somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

হোম কোয়ারেন্টাইন - দরকার মানসিক সুস্থতা

০৮ ই এপ্রিল, ২০২০ বিকাল ৫:২৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



আজ ২০ তম দিন যাচ্ছে বাসায় বন্দী । স্বাভাবিক সময়ে একদিন সারাদিন বাসায় থাকলেই দম বন্ধ লাগতো আর সেখানে এক মাস হতে চললো । সেই হিসেবে এই ২০ দিনে তো পাগলপ্রায় হয়ে যাওয়ার কথা । কিন্তু আল্লাহ্‌ এর রহমতে ভালোই আছি আলহামদুলিল্লাহ । আসলে জীবন জীবিকার খাতিরে কাজ কর্ম পড়াশোনা করতে করতে সবকিছু থেকে এইরকম লম্বা ছুটি সেই স্কুল এর পরে থেকে আর পাওয়া হয়নি । তাই এই সুযোগে শরীর আর মন দুটোই তাঁদেরকে একটু বিশ্রাম দিয়ে নিচ্ছে । এটাই আল্লাহ্‌র রহমত যে টিকে আছি তা না হলে এই কঠিন সময়টা পার করা আসলেই দুঃসাধ্য । বিশেষ করে মন মহাশয় যদি একবার বেঁকে বসে তো আর রক্ষা নেই।

একেবারেই যে নিশ্চিন্ত হয়ে বসে আছি ঠিক তাও নয় । মাঝে মাঝে চিন্তা ভাবনা আসে । ভয় হয় নিজেকে নিয়ে এবং আপনজনদের নিয়ে, সবাইকে নিয়ে । কবে কখন কোথায় গিয়ে থামবে এই মৃত্যুর মিছিল কেউ বলতে পারিনা । তারপর কি হবে ? সব যেন আবার নতুন করে শুরু করতে হবে অনেকটা । তবে এখন আগে বেঁচে থাকার চিন্তা ও চেষ্টা । মাঝে মাঝে মনে হয় যদি মরে যাই নিজেই । তখন ভাবি কি কি আছে গুছানোর । এখনও গুছাইনি কিছু । তবে যে হারে সংখ্যা বাড়ছে, ভয় বাড়ছে, হয়তো খুব শীঘ্রই গুছাবো কিছু ব্যক্তিগত বিষয় । অনেকে দেখছি ক্ষমা চেয়ে ফেসবুকে পোষ্ট দিচ্ছে । আমি অবশ্য এখনও দেইনি এমন কিছু । তবে আল্লাহ্‌র কাছে প্রতিনিয়ত ক্ষমা চাই ।
এমন অবস্থায় শুধু আমি না প্রতিটি মানুষ খুব মানসিক কষ্টে আছে । একদিকে মৃত্যু ভয় আরেকদিকে খাবারের চিন্তা । কি নির্মম পরিস্থিতি । বাহিরে গেলে করোনা হয়ে মরার ভয় আর ভেতরে থাকলে না খেয়ে মরার ভয় । আল্লাহ্‌ মাফ করুন ।

এইরকম যখন পরিস্থিতি মানসিক ভাবে সুস্থ থাকাটা খুব কঠিন । তবে এটা এখন সবচেয়ে জরুরী, মানসিক সুস্থতা। এই সময়ে আমরা এখন আগের চাইতে বেশী সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম গুলোতে বেশী একটিভ, বিশেষ করে ফেসবুক । আর এই ফেসবুকেই কিছু গর্দভ আবোল তাবোল লিখে মানুষের শান্তি আরও নষ্ট করছে । এই যেমন, দুইদিন আগে এক পোষ্ট দেখলাম একজন তিনমাস পরের ঢাকার চিত্র বর্ণনা দিয়েছেন, রাস্তায় রাস্তায় লাশ পরে আছে, ঘরে খাবার নেই, বাচ্চা কাঁদছে আরও বিদঘুটে সেই বর্ণনা । এটা সত্যি কিছু দেশে আসলেই এই চিত্রই বাস্তব কিন্তু তাই বলে নিজেদেরকে নিয়ে অগ্রিম এসব বলে কেন মনের শান্তি নষ্ট করা । এইরকম দু একটা লেখা ও করোনা নিয়ে দু একজনের সাথে নেগেটিভ কথাবার্তা বলে মানসিক অবস্থা খুব খারাপ লাগছিলো । তখন ফেসবুকে করোনা নিয়ে সব পেজ ও গ্রুপ লিভ করি, কিছু নিউজ পেজও আনলাইক করি, ও পরিচিতজন দের সাথেও এ বিষয়ে আলাপ বন্ধ করে দেই । দেখলাম তারপর থেকে আল্লাহ্‌ এর রহমতে আর সমস্যা হচ্ছেনা । তবে দিনে একবার দুবার খবর দেখে আপডেট নেই ।

সবার আগে এখন যেটা করনীয় ঘরে থাকা আর আল্লাহ্‌ কে ডাকা যেন তিনি এই বিপদ দূর করে দেন । তিনিই সব । পাশাপাশি শরীরটা যেন ভালো থাকে তাঁর জন্য কিছু সাস্থবিধি মেনে চলা আর মনে সাহস রাখা ও আল্লাহ্‌র উপর ভরসা রাখা । আল্লাহ্‌র সাহায্য নিকটে, খুব নিকটে । এমনিতেই তো করোনা কে নিয়ন্ত্রণ করতে পারছিনা অন্তত মনে তো সাহস রাখা দরকার যেন কঠিন সময়টা সহজে পার করতে পারি । যে কোন কঠিন সময়ে দুটা কথা শোনানোর কিংবা আরও হতাশ করে দেওয়ার মত মানুষের অভাব থাকেনা কিন্তু কেউযে একজন সাহস দিবে ভরসা দিবে আর কিছু না পারলেও অন্তত মনের শক্তিটা বাড়াবে তেমন কেউ থাকেনা ।

কোন কিছুই স্থায়ী নয় একসময় না একসময় এই করোনাও চলে যাবে কিন্তু এই সময়টুকুতে সাহস রাখতে হবে আল্লাহ্‌র উপর ভরসা রাখতে হবে যেন লকডাউন এর সময়টুকুতে মানসিক ভাবে সুস্থ থাকা যায় । মানসিক ভাবে ভেঙ্গে পরলে বিপদ মোকাবেলা করা আরও কঠিন হয়ে যায় । তাঁর আমরা যে যেভাবেই পারি একটু সাহস দেই সবাইকে । গুজব আর নেতিবাচকতা না ছড়িয়ে ইতিবাচক বিষয়াদি নিয়ে কথা বলি ও সেগুলো ছড়িয়ে দেই সবার মাঝে যেন মানসিক ভাবে যেন ভেঙ্গে না পরি আমরা । তাই এই সময়ে সবাই

** সৃষ্টিকর্তা কে ডাকুন, তিনিই বিপদ দূর করে দিবেন ইনশাআল্লাহ আপনার এবং আপনার পরিবারের সর্বোপরি আমাদের সবার । কিন্তু তাঁকে মন থেকে স্মরণ করতে হবে নামাজ পড়ে ক্ষমা চাইতে হবে তবেই মিলবে শান্তি । এই উসিলায় সৃষ্টিকর্তার সাথে আপনার সম্পর্ক গড়ে তুলুন ।

** ইউটিউব এ বিভিন্ন ইসলামিক স্কলারদের মোটিভেশনাল বক্তব্য আছে সেগুলো শুনুন, তাতে মনে সাহস বাড়ে, মনে প্রশান্তি পাওয়া যায় ও বিপদে টিকে থাকা সহজ হয়।

** ঘরের কাজকর্ম গুলো সবাই মিলেমিশে করুন, কাজের লোক না থাকার কারনে যেন ঘরের কর্ত্রীকেই সব একা করতে না হয় । তাঁকে সাহায্য করুন । পড়াশোনা করুন, জানুন নতুন নতুন বিষয়, আপনার যত জ্ঞান বাড়বে ততই কিন্তু আপনি অন্যদের চেয়ে সবজায়গায় এগিয়ে থাকবেন ।

** এর আগে কখনোই বাবা মা ভাই বোন স্বামী স্ত্রী সব একসাথে এতদিন এভাবে থাকা হয়নি । এই সময়ে সবারই মানসিক অবস্থা খারাপ বিশেষ করে বাসার দায়িত্ব যাদের কাঁধে। তাই সবারই টুকটাক রাগ বা মেজাজ হওয়াটা খুব স্বাভাবিক । চেষ্টা করুন সবাই মিলেমিশে থাকতে রাগ বা মেজাজ না দেখিয়ে ঠাণ্ডা থাকতে আর যদি কেউ দেখায়ও আপনি ঠাণ্ডা থাকুন তাঁর অবস্থা বুঝে।

** অনেকেরই রাতে ঘুমুতে সমস্যা হচ্ছে । ঘুম আসেনা দেখা গেলো ভোর হয়ে যাচ্ছে । চেষ্টা করুন মাথাটা ঠাণ্ডা করে মোবাইলটা দূরে রেখে ঘুম দেওয়া যায় কিনা । ঠিকমত ঘুম খুব দরকার শরীর ও মন ভালো রাখার জন্য ।

** ঠিকমত খাওয়া দাওয়া করুন । শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করুন । আল্লাহ্‌ না করুক যদি কিছু হয়েও যায় যেন সুস্থ হয়ে ফিরে আসতে পারেন ।

** নিজের কোন শখ বা বিশেষ কোন বিষয় জানা থাকলে সেটাতে মনোনিবেশ করুন । এমনিতে সময় না থাকার কারনে হয়তো নিজের বিশেষ গুণটাকে কাজে লাগানো হয়না এই সুযোগে কাজে লাগান সময় ও মেধা ।

** যারা ইংরিজেতে দুর্বল তাঁরা প্র্যাকটিস করুন বেশী বেশী , আরও কিছু অফিসিয়াল বিষয় শিখে নিতে পারেন ইউটিউব দেখে । নিজেকে ইম্প্রুভ করুন, যদি বেঁচে থাকেন করোনা পরবর্তী সময়ে চাকরী নিয়ে যে টানাটানিতে পরতে হবে তখন আপনার এই ইম্প্রুভমেন্ট আপনাকে ভালো কোন চাকরী পেতে কিংবা বর্তমান চাকরী টিকিয়ে রাখতে সাহায্য করবে ।

** যত সম্ভব ফেসবুক কম ব্যাবহার করুন আর গুজবে কান দিবেন না । আর নেগিটিভিটি এড়িয়ে চলুন ।

** রাস্তায় মানুষ মরে পরে আছে, করোনা আক্রান্ত রোগী কিভাবে কষ্ট পাচ্ছে, এ ধরনের ভিডিও শেয়ার দিবেন না । এতে আপনার আসলেই কোন লাভ হচ্ছেনা । আমরা এখন সবাই এর ভয়াবহতা নিয়ে জানি এগুলো দেখে মানুষ সাবধান কম আতংকিত হয় বেশী । আতঙ্ক বাড়াবেন না ।

** নিজেরা কি খাচ্ছেন কি করছেন এগুলো কম শেয়ার করুন । এই অবস্থায় অনেকেই খেতে পাচ্ছেনা, বা ডাল ভাত খেয়ে আছে আবার অনেকেই বাবা মা থেকে দূরে আপনজন থেকে দূরে একা আছে । আপনি হয়তো অনেক ভালো খাচ্ছেন ও ভালো আছেন সবাইকে নিয়ে কিন্তু আপনার এসব দেখে যেন কারও হতাশা আর দীর্ঘশ্বাস না বাড়ে ।

** নিজের গরীব আত্মীয় স্বজনদের খোঁজ খবর নিন তাঁদের ঘরে খাবার আছে কিনা । নিজে একটু ভালো খাবার কম খেয়ে তাঁদেরকে সাহায্য করুন আর জমানো টাকা যতটুকু সম্ভব কম খরচ করুন । একদম প্রয়োজন ছাড়া টাকা খরচ করবেন না । কতদিন এভাবে থাকতে হবে আমরা কেউ জানিনা তাই টাকা হাতে রাখুন ।

** নিজের মন কে প্রশ্রয় দিবেন না । মন কিন্তু সুযোগ খুজবে চিন্তা করার, হতাশ হবার । যখনই এমন হবে মনকে ঘুরিয়ে ফেলুন ভালো কোন দিকে ।

সবশেষের যে কথা, বাইরে যাবেন না একদম প্রয়োজন ছাড়া । এই কিছুদিন কম খান বা পরিমিত খান বা পছন্দের খাবার না খান তবুও ঘরে থাকুন । বেঁচে থাকলে আবার সব পাবেন। এই কথা আসলে কেন আমাদেরকে এত বলা লাগছে বুঝিনা মরার ভয় কি নেই আমাদের ? নিজের জন্য না হোক নিজের আপনজনদের জন্য তো চিন্তা করি । । আর করোনা মোকাবেলার সাথে সাথে এই লকডাউন এর সময়ে মানসিক ভাবে শক্ত থাকাটাও একটা বিশাল চ্যালেঞ্জ । তাই নিজে চেষ্টা করুন মানসিক ভাবে সুস্থ থাকতে সাথে সাথে অন্যকেও সাহায্য করুন । আপনার আমার সম্মিলিত প্রচেষ্টাতেই সম্ভব এই বিপদ কাটিয়ে উঠা ।
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই এপ্রিল, ২০২০ বিকাল ৫:৪৪
৭টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমার প্রফেশনাল জীবনের ত্যাক্ত কথন :(

লিখেছেন সোহানী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ৯:৫৪



আমার প্রফেশনাল জীবন বরাবরেই ভয়াবহ চ্যালেন্জর ছিল। প্রায় প্রতিটা চাকরীতে আমি রীতিমত যুদ্ধ করে গেছি। আমার সেই প্রফেশনাল জীবন নিয়ে বেশ কিছু লিখাও লিখেছিলাম। অনেকদিন পর আবারো এমন কিছু নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×