somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আধুনিক বাংলা কবিতার প্রধানতম কবি আল মাহমুদের জন্মদিনে শুভেচ্ছা

১১ ই জুলাই, ২০১৩ সকাল ১০:৪৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


আধুনিক বাংলা কবিতার প্রধানতম কবি আল মাহমুদ। আধুনিক বাংলা সাহিত্যের অন্যতম প্রধান কবি। তিনি একধারে একজন কবি, ঔপন্যাসিক এবং ছোটগল্প লেখক। আল মাহমুদ একজন মৌলিক কবি। তিনি বাংলা কবিতায় সৃষ্টি করেছেন এক ভিন্নমাত্রা। একজন কবির বড়ত্ব তার কাব্যভাষা, চিত্রকল্প এবং ছন্দের নতুনত্বে । আল মাহমুদের বড়ত্ব তার নিজস্ব বাকরীতি প্রবর্তনে এবং অদ্ভুত সুন্দর চিত্রকল্প নির্মানে। ১৯৩০-এর কবিদের হাতে বাংলা কবিতায় যে আধুনিকতার ঊণ্মেষ, তার সাফল্যের ঝাণ্ডা আল মাহমুদ বিংশ শতাব্দীর মধ্যভাগ থেকে অদ্যাবধি তুলনারহিত কৃতিত্বের সঙ্গে বহন ক'রে চলেছেন। প্রখ্যাত কবি, ঔপন্যাসিক এবং ছোটগল্প লেখক কবি আল মাহমুদের আজ জন্মদিন। জন্মদিনে কবির জন্য ফুলেল শুভেচ্ছা।


আল মাহমুদ ১৯৩৬ সালের ১১ জুলাই ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার মোড়াইল গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর প্রকৃত নাম মীর আব্দুস শুকুর আল মাহমুদ। আল মাহমুদের পিতা আব্দুর রব মীর এবং মাতা রৌশন আরা বেগম৷ আল মাহমুদ বেড়ে উঠেছেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ায়। একুশ বছর বয়স পযর্ন্ত তিনি কাটিয়েছেন তিতাসপাড়ে। এরপর তিনি কবি হওয়ার বাসনায় চলে আসেন ঢাকায় । সমকালীন বাংলা সাপ্তাহিক পত্র/পত্রিকার মধ্যে কবি আব্দুর রশীদ ওয়াসেকপুরী সম্পাদিত ও নাজমুল হক প্রকাশিত সাপ্তাহিক কাফেলায় লেখালেখি শুরু করেন। পাশাপাশি তিনি দৈনিক মিল্লাত পত্রিকায় প্রুফ রিডার হিসেবে সাংবাদিকতা জগতে পদচারণা শুরু করেন। ১৯৫৫ সাল কবি আব্দুর রশীদ ওয়াসেকপুরী কাফেলার চাকরি ছেড়ে দিলে তিনি সেখানে সম্পাদক হিসেবে যোগ দেন। কবি আল মাহমুদ একসময় রাজনীতিও করেছেন । মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়ে স্বাধীনদেশে ফিরে তিনি দৈনিক গণকন্ঠ পত্রিকাত সহকারী সম্পাদক হিসেবে যোগ দেন। তিনি গণকণ্ঠ পত্রিকার সম্পাদক হিসাবে সরকার বিরোধী আন্দোলনে বিশেষ ভূমিকা রেখেছেন। এর পর দীর্ঘ সময় তিনি শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালকের দায়িত্ব পালন করেন।


১৯৭৩ সালে প্রকাশিত হয় তার আলোচিত কাব্যগ্রন্থ সোনালী কাবিন। 'সোনালী কাবিন' কাব্যগ্রন্থটি একটি মাস্টারপিস হিসেবেই সমাদৃত হয়েছে, এমনকি কবির একচোখা সমালোচক ও নিন্দুকদের মাঝেও। এই কাব্যগ্রন্থটি অনুবাদ হয়েছে অনেকগুলো ভাষায়।


আল মাহমুদের ‘সোনালি কাবিন’ থেকেঃ
(৫)
আমার ঘরের পাশে ফেটেছে কি কার্পাশের ফল?
গলায় গুঞ্জার মালা পরো বালা, প্রাণের শবরী,
কোথায় রেখেছো বলো মহুয়ার মাটির বোতল
নিয়ে এসো চন্দ্রালোকে তৃপ্ত হয়ে আচমন করি।
ব্যাধির আদিম সাজে কে বলে যে তোমাকে চিনবো না
নিষাদ কি কোনদিন পক্ষিণীর গোত্র ভুল করে?
প্রকৃতির ছদ্মবেশে যে-মন্ত্রেই খুলে দেন খনা
একই জাদু আছে জেনো কবিদের আত্মার ভিতরে।
নিসর্গের গ্রন্থ থেকে, আশৈশব শিখেছি এ-পড়া
প্রেমকেও ভেদ করে সর্বভেদী সবুজের মূল,
চিরস্থায়ী লোকালয় কোনো যুগে হয়নি তো গড়া
পারেনি ঈজিপ্ট, গ্রীস, সেরাসিন শিল্পীর আঙুল।
কালের রেঁদার টানে সর্বশিল্প করে থর থর
কষ্টকর তার চেয়ে নয় মেয়ে কবির অধর।


(৮)
অঘোর ঘুমের মধ্যে ছুঁয়ে গেছে মনসার কাল
লোহার বাসরে সতী কোন ফাঁকে ধুকেছে নাগিনী,
আর কোনদিন বলো দেখব কি নতুন সকাল?
উষ্ণতার অধীশ্বর যে গোলক ওঠে প্রতিদিনই।
বিষের আতপে নীল প্রাণাধার করে থরো থরো
আমারে উঠিয়ে নাও হে বেহুলা, শরীরে তোমার,
প্রবল বাহুতে বেঁধে এ-গতর ধরো, সতী ধরো,
তোমার ভাসানে শোবে দেবদ্রোহী ভাটির কুমার।
কুটিল কালের বিষে প্রাণ যদি শেষ হয়ে আসে,
মৃত্যুর পিঞ্জর ভেঙ্গে প্রাণপাখি ফিরুক তরাসে
জীবনের স্পর্ধা দেখে নত হোক প্রাণাহারী যম,
বসন বিদার করে নেচে ওঠো মরণের পাশে
নিটোল তোমার মুদ্রা পাল্টে দিক বাঁচার নিয়ম।
কবিঃ আল মাহমুদ
কাব্যগ্রন্থঃ সোনালি কাবিন


কবি আল মাহমুদের হাতে জন্ম নিয়েছে 'মায়াবী পর্দা দুলে ওঠো', 'বখতিয়ারের ঘোড়া'র মতন অসামান্য কিছু কাব্যগ্রন্থ। শিশুদের জন্য তার কাব্যগুলোও নান্দনিক আর সর্বজন সমাদৃত। তার শ্রেষ্ট গদ্যগ্রন্থ পানকৌড়ির রক্ত। তাঁর উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ সমূহঃ উল্লেখযোগ্য গ্রন্থঃ
কবিতাঃ লোক লোকান্তর, কালের কলস, সোনালী কাবিন, মায়াবী পর্দা দুলে ওঠো, প্রহরান্তরের পাশ ফেরা, আরব্য রজনীর রাজহাঁস, মিথ্যেবাদী রাখাল, আমি দূরগামী, বখতিয়ারের ঘোড়া, দ্বিতীয় ভাঙন, নদীর ভেতরে নদী, উড়াল কাব্য, বিরামপুরের যাত্রী, না কোন শূন্যতা মানি না প্রভৃতি৷


ছোটগল্পঃ পান কৌড়ির রক্ত, সৌরভের কাছে পরাজিত, গন্ধবনিক, ময়ুরীর মুখ প্রভৃতি৷
উপন্যাসঃ কাবিলের বোন, উপমহাদেশ, পুরুষ সুন্দর, চেহারার চতুরঙ্গ, আগুনের মেয়ে, নিশিন্দা নারী প্রভৃতি৷
প্রবন্ধঃ কবির আত্মবিশ্বাস, কবির সৃজন বেদন., আল মাহমুদের প্রবন্ধ সমগ্র৷
ভ্রমণঃ কবিতার জন্য বহুদূর, কবিতার জন্য সাত সমুদ্র প্রভৃতি৷
শিশুতোষ রচনাঃ পাখির কাছে ফুলের কাছে৷
এছাড়াও প্রকাশিত হয়েছে আল মাহমুদ রচনাবলী৷


সাহিত্য রচনায় তার অসামান্য কৃত্তিত্বের জন্য তিনি বহু পুরস্কারে ভুষিত হয়েছেন। যেমনঃ
বাংলা একাডেমী পুরস্কার (১৯৬৮), জয়বাংলা পুরস্কার (১৯৭২), হুমায়ুন কবির স্মৃতি পুরস্কার (১৯৭৪), জীবনানন্দ দাশ স্মৃতি পুরষ্কার (১৯৭৪), সুফী মোতাহের হোসেন সাহিত্য স্বর্ণপদক (১৯৭৬), ফিলিপস সাহিত্য পুরস্কার (১৯৮৬), একুশে পদক (১৯৮৭),নাসিরউদ্দিন স্বর্ণপদক (১৯৯০), সমান্তরাল (ভারত) কর্তৃক ভানুসিংহ সম্মাননা পদক- ২০০৪ প্রভৃতি৷


রবীন্দ্র-বিরোধী তিরিশের কবিরা বাংলা কবিতার মাস্তুল পশ্চিমের দিকে ঘুরিয়ে যাত্রা শুরু করেছিলেন তখন আল মাহমুদ আধুনিক বাংলা কবিতাকে বাংলার ঐতিহ্যে প্রোথিত করেছেন মৌলিক কাব্যভাষার সহযোগে। রবীন্দ্র উত্তর আধুনিক কালের কবিদের মধ্যে কবি আল মাহমুদ শব্দচয়নে, জীবনবোধে, শব্দালংকারের নান্দনিকতায়, বর্ণনায় অসামান্য আর ধ্রুপদী । তাঁর সহযাত্রী শামসুর রাহমান, শক্তি চট্টোপাধ্যায়, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় প্রমুখের তুলনায় এইখানে তিনি ব্যতিক্রমী ও প্রাগ্রসর। বাংলা সাহিত্যের শ্রেষ্ঠ কবিদের দলে তার নাম স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে এই কথা নিঃসন্দেহে বলা যায়। নাগরিক চেতনায় আল মাহমুদ মাটিজ অনুভূতিতে গ্রামীণ শব্দপুঞ্জ, উপমা-উৎপ্রেক্ষা এবং চিত্রকল্প সংশ্লেষ করে আধুনিক বাংলা কবিতার নতুন দিগন্ত রেখায়িত করেছেন। শুধু কবি হিসেবে নন, বাংলা সাহিত্যকে তিনি গতিশীল করেছেন তার অপূর্ব গদ্যশৈলীতে। একই সঙ্গে তিনি কথাসাহিত্যে তাঁর মৌলিক শৈলীর স্বাক্ষর রেখেছেন।


১৯৫৪ সালে যে যুবকটি রাবারের স্যান্ডেল পায়ে ঢাকায় পদার্পণ করেছিলেন কেবল কবিতাকে অবলম্বন করে, সে আজ বার্ধক্যে নুয়ে পড়া এক জ্ঞানবৃদ্ধ৷ জীবনের কত কিছুকে তিনি পেছনে ফেলে এসেছেন, কত কিছু তাঁকে ফেলে রেখে চলে গেছে৷ কিন্তু কবিতাকে তিনি যেমন ফেলে দেননি তেমনি কবিতাও তাঁকে ফেলে দেয়নি৷ আল মাহমুদ আর কবিতা একই সংসারে বাস করছেন আজ পঞ্চাশ বছরেরও অধিক সময় ধরে ৷ আর সেই সংসারে আরও আছেন কবির স্ত্রী সৈয়দা নাদিরা বেগম৷ কবি দম্পতির পাঁচ পুত্র ও তিন কন্যা৷ বর্তমানে গুলশানে নিজ বাড়িতে তিনি অবসর জীবন যাপন করছেন৷ আজ এই কবির জন্মদিন। জন্মদিনে তাঁর প্রতি আমাদের গভীর শ্রদ্ধা ও অফুরান শুভেচ্ছা।
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই জুলাই, ২০১৩ সকাল ১০:৪৮
১৫টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বরিষ ধরা-মাঝে শান্তির বারি

লিখেছেন বিষাদ সময়, ০৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:১৬





মাসের আধিক কাল ধরে দাবদাহে মানব প্রাণ ওষ্ঠাগত। সেই যে অগ্নি স্নানে ধরা শুচি হওয়া শুরু হলো, তো হলোই। ধরা ম্লান হয়ে, শুষ্ক হয়, মুমূর্ষ হয়ে গেল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=নীল আকাশের প্রান্ত ছুঁয়ে-৭ (আকাশ ভালোবেসে)=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:১৯

০১।



=আকাশের মন খারাপ আজ, অথচ ফুলেরা হাসে=
আকাশের মন খারাপ, মেঘ কাজল চোখ তার,
কেঁদে দিলেই লেপ্টে যাবে চোখের কাজল,
আকাশের বুকে বিষাদের ছাউনি,
ধ্বস নামলেই ডুবে যাবে মাটি!
================================================
অনেক দিন পর আকাশের ছবি নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

পানি জলে ধর্ম দ্বন্দ

লিখেছেন প্রামানিক, ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৫২


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

জল পানিতে দ্বন্দ লেগে
ভাগ হলোরে বঙ্গ দেশ
এপার ওপার দুই পারেতে
বাঙালিদের জীবন শেষ।

পানি বললে জাত থাকে না
ঈমান থাকে না জলে
এইটা নিয়েই দুই বাংলাতে
রেষারেষি চলে।

জল বললে কয় নাউযুবিল্লাহ
পানি বললে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সমস্যা মিয়ার সমস্যা

লিখেছেন রিয়াদ( শেষ রাতের আঁধার ), ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৭

সমস্যা মিয়ার সিঙ্গারা সমুচার দোকানে প্রতিদিন আমরা এসে জমায়েত হই, যখন বিকালের বিষণ্ন রোদ গড়িয়ে গড়িয়ে সন্ধ্যা নামে, সন্ধ্যা পেরিয়ে আকাশের রঙিন আলোর আভা মিলিয়ে যেতে শুরু করে। সন্ধ্যা সাড়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

এই মুহূর্তে তারেক জিয়ার দরকার নিজেকে আরও উন্মুক্ত করে দেওয়া।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৬ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:২৬


তারেক জিয়া ও বিএনপির নেতৃত্ব নিয়ে আমি ব্লগে অনেকবারই পোস্ট দিয়েছি এবং বিএনপি'র নেতৃত্ব সংকটের কথা খুব স্পষ্টভাবে দেখিয়েছি ও বলেছি। এটার জন্য বিএনপিকে সমর্থন করে কিংবা বিএনপি'র প্রতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×