যখন ক্লাস সিক্সের শেষের দিকে, এলাকায় এক জুডো মাস্টার আসল ফ্রি ক্যারাতের ট্রেনিং দিবে। আমার বয়সী বা আমার চেয়ে বয়সে বড় কিশোর তরুনদের শেখাবে। ২০ জনের টিম হয়ে গেল। যাদের আগ্রহ আছে তারা ৬ মাস পরের ট্রেনিং টিম এ জয়েন করবে। আমি প্রতিদিন বিকেলে যেদিন বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রে যেতে হত না, গিয়ে চুপিচুপি দেখতাম।
পরের দিন ভোরে উঠে বাসায় সে ব্যায়াম আর কসরত প্রাকটিস করতাম। দেখলাম প্রায় ২০ টার ওপর ব্যায়াম র্আর শারীরিক কসরত শেখায়। এদিকে আমি বিভিন্ন রচনা বই কালেক্ট করলাম। শরীর এবং শরীর বৃত্তীয় সম্পর্কিত লেখা পড়তে থাকলাম। সুস্বাস্থ্যই সকল সুখের মূল টাইপের রচনা। বার্ষিক পরীক্ষা শেষে আব্বা নিলামের মাধ্যমে এক ট্রাক কাঠ কিনল। বাসার বরই গাছের পেছনের গলিতে সব রাখা হল।
কাঠ গুলো মধ্যে ছিল, একটা ঝড়ে উপরে যাওয়া আম গাছ, কিছু কড়্ই গাছের ডাল, আর কিছু ভাঙ্গা তক্তা, চেয়ার টেবিল, পুরান বাঁশ এই সব। অফিসের পিয়ন কাইয়ূম কাকু পরের দিন দুপুর ৩ টার দিকে আসল কাঠ চিরতে। তিনি আম গাছের গুড়িটা দিয়ে শুরু করলেন। পর পর ৩ দিন এসে সেউ গুড়িটা চিড়ে খড়ি বানিয়ে ফেললেন। আর আমি সেগুলো টিনের চালায় শুকাতে দিতাম। আব্বা কাইয়ূম কাকুকে নাস্তার টাকা দিতেন। কিন্তু ৩ দিন পর থেকে তিনি আর আসলেন না। ওনার নাকি গা ব্যাথা করে।
যাই হোক, এবার আমার পালা। আমি বাঁশ, পুরান তক্তা, চেয়ার টেবিল, ছোট ডাল পালা দা দিয়ে কয়েক দিনে সাবার করে ফেললাম। হাতে কয়েকটা ফোসা পরে গেল। কিন্তু কাজ টা করে মজা পাচ্ছিলাম।
এর ভেতরে বৃষ্টি হল। বাকি অংশ পানিতে ভিজে চুপচুপে। কয়েক দিন গ্যাপ দিয়ে, আম আর কড়ই গাছের মোটা মােটা ডালপালা সব চিরে খতম। এর ভেতরে স্কুল খুলল। প্রায় ২ মাসে একটু একটু করে আমি সব চিরে ফেললাম। এদিকে আমার তখন বাড়ন্ত শরীর। কাঠ চিরে অন্যান্য কাজ করে, মোটামুটি আমি খাদক হয়ে গেলাম। আমার বাই সেপ ট্রাই সেপে অনেক কটা খাজ দেখতে পেলাম। পিঠ আর কাধটা সাপের ফনার মত চওড়া হয়ে গেল। আয়নায় নিজের শরীর দেখতে ভালই লাগত।
দেখতে দেখতে নিউ টেন এ উঠলাম। সব ভালই চলছিল। বিরক্তির কারন হল মুখে হালকা গোফ গাঢ় হতে ধরল আর যেখানে সেখানে ব্রণ। আব্বা গ্যাকোট্যাচ সাবান আর কনস নামে ক্রিম এনে দিল। সেগুলো মেখে কিছু দিনের মধ্যে আমি ব্রণমুক্ত মুখ পেলাম। কোন দাগ নেই। মুখ পরিষ্কার হওয়াতে গোফ আরও স্পষ্ট হয়ে উঠল। তখন বড়দের সামনে যেতে লজ্জা লাগত।
আমার অনেক বন্ধুরা তখন রীতিমত ক্লিন সেভ করে স্কুলে আসত। যেদিন ম্যাডামের ক্লাস থাকত, সেদিন ওরা ক্লিন সেভ করে লোশান মেখে আসত। ভুর ভুর করে সুন্দর ঘ্রান ভেসে বেড়াত। নিজেরও লোভ হত। কিন্তু আমার উপায় নাই। আব্বা সেলুনে ক্লিন হয়ে আসে। বাসায় কোন কিছু নেই।
যাইহোক, ওল্ড টেন বা টেন এ উঠে আর ভাল লাগছিল না। গোফগুলো ঠোট পর্যন্ত বড় হলো। মা একদিন বলেই ফেলল, মোচগুলা বড় হইছে, কেচি দিয়ে সাইজ কর। আমি চুপে চুপে একদিন ভোরে সবাই জাগার আগে কেচি দিয়ে কাটলাম।
আমার ছোট বোনটা আমাকে দেখে আর ঠোট টিপে হাসে। নানীও তাই... আব্বা খেয়াল করল কিন্তু কিছু বলল না। পরে এসএসসি পরীক্ষা শেষে (১৯৯৯, এপ্রিল) সেলুনে গিয়ে বললাম, কাকা খুর আছে? প্রথমবার দাড়ি সেভ করব যাতে সব ঘন হয়। কাকা ব্লেড দিয়ে সবার সেভ করে। খুজে খুজে খুর বের করে আমার প্রথম দাড়ি গোফ সেভ করল। বাসায় ফেরার পর আমি নন স্টপ ২দিন শুয়ে থাকলাম লজ্জায় কাঁথা মুড়ি দিয়ে।

তারপর কোন একদিন ১৮টাকায় একটা সাধারন চায়না রেজার কিনলাম। গোফ দাড়ি সাবান দিয়ে মেখে চেছে ফেলতাম। কোন সেভিং ফোম, লোশান কিছুই ছিল না। ১ টাকার ব্লেডে নিয়মিত চলতে থাকল। বলার মত কিছু না, তবুও কেন যেন লিখলাম।
নিম্ন মধ্যবিত্ত ঘরের সন্তান ছিলাম আমি... কপালকুন্ড বলে কথা...
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা মে, ২০২৫ বিকাল ৪:৩৪

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




