয়ে ইশারা করে বলল, ‘এই মেনি, কানাকানি করার জন্য কানীর মত পিঠ পেতে দাঁড়িয়েছিলে কেন লো?’
‘ওরে কানার নাতি টেরা, আজ তোকে খট্টাশ ভুনে খাওয়াব। দাঁড়া, কানি দিয়ে বেঁধে খন্তা দিয়ে গুঁতিয়ে তোকে কানা করব।’ বলে যূথী দাঁত কটমট করলে রাহীম দাঁত বার করে হাসার চেষ্টা করে বলল, ‘আচ্ছা কানী বল তো শুনি, কাঁটাচুয়া এবং গন্ধগোকুলের মধ্যে পার্থক্য কী?’
‘অন্য গ্রহের ভাষা আমি বুঝি না।’ বলে যূথী মাথা নাড়লে সাইদা মাথা দিয়ে ইশারা করে বলল, ‘আচ্ছা পণ্ডিত বলো তো শুনি, নেংটি ইঁদুর দেখলে মাকলা হস্তী হম্বিতম্বি করে কেন?’
লজ্জিত হওয়ার ভান করে রাহীম বলল, ‘উত্তর বলতে পারব না আমার শরম লাগে গো।’
‘দূর বান্দর।’ বলে যূথী দাঁত কটমট করে। রাহীমের হাবভাবে সাইদা লজ্জিত হয়ে আড়চোখে তাকায়। রাহীম ভ্রূ দিয়ে ইশারা করে বলল, ‘কী হয়েছে?’
‘কিছু হয়নি। এই যূথী চল।’ বলে সাইদা পা বাড়ায়।
‘দাঁড়া আসছি।’ বলে যূথী পলকে ঢেলা হাতে নিয়ে রাহীমের দিকে ছুড়ে মারে। রাহীম দাঁত কটমট করে পিছু হেঁটে ঢিল মেরে ভোঁ দৌড়ে পালায়। যূথী মাটিতে বসে কাঁদতে শুরু করলে সাইদা মাথা নেড়ে বলল, ‘তোর গতরে একরতি শরম নেই।’
যূথী দাঁড়িয়ে দাঁতে দাঁত পিষে বলল, ‘বাগে পেলে তার কল্লা কেটে নগরঘণ্ট বানিয়ে খাব।’
‘ঠিকাছে, এখন ক্লাসে চল।’ বলে সাইদা যূথীর হাত ধরে ক্লাসে চলে যায়। দুপুরের ছুটিতে এক কোণে দাঁড়িয়ে যূথীর পিঠে মালিশ করে সাইদা বলল, ‘তোকে মেরেছিল কেন?’
‘জানি না। ওটা নিশ্চয় টেরা অথবা গবেট। টুনটুনি শিকার করা যায় নাকি? ইস গো, বিষে বিষম ব্যথা হচ্ছে।’
‘আবার আসলে দুই সই মিলে শিকারীকে শিকার করব। জানিস, আমার মন বলছে নিশ্চয় নতুন শিকারী, তাই তোর পিঠে ঢিল লেগেছিল। দক্ষ হলে টুনটুনির গায়ে লাগত।’
‘ওটা নিশ্চয় একচক্ষু টেরা, নইলে টেরার চালিশা লেগেছে। আর চিলশা না লাগলে রাতকানার নাতি নিশ্চয় রংকানা। কেকরের মত ডান চোখ টিপে আন্দাজ করেছিল।’ বলে যূথী মুখ ভেংচি দেয়। আড়চোখে তাকিয়ে সাইদা বলল, ‘হয়তো, ব্যথা কমেছে না আরও মালিশ করতে হবে?’
‘মায়, রেগেছিস কেন একচক্ষু টেরাকে কানা ডাকার কারণ নাকি?’
‘আসলে জিজ্ঞেস করব, কানা না রংকানা?’ বলে সাইদা ক্লাসে চলে যায়। যূথী দৌড়ে যেয়ে বেঞ্চে বসে। শিক্ষক প্রবেশ করে বললেন, ‘ঝটপট বাড়ির কাজ দাও।’
সাইদা দাঁড়িয়ে সবার আগে বাড়ির কাজ দিয়ে বসলে যূথী ইনিয়ে বিনিয়ে বলে, ‘সই তোর দুইখান পা ধরি, স্যারকে বুঝিয়ে বল গাতরাত নানার বাড়ি গিয়েছিলাম, বাড়ির কাজ করতে পারিনি।’
সাইদা মুখ ভেংচিয়ে বলল, ‘খামোখা বকাবকি করলে এমনি হয়।’
‘কিরা তিনসত্য করে বলছি আর কোনোদিন টেরাকে কানা ডাকব না। ওটা আসলে একচক্ষু টেরা।’ বলে যূথী কপালে আঘাত করে। স্যার ডেকে বললেন, ‘যূথী, বাড়ির কাজ কোথায়?’
যূথী চমকে উঠে অসহায়ের মত তাকালে সাইদা বলল, ‘স্যার, গতরাত ওর নানা নানী এসেছিলেন তাই বাড়ির কাজ করতে পারেনি। ওর নানী বার বার চা খান আর খামোখা ফাইফরমাশ করেন।’
‘ঠিকাছে, আগামীকাল বাড়ির কাজ না আনলে জালিবেতের বাড়ি হাতে পড়বে মনে থাকে যেন।’ বলে শিক্ষক খাতা নিয়ে ব্যস্ত হন। সাইদার হাত ধরে কৃতজ্ঞতার সাথে যূথী বলল, ‘ওটাকে আর কখনো টেরা ডাকব না।’
‘এই মাত্র ডেকেছিস। আমি আর তোকে বিপদ থেকে তরাব না।’ বলে সাইদা ব্যস্ত হয়। স্কুল ছুটি হলে যাওয়ার পথে থুতি হাতে ধরে সাইদাকে খুশি করে এবং এক সাথে হেঁটে দুজন মালীহার বাড়ির পাশে যেয়ে যূথী পাশের বাড়ি যায় এবং সাইদা মালীহার বাড়িতে যায়। খাবার খেয়ে দুজন বাড়ির কাজ সেরে চু কিত কিত খেলে। এমন সময় অত্যন্ত নিরীহ কিশোর যেয়ে বলে, ‘তোদের সাথে খেলতে চাই।’
এই বই দুই খন্ডে আমাজনে প্রকাশ করেছি
Poromatthio: Volume 1 (Bengali) Paperback – 21 Jun 2016
by Mohammed Abdulhaque (Author)
Product details
Paperback: 596 pages
First edition (21 Jun. 2016)
Language: Bengali
ISBN-10: 1534824596
ISBN-13: 978-1534824591
Product Dimensions: 12.7 x 3.4 x 20.3 cm
এক সাথে পড়তে চাইলে আমাজন থেকে কিনতে পারবেন
অথবা অনলাইন পড়তে চাইলে আমার সাইটে আছে
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে মে, ২০১৭ দুপুর ২:৫৭

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




