somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদীনের ৩৭তম মৃত্যুবার্ষিকী আজঃ মৃত্যুদিনে মানবতাবাদী এই শিল্পী জন্য গভীর শ্রদ্ধা

২৮ শে মে, ২০১৩ বিকাল ৪:৫১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


(শিল্পীর তুলিতে জয়নুল আবেদিন)
কথা বলে যাঁর ছবি তিনি শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদীন। শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন বাংলাদেশের আধুনিক শিল্পকলা আন্দোলনের পথিকৃৎ। শিল্পকলায় অবদানের জন্য তাঁর জীবদ্দশায় তিনি পেয়েছেন শিল্পাচার্য খেতাব। মানবতাবাদী এই শিল্পীর ৩৭তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। ১৯৭৬ সালের ২৮ মে মৃত্যুবরণ করেন তিনি।শিল্পীর মৃত্যুদিনে আমাদের গভীর শ্রদ্ধা।


শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন ১৯১৪ সালের ২৯ ডিসেম্বর কিশোরগঞ্জ জেলার কেন্দুয়ায় জন্মগ্রহণ করেন। বাবা তমিজউদ্দিন আহমেদ ছিলেন পুলিশের দারোগা। মা জয়নাবুন্নেছা গৃহিনী। নয় ভাইবোনের মধ্যে জয়নুল আবেদিন ছিলেন সবার বড়। পড়াশোনার হাতেখড়ি পরিবারের কাছ থেকেই। খুব ছোটবেলা থেকেই তিনি ছবি আঁকা পছন্দ করতেন। পাখির বাসা, পাখি, মাছ, গরু-ছাগল, ফুল-ফলসহ আরও কত কি এঁকে মা-বাবাকে দেখাতেন। ছেলেবেলা থেকেই শিল্পকলার প্রতি তার গভীর আগ্রহ ছিল। ১৯৩৩ সালে মাধ্যমিক পরীক্ষার আগেই স্কুলের পড়ালেখার বাদ দিয়ে কলকাতায় চলে যান এবং মায়ের অনুপ্রেরণায় তিনি গভর্নমেন্ট স্কুল অব আর্টস-এ ভর্তি হন।


(শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদীনের বিখ্যাত ছবি "দ্যা স্ট্রাগল")
তাঁর মা জয়নুল আবেদিন আগ্রহ দেখে নিজের গলার হার বিক্রি করে ছেলেকে কলকাতার তখন আর্ট স্কুলে ভর্তি করান। পরবর্তীতে ছেলে জয়নুল আবেদিনও মায়ের সেই ভালবাসার ঋণ শোধ করেছেন দেশের স্বনামধন্য শিল্পী হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করে। জয়নুল আবেদিন ১৯৩৩ থেকে ১৯৩৮ সাল পর্যন্ত কলকাতার সরকারি আর্ট স্কুলে পড়েন। ১৯৩৮ সালে কলকাতার গভর্নমেন্ট স্কুল অব আর্টসের ড্রইং অ্যান্ড পেইন্টিং ডিপার্টমেন্ট থেকে প্রথম শ্রেণীতে প্রথম হয়ে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করে সেখানেই শিক্ষকতা শুরু করেন। ১৯৪৮ সালে তিনি সরকারি আর্ট ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা করেন।


এই শিল্পী ১৯৪২-৪৩ সালে দুর্ভিক্ষের করুণ ছবি এঁকে আমাদের অন্তর আত্নাকে নাড়া দিয়েছেন। যে ছবি গুলোর মাধ্যমে আজো আমরা সেই দুর্ভিক্ষের ভয়াবহতা ও বাস্তবতা প্রত্যক্ষ করতে পারি । শুধু দুর্ভিক্ষের ছবি নয়, তার আঁকা প্রতিটি ছবিই একেকটি সময়ের প্রতিনিধিত্ব করে এবং বাস্তব অবস্থাকে আমাদের চোখের সামন্যে তুলে ধরে। বাংলা ১৩৪৯ সালের দুর্ভিক্ষের সময় রাস্তায় পড়ে থাকা ছিন্নমূল মানুষের ছবি ও স্কেচে জয়নুলের ক্যানভাস জীবন্ত হয়ে উঠে। এ ছবি একেঁই মানবতাবাদী এই শিল্পীর খ্যাতি ও সুনাম চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে।


চিত্রশিল্পও যে কোন প্রতিবাদের প্রতিচ্ছবি বা প্রতিরোধের হাতিয়ার অথবা অধিকার-সাম্য-স্বাধীনতার ভাষা হতে পারে তা শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন আমাদের দেখিয়েছেন। শিল্পীর তুলিতে একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধের ব্যাপকতা কতটা বিস্তৃত প্রেক্ষাপটে জ্যান্তরূপে আবির্ভূত হতে পারে, তা জয়নুলের মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক ছবিগুলো না দেখলে বিশ্বাস করা যাবে না।“ ১৯৭০ সালে জয়নুল এঁকেছিলেন দীর্ঘ এক ছবি,নবান্ন। এ ছবি গ্রাম বাংলার জীবনের প্রতিচ্ছবি ।


দেশের দক্ষিণে উপকূলবর্তী চর ‘মনপুরা’; যা শান্ত, সবুজ এক বনানী। ১৯৭০ সালের প্রলংয়করী ঘূর্ণিঝড় এ দ্বীপে আঘাত হানে। লক্ষাধিক লোকা মারা যায় সে ঝড়ের তাণ্ডবে। জয়নুল সেই ধ্বংসলীলার ছবি একছিলেন - ’মনপুরা ৭০’। তুলির আচড়ে তিনি ফুটিয়ে তুলেছেন প্রকৃতির সেই নির্মম আচরন। প্রচণ্ড ঢেউয়ের দাপটে তীরে উঠে আসা মৃত গবাদিপশু, নারী-পুরুষ, শিশুর মিছিল। এ যেন সেলুলয়েডের ফিতায় বন্দী শ্বাসরুদ্ধকর মুহর্ত। প্রকৃতির তাণ্ডবে বেঁচে যাওয়া এক মানুষ হাঁটুমুড়ে বসে আছে-জীবন্মৃত, অসাড়। এ ছবি প্রকৃতির এক নির্মম, নিষ্ঠুর ইতিহাস।


(শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদীনের বিখ্যাত ছবি ’মনপুরা ৭০’)
জয়নুল আবেদীন ১৯৭২ সালে বাংলা একাডেমীর সভাপতি নির্বাচিত হন এবং ১৯৭৪ সাল পর্যন্ত তিনি এখানে কাজ করেন। ১৯৭৪ সালে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমীর অন্যতম উপদেষ্টা মনোনীত হন। একই বছর জয়নুল বাংলাদেশের প্রথম জাতীয় অধ্যাপক নিযুক্ত হন এবং মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি এই পদে অধিষ্ঠিত থাকেন। তাঁরই প্রচেষ্টায় ১৯৭৫ সালে শিল্পকলা একাডেমী প্রতিষ্ঠিত হয়।


তাঁর স্মৃতিকে ধরে রাখার জন্য জাতীয় জাদুঘরে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে জয়নুল আবেদীন গ্যালারী। প্রায় ৭০০ ছবি এতে সংগ্রহশালায় রয়েছে।


শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদীন ১৯৭৬ সালের ২৮ মে মৃত্যুবরণ করেন। শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিনকে তাঁর প্রতিষ্ঠিত চারুকলা অনুষদের পাশে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মসজিদ প্রাঙ্গণে সমাহিত করা হয়। আজ তাঁর মৃত্যুদিন। মৃত্যুদিনে এই মানবতাবাদী শিল্পীর প্রতি রইল আমাদের গভীর শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা।
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে মে, ২০১৩ বিকাল ৪:৫৮
৬টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বিসিএস দিতে না পেরে রাস্তায় গড়াগড়ি যুবকের

লিখেছেন নাহল তরকারি, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৫৫

আমাদের দেশে সরকারি চাকরি কে বেশ সম্মান দেওয়া হয়। আমি যদি কোটি টাকার মালিক হলেও সুন্দরী মেয়ের বাপ আমাকে জামাই হিসেবে মেনে নিবে না। কিন্তু সেই বাপ আবার ২০... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। আমের খাট্টা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৪



তাতানো গরমে কাল দুপুরে কাচা আমের খাট্টা দেখে ব্যাপারটা স্বর্গীয় মনে হল । আহা কি স্বাদ তার । অন্যান্য জিনিসের মত কাচা আমের দাম বাড়াতে ভুল করেনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ডাক্তার ডেথঃ হ্যারল্ড শিপম্যান

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:০৪



উপরওয়ালার পরে আমরা আমাদের জীবনের ডাক্তারদের উপর ভরশা করি । যারা অবিশ্বাসী তারা তো এক নম্বরেই ডাক্তারের ভরশা করে । এটা ছাড়া অবশ্য আমাদের আর কোন উপায়ই থাকে না... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার ইতং বিতং কিচ্ছার একটা দিন!!!

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:০৩



এলার্ম এর যন্ত্রণায় প্রতিদিন সকালে ঘুম ভাঙ্গে আমার। পুরাপুরি সজাগ হওয়ার আগেই আমার প্রথম কাজ হয় মোবাইলের এলার্ম বন্ধ করা, আর স্ক্রীণে এক ঝলক ব্লগের চেহারা দেখা। পরে কিছু মনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কে কাকে বিশ্বাস করবে?

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৩৯


করোনার সময় এক লোক ৯৯৯ এ ফোন করে সাহায্য চেয়েছিল। খবরটা স্থানীয় চেয়ারম্যানের কানে গেলে ওনি লোকটাকে ধরে এনে পিটিয়েছিলেন। কারণ, ৯৯৯ এ ফোন দেওয়ায় তার সম্মানহানি হয়েছে।

সমাজে এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×