পঁচিশতম জন্মদিনে এসে আমার মনে হয়, যদি পঞ্চাশ বছর বাঁচি, তবে অর্ধেক পথ এরই মাঝে পার হয়ে এসেছি।
বড় নির্দয়ভাবে এই ভাবনাটাই কেবল মাথার ভেতর লাটিমের মত ঘুরতে থাকে। কিছুক্ষন এদিক ওদিক ডিগবাজি খেতে খেতে একটা কেন্দ্রে এসে ভাবনাটা স্থির হয়, এবং একই কেন্দ্রে ঘুরপাক খায় বলে সেটা ক্রমশঃ গভীরে যেতে থাকে- আর সেখানে যেন কাউন্ট ডাউন শুরু হয়ে যায়, পঁচিশ, চবি্বশ, তারপর তেইশ বাইশ একুশ...।
সতেরতম জন্মদিনে ঠিক এরকম একটা ভাবনার উদয় হয়েছিল মনে। ধারণা হচ্ছে, সেদিনও সম্ভবত আজকের মতই কিছু খরচ না করা অলস সময় জমে গিয়েছিল। শীতের সকালে খুব আরাম নিয়ে রোদ পোহানোর মত করে আদুরে ভঙ্গিতে আমি তাই ভাবনার লাটিম চরিয়ে বেড়াই। মনে পড়তে থাকে- সে দিনেও আমার এমনি মনে হয়েছিল যে সতের বছর পার হয়ে এসেছি!
আজকের দিনের সাথে তার পার্থক্য একটাই, সামনের অর্ধেক জীবনের কথা তখন মাথায় এসে বসেনি।
এই রকমের ভাবনাগুলোর ব্যাকগ্রাউন্ডে ফ্ল্যাশব্যাকের মত করে পুরনো স্মৃতিরা উঁকিঝুকি দেয়া শুরু করলে বেশ জমে ওঠে।
আমিও তাই ভাল মতন জমিয়ে যাই। মস্তিষ্কের মজাটাই এই- সে প্রায় সব স্মৃতিই জমা করে রাখে। ডেস্কটপে ফেলে রাখা আনইউজড আইকনের মত মাঝে কিছু কিছু ডিলিট করে দেয় বটে, তবে সেটা শিফট+ডিলিট নয় কোনমতেই। তাই খানিকটা চেষ্টা করলে সেসব রিট্রিভ করা যায়।
আর এই রিট্রিভের প্রক্রিয়াটা অনেকটা সার বেঁধে সাজিয়ে রাখা তাসের মতন, একটা টোকা দিলেই সরসর করে একের পর এক সব গড়িয়ে পড়তে থাকে।
মনের ভেতর গড়িয়ে পড়া ফ্ল্যাশব্যাকগুলো থেকে হঠাৎ হঠাৎ দু'একটাকে পওজ করে থামিয়ে দেই। ডানে বামে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে ত্রিমাত্রিক ভঙ্গিতে দেখি তাদের। না না, চতুর্মাত্রিক হবে দেখাটা, সময়ও যে থাকে সাথে! দেখতে দেখতে ভাবতেও ভাল লাগে- এতদিন পরেও তারা প্রায় একই রকম অনুভূতির জন্ম দেয় মনে, ঠিক প্রথমার মতন। কখনো টুপুর টাপুর কখনো মুষলধারে হাসতে থাকি আমি, অথবা কখনো চুপ করে নীরব জোছনায় ভেসে যাই।
তো, বলছিলাম, সতেরতম জন্মদিনটির কথা। সেদিন খানিকটা থমকে পেছনে তাকিয়েছিলাম, আর ঠিক আট বছর বাদে আজ আবার সময় হলো তাকানোর।
সতের মনে আছে, তবে আঠারো নেই একদমই।
অথচ আঠারো নিয়ে কতই না মাতামাতি- গল্পে কবিতায় আর গানে, এদেশের বুকে আঠারো আসে নেমে। কিন্তু কেমন করে আঠারোকেই অবহেলা করা হয়েছে সবচেয়ে বেশি। একবার নির্ঘুম রাত কাটিয়ে সকাল বেলা ট্রেনে চেপেছিলাম, জানালা দিয়ে বাইরেটা দেখতে দেখতে কাঁচের গায়ে মাথা ঠেকিয়ে কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছি! হঠাৎ চমকে ঘুম ভেঙ্গে দেখি, স্টেশান পার হয়ে গেছে আগেই, অথচ নামা হয় নি আমার।
ঠিক একই চমক নিয়ে আজ আঠারোর কথা ভাবি। কোন আবেগ কিংবা আবেশে মাতা হলো না তেমন করে। কাঠঠোকরা পাখির মত একাগ্রতায় ঠক ঠক করে গুনে ফেলেছি আঠারো ঊনিশ বিশ- , কোনখানে থামবার কথা মনে হয়নি একবারো।
আজ তাই অল্প স্বল্প দুঃখ বোধ হয়- যদি মনে পড়তো- শেরপা তেনজিং এর মতন গর্বিত ভঙ্গিতে না হলেও, খানিকটা সংকোচ নিয়ে আঠারোর বুকে একটা পতাকা গেঁথে দেয়া যেত।
শহুরে জীবনের কল ঘুরিয়ে মাঝে মাঝেই এরকম শাওয়ারে ভিজে নিতে ভাল লাগে, চোখ বুজে নীপবনের শান্তি খুঁজে নেবার চেষ্টা চালানো যায়।
আপাতত লাটিম থেমে যায়, হাতের সুতো তাতে জড়িয়ে নিতে নিতে ভাবি- আরো বছর পঁচিশেক এরকম নবধারাজলে ভিজতে পারলে মন্দ হয় না বটে!
-----------------------
আজ আমার জন্মদিন নয়। এই লেখাটা জন্মদিনের সমকালীন লেখা, লিখেছি অনলাইন ম্যাগাজিন [link|http://www.beekkhan.com/others/monerghuri.html|ex

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।

