somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাংলা কবিতায় “ধ্রুপদী রীতির প্রবর্তক” সুধীন্দ্রনাথ দত্তের ৫৪তম মৃত্যুৃবার্ষিকীতে শ্রদ্ধাঞ্জলি

২৫ শে জুন, ২০১৪ সকাল ১১:২১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


বাংলা ভাষার প্রধান আধুনিক কবি এবং কবিতায় ধ্রুপদী রীতির প্রবর্তক ও সাংবাদিক সুধীন্দ্রনাথ দত্ত। বিশ শতকে বুদ্ধির দীপ্তি কিংবা প্রতিভার বিশেষ আবেশে বাংলা সাহিত্যকে যাঁরা অগ্রসরতার পথে পরিচালিত করতে সহায়তা করেছেন সুধীন্দ্রনাথ তাদের মধ্যে অন্যতম। এছাড়াও “পরিচয়” নামে একটি পত্রিকাও সম্পাদনা করেছেন তিনি। নানান বিদ্যায় বিদ্বান এবং বহুভাষাবিদ এ কবি মনস্বী তীক্ষ্ণ বিশ্লেষণী বুদ্ধির অধিকারী ছিলেন এবং তথ্য ও তত্ত্বে আসক্ত মানুষ হিসেবে তিনি সমকালে ও উত্তরকালে প্রশংসিত হয়েছেন। বিংশ শতকের ত্রিশ দশকের যে পাঁচ জন কবি বাংলা কবিতায় রবীন্দ্র প্রভাব কাটিয়ে আধুনিকতার সূচনা ঘটান তাদের মধ্যে সুধীন্দ্রনাথ অন্যতম। বাংলা কবিতায় “ধ্রুপদী রীতির প্রবর্তক” হিসেবে খ্যাত সুধীন্দ্রনাথ। বলা যেতে পারে, “ক্লাসিকাল” অর্থে “ধ্রুপদী” শব্দটি তাঁরই উদ্ভাবনা। সমাজের সত্য পাঠ অনুসন্ধান ও পরিবেশন, কল্পনা ও প্রেমানুভূতির উপস্থাপনাসমেত তিনি পাঠকের কাছে যথাসম্ভব হাজির থেকেছেন অভিজাত শিল্পী ও সামাজিকের দায় কাঁধে নিয়ে। ১৯৬০ সালের আজকের দিনে মৃত্যুবরণ করেন কবি সুধীন্দ্রনাথ দত্ত। আজ তার ৫৪তম মৃত্যুবার্ষিকী। মৃত্যুদিন কবির প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি।


সুধীন্দ্রনাথ দত্ত ১৯০১ সালের ৩০ অক্টোবর কলকাতার হাতিবাগানে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম হীরেন্দ্রনাথ দত্ত এবং মায়ের নাম ইন্দুমতি বসুমল্লিক। সুধীন দত্তের বাল্যকাল কেটেছে কাশীতে। ১৯১৪ থেকে ১৯১৭ সাল পর্যন্ত কাশীর থিয়সফিক্যাল হাই স্কুলে অধ্যয়ন করেন। পরে কলকাতার ওরিয়েন্টাল সেমিনারি স্কুল থেকে ম্যাট্রিক পাশ করেন এবং স্কটিশ চার্চ কলেজ থেকে ১৯২২ সালে স্নাতক হন। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি সাহিত্য ও আইন বিভাগে ভর্তি হন। ১৯২৪ সাল পর্যন্ত যথারীতি পড়াশোনা চালিয়ে গেলেও কোনো বিষয়েই পরীক্ষা দেননি। গার্হস্থ্য ধর্মপালনে, সামাজিক আচারে কিংবা পঠন ও আলাপনে তাঁর আগ্রহ ও সংশ্লিষ্টতা ছিল একরকম ঈর্ষণীয়। ব্যক্তিগত কিংবা সামাজিক প্রতিষ্ঠার মোহ সুধীনকে কখনো আঁকড়ে ধরেনি; পিতার উত্তরসূরি এই দেশহিতৈষী সমাজ সেবায়ও একসময় আগ্রহ হারিয়েছেন সমাজ ও সমকালের অধোগতির ফলে। আর শেষত স্থিত হয়েছেন সর্বজনের প্রতি প্রসারিত কিন্তু একান্ত ব্যক্তিগত সাহিত্যচর্চার উদার জমিনে। সুধীন্দ্রনাথ দত্ত কৈশোরে কিংবা যৌবনের প্রথমপাদে ছোটগল্প এবং উপন্যাসের খসড়া তৈরি করলেও শেষপর্যন্ত কবিই হলেন।তার সাহিত্যসাধনার মূল ভিত্তি ছিল আত্মোপলব্ধি। ভ্রমণ-বৃত্তান্ত, পুস্তক-সমালোচনা, অনুবাদ, প্রবন্ধ এবং বিবিধ গদ্যও লিখেছেন তিনি। তাঁর সমকালের কবি ও বন্ধু বুদ্ধদেব বসু সুধীন্দ্রনাথকে বলেছেন-- “স্বভাবকবি নন, স্বাভাবিক কবি”।


কর্মজীবনে পিতার ল ফার্মে কিছুদিন শিক্ষানবিস হিসেবে থাকার পর সুধীন্দ্রনাথ দত্ত চাকরিজীবন শুরু করেন লাইট অব এশিয়া ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিতে। ১৯২৯ সালের ফেব্রুয়ারি-ডিসেম্বর মাসে রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে জাপান ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভ্রমণ করেন। ১৯৩১ সালে পরিচয় পত্রিকা সম্পাদনা শুরু করেন। স্টেটসম্যান ও শরৎ বসুর লিটারারি কাগজে কিছুদিন দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৫৭ থেকে ১৯৫৯ সাল পর্যন্ত শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করেন। ১৯৫৯ সালে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে তুলনামূলক সাহিত্য বিভাগের অধ্যাপক হিসেবে যোগ দেন।


১৯৩০ থেকে ১৯৪০-এই দশ বছর সুধীনের অধিকাংশ কাব্য রচনার জন্মকাল। তার প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ ছয়টি। তাঁর প্রথম কাব্যগ্রন্থ তন্বী প্রথম প্রকাশিত হয় ১৯৩০ সালে। এ ছাড়াও ১৯৩৫ সালে অর্কেষ্ট্রা, ১৯৩৭ সালে ক্রন্দসী, ১৯৪০ সালে উত্তর ফাল্গুনী, ১৯৫৩ সালে সংবর্ত এবং ১৯৫৬ সালে প্রকাশিত হয় দশমী কাব্যগ্রন্থটি। এছাড়াও তাঁর দুটি প্রবন্ধ গ্রন্থ আছেঃ ১। স্বগত (১৯৩৮) এবং ২। কুলায় ও কালপুরুষ (১৯৫৭)। সুধীন্দ্রনাথের লেখা ১৯০টি কবিতার মধ্যে “উটপাখি” কবিতাটি ১৯৩৭ সালে প্রকাশিত ক্রন্দসী কাব্যগ্রন্থের অন্তর্ভুক্ত। কবিতাটি আত্মবিবরণ, আত্মপ্রতিফলন আর সমাজ- পরিপ্রেক্ষিতে মানব জীবনে বাস্তবতা-কল্পনায় অবগাহনের ভাবনামিশ্রিত এবং বিচিত্র চিন্তা-জাগানিয়া বিবরণের বর্ণে মাখা। অভিভাবকীয় সুরে কবি এখানে নির্মাণ করেছেন কবিতার কথামালা; প্রাজ্ঞ এক সমাজ-বিশ্লেষক যেন বলছেন তাঁর দেখে-আসা সকল অনুভব, অভিজ্ঞতা আর পরামর্শের ব্যাপারাদি। কবিতাটির আরম্ভ হচ্ছে এভাবেঃ
আমার কথা কি শুনতে পাও না তুমি?
কেন মুখ গুঁজে আছ তবে মিছে ছলে?
কোথায় লুকাবে? ধূ ধূ করে মরুভূমি;
ক্ষ’য়ে ক্ষ’য়ে ছায়া ম’রে গেছে পদতলে।
আজ দিগন্তে মরীচিকাও যে নেই;
নির্বাক, নীল, নির্মম মহাকাশ।


কবিতায় তার চিন্তা ও নিজেকে ক্রমাগত অতিক্রমের এক অনিমেষ প্রেরণাকে চেতনায় ধারণ করে তিনি সামাজিক দুঃশাসন এবং সামাজিকের অবোধ্যতা-নির্বোধতাকে সরলপাঠে ও সাহসের সমাচারে তুলে ধরেছেন। মূলত, মেধা-মননের পরিচর্যায় এ সময়ের কবিরা কবিতাকে করে তোলেন অতি উচ্চ মার্গের শিল্পপ্রতিমারূপে এক্ষেত্রে অন্যতম পথিকৃতের ভূমিকা পালন করেন সুধীন দত্ত। তার কবিচিত্ত সমস্ত বিশ্ব-ব্রহ্মা- ঘুরে বীজ সংগ্রহ করেই নির্মাণ করেছে কাব্যের কল্পতরু। তিনি জগৎকে দেখেছেন নেতিবাচক দৃষ্টি দিয়ে। ফলে তার কবিতার সর্বত্রই নৈরাশ্য, হতাশা, ক্লান্তি, অবসাদের ছাপ স্পষ্টরূপে প্রতিভাত। জীবনানন্দ দাশ এ জন্যই বোধ করি তাঁকে ‘আধুনিক বাংলা কাব্যের সবচেয়ে নিরাশাকরোজ্জ্বল চেতনা বলে অভিহিত করেছিলেন’। নিজের কবিতাযাত্রা সম্বন্ধে তিনি লিখেছেন-- “আমি অন্ধকারে বদ্ধমূল, আলোর দিকে উঠছি”। অনুভবজ্ঞানের এই আত্মপ্রচার আমাদেরকে বিস্মিত ও শ্রদ্ধানত করে। সুধীন্দ্রনাথের কাব্য পাঠে আগ্রহী হলে ক্লিক করতে পারেন এখানেঃ
সূধীন্দ্রনাথ দত্তের কাব্যগ্রন্থ


১৯৬০ সালের ২৫ জুন কবি সুধীনন্দ্রনাথ দত্ত নিঃসন্তান অবস্থায় পরলোকগমন করেন। আজ তার ৫৪তম মৃত্যুবার্ষিকী। মৃত্যুদিন কবির প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি।
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে জুন, ২০১৪ সকাল ১১:২৭
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

লুঙ্গিসুট

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:২৪



ছোটবেলায় হরেক রঙের খেলা খেলেছি। লাটিম,চেঙ্গু পান্টি, ঘুড়ি,মার্বেল,আরো কত কি। আমার মতো আপনারাও খেলেছেন এগুলো।রোদ ঝড় বৃষ্টি কোনো বাধাই মানতাম না। আগে খেলা তারপর সব কিছু।
ছোটবেলায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বর্ণাক্ষরে লিখে রাখার মত মুফতি তাকি উসমানী সাহেবের কিছু কথা

লিখেছেন নতুন নকিব, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:২৫

স্বর্ণাক্ষরে লিখে রাখার মত মুফতি তাকি উসমানী সাহেবের কিছু কথা

ছবি কৃতজ্ঞতা: অন্তর্জাল।

একবার শাইখুল হাদিস মুফতি তাকি উসমানী দামাত বারাকাতুহুম সাহেবকে জিজ্ঞেস করা হল, জীবনের সারকথা কী? উত্তরে তিনি এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

=মৃত্যু কাছে, অথবা দূরেও নয়=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:০৭



©কাজী ফাতেমা ছবি
দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে দিয়ে বলি, আমারও সময় হবে যাবার
কি করে চলে যায় মানুষ হুটহাট, না বলে কয়ে,
মৃত্যু কী খুব কাছে নয়, অথবা খুব দূরে!
দূরে তবু ধরে নেই... ...বাকিটুকু পড়ুন

সবুজ চোখের মানুষের ধাঁধা

লিখেছেন করুণাধারা, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:২৯



এই ধাঁধার নাম সবুজ চোখের মানুষের ধাঁধা; নিচের লিংকে এটার ভিডিও আছে।

স্বৈরশাসকের বন্দী

এই ধাঁধাটি আমার ভালো লেগেছিল, তাই অনেক আগে আমার একটা পোস্টে এই ধাঁধাটি দিয়েছিলাম। কিন্তু সেই পোস্টে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইসলামের চার খলিফার ধারাবাহিকতা কে নির্ধারণ করেছেন?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১০:৩৭




সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ২৬ নং আয়াতের অনুবাদ-
২৬। বল হে সার্বভৈৗম শক্তির (রাজত্বের) মালিক আল্লাহ! তুমি যাকে ইচ্ছা ক্ষমতা (রাজত্ব) প্রদান কর এবং যার থেকে ইচ্ছা ক্ষমতা (রাজত্ব)... ...বাকিটুকু পড়ুন

×