সন্ধ্যা হয়ে গেছে। তাড়াতাড়ি বাস ধরতে হবে। তা না হলে অনেক রাত হয়ে যাবে। আমি আর আমার ছোট বোন রাইসা দাঁড়িয়ে আছি ফার্মগেটের বাস স্ট্যান্ডে। যাব বাসায়, উত্তরাতে। গুলশানগামী কিছু ৬ নং বাস ছাড়া উত্তরার কোন বাসের দেখা নাই। হঠাৎ আবির্ভাব হল দৃটো ৩ নং বাসের।'মহিলা সীট খালি নাই', বলেই টান দিল প্রথম গাড়িটা। ছুট লাগালাম দ্বতীয়টির দিকে। ছোট রাইসা আগে উঠল তারপর একজন লোক তারপর আমি। উঠেই দেখি সেই লোকটিকে রাইসা বকছে সাথে হাতও চলছে। ঘটনা বুঝতে বাকী থাকল না। প্রতিবাদ দেখে লোকটি ভিমড়ি খেয়ে কি করবে বুঝতে পারছিল না। সে চোরের মত চলে গেল বাসের পিছনে। আমরা বসে পড়লাম মহিলা সীটে। কাকলী পেরিয়ে যাবার পর সেই লোকটির পুরুষ সঙ্গী এসে তখন কী ঘটেছিল তা জানতে চাইল। রাইসা তাকে বলল যে, 'আপনি আপনার বন্ধুটিকেই জিজ্ঞাসা করুন।' সাথে সাথে শুরু হল লোকটির অকথ্য গালাগালি। তার ভাষ্যমতে আমরা যা করেছি তা মোটেও ভদ্রতা নয়। মেয়েরা কেন প্রতিবাদ করবে। তাও আবার গায়ে হাত দিয়ে! তাকে প্রশ্ন করলাম, 'আপনার বন্ধুটি যা করেছে সেটা ভদ্রতা?' তার কথা সে নিযে ভদ্র এবং তার বন্ধুটি ভাল ছেলে। ক্রমেই তার গলা চড়তে লাগল আর সাখে চলতে থাকল অশ্রাব্য গালিগালাজ। সে দু বছর আফ্রিকায় থেকেছে। সেখানে তো আরও খারাপ অবস্থা। কৈ সেখানকার মেয়েরাতো এভাবে প্রতিবাদ করে না। তার বৌ আছে সে তো এমন না। এ কথার সাখে সাখে আরেকজন বলে উঠল, ‘আরে আপনার বৌ এমন হতে যাবে কেন? এরা (আমরা) তো উসৃঙ্খল মেয়ে। এরা ফুটপাতে বসে থাকা. . . . . . .’
এদের সেই নোংরা কথা লেখা সম্ভব না। প্রথমে প্রতিবাদ করেই যাচ্ছিলাম। একসময় থেমে গেলাম। কুকুর তো ঘেউ ঘেউ করবেই। কামড়াবেও। আমরা তো কুকুর না। তাকে তো আর কামড়াতে যাব না। তবে লাথি তো মেরেছি। এখন যতক্ষণ পারে ঘেউ ঘেউ করুক।
কজন বয়স্ক লোক সেই লোকটির দোষারোপ করছিল কিন্তু সেটা জোড়ালো ছিল না।
একদল কাপুরুষ গলার জোড়ে নিজেদের পাপ পূণ্যে রূপান্তর করছে আর বাকীরা নীরবে সহজাতের এই কর্মকে সায় দিচ্ছে। কী ভ্রাতৃত্ববোধ!!!
অবশেষে তারা এম. ই. এস নামল। সাথে গালিগালাজটাও চলছিল। বাস চলা শুরু করেছিল। হঠাৎ সেই অপরাধী লোকটি যে , বাসে চোরের মত চুপ করে ছিল সে জানালা দিয়ে রাইসার চুল টেনে ধরল। রাইসা সরে গেলে সে আবারও হাত বাড়িয়ে দিল জানালা দিয়ে সাথে নোংরা গালী। এই লোকটি নাকী ভাল ছেলে। আর তার সেই সঙ্গী যে সমানে অশ্লীল কথা বলে গেল সে হচ্ছে ভদ্রলোক!!!!!!!!
সারাদিনে ক্লান্তি উড়ে গিয়ে সেখানে ভর করেছে বিষন্নতা। মানসিক কষ্টের কাছে ক্লান্তি যেন কিছুই না। সেই ছোটবেলা থেকে শুরু করে আজও পথে বাসে বিকৃত মনের পুরুষগুলোর নোংরামীর শীকার হতে হয়। ছোটবেলায় প্রতিবাদ করতে পারতাম না এখন পারি। কিন্তু শুধু গলা আর পুরুষত্বের জোড়ে এরা দাপড়িয়ে বেড়ায়। এরা একটা মেয়ের শৈশব থেকে জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপে মানসিক নির্যাতন করে যাচ্ছে। তারপরও মেয়েরা তো থেমে নাই। মনে পড়ে গেল সেলিনা হোসেনের সেই কথাটা, 'মেয়েরা তো জেগেই আছে। এখন দরকার পুরুষদের জেগে ওঠা'।
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে জানুয়ারি, ২০০৯ সকাল ১১:৪৩

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




