somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

AIDS সচেতনতাই সাইকেলে ১১৪ টি দেশে পাড়ি বাঙালি যুবকের

০১ লা জানুয়ারি, ২০১৬ দুপুর ১:৩২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

২ লক্ষ কিলোমিটার পথ৷ ২০ মিলিয়ন
মানুষ৷ একটি বাইসাইকেল৷ এক বাঙালি
যুবক৷সাইকেলে চেপে দুনিয়া ঘুরছেন এক বঙ্গসন্তান৷
লক্ষ্য , এইডস সচেতনতা বৃদ্ধি৷ ২০০৪ -এ যাত্রা শুরু
করে ১১ বছরে ১১৪টি দেশ পাড়ি দিয়েছেন বাসন্তীর
বছর বত্রিশের যুবক সোমেন দেবনাথ৷কয়েক বছর
আগের কথা৷ বরফের চাদরে ঢাকা ময়দান৷ যে দিকে
নজর যায় শুধুই বরফ৷ থার্মোমিটার জানান দিচ্ছিল
তাপমাত্রার পারদ -৪৫ ডিগ্রি৷ খোলা আকাশের
নীচে পাতা একটা স্লিপিং ব্যাগ কেঁপে উঠল
ধীরে৷ মাথা বের করে সোজা তাকালেন এক যুবক৷
ঘাড় ছাপানো চুল ছুঁয়ে গেল বরফের স্তর৷ ঘড়ির
কাঁটায় রাত৷ কিন্ত্ত চারদিক দিনের আলোর মতো
উজ্জ্বল৷ জায়গাটার নাম গ্রিনল্যান্ড৷ আর চোখ
জুড়োনো আলোর নাম নর্দার্ন লাইট৷ যেখানে
যাওয়ার স্বপ্ন দেখেন অনেক বাঙালি , সেখানেই
বেশ কিছুদিন থেকে এস্কিমোদের এইডস সচেতনতার
পাঠ দিয়েছেন সোমেন৷ শান্ত -নিরীহ মানুষগুলোর
সঙ্গে ঘুরে শিকার করার সময় বুঝিয়েছেন , এইচ আই
ভি ---এই তিনটি অক্ষরের মধ্যে ঠিক কতটা কঠিন
মৃত্যুর পরোয়ানা লুকিয়ে৷ সাত সমুদ্র তেরো নদী
পেরোনো অখ্যাত এক মফস্সলের এই ছেলেটাকে
আপন করে নিয়েছিলেন এস্কিমোরা৷ সাধের ইগলুতে
থাকতেও দিয়েছিলেন সযত্নে৷ ঠিক যেমনটা
করেছিলেন দোহার ভারতীয়রাও৷ সোমেনের
অভিজ্ঞতার তালিকায় এসব অবশ্য 'টিপ অফ দ্য
আইসবার্গ'৷
সালটা ২০০৪৷ সদ্য জুলজি অনার্স পাশ করে বাসন্তী
বাজার লাগোয়া কাপড়ের ব্যবসায়ী পরিবারের বড়
ছেলে সোমেন বাড়িতে জানিয়ে দেন , সাইকেলে
চেপে বিশ্বভ্রমণ করবেন৷ লক্ষ্য , এইডস সচেতনতা৷
এইচআইভি নিয়ে সোমেনের পড়াশুনোর শুরুটা অবশ্য
তারও বছর সাতেক আগে৷ খবরের কাগজে এইডস
আক্রান্ত এক ব্যক্তির মৃত্যুর খবর পড়ার পর থেকেই৷
বইপত্তর ঘেঁটে রোগটা সম্পর্কে জানার পর স্টেট
এইডস কন্ট্রোল সোসাইটির কাছ থেকে তালিম
নিয়ে সুন্দরবন -সহ দক্ষিণ ২৪ পরগনায় কাজ শুরু
করেছিলেন সোমেন৷ অল্প সময়ের মধ্যেই বোঝেন ,
জেলার গণ্ডিতে থেমে থাকলে হবে না৷ বিশ্বের
দরবারে পৌঁছতে হবে৷ বাড়িতে কথাটা পাড়তেই
বাবা রামমোহন দেবনাথ জানিয়ে দেন ,
'গ্র্যাজুয়েশন শেষ করতেই হবে৷ তারপর যা কিছু৷ '
বাবার কথা রেখেছিলেন সোমেন৷ গ্র্যাজুয়েশন শেষ
করার দু'দিনের মাথায় ২০০৪ সালের ২৭ মে সাইকেল
নিয়ে অজানা দেশের পথে পাড়ি দেন এইডস -এর
সচেতনতা প্রসারে৷
তিন বন্ধুর সঙ্গে জোট বেঁধে তিরিশের দশকে
দু'চাকাকে সঙ্গী করে ঘর ছেড়েছিলেন বিমল
মুখুজ্জে৷ তাঁর বিশ্বজয়ের কাহিনি 'দু'চাকায় দুনিয়া '
স্বর্ণাক্ষরে খচিত৷ কিন্ত্ত , আপনার ঘরের ছেলে
তো একা পাড়ি দিল৷ বুক কাঁপল না ? সোনারপুরে
মেজ ছেলের ফ্ল্যাটে বসে ছিলেন সোমেনের মা
পঞ্চাশোর্ধ্ব শোভা দেবনাথ৷ গলা ধরে এল
নিমেষের মধ্যে৷ বলে উঠলেন , 'আমি আটকে রাখলে
হয়তো ও থাকত৷ কিন্ত্ত মনে কষ্ট পেত৷ ও যে
উদ্দেশ্যে ঘর ছেড়েছে সেটা তো আর কম নয়৷ ক'জন
পারে অমনি সব ছেড়েছুড়ে বেরিয়ে যেতে ? ও
পেরেছে৷ তাই আটকে রাখাটা সঙ্গত মনে করিনি৷ '
যাত্রাপথের প্রথম ভাগটা যতটা কঠিন ছিল
সোমেনের জন্য , তার চেয়েও কয়েকগুণ বেশি তাঁর
পরিবারের জন্য৷ শোভাদেবীর কথায় , 'এখন তো
ইন্টারনেট এসেছে৷ চোখের সামনে দেখতে পারি৷
ফোনে কথা বলতে পারি৷ আগে তো তিনমাস -চার -
পাঁচমাস অন্তর কথা হত৷ কখনও তা -ও হত না৷ চিঠি
আসত৷ যতদিন হাতে চিঠিটা পেতাম না প্রাণটা
আটকে থাকত৷ ঠাকুরকে ডাকতাম শুধু৷'ইতিমধ্যে দেশে
পিঠোপিঠি মেজভাইয়ের বিয়ে হয়েছে৷ তার
ছেলেও হয়েছে৷
যার বয়স এখন ৭৷ সে সব কিছু অবশ্য চাক্ষুষ করতে
পারেননি সোমেন৷ কিন্ত্ত তাতে কী ? গত ১১ বছরে
১১৪ দেশের ২৬ জন রাষ্ট্রপতি , ৫৬ জন প্রধানমন্ত্রী ,
২১৮ জন মন্ত্রী , ১০৫ জন ভারতীয় হাই কমিশনার আর
অসংখ্য সাধারণ মানুষের সঙ্গে দেখা করেছেন
তিনি৷ শিখেছেন এইডস সচেতনতার নতুন কোনও পাঠ৷
তাঁদের শিখিয়েছেনও৷ নতুন বছরের প্রাক্কালে
ঘানায় বসে টেলিফোনের ওপ্রান্ত থেকে
জানালেন , 'স্বামী বিবেকানন্দ আর বিমল
মুখোপাধ্যায়কে আইডল করে রাস্তায় বেরিয়ে
পড়েছিলাম৷ সঙ্গে ছিল , একটা টেন্ট আর খাওয়ার
কিছু জিনিস৷ তালিবানদের হাতে ধরা পড়েছি৷
সিরিয়ায় একটুর জন্য বোমার আঘাত থেকে বেঁচেছি৷
জারোয়াদের সঙ্গে অনেকদিন কাটিয়েছি৷
ডাকাতদের মুখে পড়েছি৷ কিন্ত্ত , সব মিলিয়ে যা
অভিজ্ঞতার সাক্ষী হয়েছি , তা অমূল্য৷ 'বিশ্বজয়ের
জন্য ভিসার বন্দোবস্ত , অর্থের জোগান , সেসব হল
কীভাবে ? সোমেনবাবুর কথায় , 'প্রত্যেক দেশের
ভারতীয় হাইকমিশন আমাকে ভিসার ব্যাপারে
সাহায্য করেছে৷ আর যে দেশে গিয়েছি ,
সেখানকার সাধারণ মানুষ আমার কাজে অনুপ্রাণিত
হয়ে অর্থ সাহায্য করেছেন৷ ' শুধু এইচআইভি
সচেতনতাই নয় , সোমেন এখন অর্থ জোগাড় করছেন
তাঁর স্বপ্নের 'গ্লোবাল ভিলেজ ' তৈরির লক্ষ্যে৷ কী
সেই গ্লোবাল ভিলেজ ? 'বিশ্বের সব দেশের
মানুষদের জন্য একটা আস্তানা৷ যেখানে দেখের
কোনও গন্ডি থাকবে না৷ ২০২০ তে দেশে ফিরে
সেটাই করতে চাই প্রথমে ,' জানান সোমেন৷ আর তাই
এখন থেকেই যা অর্থ সাহায্য পাচ্ছেন তার ৬০ ভাগ
জমাচ্ছেন সোমেন৷ নিজের একটি ওয়েবসাইটও
খুলেছেন তিনি৷শুক্রবার সকালে যখন বিশ্বের সব
মানুষ নতুন বছরের আনন্দ সেলিব্রেট করবেন , তখন
সোমেন পাড়ি দেবেন তাঁর পরের গন্তব্য
সেনেগালে৷
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা জানুয়ারি, ২০১৬ দুপুর ১:৩৩
৪টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে...

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে,
পড়তো তারা প্লে গ্রুপে এক প্রিপারেটরি স্কুলে।
রোজ সকালে মা তাদের বিছানা থেকে তুলে,
টেনে টুনে রেডি করাতেন মহা হুলস্থূলে।

মেয়ের মুখে থাকতো হাসি, ছেলের চোখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অহমিকা পাগলা

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১৪


এক আবেগ অনুভূতি আর
উপলব্ধির গন্ধ নিলো না
কি পাষাণ ধর্মলয় মানুষ;
আশপাশ কবর দেখে না
কি মাটির প্রণয় ভাবে না-
এই হলো বাস্তবতা আর
আবেগ, তাই না শুধু বাতাস
গায়ে লাগে না, মন জুড়ায় না;
বলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩




তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×