প্রদীপটি অনেক দিন থেকেই মতির কাছে ছিলো।
আশ্চর্য মায়াবী এক প্রদীপ!
সোনা রূপায় নকশা করা,
দৃষ্টি নন্দন ও মনোরম —
যেমনটি কেউ কোনোদিন দেখেনি আগে।
সংসারে হঠাৎ করে যেভাবে পিঠার সাজের খোঁজ পড়ে,
কাপড়ের ভাঁজে রাখার জন্য ন্যাপথলিন,
কয়েল রাখার জন্য স্ট্যান্ড,
অথবা বোতাম সেলাইয়ের জন্য সুঁই সূতোর —
তেমন করেই অদ্ভুত সব মুহূর্তে প্রদীপটির কথা মনে পড়ে তার।
যখন চতুষ্পদি জন্তুর মতো মরণ ক্ষুধা নিয়ে
বারবার ডেকেও ওয়েটারের সাড়া পাওয়া যায় না,
অথচ ব্যাটা দিব্যি অন্য টেবিলে ঝুঁকে থাকে
ওদিকে মালদার কাস্টোমার আছে বলে।
পাবলিক বাসে বাঁদুড় ঝোলা হয়ে বাড়ি ফেরার পথে
একমাত্র সম্বল ছেঁড়া নোটটি নিয়ে
হেল্পারের ত্যাঁড়া কথা শুনতে হয়;
গলির মুখে অল্প বয়সী ছেলেগুলো যখন
অশালীন ভাষায় উঁচু গলায় আড্ডা দেয়,
সুন্দরী সংবাদ পাঠিকা যখন
নিরুত্তাপ গলায় পড়তে থাকে
দেশি-বিদেশি নাসকতার ফিরিস্তি,
নায়িকার সংসার বৃত্তান্ত,
নায়কের পরকীয়া,
ফাঁস হওয়া কোন রগরগে সংবাদ —
তখন অতি প্রিয় প্রদীপের কথা স্মরণ হয় তার।
টকশোতে আলোচ্য যত অতিকায় সমস্যা,
রাতের গভীরতার সমানুপাতে আরো অতিকায় হয়ে ওঠে —
বক্তারা যার কোন সমাধানই খুঁজে পান না,
প্রদীপের কাছে তা তুচ্ছ, সামান্য।
মতি জানে —
এ সবকিছুই সে ঠিক করে দিতে পারে এক লহমায়।
লোক ঠকানো দোকানদার,
সেলিব্রেটিদের ভাঙ্গা সংসার,
বেয়াড়া কিশোরের আচার,
রাজনীতির অনাচার,
দু'চোখে দুধসাদা চাঁদ নিয়ে
আইল্যান্ডের উপর উবু হয়ে বসে থাকা
নিঃসঙ্গ অশীতিপর বৃদ্ধার হাহাকার,
সব কিছু সে ঠিক করে দিতে পারে — সব।
কিন্তু —
কিছুই বলে না সে কাউকে।
মুখ বুঁজে ছেঁড়া নোটটা পকেটে ঢুকিয়ে রাখে।
ওয়েটারকে দ্বিতীয়বার না ডেকেই টেবিল থেকে উঠে পড়ে,
গলির পথটা এড়িয়ে চলে — যদি পারে।
খবরের কাগজ হাতে পৃষ্ঠা উলটে চলে যায় বিনোদন পাতায়,
নয়তো রিমোট টিপে চলে যায় সুন্দর কোনো সমুদ্র সৈকতে।
আর মাঝরাতে যদি কখনো ঘুম ভেঙ্গে যায়,
বুকের উপর থেকে সঙ্গীনীর হাত সরিয়ে
পা টিপে টিপে বেরিয়ে আসে নিশুতির কোলে,
নিশাকরের আলোয় বের করে তার জাদুর প্রদীপখানি,
সোনা রূপায় নকশা করা,
কি সুন্দর দৃষ্টি নন্দন ও মনোরম!
যেমনটি কেউ কোনোদিন দেখেনি আগে।
অতি সন্তর্পণে প্রদীপটিতে হাত বুলায় সে —
অতি সাবধানে।
পাছে দৈত্যটা জেগে ওঠে!
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ দুপুর ১২:২৯