ভাল স্কুল খারাপ স্কুল বলে আমার কোন ধারনা ছিল না। কিন্ডারগার্ডেনে যখন ক্লাস ২ তে। মা আমাকে রাত দিন পড়ালো ভাল স্কুলে এডমিশন টেস্ট দেবার জন্যে। হেরিকেন জালিয়ে বা কারেন্ট থাকলে বাতি জ্বালিয়ে সারা সন্ধ্যা পড়তে হত। সকালে বিকেলে সব সময়। অন্তত হাফ ইয়ার্লি পরীক্ষা শেষের পর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত। খেলাধুলা বলে কোন শব্দ নেই।
প্রথমবার এত ভাল প্রিপারেশন থাকা স্বত্তেও সেই বিখ্যাত স্কুলে ভর্তি হতে পারলাম না। আমি সেই আগের কিন্ডারগার্ডেন স্কুলে ক্লাস থ্রি তে ২য় হই। পড়াশুনা চালিয়ে যাই। পরের বছর আব্বা নিজেই ফরম তুলে এডমিশনের আগের ৫-৬ দিন পড়ালেন অফিস শেষ করে এসে।

তখন ১৯৯১। এডমিশন হল। আমি টিকে গেলাম। আমার সিরিয়াল প্রথম দিকে। আব্বার ধারনা ছিল না যে আমি চানস পাব। আগের বার এত এত প্রস্তুতি আর এবার প্রস্তুতি ছাড়া। আব্বা ছোট একটা চাকরি করতেন। টেনেটুনে চলত সংসার। আমাদের কোন বিলাশিতা ছিল না। বিলাশিতা বলতে, নতুন সিনেমা আসলে সিনেমা হলে গিয়ে সিনেমা দেখা।
আব্বা কারও কাছে আমার ভর্তির জন্যে টাকা পেলেন না। শেষে হাত ঘরি ২৫০টাকায় বিক্রি করলেন। আমাকে সহ স্কুলে গিয়ে ২২০টাকায় ভর্তি করালেন। যেহেতু টাকা ম্যানেজ করতে দেরি হয়েছিল, আমার মেধাতালিকা শুরু দিকে থাকলেও, দেরিতে যাওয়াতে ক্লাস রোল হল ১৫ সেকশন সি তে। আমাকে এক বছর লস করতে হল একটা ভাল সনামধন্য বিদ্যালয়ে ভর্তির জন্যে। ক্লাস থ্রির পড়া দুবছর পড়লাম।
নতুন স্কুল, ড্রেস কোড আলাদা। আমাকে নতুন ড্রেস বানিয়ে দিতে চিন্তায় পড়তে হল। আব্বার বেতন হতে প্রায় ১ মাস দেরি। তখন মা টাকা দিলো। মা সেলাই করত আবার বাটিকের কাজও করত, মার্কেটে আব্বা সাপলাই দিত। সেই জমানো টাকায় আমার ১ জোড়া স্কুল ড্রেস হল, ব্যাগ, জুতা, মুজা এসব কেনা হল।
আমি নতুন পরিবেশে নতুন করে বেড়ে উঠতে থাকলাম। কিন্তু দিনে দিনে আমার শরীর ভীষণ খারাপ করল। তারওপর গান শেখার মাস্টার, কোরআন শেখার ওস্তাদ আবার বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রে বিকেল করে যাওয়া। আমি আর পেরে উঠছিলাম না।
আমার শরীর খারাপ দেখে আব্বা ঢাকায় নিয়ে গেল ড. এম আর খানের কাছে। আমার হাই রিমুটিক ফিভার ধরা পড়ল। অসুস্থ্য শরীর আর গান বাজনা কুরআন শেখা সব মিলিয়ে আমি রেজাল্ট খারাপ করলাম। ক্লাস রোল আরও পেছাল।
কপালকুন্ড বলে কথা...
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৫ বিকাল ৫:৪৯

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




