ভানাই হয়ে ঢেঁকিতে ধান ভেনেছিলাম মনানন্দে, মনে ছিল আশা তোলোহাঁড়িতে করব রান্না, তুষ হল বাধা আমার সন্তোষসাধনে, কষ্ট ছন্দে। তোলোতে তোলিত তুলা তোল্য হল তোশা হল না, তোষামোদে তোষিত হয় রে মন তোষামুদের নেই তুলনা। বয়স হয়েছে টুইয়ে টুইয়ে টোয়ানো সার, তোয়াজ করে না অখন তোলকে তোলন হয় খার। তোতলা মন তোড়ি চর্চা করে তোতার নাম শুকপাখি, তোড়-জোড়ে তোড়ই হলে রোষানলে জ্বলে আখি।
বুঝছি উপরর স্তবক আদায় কাঁচকলায় বেশি দুঃখর হইগিছে। ঠিকাছে বারোভূতরে সাড়ে বত্রিশভাজা কইরা বাদে আরকটা লেখমুনে, অখন একটু গপসপ করলাই, কিতা কইন? ও আইচ্ছা আপনারা কাহিনি পড়তা চায়রা, ঠিকাছে! আমি লেখরাম আপনারা মনোযোগ দিয়া পড়ৌকা। মনো আছে নি? হৌ যে সাম্যতা আর এজমালি সুখর লাগি সাত কানায় গাই দৌড়াইয়া কানা করছিল? ই গাইর আসল মালিক আছিল জাকির মিঞা তালুকদার। তার গাই কানা হইয়া আরক বাড়িত গেছিলগি আর গাই না পাইয়া মনর দুঃখে দেশান্তরী হইয়া হে লন্ডন আইচ্ছিল। ভালা রুজি-রোজগার করে আর বউ পুরি লইয়া সুখে শান্তিতে আছে, ই কথা সকলে কইন। সকলতা ঠিকঠাক আছে তবুও রাতবিরেতে তারে উড়শে কামরায়। আরামে ঘুমাইতো পারে না, উদলা গতরে বিছনাত গড়াগড়ি করে। ডাকর একটা কথা আছে, বেআরামে গতরো আরাম না পায়, সুখর ঘুম হারাম করার লাগি ম্যাঁও ধরাত যায়। ঔ দশা হইছে তার জানো শান্তি নাই। সারা রাত উজাগরি করে ভোরে যখন চোখের পাতা এক হয় তখন মেয়ে ডেকে বলল, ‘আব্বু! আমারে লইয়া স্কুলো যাইবা নি?’
জাকির চোখ কচলিয়ে ওঠে বসে মেয়েকে উরে টানে এবং কপালে চুমু দিয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে সস্নেহে বলল, ‘যাইমুনে গো ঝি। তুমি রেডি হও আব্বুই হাত মুখ ধইয়া আই।’
‘আম্মুই নাস্তা বানাইলিছইন। আপনে আউকা আমি কার্টুন দেখরাম গিয়া।’ বলে মেয়ে বসারঘরে চলে যায়। জাকির হাত মুখ ধুয়ে বসারঘরে প্রবেশ করে। তার স্ত্রী হেনা বেগম তাকে দেখেও না দেখার ভান করে কামরায় যেয়ে বিছানা তুলায় ব্যস্ত হয়। জাকির কষ্টে কাষ্ট হাসি হেসে স্ত্রীর চলে যাওয়া পথের দিকে তাকিয়ে চেয়ার টেনে বসে এবং চা নাস্তা খেয়ে মেয়েকে নিয়ে বেরিয়ে যায়। দুপুরে দরজা খুলে ঘরে ঢুকে স্ত্রীকে ডেকে বলল, ‘বউ গো, জলদি আমারে চাইরটা ভাত দে, ভুখে পেট কচলাইয়া মাথা ঘুরার।’
‘কিতা কইলায়! হারা বিয়ান কোয়াই আছলায়?’ হেনা খ্যাঁক করে উঠলে জাকির কপাল কুঁচকে বলল, ‘ভাতর কথা কইতেঔ আভাতির লাখান ঝাত করি উঠলে কিতার লাগি লো?’
‘ভাত সালান রান্ধা নায় এর লাগি ঝাত করি উঠছি। কোনতা করতায় নি?’
‘তোরে আমি কিতা করতাম লো, আইজ ই বেতমিজর লাখান মাতরে কিতার লাগি? তামচা মারিনো তমিজ হিকাইলিমো।’
‘এরে, আইজ কাইল তুমি বেশি মাতিলিরায়।’
‘বেশি মাতলে কিতা করবে?’ বলে জাকির মাথা দিয়ে ইশারা করলে হেনা ব্যস্তকণ্ঠে বলল, ‘কিতা করমো বাদ নিশা কইমুনে, অখন বাজার লইয়া আও গিয়া। আর হুনো! আমি একটু পরে বারে যাইমো, পারলে ভাত সালন রাইন্ধা থইয়।’
‘কিতা কইলে?’
‘কিতা কইতাম কিতা? আমার এপয়েন্টমেন্ট আছে, আমি যায়রামগি। দেরি হইলে সমস্যা হইব।’
‘দেখরায়নি তাই কিজাত বেটি হইছে? উবাইছ! জাগা থাকি ডুলিছ না, আইজ তোর চুল ছিড়তাম।’
‘তোমার নানায়ঔ আমার চুল ধরতা পারছইন্না আর তুমি আমার লগে বরফুটানি কররায়। বেশি মাইত্ত না! পুলিশ ডাকিলিমো।’ বলে হেনা চোখ পাকিয়ে ঘাড় বাঁকিয়ে তাকায়।
‘ও নানি তুমি কোয়াই গো? ইগুর মাত হুইন্না আমার মাথাত পুরপুরি করের। হেই! কে কোয়াই আছবে জলদি আও। ইগুরে আইজ কিলাইলিমো।’ বলে জাকির ডানে বাঁয়ে তাকিয়ে দু হাতে মাথা চেপে ধরে। হেনা মুখ ভেংচিয়ে আড় চোখে তাকিয়ে বলল, ‘ত্যানাত ধরার সাহস নাই আর তাইন আমারে কিলাইতা। যেতা মনে কয় ওতা, এর লাগি নাইন্নে তোমার কটাত দিতা গুতা!’
‘দেখরায়নি! গুণ্ডাইতর লাখান গুণ্ডিয়া মাতের।’
‘মাতমুনানি, আমি অখন ছলাকলা হিকছি। নাইন্নে কইতা জানলে মাইনষে হাপ লইয়া লেখায়, না জানলে কুইচ্ছা ডরায়। আমি অখন হাপ কুইচ্ছা চিনি।’
‘মেনি লো! আইজ তুই বেশি মাতিলি রে।’
‘বেশি মাতলে কিতা করবায়?’
‘কিতা করমো জানি না কিন্তু বেশি গোসা উঠলে কিল মারি চেগা করিলিমো।’ জাকির চোখ পাকিয়ে বললে হেনা দাঁত কটমট বলল, ‘চেত নাই কমজোরর জোয়ানি ক্ষার আর আনামাতি বই থাকি করি হকল বায়দি খাস্তা আমার।’
জাকির আঁতকে ওঠে বলল, ‘কিতা কইলে?’
‘কইছি, দাত নাই বাঘর তড়পানি সার, হাচা কথা হুনলে বুকত পড়ে ঢেকির পাড়।’
‘আইজ ইগু অত বাড় বাড়ছে কিতার লাগি বে? হেই! বেশি উদাইছ না লো কিলাইয়া তলপাটনি বানাইলিমো।’
‘উদাইতাম কিতা? আমি তোমার লাখান নায়। আমার শরীলো অখনো জোর চেত আছে, তুমি তো এক্কেবারে নিস্তেজ! হউ যে কইন, আড়িয়া বাছুরর তিড়িং বিড়িং বড়াই আর আম্বা, বাঘে ঝাপটা মারলে কয় হাম্বা।’ বলে হেনা মুখ ভেংচি দিলে জাকির রাগান্বিতকণ্ঠে বলল, ‘উবা লো! দুমাদুম কিলাইয়া আইজ তোরে বানাইমো দুম্বা।’
হেনা ব্যঙ্গোক্তি করে বলল, ‘হ্যেঁ! হারাদিন হম্বিতম্বি আর রাইত হইলে আখাম্বা! বিয়ার আগে কইছলায় দিবায় কিন্তু আইজও দিলায় না এক’ছা মলম্বা। মিস্টার মিঞা মুরব্বি, কোনতা কইলে খালি কও খাইতায় মোরব্বা।’
‘রম্ভোরু লো! আইজ তোরে কুসুম্ভা খাওয়াইমো, উবা।’
‘আমি তো উবাঔ আছি, তুমি তো ঢং চুটকি বুঝো না এর লাগি আইজ আরম্ভ করছি অষ্টরম্ভা!’
‘কিতা কইলে?’
‘কইছি আনামাতি বইয়া আমার কথা হুনো! জানলে ব্যাঙর ছাতার নাম কোঁড়া আর না জানলে ডোরা হাপর নাম বোড়া। চুপচাপ বই থাকো, পুলিশ ডাকলে তিন বিপদো পড়বায়।’ বলে হেনা মুখ ভেংচি দেয়। জাকির দু হাতে মাথা চেপে ধরে হেনার দিকে তাকিয়ে রাগ এবং অপমানে অসহায়ের মত বলল, ‘কেউ ইগুর মাত হুনরায়নিবে? হেই! আইজ তোর কিতা হইছে, ঠাঠার লাখান ফাইট্টা ঝিলকির লাখান ঝিলকায়রে কেনে?’
‘বাজ পইড়া মেঘ আইছে, তোমার ভাঙা ছাত্তি কোয়াই?’ বলে হেনা মাথা দিয়ে ইশারা করলে জাকির মাথা নেড়ে বলল, ‘ভূতে কিলাইয়া আমারে বেভোতা বানাইছিল এর লাগি তোরে বিয়া করছিলাম লো।’
হেনা চোখ টেপা দিয়ে বিদ্রুপ হেসে বলল, ‘ও রসিক বন্ধু! কিতা হইছে ইতা কররায় কেনে?’
জাকির চোখ পাকিয়ে বলল, ‘এই! তুই আমার বায় ইলা চাইছ না। আঙুল দি গুতা মারি কানা করিলিমো।’
‘আমার ঠাই লাগের তোমারে চালিশায় ধরিলিছে, আমার খান্দাত আও, দেখি তোমার চোখো ছানি পড়িছেনি?’
‘তাইর সাহস দেখরায়নি বে! কয় চালিশায় ধইরা আমার চোখো বুলে ছানি পড়িগিছে। উবা! তোরে এক চোপ দিতাম।’
‘এরে! আমি ছানির কথা কইতেঔ তুমি ছ্যাত করি উঠলায় কেনে? আর আমার চাওয়া ভালা না লাগলে আমার বায় চাইও না।’ বলে হেনা আড়চোখে তাকালে জাকির মাথা নেড়ে বলল, ‘বুদ্ধিয়ালর নানির কথা কেউ হুনরায়নি বে? আমি কইলাম আমার বায় কানি চোখে চাইত না আর তাই আমারে চাল্লিশবছরি বুড়া বানাইলিছে। এই! আমি আমার বউর বায় চাইতাম না তে কার বায় চাইতাম লো?’
‘পূবর বাড়ির দাদিরে জিঘা করা লাগব।’ বলে হেনা শরীর কাঁপিয়ে হাসতে শুরু করে।
‘ধুর আমার হম্মুক থাকি হরি যা।’ বলে জাকির দাঁত কটমট করে আড় চোখে তাকায়। এমন সময় তার মোবাইল বাজে। হেনা মাথা দিয়ে ইশারা করে বলল, ‘কে ফন করইছন?’
‘সরণ।’ বলে জাকির কথা বলতে শুরু করলে হেনা বেরিয়ে যায়। জাকির রাগান্বিতকণ্ঠে বলল, ‘হেই! তুই অনে ফোন করছত কিতার লাগি রে?’
সরণ চিন্তিতকণ্ঠে বলল, ‘কিতা হইছে ইলা মাতরে কেনে?’
ISBN-13: 978-1539419624
Copyright © 2016 by Mohammed abdulhaque
Cover by: Mohammed abdulhaque
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২০ বিকাল ৩:২৬