somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

"The Wizard of Rhymes" ছন্দের জাদুকর খ্যাত কবি ও ছড়াকার সত্যেন্দ্রনাথ দত্তের মৃত্যুদিনে শ্রদ্ধাঞ্জলি

২৫ শে জুন, ২০১৩ দুপুর ২:১৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত প্রখ্যাত বাঙালি কবি ও ছড়াকার। কবিতার ভূবনে তিনি ছিলেন এক উজ্জ্বল নক্ষত্র। বাংলা সাহিত্যে তাঁর কবিতায় ছন্দের কারুকাজ, শব্দ ও ভাষা যথোপযুক্ত ব্যবহারের কৃতিত্বের জন্য তাঁকে ছন্দের যাদুকর "The Wizard of Rhymes" নামে আখ্যায়িত করা হয়। রবীন্দ্রযুগের কবি হওয়া সত্ত্বেও তাঁর কবিতার বিষয়বস্তু, ছন্দ, নির্মাণ কৌশল এবং শব্দ ও ভাষার কারুকার্যময়তায় উজ্জ্বল তাঁর প্রতিটি রচনা। নানা ধরণের ছন্দ উদ্ভাবনে তিনি ছিলেন অপ্রতিদ্বন্দ্বি। তিনি নবকুমার, কবিরত্ন, অশীতিপর শর্মা, ত্রিবিক্রম বর্মণ, কলমগীর ইত্যাদি একাধিক ছদ্মনামে কবিতা চর্চা করতেন। মেথরদের মতো অস্পৃশ্য ও অবহেলিত সাধারণ মানুষ নিয়েও তিনি কবিতা লিখেছেন। এই কবির কবিতা আজো পাঠকদের অনুরনিত করে। সবিতা, সন্ধিক্ষণ, বেনু ও বীনা, কুহু ও কেকা, ইত্যাদি তাঁর বিখ্যাত কাব্যগ্রন্থ। বাংলা সাহিত্যের এই খ্যাতিমান কবি মাত্র ৪১ বছর বয়সে ১৯২২ সালের ২৫ জুন মৃত্যুবরণ করেন। আজ তাঁর মৃত্যুদিন। মৃত্যুদিনে তাঁর প্রতি আমাদের গভীর শ্রদ্ধা।


প্রখ্যাত কবি ও ছান্দসিক সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত ১৮৮২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি কলকাতার কাছে নিমতা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। পিতামহ অক্ষয়কুমার দত্ত ছিলেন । তার পৈতৃক নিবাস বর্ধমানের চুপী গ্রামে। পিতা রজনীনাথ দত্ত ছিলেন কলকাতার বিশিষ্ট ব্যবসায়ী এবং পিতামহ অক্ষয় কুমার দত্ত ছিলেন তত্ত্ববোধিনী পত্রিকার সম্পাদক। সত্যেন্দ্রনাথের কবিতায় নানা ভাষার শব্দ নিপুণ ছন্দে যুক্ত হয়েছে। এছাড়া তিনি বিভিন্ন ভাষা থেকে বাংলায় অনুবাদকর্মও করেছেন। সত্যেন্দ্রনাথ কলকাতার সেন্ট্রাল কলেজিয়েট স্কুল থেকে এন্ট্রান্স (১৮৯৯) এবং জেনারেল অ্যাসেমব্লিজ ইনস্টিটিউশন (বর্তমান স্কটিশ চার্চ কলেজ) থেকে এফএ (১৯০১)


কাব্যচর্চায় আত্মনিয়োগ করার আগে সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত পিতার ব্যবসায় যোগ দিয়েছিলেন। তিনি ছিলেন ভারতী পত্রিকাগোষ্ঠীর অন্যতম কবি। প্রথম জীবনে তিনি মাইকেল মধুসূদন দত্ত, অক্ষয় কুমার বড়াল প্রমুখের দ্বারা প্রভাবিত হন। পরে রবীন্দ্র অনুসারী হলেও তিনি স্বতন্ত্র হয়ে ওঠেন। বাংলা শব্দের সঙ্গে আরবি-ফার্সি শব্দের সমন্বিত ব্যবহার দ্বারা বাংলা কাব্যভাষার শক্তি বৃদ্ধির প্রাথমিক কৃতিত্ব তারই। অনুবাদের মাধ্যমে তিনি বিশ্বের কাব্যসাহিত্যের সঙ্গে বাংলার যোগাযোগ ঘটান। নবকুমার, কবিরত্ন, অশীতিপর শর্মা, ত্রিবিক্রম বর্মণ, কলমগীর প্রভৃতি ছদ্মনামে তিনি কবিতা লিখতেন। দেশাত্মবোধ, মানবপ্রীতি, ঐতিহ্যচেতনা, শক্তিসাধনা প্রভৃতি তাঁর কবিতার বিষয়বস্তু। ১৯১৮ সালে ভারতী পত্রিকার বৈশাখ সংখ্যায় ছন্দ সম্পর্কিত তার প্রসিদ্ধ রচনা ‘ছন্দ-সরস্বতী’ প্রকাশিত হয়। বাংলা শব্দের সঙ্গে আরবি-ফারসি শব্দের সমন্বিত ব্যবহার দ্বারা বাংলা কাব্যভাষার শক্তি বৃদ্ধির প্রাথমিক কৃতিত্ব তারই। তাঁর অপর কৃতিত্ব বিদেশী কবিতার সফল অনুবাদ। আরবি-ফারসি, চীনা, জাপানি, ইংরেজি এবং ফরাসি ভাষার বহু কবিতা অনুবাদ করে বাংলাসাহিত্যের বৈচিত্র্য ও সমৃদ্ধি সাধন করেন সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত। তিনি কয়েক শত ভারতীয় ও বিদেশি কবিদের কবিতার অনুবাদ করেছিলেন। সত্যেন্দ্রনাথের অনুবাদের একটা বড় অংশ হল ফরাসি কবিতার অনুবাদ ৷ তিনি মোট আটষট্টিটি ফরাসি (তার মধ্যে পাঁচটি দক্ষিণ ফ্রান্সের উপভাষায়) কবিতার বাংলায় অনুবাদ করেছিলেন। এই কবিতাগুলি রয়েছে তাঁর ‘তীর্থসলিল’, ‘তীর্থরেণু’ ও ‘মণিমঞ্জুষা’ নামক তিনটি অনূদিত কবিতার সংকলনে৷ ।


মধ্যযুগে ভারতের ইতিহাস, সংস্কৃতি, পৌরাণিক প্রভৃতি বুদ্ধি-বৃত্তিবিষয়ক বিভিন্ন বিষয়ে তিনি ছিলেন সিদ্ধহস্তের অধিকারী ছিলেন সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত। তার উল্লেখযোগ্য সাহিত্যকর্মঃ
কাব্যগ্রন্থ ১। সবিতা (১৯০০), ২। সন্ধিক্ষণ (১৯০৫), ৩। বেণু ও বীণা (১৯০৬), ৪। হোমশিখা (১৯০৭), ৫। কূহ ও কেকা (১৯১২), ৬। তুলির লিখন (১৯১৪), ৭। অভ্র-আবীর (১৯১৬), ৮। হসন্তিকা (১৯১৯), ৯। বেলা শেষের গান এবং অনুবাদ গ্রন্থঃ ১। তীর্থ সলীল, ২। তীর্থ রেণু ৩। ফুলের ফসল ইত্যাদি


বাংলা কবিতার ছন্দের জাদুকর কবি সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত। বাংলা সাহিত্যের এই খ্যাতিমান কবি মাত্র একচল্লিশ বছর বয়সে ১৯২২ সালের ২৫ জুন তারিখে পরলোকগমন করেন। আজ তাঁর মৃত্যুদিন। মৃত্যুদিনে তাঁর প্রতি আমাদের গভীর শ্রদ্ধা।


সত্যেন্দ্রনাথ দত্তের কবিতা ভক্তদের জন্য তাঁর "ছিন্নমুকুল" কবিতাখানি উৎসর্গ করলাম যা পাঠে এখনো আমার নয়ন আদ্র হয়ে ওঠে।


"ছিন্নমুকুল"
সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত

সবচেয়ে যে ছোট পিড়ি খানি
সেখানি আর কেউ রাখেনা পেতে,
ছোট থালায় হয় নাকো ভাতবাড়া
জল ভরে না ছোট্ট গেলাসেতে ।
বাড়ির মধ্যে সবচেয়ে যে ছোট
খাবার বেলা কেউ ডাকে না তাকে ।
সবচেয়ে যে শেষে এসেছিল,
তারই খাওয়া ঘুচেছে সব আগে ।

সবচেয়ে যে অল্পে ছিল খুশি,
খুশি ছিল ঘেষাঘেষির ঘরে,
সেই গেছে হায়, হাওয়ার সঙ্গে মিশে,
দিয়ে গেছে জায়গা খালি করে ।
ছেড়ে গেছে পুতুল, পুঁতির মালা,
ছেড়ে গেছে মায়ের কোলের দাবি ।
ভয়ভরা সে ছিল যে সব চেয়ে
সেই খুলেছে আঁধার ঘরের চাবি ।

হারিয়ে গেছে, হারিয়ে গেছে ওরে !
হারিয়ে গেছে ‘বোল’ বলা সেই বাঁশি
দুধে ধোওয়া কচি সে মুখখানি
আঁচল খুলে হঠাৎ স্রোতের জলে
ভেসে গেছে শিউলী ফুলের রাশি ,
ঢুকেছে হায় শশ্মান ঘরের মাঝে
ঘর ছেড়ে হায় হৃদয় শশ্মানবাসী ।

সবচেয়ে যে ছোট কাপড়গুলি
সেইগুলি কেউ দেয় না মেলে ছাদে,
যে শয্যাটি সবার চেয়ে ছোট,
আজকে সেটি শূন্য পড়ে কাঁদে ।
সবচেয়ে যে শেষে এসেছিল
সেই গিয়েছে সবার আগে সরে ।
ছোট্ট যে জন ছিল রে সবচেয়ে,
সেই দিয়েছে সকল শূন্য করে ।


ছন্দের যাদুকরী কবির আরো কবিতা পড়তে ক্লিক করুনঃ সত্যেন্দ্রনাথ দত্তের কবিতার ভুবনে স্বাগতম
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে জুন, ২০১৩ দুপুর ২:১৯
২টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×