ভয়ঙ্কর রকম মটরবাইক এক্সিডেন্ট করলাম। জ্ঞান ফেরার পর থেকে সবাই কে বললাম, বাইক ক্রাস করার কিছু আগে আমি ব্লাক আউট হয়ে গেছিলাম। কাছের মানুষজনদের কেউ কেউ বলল, জিনে ভর করছিল বা নজর লাগছিল। না হলে এতো ঠান্ডা মাথার ছেলেটা কিভাবে শহরের ভেতর এক্সিডেন্ট করে।
আমিও সায় দিলাম। তোমরা 'বুঝ' দাও। দেখ কে কি বলে।
কমন প্রশ্ন: ছেলেটা এক্সিডেন্ট করল। কখনও এমন হয় না। এর আগে পিছে কি ঘটনা? ঘটনা কেউ ঘটালে তার পরিচয়ের হিন্টস দেন।
বুঝ দেবার পর কবিরাজদের ভাষ্য:
কবিরাজ ১(হোমিও প্যাথি ডাক্তার): কোন চালান টালান নাই। জিন ভূতের ব্যাপার না। উটতি বয়স তো। উরাধূরা চালায়ছে। ব্যালেন্স করতে পারেনি। তাই এক্সিডেন্ট হসে। (উল্লেখ্য আমি উটতি বয়সের পোলাপান না, উরাধূরা বাইক চালাইনি।)
কবিরাজ ২ (উত্তর-দক্ষিণ , বন্ধু মারফত): সে মাঝে মধ্যে যার সাথে দেখা সাক্ষাত করে। খুব পছন্দ করে এবং ভালবাসে। তার পরিবার থেকে করা হয়েছে। খুব কাছাকাছি বাসা। শুধু ঐ দিন চালান দেয়নি। অনেক আগে থেকেই ক্ষতি করার চেষ্টা করে যাচ্ছে। তার যাদু এখনও চালু আছে। যাদুর করনে সুস্থ্য হতে অনেক সময় লাগবে। গায়ে অসহ্য ব্যথা।
কবিরাজ ৩ (সা_ _গ্রাম): কালযাদু করা হইছে। অনেক আগে থেকে চেষ্টা করে যাচ্ছে। আর্থিক ক্ষতি, শারিরীক ক্ষতি করার। ছেলে দোয়া দরুদের উপর থাকে, তাই খুব একটা সুবিধা করতে পারেনা। এবার সুযোগ বুঝে বড় চালান দিছে। যাদু কাটাতে মানে তাবিজ তুলতে ১৭হাজার ১ টাকা লাগবে। ৩দিন সময় লাগবে। আপনার বাসার উত্তরে থাকে তারা, সেই আত্মীয় আপনার কাছের লোক।
কবিরাজ ৪ (গাবতলী): এবারই প্রথম না। আগেও করছে। কিন্তু তেমন ক্ষতি হয়নি। চালান দেবার কারনে মটরসাইকেলের কন্ট্রোল ছিল না। ছেলে এক্সিডেন্ট করছে। যাদু করছে আত্মীয়ের ভেতরে। আপনার বাসার উত্তরে থাকে। নারী ঘটিত ব্যপার। 'ত' নামের এক ছেলে করছে। ১২ হাজার টাকার খরচা আসবি। সব তুলে নষ্ট করে দিমু।
কবিরাজ ৫ (৮ সং সেক্টর): ছেলের নিজ আত্মীয়ের ভেতর থেকে করছে। কুফরি করছে। গোরস্তান আর শশ্বানে করনীয় জিনিস ফেলা আছে। পারিবারিক শত্রুতা থেকে করছে। ঐগুলা যত নষ্ট হতে ধরবে, ছেলেটা ততই মৃত্যুর দিকে যাবে। ঐ রাতে জিন চালান দিছে, যাতে রোডেই শেষ হয়। সবাই নরমাল রোড এক্সিডেন্ট ভাববে। এটা কাটাতে ৩ মাস তদবির লাগবে।

যাই হোক একেক জনের কাছ থেকে একেক তথ্য পেয়ে অবাক হলাম, অনেকটা মেনেও নিলাম। কারন আমার মায়াবীর বাসস্থান আমার বাসার উত্তরে, একই ওয়ার্ডে, একই শহরে, তার জামায়ের নাম 'ত' দিয়ে শুরু। আমার সাথে সেই ব্যক্তির শত্রুতা অপ্রকাশ্য কিন্তু আসলে সাপে নেউলে । কবিরাজ রা যা বলছে, তা সত্যিও হতে পারে। আমি ঠিক জানি না, আল্লাহ ভাল জানেন।
যা হোক, আমার নাড়ি নক্ষত্রের সব কিছু মায়াবী জানে, আমি জানাই। কিন্তু কবিরাজের এই ভাষ্যগুলো আমি জানাইনি। ওর মন খারাপ হবে তাই। সব কিছুর ঊর্দ্ধে মায়াবীর ভাল থাকা চাই। ও সব সময়ই ভাল থাকুক, সেটাই চাওয়া। সে চাওয়াটা ওর-ও।
আমার এক্সিডেন্টের খবরে লম্বা সময় নফল নামায় আদায় করেছে। মানত করেছে, রোজা রেখেছে। দান খয়রাত করেছে... প্রতিদিন আপডেট পাওয়ার জন্যে হাজার বার মোবাইল চেক করেছে। চোখে পানি চলে আসে এটা ভেবে, দুনিয়াতে এমন একজন হলেও আমার জন্যে নিস্বার্থ ভাবে ভালবাসে কাদে, ফিল করে, দোয়া মাঙ্গে, রাতের পর রাত নির্ঘূম কাটায়, নিজের সংসারে থেকে অন্য দুনিয়ায় বাস করে।
আমাদের এত বছরের প্রেমে কোন অপবিত্রতা নেই। এটাকে পরক্রীয়া বলতে রাজি না। দুজনেই খোদার হুকুমের অপেক্ষায় নিজেদের তিলে তিলে শেষ করে দিচ্ছি। দিন শেষে সমাজ সংসারের জন্যে আমাদের এ বিষর্জন। দূরে থেকেও আমরা সবথেকে কাছে, অন্তরে নিয়ে ঘুরি। আমার জীবনে একজনই ছিল, আছে, থাকবে।
আমার ইবাদতের জন্যে এক আল্লাই যথেষ্ট। আমার সবটুকু ভালবাসার জন্যে এক মায়াবী-ই যথেষ্ট।
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই এপ্রিল, ২০২৫ দুপুর ২:৫২

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




